---" কিছুই লয়। তুমি ষোলোআনাকে বলো! মুখিয়াকে একদিন সন্ধ্যায় ডাকো। তারপর খেতে খেতে সব হয়ে যাবে!" লালুকাকা কুটিল ঢঙে মিটিমিটি হাসে।
---" বলছো! তাহলে ডাকো একদিন। কিন্তু ব্যাপারটা ঘেঁটে যাবেনি তো!"
---" মোটেও ঘাঁটবেনি। ইংলিশ খাইয়ে দিবে আর ঝালঝাল মাংস। তোমার কাজ হয়ে যাবে। চিন্তা করোনি!"
---" মালগুলো ঠিক সুবিধার নয়। যাই বলো, পাল্টিবাজ।দেখি একটু চিন্তা করে দেখি কি করা যায়। এখনই কাউকে কিছু বলার দরকার নেই!"
সম্মোহ ভাবলো বিষয়টা লোকাল এমএলএ-কে জানাবে। উনি সম্মোহের পূর্ব পরিচিত একজন সংস্কৃতিবান মানুষ। কিন্তু মনটা খচখচ করতেই থাকল। ঠিক ভরসা হলো না। কারণ এই ধরনের আঁতেলজীবি জননেতারা কি ধরনের হারামি হয় তা সম্মোহ জানে। সুতরাং তাড়াহুড়ো না করে বিষয়টাকে সময়ের হাতে ছেড়ে দেওয়াটাই সমীচীন মনে হলো সম্মোহের।
ডিনার শেষ করে বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিয়ে ফেসবুক লগইন করে বন্ধুদের পোস্ট গুলো দেখছিল। ফেসবুক রঙ্গ দেখতে বেশ মজা লাগে সম্মোহের। বহুদিন কিছু পোষ্ট করা হয়নি। আজ ইচ্ছে করলো..." প্রতিটি সম্পর্কের বাঁকে আত্মহত্যা লেখা থাকে" ( ফিলিং হ্যাপি )
সম্পর্কগুলো বেঁচে থাকে আত্মহত্যার উপর। কখনো আমি আত্মহত্যা করবো! কখনো তুমি আত্মহত্যা করবে। এই আত্মহত্যায় কখনো মাধুর্য, কখনো ক্ষমা, আবার কখনো বিষাদের আনাগোনা। না ইচ্ছে করলো না পোস্ট করতে। এত গভীর কথা বোঝার লোকজন খুব কম।সারা ফেসবুক জুড়ে একটা উপায় চালাকি। আহা উহু! তুমি আমাকে লাইক দাও আমিও তোমাকে দেব। এরসঙ্গে জুটেছে ওয়েব চ্যানেল গুলো।
একটা বাংলা ওয়েব চ্যালেলের নোটিফিকেশনে চোখ গেল সম্মোহের... "স্ট্রাইপের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে স্তনযুগল"
সম্মোহ খানিকক্ষণ ধরিয়ে তাকিয়ে থাকল। তারপর ছবিটাকে জুম করে দেখল। আহা অনন্য! স্কেচবুক খুলে বেশ কতগুলো লাইন ড্রইং করল সম্মোহ! অদ্ভূত ভাবেই ছবিগুলো কয়েকটা রেখার ইঙ্গিতে ধরা দিল। ভাবলো ছবিগুলো ফেসবুকে পোস্ট করবে। পোস্ট করলো।
--- "অনেকদিন পর এলে। চমৎকার!"
--- "দাদা, জাস্ট ফাটাফাটি।"
---- "ঝিঙ্কু সোনা ভালো লাগলো।"
---- "এই ছবিগুলো আমার চাই। আমার কবিতার সঙ্গে চমৎকার যাবে। এবার একটা বই করবো। তোমার ছবি আমার কবিতা।"
পোস্টের নীচে একেরপর এক কমেন্ট পড়ছে। সম্মোহ কোনো রিপ্লাই দিচ্ছে না। শুধু দেখছে!
ইনবক্সে মেসেজ এলো, "আমাকে কবে আঁকবে?"
সম্মোহ উত্তর দিল, " আগে আঁকাটা ভালো করে শিখি!" সঙ্গে স্মাইলি।
---" এই পাকা বুড়োকে এখনো আঁকা শিখতে হবে!"
---" আমি বুড়ো নই! যযাতি!"
----" তুমি একটা বুনো হাতি!"
সম্মোহ আর কথা বাড়ালো না। লিখলো, " ঘুম পাচ্ছে। কাল কথা হবে।"
---" তোমার এতো ঘুম পায় কেন সোনা! আমি কি নোনা! হিহিহিহি.. "
সম্মোহ মেসেজ সিন করে মোবাইলটাকে ফ্লাইট মোড করলো। কারণ এরপর ফোন করবে। সঙ্গে বিরক্তিকর ঘ্যানঘ্যানানি।দীর্ঘ দশ বছর হাসবেন্ডের সঙ্গে কোনো শারীরিক সম্পর্ক নেই। শুধু কোনো ক্রমে সংসারটা টেনে যাচ্ছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বেঁচে থাকা ইত্যাদি ইত্যাদি। বেশির ভাগেরই গল্পটা প্রায় একই ধাঁচের। কোথাও একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের।
ব্রডওয়েতে মদ খেতে খেতে কৌস্তব বলেছিল, " এদের ফাঁদে পড়ো না। সব শালা সাইকো! যেচে যেচে কথা বলবে, প্রেম নিবেদন করবে তারপর হঠাৎ একদিন স্কিনলর্ট সহ ফেসবুকে পোস্ট! এবার তুমি সামলাও।
---" ছিঃ! ধিক্কার!"
---" মুখ যখন মুখোশ!"
--" ভাগ্যিস তুই লিখলি। ব্লগ করলাম বাঁদরটাকে।"
---" তীব্র প্রতিবাদ করছি!"
কৌস্তবের কথা শুনে সম্মোহ হেসে ফেলে।
---- "এতো জীবন্ত স্ক্রীপ্ট! তুই একটা ওয়েবসিরিজ বানা। জমে যাবে!"
একেকদিন ঘুমোনোর আগে কত রকমের ঘটনা যে চোখের সামনে ভীড় করে তার ইয়ত্তা নেই। ঘুম আসতে চায় না! যেন ঘটনা গুলো হুড়মুড়িয়ে এগিয়ে আসে সম্মোহের দিকে।
আগে গুণী মানুষ বিখ্যাত কবি শিল্পীদের প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল সম্মোহের। কত মানুষই থেকে খেয়ে গেল টাকা পয়সা না দিয়ে। সম্মোহ বিষয়টা খুব একটা আমল দেয়নি। বরং প্রশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু পরে কলকাতায় গিয়ে শুনেছে মানুষ গুলোর অসভ্যতার খিল্লি!
---"দাদা বাঁকুড়ার জঙ্গল কেমন ঘুরলে? আর বলিসনা ছোট্ট করে একটু পোঁদ মেরে এলাম। আমাদের খাওয়ালো আদর যত্ন করলো!"কফি হাউসে এক সত্তর্দ্ধো পেইন্টার এই কথা বলে গেছে সম্মোহকে নিয়ে। শুনে সম্মোহ কষ্ট পেয়েছে। আবার ভেবেছে এই বৃদ্ধ বয়সে এসব নিয়ে কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে হয় না! এক জীবনে কম কিছু দেখল না সম্মোহ। হয়তো আরো দেখার বাকি আছে। দেখতে দেখতে জীবন নশ্বর হয়ে যাবে। জীবনের সঙ্গে এই নিঃসঙ্গ তাস খেলার নামই তো পেশেন্স! যেখানে বৈপরীত্য আলো-অন্ধকারের। স্থিরতা-অস্থিরতা স্বরের ধ্বনিপদার্থিক বৈশিষ্ট্যে আভাসিত। আলো অন্ধকারের সঙ্গে যেমন Acute-grave স্বলক্ষণের সম্পর্ক, তেমনি স্থিরতা-অস্থিরতার সঙ্গে Compact-Diffuse স্বলক্ষণের সহযোগ।


No comments:
Post a Comment