Showing posts with label আমন্ত্রিত সংখ্যা. Show all posts
Showing posts with label আমন্ত্রিত সংখ্যা. Show all posts

Tuesday, May 17, 2022

রঞ্জনা ভট্টাচার্য-র কবিতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  রঞ্জনা ভট্টাচার্য




শিরোনামে ঝুল জমে আছে


ছাদ শুনলেই কার্নিশ ভেঙে পড়ার আওয়াজে কান ফেটে যায়, 
ঝুলন্ত তার থেকে নেমে আসা শাড়ির
ফাঁসে আটকে গেছে টবের গন্ধরাজ, 
সাবানের ফেনা মাখা শব্দেরা পিছলে পড়ে যায় টাইলসের। 
আমি ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলি, 
কিছুই ভাবছিলাম না, ভাবনার বড় জ্বর
জলপটি দিয়ে ওকে ঠাণ্ডা করি আগে। 


বৃশ্চিক রাশিতে চাঁদ প্রবেশ করলে
আমার কেমন দংশন পায়। 
 প্রচুর বিষ ঢেলে সান্ধ্য চাঁদকে পুড়িয়ে
দিই, কুকুর কুণ্ডলী পাকিয়ে  থাকে আত্মগত রাত। 
আমি আধখাওয়া নখের কোনে সূর্যোদয়ের আগ ভাগ তুলে রাখি। 


নির্বাসিত স্রোত,  তোমার ঘুমের মধ্যে
অজানা তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বকুলের গন্ধ  ভাসায়, 


  কিশোরী নিঝুম হাতে শব্দবন্ধ
নৌকা বানায়, 
একা একা বেয়ে চলে
  প্রেমিক -তরঙ্গ নির্মাণ, 

 ঠোঁটে তার অমৃত-রোদ।

 নির্বাসিত স্রোতে
হেঁটে যায় পাথরের বুক খুঁড়ে উঠে
আসা পুঁজ -রক্ত। 

জখম এক মাধুর্যের নাম। 
ছুঁয়ে থাকে নির্বাসন, আনাগোনা, 
স্মৃতির পলল.. 

নির্বাসিত স্রোত, তোমার সিঁড়ির নীচে
কেঁপে ওঠা দীর্ঘ কবিতারা কেঁদে উঠে
বলে পাতালপুরীর মুখে অশ্লীল 
 ব্রণের ক্ষত।  ধকধকে চোখের চিৎকার ধীরে পোড়ায়
 ধীরে  শোক-স্বপ্ন-মায়া... 


চিৎ সাঁতারে দেখি 
আমাকে শূন্য করে তুমি 
অঞ্জলি দাও , 
অনুভূতির গায়ে বনতুলসীর ঘ্রাণ। 
মাথার উপর গুমঘর;
আলুঝালু অজ্ঞান আনন্দ হয়ে
নেমে আসে বিমূর্ত শরীরে, 
আমার এঁটো তোমাকে খাওয়াতে
গিয়ে দেখি চারে চন্দ্র মুড়কি বাতাসা
 দুর্ভিক্ষের অভিমান ভাঙে, 
উপোসী রাতে দোতারার ঘরণী আমি
গহীন রাতে বাওরে চাঁদ আর সূর্যের সঙ্গম।


আমার কোনো পড়াশোনা নেই, 
আমি ঘুমন্ত মুখের এক পাশ দিয়ে
ঝরে পড়া লালায় শিখেছি লোভ আর
নির্লিপ্তি। 
আমি আপনাদের শেকসপিয়র পড়িনি, 
দেরিদা কে জানিনা, মনে হয় সময়ের চাবিওয়ালা ছিলেন, আবছা আলোয় 
মায়ের মুখের মেচেতার দাগ দেখে শিখেছি  নারী মানে ইনভেস্টমেন্ট, 
প্রফিটের দোর গড়ায় দাঁড়িয়ে সন্তান
কেমন ক্যাপিটাল হয়ে যায়। 



Tuesday, April 26, 2022

সৈকত ঘোষ-এর নির্বাচিত সিরিজ কবিতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  সৈকত ঘোষ-এর নির্বাচিত সিরিজ কবিতা



একটা বিন্দু। এক বুদবুদ। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ বিন্দু থেকে আলফা বিটা গামা পার্টিকেলস ছিটকে পড়ছে ডিমের কুসুমের মতো ফ্রায়িংপ্যানে। সেই বুদবুদ থেকে একটা বিস্ফোরণ। তীব্র মেটালিক। মস্তিষ্কের প্রতিটি গ্রন্থিকে প্রবল ভাবে নাড়িয়ে দিল...

জরাসন্ধের বিছানা 

১.

সময় পেছন দিকে হাঁটলে গ্লাসের জলে
ছায়ার প্রলেপ পড়ে
অন্ধকার আমাদের পরিভ্রমণ করে রোজ
কয়েকটা সংকেত ধরে এগিয়ে গেলে 
যুক্তাক্ষরগুলো ভাঙতে শুরু করে
দহনপর্বে আরও একবার কেন্দ্রচ্যুত ভগবান

মেঘ দিশা খোঁজে না 
চোখ থেকে গড়িয়ে নামে নীল অপরাজিতা 


২.

ভূ-ত্বকের নিচে ক্রমাগত বিস্তার পাচ্ছে অধিকারবোধ 
আমাদের জামাগুলো খুলে নিলে 
হ্যাঙারে ঝোলে হাওয়াই দ্রাঘিমা 

প্রতিটা পাথরে আমি রূপভেদ খুঁজি 
হিমাঙ্কের নিচে মৌলিক হয় নিশ্বাস 
সময়কে ধ্রুবক ধরলে প্রতি অণু নিউক্লিয়াস 
পৃথিবীর পালস রেট ধরে রাখে 

জলের আঁচলে তুলে নিই ছায়ার গ্রাফচিত্র 
নতুন শহরের মানচিত্রে তোমাদের মুখগুলো আঁকা হোক 


৩.

আগামীর যন্ত্রণা কাঁধে হামাগুড়ি দিচ্ছে বিসর্গেরা
সন্ধিবদ্ধ রুমাল জানে তার ব্যপন ক্ষমতা 

একটা ছায়াপথ থেকে খসে পড়ছে সমবাহু গান 
রুপোলি চিৎকার বর্গভেদে বৃত্ত আরও আণবিকে জল 
আনুপাতিক বিভাজন থেকে বসন্তকাল জন্ম নিলে 
সেখানে কোকিলের আনুগত্য থাকে না 

বৃষ্টিরও ঝোক থাকে শ্লীলতাহানির
প্রতি অণু দুঃখের সমীকরণ আগামীর গান শুনেছে 
রহস্য কেবল অনুমানে দানা বাঁধে তা নয় 
অনেক চিন্তাশীল মাথা এক হলে মেরুকরণ স্পষ্ট হয় 


৪.

একচোখ বন্ধ করলে জলের পৃষ্ঠটান 
দরজা সূত্র অতিক্রম করে,

গাছ মাটি পাথর ম্লান হাসে 
ছোটোবেলায় শোনা শিকারি গল্পটার মতো
সৃষ্টির আদি যুগে ফিরে যায় মানুষ 

আত্মজীবনী লিখতে বসলে 
একটার পর একটা সরলরেখা আমাকে ছেদ করে যায়
বিন্দুগুলো জুড়তে বসে সময়ের যমজ

স্মৃতিরা হাইপার সেনসিটিভ 
এডিটিং টেবিলে একটা এল ই ডি আলো
মানচিত্র থেকে ঘুম নিয়ে আসছে 


৫.

ইমেজ অনেকটা নতুন রুমালের মতো 
বুক ভরে শস্যের ঘ্রাণ নিতে নিতে 
কখন আবিষ্ট হয়ে যায় 

তোমার হাসি দেখে বোঝার উপায় নেই 
কেয়ার এবং শেয়ার শব্দদুটো আক্ষরিক অর্থে 
কতখানি ভার বহন করে 

ছাতার নিচে হাঁটলে বন্ধুত্বের সংজ্ঞাটা
কফিকাপে গিয়ে ঠেকে। এর বেশি হলে 

শহরের সমস্ত যানবাহন অবাক চোখে তাকায়
ফায়ারঅ্যালার্মে বুঝি 
আমার গালনাঙ্কে ভিজে উঠেছে পকেটের রুমাল...


৬.

বালিঘড়ি উলটে দিলে 
ভরকেন্দ্র কোমর থেকে নখে স্থানান্তরিত হয়

জোনাকি লেখে নির্ঘুম সংলাপ
স্ক্র্যাবার খুঁটে তুলছে মৃত হাসি কোষ
ঢেউ থেকে রেহাই পায়নি পতঙ্গরাও

আরশিতে রাখা ঘুম সুযোগ বুঝে ঠিক ঠোঁট ফুলিয়েছে
প্রতিটা স্ট্রোকে জলের চিহ্ন ফুটিয়ে তোলে কাগজ
কিছুক্ষণের জন্য সময় ও দূরত্ব গলাগলি
এটা কোনও কোটেশন নয়

প্রতি রাতে বিষণ্ণতার হাজারো এক উপকরণ
কাটা জিভের আরও গভীরে নামছে...


৭.

দেয়াল বন্ধুরা টিসার্টে উঠে এলে 
মিছিলে হাঁটা ছাতারা লজ্জা পায় 
টি আর পি যাই বলুক 
রোজকার মতো সূর্য প্রনাম ধরে রেখেছে মেগাসিরিয়াল

ধর্মের কল কি বাতাসে নড়ে ?
এ প্রশ্নের উত্তর খুজতে যতই সাপ্লিমেন্ট দাও 
ভিটামিনের অভাব পুরো করতে পারেনা ক্রিয়াপদ 

জীবনে যতবার কিছু বলতে গেছি
অসঙ্গতি থেকে গেছে সে বলায়
দূরত্বের স্কেলে কোনোকিছু বিশ্লেষণ করলে 
অক্ষমতাই কেবল প্রকাশ পায় 


৮.

কার্নিশ ধরে দাঁড়াতেই আমার সামনে আসে 
সেই সুগার-ফ্রি মেম 

'ক' এ কাক 
'গ' এ গোরু 
'র' এ রুবারু...

ফ্রেমটা ব্ল্যাকআউট হতেই 
ধারাবিবরণী 

ব্যাকরণে 
        উলটো শয়নে 
                 শির্ষাসনে
                          হাই সেনসেক্স


৯.

ছায়াময়তা থেকে উঠে আসে সবুজ সন্ধে 
সোনালি চতুর্ভুজ চৌকাঠ ডিঙিয়ে শুষে নিচ্ছে উত্তাপ 
ম্যাগনেটিক স্পর্শে আকর্ষণ থাকে না 
গ্রিক পুরাণে বৃষ্টি দেবতা এতটাও স্পর্শকাতর নয় 

চৈত্র সেলে একে অপরের মেরুদণ্ড বেচে দিচ্ছে 
দাড়ি কামানো কুকুরেরা পোজ দিয়ে দাঁড়ালে
জেলিফিশের বুকে মধ্যরাত নেমে আসে 

কোথাও কোনো ঘুলঘুলি নেই, কোথাও নেই জলীয় মিছিল 
দেয়াল চিত্রে পরীক্ষামূলকভাবে আঁকা হচ্ছে যাযাবর জীবন 


১০.

পেছন দিকে দৌড় শুরু করলে আলটিমেটলি
যেখানে পৌঁছানো যায় 
যেখানে শরীরের কোনো আকার থাকে না 

আমার সামনে দপদপ করছে ফিলামেন্ট 
মাথার ভিতর থেকে গ্রে-ম্যাটারগুলো ছড়িয়ে পড়ছে 
ম্যাজেন্টা কালিতে 

প্রত্যেকটা অক্ষর থেকে চক্রাকারে বেরিয়ে আসছে 
অতিরিক্ত আলো 
অভ্যেস বসত পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ শেষে 
কবিতা লিখতে বসলেই একটা প্রশ্ন বারবার 
সামনে আসে 

অনিচ্ছুক চাষিরা কি সভ্যতার ভাগ পাবে না ?


১১.

অবাধে যন্ত্রণারা চরাচর করে মস্তিষ্কে
অসময়ে বিভাজ্যতার নামতা লিখতে বসলে
মুখের চারপাশে খণ্ডে খণ্ডে ভেসে ওঠে 
জীবনের পাইগ্রাফ 

প্রায়শই আমি দিকভ্রান্ত হই
শেষ বিকেলে যখন পাখিরা ঘরে ফিরে যায়
আমার শরীরে ভিড় করে নাগরিক ধোঁয়াশা

প্রত্যেকটা ঘুম কোনও এক আণবিক স্তরে
নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে


১২.

মেঘেদের বর্ণমালা শুষে নিচ্ছে শহুরে লীনতাপ 
পরজীবী চরিত্রেরা পূর্বজন্মের ইতিহাস আঁকড়ে 
প্রজনন করবে এটাই তো স্বাভাবিক 

যেহেতু আমাদের সভ্যতা নদীমাতৃক তাই 
মেয়েদের ডেনিম থেকে শুরু হয় অ্যানাটমির ক্লাস

আলো নিভে গেলে আমি ঘ্রান নিতে থাকি 
আসেপাশের সমস্ত শূন্যপদ কী এক অজানা টেন্ডারে
লুফে নিচ্ছে খানদানি 'খ' 


Friday, March 11, 2022

নীলিমা দেব-এর কবিতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  নীলিমা দেব-এর কবিতা


জল বলে


চাঁদ রেডি
যে বেগে বৃষ্টি ছেড়ে বেড়িয়ে আসে জল

বধির আঙুলে গাঢ় হয়ে আছে বেলা
হুস করে পা দুটো রাতের ডায়ে
মাটি ও রাস্তার মধ্যে যে অংক
ভাঙচুর হতে হতেই টুপুর ও টাপুর

সবার কথায় ছায়া উঠছে
রাস্তায়

মিনিমাইজ করো জল
ছোট করা বৃষ্টি লেবুর দিকে চলে যাক…


ডুব


আমার চারদিকে ঘুরছে স্নান
জলকে টানলে আমি দূর
আমাকে টানলে স্নান নিজের বিপরীতে 0-0
না কোনো প্রশ্ন হবে না

জল এখন খালি পা

একজোড়া স্নান সংক্ষিপ্ত মাংসের মতো ছড়ানো

সারা গায়ে গাভীর স্পিড
গাভী অর্ধেক গোল
জলের নিচে অস্ত গেছে আঙুল

রাতকে আমি খুলেই রাখি …


ইশারা

বেড়াল উড়ছে
একাধিক আকাশ হাল্কা চালে নাড়াচাড়া করছে বিন্দু

চিত্র বাড়াই
লালপেড়ে আয়নায়
40 % সূর্যের নৈঞর্থক ভিড় করে আছে ঠোঙায়

¼ চাঁদ কারুর প্রচলিত ভুলে রোগা
সাইকেল কামড়ে শক্ত ছায়ারা

এবারে নিজের জল নিজেই ভাঙবে বেড়াল
মিছেই সন্ধেহ করি মাটি…


তরল পাখি

রক্ত থেকে গাছ, রুটি থেকে আকাশ

দুটোতেই পাখি লোজ্ হতে হতে দ্বিতীয়
ছায়ার মতো বন্ধ আছে মেঘের পঞ্চম

একটা শরীর
চার পাঁচটা বাতাস
একসাথে বাদামী

বিলম্বিত ঘর
যেখানে আর কোনো দরজা নেই

হয়তো পাখি কোনো তারিখ
এখান থেকেই ফোকাস করবে সিনিয়র জল


সাঁজ


কোন একটা চা যেভাবে ফুরিয়ে আসে

টুপির ভেতর ৬৪ পাখির বিরাসত
কাগজে মুড়ানো বৈঠায় আদর খুলে রাখছে পা

যত যাওয়া তত যাওয়া নয়
সমবেত জল এডিট করে করে বাতিল সারস

পায়ে নৌকো বিঁধে
উনুন খুঁজতে খুঁজতে মেঘ~বেলুন

দু’চার কথা এখনো কাপে

শুকনো চায়ে চোখের ভিড়
নীলচে

নীল বলতে পাঠ করা রাস্তার বাকিটুকু …


তুলি রায়-এর কবিতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  তুলি রায়-এর কবিতা



অগ্রদানী

ঋতুকালীন বৃষ্টির মতো এখানে শীত নামলে জোনাকিরা ঘুমোতে যায়
অথচ এই ঘরের পর্দায় যত ক্লান্তির ছাপ লেগেছিল বিগত মরশুমে
এখন তাতে সরু সরু রূপোর তার
রূপকথার রাজপথে একটাও ভিক্ষুক ছিল না
এদেশে সবাই অগ্রদানী 


পঞ্চমুখী

অথচ এমন কথা ছিল
নামতা ভোরে কুয়াশারা চাদর বিছিয়ে যাবে
কথাদের কোন গুরুত্ব থাকে না
যা থাকে তাকে ঠিক হতাশা বলা চলে না
আমি বলি সাবালকত্ব 
হাতেদেরও চোয়াল থাকে
তোমরা তাতে ডাইস এঁকে দাও
মেরুকরণ বড় একমুখী 
গাছে তখন একটাই পঞ্চমুখী ফুল


জারি থাক

খরচের খাতায় একটাও পৃষ্ঠা নেই
পৃথিবী এঁকে চলেছে আকাশ
মজুদে পোড়া কাঠকয়লা
স্থবির দৃশ্যরা জানে কতটা অন্তরাল
খেলাটা জারি থাক তবু
তুমি'র মুখে আমি
হইহই করে ঘিরে ধরে
লিখিয়ে নেয়
অথচ খরচের খাতায় একটাও পৃষ্ঠা ছিলনা


পঙ্ ক্তি

বিচ্ছেদ আসলে জুড়ে যাওয়া পঙ্ ক্তি
শব্দ সাজাতে সাজাতে
শব সাজে যেমন শেষের বেলায়!
আকাঙ্খা - তাই অপূর্ণ 
সময় গুছিয়ে রাখছে ইতিহাস
পৃথিবীর শেষতম গুহায়
বন্ধকে অনুভূতি 
যাযাবর জন্মের উঠোন-বাহির
স্থবির তুমি স্থবির আমি
মাঝখানে নাট্যালয়


দেনা

পথ তুমি পথিকের
নাকি পথিক তোমায় 
অথবা কার্যকারণ 
অর্জনের কোন হেতু হয় না
কাটাকুটির খেলায়
খেয়ালই তো
এই আছে এই নেই
যাওয়া বললেই যাওয়া হয় নাকি
উত্তরে যা বাকি থেকে গ্যালো
দেনারা দিচ্ছে তালা 
চাবিটা কিলো দরে





পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতা



আকাশে রক্তের রং 

রক্ত ঝরে মেঘ থেকে, গাছ থেকে, পাতা ফুল থেকে 
পরিযায়ী পাখিরাও শেষবার দিগন্তে ডানা মেলে উড়ে চলে গেছে 
লক্ষ্মীপেঁচার মতো অনির্দেশ ছায়া অন্ধকারে। 


আজ মহাপৃথিবীর ফসলের মাঠে 
কৃষকের শেষ কান্না -- সম্মোহন বাঁশির ডাকে করুণ সে সুর 
গোসাপ চন্দ্রবোড়া বহুরূপী দুধরাজ বাঁশ জলঢোঁড়া 
লুকিয়ে পড়েছে বহুদূরে।  


জল আর নেই, নদী আজ ডুবে গেছে চাঁদের কিনারে  
অস্তাচলে শেষ লেনদেন। 
পালতোলা ধানশালি নৌকোর মতো
স্বপ্নের মতো নীল, স্বর্ণের মতো তার আভা 
গাংচিল লক্ষ্মীপেঁচা গাঙুড়ের কাব্যময় বিভা  
ইতিহাস বিবর্ণ হয় সিঁড়িভাঙা বুরুজে, মিনারে। 


মনুষ্যপ্রজাতির স্বপ্নমাখা স্বর্ণিল খড় 
মন্দির মসজিদ খেলা, যুদ্ধবাদী রাজনীতি ঝড় 
থেমে গেছে -- ফেলে যাওয়া পুরোনো প্রাচীন গ্রহতীরে। 


রেখে গেছে আকাশের নৈর্ব্যক্তিক সীমা 
ঝরে পড়া রক্তের নীরে। 


যুদ্ধ 

ওদের পাশেই ছিল বিষমাখা ছুরি। 
ওদের হাতেই ছিল বুনো কুকুরের দড়ি। 
ওদের ঘরেই ছিল পিস্তল, বোমা ও গ্রেনেড। 
জমা করে রাখা ছিল যুগ যুগ ধরে।

ওদের শেখানো ছিল,
“মারতে এলেই যেন মার খেয়ে মরে।”
ওদেরকে বলা ছিল,
“লাশের ওপরে যেন অন্য লাশ পড়ে।”

তারপর, রণক্ষেত্র। 
বাঁচার লড়াই। 

কিন্তু ওরা ছোরা বোমা পিস্তল না নিয়ে 
অদ্ভুত কৌশলে 
তুলে নিলো সংবিধান,
ঢাল বর্মের মতো এঁটে নিলো বুকের ওপরে।

রাস্তা গ্রাম নদী দেশ 
ভেসে গেলো নতুন জোয়ারে। 


বিপ্লব 

এসো, ধরো 
আঙুল বাড়াও 
বন্ধুরা দাঁড়িয়ে রয়েছে। 

ওঠো, জাগো 
রক্তপলাশ ফোটা 
সকালের আলো 
হাসিমুখে তাকিয়ে রয়েছে। 

নামো, সিঁড়ি বেয়ে 
তাকাও নিচের দিকে 
রাস্তার ধুলো মাখো পায়ে 
জুতো খুলে রাখো 
পবিত্রতার পথে হাঁটো। 

এসো, খেলো 
কিতকিত, চড়ুইভাতির খেলা 
কাটাকুটি, সাপলুডো, বল 
ইশারায় ফিসফিস  
ইঙ্গিত, নিষিদ্ধ সঙ্গীত গাও, 
ওদের শেখাও। 

তারপরে চলো 
ভেঙে ফেলো একসাথে 
এই ব্যর্থ অন্ধকার 
পাপিষ্ঠ অচলায়তন। 
চূর্ণ করো কারাগার,
মুক্ত করো বন্দীদের। 

হাত ধরাধরি করে সব 
একসাথে হেঁটে যাও 
দূরে নীল সমুদ্রের দিকে। 


সমুদ্র আর আকাশের গল্প 

সমুদ্র থেকেও কখনো কখনো আগুন বেরোয়। 
উৎক্ষিপ্ত হয় আগ্নেয়গিরির মতো। 
যেন সমুদ্র বলছে,
"আমাকে দেখে যদি মনে করো আমি শুধু নীল জল 
ভুল করবে। 
আমার মধ্যে লাল আছে জ্বলন্ত শিখার মতো,
আমার মধ্যে ধূসর আছে উত্তপ্ত ছাইয়ের মতো,
আমার মধ্যে হলুদ আছে লাভাস্রোতের মতো।"

সমুদ্র পাড়ি দেয় পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে 
সে বয়ে নিয়ে যায় তার সমস্ত রং, উত্তাপ, আবেগ 
জঠরের মধ্যে লক্ষ লক্ষ ঝিনুক প্রবাল শঙ্খের মতো,
অক্টোপাস, বিষাক্ত জেলিফিশ, হিংস্র হাঙ্গরের মতো,
জাহাজ গিলে খাওয়া দৈত্যাকার তিমির মতো। 
এক এক বিশাল ঢেউতেই সমুদ্র এক একটা শহর, জনপদ 
সভ্যতা গিলে খেতে পারে। 

সমুদ্র শান্ত হয়ে থাকে সারাদিন। 
দিবানিদ্রা দেয়।  
হয়তো বা খেলা করে, 
ছোট ছোট ঢেউয়ের মাথায় শিশুর হাসির মতো 
ছোট ছোট ধবধবে সাদা দাঁত মেলে হাসে। 
ঘোরাফেরা করে, মানুষের গন্ধ মাখে,
যুবতী প্রেমিকার মতো যুবক প্রেমিকের গায়ে 
লাস্যভরে ঢলে ঢলে পড়ে। 
মূর্খ নৌকোগুলো তার বুক চিরে চলে যায় 
অর্বাচীন ঔদ্ধত্যে। 

রাত হলে সমুদ্র চোখ খুলে চায় 
পূর্ণযৌবন পুরুষের মতো 
আকাশের বুকে অজস্র তারার দিকে চেয়ে 
তাদের সঙ্গে যেন কী একটা পরামর্শ করে 
জোনাকির মতো অদৃশ্য ব্যস্ততায়। 
তারপর বহুকাল ধরে জমে থাকা, 
বুকের ভেতরে বেঁধে রাখা 
জলকে, ঢেউকে, হাওয়াকে, রংকে 
ফুসফুসকে, অন্ত্রকে, হৃদয়কে 
খুলে দেয়। 
তার চোখে নতুন আলো জ্বলে 
তার মুখে তখন নতুন শব্দ হয়। 

সমুদ্র আকাশের দিকে চায় 
হাসে। 
চুপিচুপি কী যেন পরামর্শ করে। 
তারপর হাত ধরাধরি করে 
চোখে চোখ রেখে 
পাড়ি দেয় 
অজানা এক বিশেষ গন্তব্যের দিকে। 
 
ওদের সে রাঁদেভুর কথা 
মূর্খ নৌকোগুলো আর তার ঘুমন্ত মানুষযাত্রীগুলো  
জানতেও পারেনা। 


নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি 

নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি 
মোমবাতি শিখার মতো 
দুহাতে আড়াল করে। 
সে আলোতে মুখ দেখি। 

নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি 
অসুস্থ সন্তানের পাশে 
নিদ্রাহীন রাত্রির মতো। 
প্রহরে প্রহরে তাকে দেখি। 
হাত রাখি কপালে ও গালে। 

নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি 
আকাশঘুড়ির মতো 
সন্ধ্যায় ছাদ থেকে নামবার আগে 
লাটাই গুটিয়ে রাখি 
কাল ভোরে ফের খেলা হবে। 

নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি 
বাংলা ভাষায় 
প্রিয় মানুষের সাথে 
একবার পরিচিত 
নির্মেঘ নির্জলা 
হৈ হৈ আড্ডা দেবো বলে।



Wednesday, February 16, 2022

দেবশ্রী দে'র কবিতাগুচ্ছ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||      দেবশ্রী দে'র কবিতাগুচ্ছ



জলাশয়টুকু

পার হয়ে বুঝি
দেখা হয়নি অনেক কিছুই

গা বাঁচিয়ে ভেসে গেলে
ছোঁয়া যায় না-
দুঃখের অণু অণু সুখ

অথচ পেরিয়ে এসেছি সব
মৃত্যুর আগে


স্বপ্নেরা উলঙ্গ হলে

দিনের আলো ফুটলেই
স্বপ্নেরা উলঙ্গ হয়ে
নেমে পড়ে রাজপথে

খুলে যায় কল্পনাপ্রসূত
আচ্ছাদন। আভরণ
চুঁয়ে পড়ে রক্ত, ঝরে স্বেদ

প্রিয় শরীরে যেমন
তারা অবাঞ্ছিত,
মনসিজ স্বপ্নেও তাই-ই

কিছু রাত স্বপ্নবিহীন হওয়া আবশ্যক।


পাখিটার

পিঠে অগুনতি পালক
আমরা চাইলেই
সেগুলোকে সাজিয়ে
কষতে পারি অসংখ্য সমীকরণ

দুঃখের কথা এই যে,
আমরা কখনোই
সেইসব সমীকরণে চেপে
উদ্দেশ্যহীন উড়ানে সামিল হই না 


রূপকথা

ডানাবিহীন, আমার নিঃশর্ত রাত

এক পা এক পা ক'রে
হেঁটে যাওয়া ছাড়া
কোনও রূপকথার গল্প নেই

তুমি শিখে নিয়েছ
উড়ানের আশ্চর্য জাদুকরী,
কুয়াশায় রেখেছ অস্তিত্ব

নির্দ্বিধায় আমি শিশির মাখছি
তোমাকে ছোঁয়ার নামে।

Wednesday, February 9, 2022

ইউসুফ মুহম্মদের দোঁহা কবিতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  ইউসুফ মুহম্মদের দোঁহা কবিতা



দোঁহা

 
৩২২

এ কেমন ছাই এ কেমন ধোঁয়া, বাতাসে ভাসে না মন্ত্রণা!
জানা হলো শেষে এই চিতা ভস্ম তোর মন-পোড়া যন্ত্রণা।

৩২৩

যেখানে সোমত্ত নদী সেখানে জন্মের নতুন বাগান,
মহাজীবনের ডাকে জেগেছে উত্থান পতনের গান।

৩২৪

আয়না ভেঙে পেলাম দারুর লুপ্ত-গোপন- রূপনগরের চাবি
আদম ছুঁলো ঠোঁটের দানা, হারানো সুর ভাজতে যাবো, যাবি?

৩২৫

চণ্ডীদাসের প্রেমের বয়ানে
দুপুর ঝরায় কোন্ আষাঢ়ের ফুল!
ফলের খোসায় সুফি কী দেখিলো
ঠোঁটের তুলিতে আঁকা আদমের ভুল?

৩২৬

রিপু-’র জালে সংজ্ঞা হারিয়ে মানুষ হলো কলঙ্কিত
নিঃসরণের পাপের খাতায় ঈশ্বরেরও নামাঙ্কিত

৩২৭

ঈশ্বর আজ বৃন্তচ্যুতির পাপ-পুণ্যে- যাদব বাবুর গণিত খাতার ডট
ঘর ছেড়ে যায় পরের পাখি যাক না, তবে হুরের নেশা কেমন যে উদ্ভট।

৩২৮

বাঁশের চোঙায় কে সাধে ভৈরবী, মহাসাগরের ঢেউ উতলায়
পাগলের মন ঘোর চঞ্চল সুর-মুলতানে,
পরমেশ্বর- অহুর-মাজদা, বুদ্ধ-কৃষ্ণ, ইসা নবি মুসা ও মোহাম্মদ
সকল হৃদয় এক সুরে বাঁধা ভোরের বাগানে।

৩২৯

কাদার নাভিতে খুঁজতে গিয়েছো জনমের অনুরাগ,
তোমার পিরানে, প্রণত খড়িতে কালান্তরের দাগ।

৩৩০

স্পর্শের বাইরে বসে কে আমার পাঁজরের তারে বাজায় ভৈরবী
অন্তর্গত সুরে বান, প্রেমকথা কে শোনায়- কোন্ মনচারী কবি!


নীপবীথি ভৌমিকের কবিতাগুচ্ছ

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||    নীপবীথি ভৌমিকের কবিতাগুচ্ছ


তরঙ্গ    

গভীর অরণ্য। চোখ ফেরানো দায়।
 যতদূর দেখা যায়, আলো আর আলোর উথালপাথাল তরঙ্গ

    কেউ কি তবে চিনে ফেলেছিল নিজেকে?
      হত্যা করেছিল স্বহস্তে নিজের মৃত্যু আর জন্মকে?

   চোখ বেঁধে রাখা তাই আমার।
     যাতে করে অন্ধ হওয়া যায় !

    গান্ধারী জন্ম নিয়ে বসে থাকা দিনগুলো
     আলোই চিনেছে শুধু
      আঁধার চেনা কি এত সহজ?

কাহিনী

 এ সমস্ত জীবনের গল্পে চরিত্রগুলো 
   বেশিরভাগ কাল্পনিক
  কাল্পনিক স্নান সারে
    রোদে ভিজিয়ে নেয় সময়ের যাঁতাকলে

      একটা পাখি হঠাৎ উড়ে  গেল
    কোনো এক প্রাচীন বৃক্ষের গোপন 
      কুঠুরি থেকে ,
      একমাত্র পাখিটিই বাস্তব। 
        
       সন্ধ্যে নামলে মাটি রঙের
      পৃথিবীটা আবার কালো হয়ে ওঠে
         গ্লাস আর তরলের আদরে

   চুমুকে চুমুকে সুরাও অনিবার্য হয়ে
    যায় কখনো দিনশেষে।


যা কিছু দৃশ্যে থাকে
    
  প্রতিটি মৃত্যুই আসলে হারিয়ে যাওয়া অতীত, যেখানে 
শিশু গাছেরা ঘুমিয়ে থাকে এক একটা জন্মের হাতে

    ছায়া আসে, 
     হারিয়ে যায় বৈকালিক স্রোতের গান
      খইফুল হাতে নিয়ে 
    আমরাও হারাই এভাবে স্রোত আর 
         সাঁতারের মাঝ বরাবর

   ঢেউ থেমে যায় জীবন পারে, নদী- জল- কোলাহল...

 পাহাড়ী রঙের মেয়ে       
       
      রঙচটা সন্ধ্যা নেমে আসে আজকাল 
    এ শহরে!
  নক্ষত্র চ্যুত আকাশ বাঁশি বাজায়
  বিষাদ- আঙুলে

    ধুন ওঠে আলি আকবরের সরোদে
     পাহাড়ী মেয়ে রঙের রাগে

       জ্বর থামলে আবার যাব ভেবেছি ওদেশে;
      মিথ্যে তাপমাত্রা আর মুখোশ ছেড়া
        রোগের পথ ডিঙিয়ে।

 
ঘর
  
  প্রতিটি দুঃখের পাশে আমি
  সুর বেঁধে রাখি।
   তানপুরার সা'কে ছুঁয়ে পঞ্চম বেজে 
        ওঠে  মর্মরে
      কখনো পরজে কখনোও বা বসন্তে...

     আমি সুর সাধিনি। জানি না তাকে
     একান্ত ‌গভীরে,
     তবু কেন যে মনে হয় বিষাদ প্রিয় হলে
   মাড়োয়া বয়ে যায় আমার নদী-জন্ম ঘিরে !

      প্রতিটি বিষাদের পাশেই আমার 
   ঘর বাঁধা থাকে সুর পঞ্চম ছুঁয়ে।