Tuesday, December 15, 2020

এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা :: গৌরাঙ্গ মিত্র

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা : এই পর্বের আজকের সংখ্যায় থাকছেন 
কবি গৌরাঙ্গ মিত্র-এর কথা 

নমস্কার গৌরাঙ্গ দা।
---আরে এসো এসো,ভাই অভিজিৎ। ভালো আছো?
---আমি ভালো আছি।

কেমন আছেন আপনি এবং আপনারা এই সংকটের কালে?

☞ করোনা নামক এক ভাইরস  পৃথিবীটাকে প্রবল ঝাকুনি দিয়েছে। তবু আমি বলব যে ' আমি ভালো আছি।'পৃথিবী নানা সময়ে, নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে । সম্প্রতি আমরা করোনা সমস্যায় ভুগছি। অতীত এবং বর্তমানের প্রেক্ষিত মাথায় রেখে এ কথা বলতে পারি ভবিষ্যতেও অজানা কোনো সমস্যা এসে আমাদের নাজেহাল করতেই পারে। তবু আমরা সব কিছু কাটিয়ে উঠব। আমরা জয়ী হব। শেষ পর্যন্ত মানুষের জয় হয়।

---ঠিক বলেছেন দাদা।

দাদা আপনিতো  জানেন, সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন-এর প্রতি মাসে ১টি সাক্ষাৎকার পর্ব প্রকাশ করি " এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা  "~ এই পর্বের আজকের সংখ্যায় আমি আপনার সাথে  কথা বলার জন্য এসেছি। আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের এবং আমাদের সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন-কে ও আপনার কবিতার পাঠকদের জন্য আপনার কথাগুলো  যদি বলেন,আপ্লুত হই...

---নিশ্চয়ই অভিজিৎ। বলো কী জানতে ইচ্ছে করছে?


১) আপনি কবে থেকে কবিতা লিখছেন বা সাহিত্যের সাথে যুক্ত আছেন দাদা?

➤আমার প্রথম কবিতা লেখা ক্লাস নাইন- টেন বয়েসে, অবশ্য যদি সেই লেখাকে আদৌ কবিতা বলে গ্রাহ্য করো।  তাল পাতার পাখা , কাল বৈশাখী ঝড় এমন কিছু নিয়ে হয়তো শিখেছিলাম। তার পর থেমে গিয়েছি।
দ্বিতীয় পর্বের লেখা শুরু হয় ইলেভেন - টুয়েলভ পড়ার সময়। চলেছিল কলেজ পৌছনো পর্যন্ত। তারপর থেমে যাই।
তৃতীয় পর্বের চর্চাই গ্রহনযোগ্য বলে আমি মনে করি। এই পর্বের চর্চা তিন দশক ধরে চলছে এবং আমৃত্যু চলতে থাকবে বলে বিশ্বাস করি।

---- নিশ্চয়ই চলবে দাদা।

২) আপনি ক্যানো কবিতা লেখেন? কখনো যদি কবিতায় না আসতেন অবসর সময় কিভাবে কাটাতেন?

➤আমি একটা কথা বলে থাকি যে আমার মাতৃভাষা দুটো - বাংলাভাষা ও কবিতা। একবার বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাস নিয়ে কবিতা লিখেছিলাম। ক্লাস সিরিজের সেই কবিতাগুলি যথেষ্ট আদৃত হয়েছে।কবিতা পাক্ষিক সম্পাদক মন্ডলী কবিতা পাক্ষিক পত্রিকার মাঝের পাতায় স্থান দিয়েছিলেন। একটু আগে যে বলেছি কবিতা আমার একটি মাতৃভাষা, বাস্তবিকই। কোনো নতুন বিষয় পড়লে , কোনো নতুন তথ্য জানার পর তা নিয়ে কবিতা লিখে ফেলি। আমার কবিতাগুলি খুঁটিয়ে পড়লে পাঠক বুঝতে পারবেন বিভিন্ন বিষয়ের সহাবস্থান ঘটেছে সেখানে।
কবিতা না লিখে অন্য কিছু --- ভাবতেই পারিনা। তবু যদি তর্কের খাতিরে মেনে নিই তাহলে বলব ' লাইব্রেরি পরিচালনা করতাম (করেওছি), রাজনীতি করতাম, ব্যাডমিন্টন খেলতাম। নিজেকে প্রকাশ করার জন্যই কবিতা লিখি।

৩) আপনিতো প্রচুর জনের লেখা, বিভিন্ন ধরনের লেখা পড়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া কোন কবিদের লেখা আপনার পছন্দের? বা এমনও বলতে পারেন এইসময়ে  আপনার কাছে কোন ধরনের কবিতা বেশি প্রাধান্য পায়?

➤রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও অনেক প্রবীন, নবীন কবিরা আমার পছন্দের তালিকায় আছেন। জীবনানন্দ দাস, সমর সেন, শঙ্খ ঘোষ এবং আরও অনেকের কবিতা আমাকে প্রাণিত করে। পোস্ট মডার্ন কালখন্ডে দাঁড়িয়ে প্রিয় প্রভাত চৌধুরীর নাম সর্বাগ্রে করতে হয়। নবীনদের মধ্যে তুমিও তো আমার পছন্দের কবি অভিজিৎ। মাথার মধ্যে কোন কুঠুরিতে যে চমকে দেওয়ার মতো কাব্য ভাবনা, শব্দ ভাবনা মজুদ করে রাখো তা ভেবে আমি কুল কিনারা পাই না।
প্রথা ভাঙার জন্য, ছাঁচ ভাঙার জন্য যাঁরা লেখেন তাঁরা  আমার বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন।

--- আমার সৌভাগ্য দাদা। আসলে আমিতো গতানুগতিক ধারা ভেঙে লিখি, এবং এটাও মনে করি এই ধরনের কবিতা লেখার ভঙ্গিতেও একটা আকার আছে,কারণ আকার সব জিনিসেরই হয়, তাই না! আচ্ছা দাদা...

৪) আপনি তো প্রিন্ট পত্রিকার সাথে সরাসরি যুক্ত এবং ওয়েবজিনেও লিখছেন। web.mag, print media আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

➤হ্যাঁ প্রিন্টেড ম্যাগ এবং ওয়েবজিন সর্বত্রই আমি লিখি। সত্যি বলতে কী, এক সময়  ওয়েব ম্যাগাজিনের প্রতি আমার অন্তরের সমর্থন ছিল না। তখন ভাবতাম ওয়েবজিন ক্ষণস্থায়ী। ধীরে ধীরে ভাবতে বাধ্য হলাম ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী কালের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান তা কি আমি জানি? অত ভাবনায় আমার কাজ কী। প্রজাপতি তার পাখায় ক্ষণ কালের ছন্দ পেয়ে খুশিতে ডগমগ হতে পেরেছে। প্রজাপতিদের কাছ থেকে আনন্দপাঠ নেওয়ার চেষ্টা করি। ওয়েব জিনের কণ্ঠস্বর চোখের পলক পড়ার আগে সারা পৃথিবীর কাছে পৌঁছে যায়। এর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।

৫)  চারিদিকে কবিতার জন্য বিভিন্ন ম্যাগাজিন, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কবিদের সম্মান জানানো হচ্ছে।  আপনিও অনেক সম্মানে ভূষিত। আপনার কী মনে হয় এই ভাবে কোনো কবিকে বা লেখাকে সম্মান দেয়া যায়?

➤যাঁরা সম্মান দেন তাঁরা তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির সঠিক বিশ্লেষণ করতে পারবেন। পুরস্কার প্রাপকদের, আমার মনে হয় দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। তাঁদের সম্মানের উপযুক্ত হয়ে ওঠার প্রয়াস জারি রাখতে হবে। প্রচন্ড শক্তিশালী লেখক যখন সম্মান পান তখন অনেক ক্ষেত্রে মনে হয় পুরস্কারই পুরস্কৃত হল। খোদ সম্মানই সম্মানিত হল।


ছবি ঋণ≈ শ্রীমহাদেব (বাঁকুড়া)

✪ সরাসরি কবিতা পাক্ষিক পত্রিকার সাথে যুক্ত। এই জার্নিটা একটু share করুন --- :

দীর্ঘদিন ধরে কবিতা পাক্ষিকে লিখছি। ২০০৩ সাল থেকে সংযুক্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছি। তখন থেকে আজও সম্পাদক মন্ডলীতে আছি। এত দীর্ঘদিন ধরে কবিতা পাক্ষিকের সম্পাদক মন্ডলীতে থাকা বিরল সৌভাগ্যের বলে আমি মনে করি।

✪ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ --আমার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হল:-

১) বুদ্ধদেব সমীপেসু।
২) পাখিদের এসপারান্ত
৩) পুতুলের সংসার
৪) গুরুদেবের পাঠশালা
৫) কোন ভাষায় বিদ্যাপতি
৬) আরও বেশি পৃথিবী
৭) সফেদ শব্দ কিছু
৮) সেমিকোলন
৯) নক্ষত্রের জন্মকথা
১০) একবচন বহুবচন
১১) দাদাগো
১২) স্মৃতিরাই সুন্দর
১৩) উড়ান
১৪) নির্বাচিত কবিতা
১৫)  ইষ্টিকুটুম বেড়াল ছানা (ছড়ার  বই) (যৌথ ভাবে নাসের হোসেন এর সাথে)
ইত্যাদি কবিতার  বই।

গল্পের বই :- 
১) ভদ্রলোকের গল্প

ভ্রমণ এর বই:-
১) কুমায়ুন জানা অজানা
২) রুপলাবণ্যের  কাশ্মীর
৩) সিকিম সিকোয়েন্স
৪) মধ্যপ্রদেশ পাঁচমাড়ি
৫) রাজভূমি রাজস্থান
৬) চোখের আলোয় লেহ লাদাখ।


✪✪ আপনার ২টি প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত কবিতা দিন।
--গৌরাঙ্গ মিত্র-এর কবিতা

বহুব্রীহি

হি হি হাসির ঝর্না তলায় একটি আকাট বহুব্রীহি হি হি করে হেসে উঠল।
বহুব্রীহি 'এক' হয় নাকি, সে তো একের মধ্যে বহু, বহুর মধ্যে এক।
বহুব্রীহি শুনে ঘাস চিবোতে ব্যস্ত গাধাটি হি হি করে ডেকে উঠল নাকি কেঁদে ফেলল।
গাধাদের হাসি ও কান্নার তফাৎ বুঝতে গেলে শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ চাই। অবশ্য গাধাটি ঠিক ঠিক  গাধা ছিল কিনা জানিনা।
ঘোড়াও হতে পারে। চিহি চিহি আওয়াজের সঙ্গে ঘোড়ার ডাকের
অনেকটাই মিল আছে।


যাহা গাধা তাহাই ঘোড়া

এ আবার হয় নাকি, মশাইরা ভুরু কোচকাচ্ছেন, তাই তো,
আমি বলব হয়, আলবাত হয়।
বাঘ ও বেড়াল একই পরিবার ভুক্ত।
এটা শুনে তো আপনাদের কিছু মনে হচ্ছে না।
গাধা ও ঘোড়া একই পরিবার ভুক্ত হলে কারো পাকা ধানে  মই  পড়ছে কি?
আরও এক ধাপ এগিয়ে বলব উটও গাধাদের পরিবার ভুক্ত।
গাধারা ছোটো ছোটো পায়ে মুটেগিরি করে ।
ঘোড়ারা পাহাড়ে- সমতলে তিড়িং বিড়িং লাফাতে লাফাতে পা গুলিকে একটু বেশি মজবুত ও ঢ্যাঙা করে ফেলেছে।
উটেরা বসবাসের জন্য মরুভূমির গরম বালি বেছে নিয়েছে।
মরুভূমির গরম বালি এড়িয়ে যাবার জন্য লম্বা- লম্বা পা ফেলেছে।
একদিন তারা লম্বা -লম্বা রণপা -র মতো, লম্বা- লম্বা পা পেয়ে গেছে।
গাধা, ঘোড়া ও উট সকলেই পরম শ্রদ্ধেয়, তাদের খুরে নমস্কার জানাই।

ধন্যবাদ কবি গৌরাঙ্গ মিত্র-কে। চির শান্তির দেশে আপনি ভালো থাকুন। 
ভালোবাসা,প্রণাম ও শ্রদ্ধা নেবেন দাদা। 


No comments: