Showing posts with label C/O সুবোধ সরকার. Show all posts
Showing posts with label C/O সুবোধ সরকার. Show all posts

Friday, October 28, 2022

C/O সুবোধ সরকার | সুবোধ সরকার-এর কবিতা

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  সুবোধ সরকার-এর কবিতা



রামবাবু 

আগে আপনাকে ভালো লাগত, রামবাবু
এখন আপনি বদলে গেছেন।
কখনও কখনও আপনাকে কংগ্রেস মনে হত
কখনও সি.পি.এম
কখনও সি.পি.আই
মার্কিন সেনেটে আপনার নাম উঠেছিল
কিন্তু ভিয়েতনামের পক্ষে
আপনি বালিদ্বীপ পর্যন্ত ছুটে গেছেন।

বিহারের লছমনপুরে আপনাকে প্রথম দেখি
ততদিনে আপনার স্ত্রী আপনাকে ছেড়ে গেছেন
বিহারের গ্রাম
আপনি তো ভালোই জানেন, খুব সুবিধের জায়গা নয়
ওখানকার লোকেরা বলে
পাতাল প্রবেশ হল স্রেফ ধাপ্পা
আপনি নাকি
উত্তরপ্রদেশের গ্রামে একটা কুয়োর ভেতর
বউকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিলেন।
এখনও সেই কুয়োর ভেতর বসে
মা সীতা কাঁদেন,
তখন গোটা বিহারের মেয়েরা
উত্তরপ্রদেশের মেয়েরা
রান্না করতে করতে কাঁদে
আর চোখ মছে।

আগে আপনাকে ভালো লাগত, রামবাবু
কত রাত্রে আমি না খেয়ে
মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছি
শুধু আপনার তীর ধনুকের গল্প শুনতে শুনতে।
ছোটবেলায় আপনার ভাইকেও আমার খুব ভালো লাগত
কী সুন্দর ভাই
এক ডাকে সাড়া দেয়
যে কোনও দরকারে দাদা বললে
ভাই একপায়ে খাড়া।
পরে বড় হয়ে দেখলাম
আপনার ভাই বীর হতে পারে তবে বড্ড মেনিমুখো
দাদার সমস্ত অর্ডার
সাপ্লাই দেওয়াতেই তার সুকৃতি।
আমি যদি আপনার ভাই হতাম
ও.বি.সি-দের মেরে ফেলার আগে বলতাম
দাদা, এ কাজ করিস না,
লঙ্কা পোড়ানোর আগে আমি বলতাম
ঠিক হচ্ছে না, দাদা, ফিরে চল।

আপনি এবং আপনার হনুমান
শুধু ভারতবর্ষে নয়
গোটা উপমহাদেশে হয়ে উঠলেন সোশ্যালিজম
মার্কস এঙ্গেলস এলেন
মাও-সে-তুং হো-চি-মিন এলেন
এল শিল্পায়ন পোখরান
কিন্তু আপনি এবং হনুমান এখনও পর্যন্ত
উত্তম-সুচিত্রার চেয়েও জনপ্রিয় জুটি।
কোভালাম বিচ থেকে বনগাঁর সেলুনে
আপনাদের জোড়া ক্যালেন্ডার।

আগে আপনাকে ভাল লাগত, রামবাবু
ত্রিপুরায় উপজাতিরা ঢুকে পড়ল
আপনি হনুমানকে দিয়ে খাদ্য পাঠালেন
মরিচঝাঁপি তৈরি হল
আপনি পানীয় জলের ব্যবস্থা করলেন
বাংলাদেশ থেকে পিল পিল করে পিপীলিকারা
চলে এল শিয়ালদায়
আপনি আপনার বৈমাত্রেয় বোন
ইন্দিরার পাশে দাঁড়ালেন, জলপাইগুড়িতে দাঁড়ালেন
অন্ধ্রে গিয়ে দাঁড়ালেন।

তখনও আপনি দাঁড়াতেন
আপনাকে নিয়ে লেখা
তুলসীদাসের রামচরিতমানস
আপনিও শুনতেন তখন
আপনার চোখেও বাষ্প ঘনিয়ে আসত।

কিন্তু এখন আপনি আর
আপনি নেই, আপনি
আদবানীকে ভুজুং দিচ্ছেন
জয়ললিতাকে ফুচুং।
পাকিস্তান নামে সবচেয়ে বড় বিষফোঁড়াটাকে বলছেন ফুসকুড়ি?
আমি বলব আপনিই নষ্টের গোড়া
বাল্মীকি আপনাকে যতই নরশ্রেষ্ঠ বলুক
নির্মল জলের মত বলুক
আমার সন্দেহ আছে
ওরা যখন অযোধ্যায় গেল
আপনার বাধা দেওয়া উচিৎ ছিল।
বম্বে থেকে বাঙালিকে ধরে ধরে
ফেরত পাঠাল মহারাষ্ট্র
তাহলে উড়িষ্যা থেকে মালয়ালিদের
ফেরত পাঠাক কলিঙ্গরাজ।
কর্ণাটক থেকে তামিলদের
পাঞ্জাব থেকে মারাঠিদের।
সারা দেশ জুড়ে লেগে যাক ফেরত আর ফেরত
এই ফেরত দেওয়ার মারি ও মড়ক
আপনি সামলাতে পারবেন, রামবাবু?

বনে থাকার দিনগুলো ভুলে যাবেন না
আপনার বাবার ভুলের জন্য
মনে মনে আপনি বাবাকে ক্ষমা করেননি কোনও দিন
আমি জানি
জঙ্গলে থাকতে আপনার ভালো লাগত না
সেই খারাপ দিনগুলো আপনি মনে করুন
তারও চেয়ে খারাপ দিন
আমাদের সামনে, আপনার হাত কাঁপছে না, ভয় করছে না
আপনার নামে ভারতবর্ষে
হাজার হাজার বালকের নাম
তারা বড়বাজারে, মেটিয়াবুরুজে, চাঁদনিচকের
দোকানে দোকানে কাজ করে
দিনান্তে বাড়িতে আটা কিনে নিয়ে যায়
ধোঁয়াভর্তি উনুনে বসে
তাদের মা রুটি ভেজে দেয়।

সারা ভারতবর্ষ জুড়ে
সন্ধে সাড়ে আটটায় কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে
যে বালকেরা এখন
দুটো রুটি নিয়ে বসেছে খাবে বলে
তাদের কে রাম কে রহিম
সেটা আপনার দেখার কথা ছিল না

বাল্মীকির সাথে দেখা হলে বলবেন
রামায়ণের পরবর্তী সংস্করণের আগে
অর্থাৎ প্রেসে পাঠাবার আগে
উনি যেন নতুন করে আর একবার লিখে দেন ।


রূপম 

রূপমকে একটা চাকরি দিন—এম. এ পাস, বাবা নেই
আছে প্রেমিকা সে আর দু’-এক মাস দেখবে, তারপর
নদীর এপার থেকে নদীর ওপারে গিয়ে বলবে, রূপম
আজ চলি
তোমাকে মনে থাকবে চিরদিন
রূপমকে একটা চাকরি দিন, যে কোন কাজ
পিওনের কাজ হলেও চলবে |

তমালবাবু ফোন তুললেন, ফোনের অন্য প্রান্তে
যারা কথা বলেন
তাদের যেহেতু দেখা যায় না, সুতরাং তারা দুর্জ্ঞেয় |
তমালবাবু মামাকে বললেন কূপমের একটা চাকরি দরকার
মামা বললেন কাকাকে, কাকা বললেন জ্যাঠাকে,
জ্যাঠা বললেন
বাতাসকে |
মানুষ জানলে একরকম, কিন্তু বাতাস জানলে
প্রথমেই ছুটে যাবে দক্ষিণে, সে বলবে দক্ষিণের অরণ্যকে
অরণ্য বলবে আগুনকে, আগুন গেল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে
আলিমুদ্দিন ছুটল নদীকে বলার জন্য
নদী এসে আছড়ে পড়ল
উপকূলে, আসমুদ্র হিমাচল বলে উঠল
রূপমকে একটা চাকরি দাও, এম. এ. পাশ করে বসে আছে ছেলেটা |

কয়েক মাস বাদের ঘটনা, আমি বাড়িফিরছিলাম সন্ধেবেলায়
গলির মোড়ে সাত-আটজনের জটলা দেখে থমকে দাঁড়ালাম
জল থেকে সদ্য তুলে আনা রূপমের ডেডবডি
সারা গায়ে ঘাস, খরকুটো, হাতের মুঠোয়
ধরে থাকা একটা এক টাকার কয়েন |
পাবলিক বুথ থেকে কাউকে ফোন করতে চেয়েছিল, রূপম?
ভারত সরকারের এক টাকা কয়েনের দিকে আমার চোখ |

সারা গায়ে সবুজ ঘাস, ঘাস নয়, অক্ষর
এম. এ. পাস করতে একটা ছেলেকে যত অক্ষর পড়তে হয়
সেই সমস্ত ব্যর্থ অক্ষর ওর গায়ে লেগে আছে |

একটা ছেলেকে কেন আপনারা এম. এ. পড়ান, কোন আহ্লাদে আটখানা
বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়েছেন? তুলে দিন
এই কথাগুলো বলব বলে ফোন তুললাম পবিত্র সরকারের
ফোন বেজে উঠল, ফোন বেজে চলল, ফোন বেজেই চলল
২০ বছর ধরে ওই ফোন বেজে চলেছে, আরো কুড়ি বছর বাজবে |

বাতাস বলছে অরণ্যকে, অরণ্য চলেছে নদীর দিকে
নদী উপকূল থেকে আছড়ে পড়ে বলল :
রূপমকে একটা চাকরি দিন |
কে রূপম?
রূপম আচার্য, বয়স ২৬, এম. এ. পাস
বাঁ দিকের গালে একটা কাটা দাগ আছে |



শাড়ি 

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
এতো শাড়ি একসঙ্গে সে জীবনে দেখেনি।

আলমারির প্রথম থাকে সে রাখলো সব নীল শাড়িদের
হালকা নীল একটা কে জড়িয়ে ধরে বলল, তুই আমার আকাশ
দ্বিতীয় থাকে রাখল সব গোলাপীদের
একটা গোলাপীকে জড়িয়ে সে বলল, ‘ তোর নাম অভিমান’
তৃতীয় থাকে তিনটি ময়ূর, যেন তিন দিক থেকে ছুটে আসা সুখ
তেজপাতা রং যে শাড়িটার, তার নাম দিল বিষাদ ।
সারা বছর সে শুধু শাড়ি উপহার পেল
এত শাড়ি সে কি করে এক জীবনে পরবে  ?

কিন্তু বছর যেতে না যেতেই ঘটে গেল সেই ঘটনাটা
সন্ধের মুখে মেয়েটি বেরিয়েছিল স্বামীর সঙ্গে, চাইনিজ খেতে ।
কাপড়ে মুখ বাঁধা তিনটি ছেলে এসে দাঁড়ালো
স্বামীর তলপেটে ঢুকে গেল বারো ইঞ্চি
ওপর থেকে নীচে। নীচে নেমে ডান দিকে ।
যাকে বলে এল ।
পড়ে রইলো খাবার, চিলি ফিস থেকে তখনও ধোঁয়া উড়ছে ।
-এর নাম রাজনীতি, -বলেছিল পাড়ার লোকেরা ।

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
একদিন দুপুরে শাশুড়ি ঘুমিয়ে, সমস্ত শাড়ি বের করে
ছতলার বারান্দা থেকে উড়িয়ে দিল নীচের পৃথিবীতে ।
শাশুড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন তাকে সাদা থান
উনিশ বছরের একটা মেয়ে সে একা ।

কিন্তু সেই থানও এক ঝটকায় খুলে নিল তিনজন, পাড়ার মোড়ে
একটি সদ্য নগ্ন বিধবা মেয়ে দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে, ‘বাঁচাও’
পেছনে তিনজন, সে কি উল্লাস, নির্বাক পাড়ার লোকেরা ।

বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা….





বিটগাজর যখন রগে উঠে যায় 

ভারত মহাসাগরের তীরে আমি ইয়ার্কি মারতে আসি নি
আহা মেঘ, ওহো মেঘ কী যে মেঘ |
আমি ন্যাকামি করতে আসিনি
আমি কয়েকটা ঝাড়া হাত-পা সত্যি বলতে চাই |

দাদা, সত্যি সবাই বলে, চেপে যান
চেপে যাওয়ার আগে শুনুন আমার কী হয়েছিল
মাথার বাঁদিকটা ঘর্ ঘর্ করত, ডানদিকে আশ্বিন মাস

এক শিঙওলা ভদ্রলোক ভিড় বাসের ভেতর
একটা স্কুলের মেয়েকে ঘষছিল |
আমি প্রতিবাদ করেছিলাম
সে আমাকে বাস থেকে নামিয়ে থাপ্পড় মেরেছিল বাঁ গালে!

আমার ব্রহ্মতালু গরর্…গরর্…গরর্…গরর্…
একটা বালককে দিয়ে বাসন মাজিয়ে গা টিপিয়ে নিয়ে
পেছনে লাথি মেরে তিনি বললেন, এই ৬০ টাকা
একটা পাঁইট আনবি, তারপর খেতে বসবি, যা |
আমি আর পারিনি, কলার টেনে ধরে তুললাম
কিন্তু সে আমার মুখে একদলা থুথু ছিটিয়ে দিল
থুতুতে কী ছিল জানি না, অসংখ্য ডুমুর ফুল
এসে আমার মুখের সামনে নাচতে লাগল |

পার্টি অফিস থেকে একটা ছেলে এসে বলল
আপনার ভূগোল বদলে দেব |
আমি পার্টি অফিসে গিয়ে বললাম
সম্পাদক বললেন, হুম, ছেলেটিও আমাদের
আপনিও আমাদের, মানিয়ে নিন |

পরের দিন সেই ছেলেটি আমাকে রাস্তায় বলল
মুখে রড ঢুকিয়ে পেছনের ফুটো দিয়ে
বের করে আনব, শালা দেড়েল!

বিটগাজর যখন রগে উঠে যায়
ভারত মহাসাগরের তীরে দাঁড়িয়ে মেঘ দেখে
আপনি কী বলবেন?
গুরু গুরু মেঘ গরজে গগনে গগনে….


মৃত্যুর আগে তুমি কাজল পরেছিলে 

তুমি গঙ্গার একটা অংশ ছেড়ে চলে যাচ্ছ
কিন্তু তোমার আঁচলে নদীর আত্মজীবনী লেখা রইল |

বিচানার নীচ থেকে কয়েক লক্ষ কর্কট
বিছানা-সমেত তোমাকে তুলে নিয়ে চলেছে মহাকাশযানে |

ম়ৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে তাও তুমি কাজল পড়েছ,
কাজল ও কান্নার মাঝখানে তোমার মুখে এক চামচ জল

 হ্যাঁ, আমি এক চামচ জল হয়ে
এক চামচ অন্তর্জলী হয়ে,  এক চামচ অঞ্জলি হয়ে,

তোমার ভেতরে একটা পূর্ণিমায় ভেসে যাওয়া
বিমানবন্দরে আমি বসে থাকতে চেয়েছিলাম |

আমি বলেছিলাম এটা বিমানবন্দর নয়
এটা একটা গ্রাম, লোকে বিরহী বলে ডাকে

এখানেই আমরা জীবনে প্রথম চুম্বন করেচিলাম
তুমি ছিলে চাবুকের মত তেজি এবং সটান

বেতস পাতার মতো ফার্স্ট ইয়ার এবং সেনসুয়াল কাঠবেড়ালি
বৃষ্টিতে ভিজলে তোমাকে আন্তিগোনের মতো দেখাত |

আমি ছিলাম গাঙচিল,
দু’লাইন কাফকা পড়া অসংগঠিত আঁতেল |

তুমি যমুনার একটা অংশ চেড়ে চলে যাচ্ছ
ডাক্তার তোমার হাতের শিরা খুঁজে পায়নি |

দোষ তোমার নয়, ডাক্তারের
এতবার তোমার শরীর ফুটো করেছিল ওরা

ইরাকের মৃত্তিকাও অতবার বার ফুটো করেনি আমেরিকা
কিন্তু তোমার ধমনী আসলে একটা নদীর আত্মজীবনী

তুমি তিস্তার একটা ঢেউ ছেড়ে চলে যাচ্ছ
আমার মাছরাঙা সেই ঢেউয়ের ভেতর আটকে গেছে |

সেই মাছরাঙার ঠোঁটে তোমার সংসার
বোরো যেখানে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স না পড়ে পড়ছে সাতটি তারার
.                                                               তিমির |

কিন্তু আমি নদীর পলিমাটি মেখে , হারে রে রে রে রে
একদিন শহরে ঢুকে পড়েছিলাম

কার্জন পার্কে শুয়ে কালপুরুষের সঙ্গে তর্ক করেছি
এসে দাঁড়ালেন বাত্সায়ন এবং নিৎসে

কালপুরুষ বলল, নাও, দুই মহান খচ্চর এসে গেছে,
যৌনতা এবং মৃত্যু

ওরা দুই সহোদর, কে তোমাকে বেছে নেয় সেটাই তোমার
.                                              সেমিফাইনাল
ডব্লু, ডব্লু, ডব্লু ড্যাশ ডটকম |

রাত দুটোর এ্যাম্বুলেন্সের ভেতর বসে আমি তোমার
হাত দুটি ধরে বলেছিলাম, বলো কোথায় কষ্ট ?

তুমি বলেছিলে, কৃষ্ণচূড়ায়, পারমানবিক পলিমাটিতে
তোমার অসংখ্য জুঁইফিলে জ্বালা করছে |

হাত থেকে একটানে চ্যানেল খুলে ফেলে বললে,
আমাকে বাঁচাও, ভালবাসা, আমি বাঁচতে চাই |

পৃথিবীতে আমি একটু শিউলির গন্ধ পেতে পারি ?
আমার নাক থেকে রাইস টিউব সরিয়ে দাও |

আমি বললাম এটা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট,
এখানে কোনও শিউলি গাছ নেই |

তুমি বললে, ছেলেটা কোথায় গেল, কার সঙ্গে গেল ?
ওকে একটু দেখো,রাত করে বাড়ি ফিরো না |

নার্সিংহোমের বারান্দায় বলে আমি একা, একেবারে একা
‘দ্য এম্পারার অফ অল ম্যালাডিজ’ পড়ছিলাম  |

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার, তুমি ঠিক বলেছ
অন্ধকারে দাবা খেলছেন সারা পৃথিবীর অনকোলজিস্ট

উল্টোদিকে এ্যান্টিচেম্বার ড্রাগ-মাফিয়ারা বসে আছে
মানুষের গভীরতম দুঃখ যাদের ব্যবসা |

তুমি আমাকে বারবার বলতে সিগারেট  খেও না
আমি উড়িয়ে দিয়ে বলতাম, আমরা সবাই চিমনি সুইপার

আমরা কার্বনের সঙ্গে প্রণয় আর প্রণয়ের সঙ্গে
মেটাস্টেসিস বহন করে চলেছি |

কে একদিন রাস্তা থেকে ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে আসবে
তার আগে আজ, এখনই, আমি প্রজাপতিদের সঙ্গে দৌড়তে চাই,

আজ, এখনই মিলন করতে চাই, আশিরনখ মিলন
দেবতা না চড়ুই, কে দেখে ফেলল,  কিছু যায় আসে না |

মনে নেই আমরা একবার ভাঙা মসজিদে ঢুকেছিলাম
প্রচুর সাপের ভিতর আল্লা পা ছড়িয়ে বসে কাঁদছিলেন |

বললেন, আয় পৃথিবীতে যাদের কোনও জায়গা নেই
আমি তাদের জুন্নত এবং জাহানারার মাঝখানে

এখটা বিকেল বাঁচিয়ে রেখেছি ভালবাসার জন্য
গাছ থেকে ছিড়ে আনা আপেলে কামড় দিবি বলে |

তুমি তমসার একটা অংশ ছেড়ে চলে যাচ্ছ
কিন্তু তোমার আঁচল ধরে টানছে ছেলের উচ্চমাধ্যমিক |

ছেলে বলছে, মা, আমাকে কুজ্ঝটিকা বানান বলে দিয়ে যাও
আইসিইউ-তে কেউ কুজ্ঝটিকা বানান বলতে পারে না |

ছেলের বাবা বসে আছে, মেডিক্যাল বোর্ড বসেছে বারোতলায়
যেন হাট বসেছে বক্সিগঞ্জে, পদ্মাপারে |

কে যেন বলল, আরে বেরিয়ে আসুন তো ফার্নেস থেকে,
এরা পিঁপড়ে ধরতে পারে না, কর্কট ধরবে ?

একটা পানকৌড়ি ডুব দিচ্ছে গগনবাবুর পুকুরে
কেমোথেরাপির পর তোমাকে গোয়ায় নিয়ে গিয়েছিলাম |

একটা কোঙ্কনি কবিকে বললে,  ‘পানকৌড়ি দেখাও’,
একটা পর্তুগিজ গ্রামে গিয়ে কী দেখেছিলে আমাকে বলনি |

তুমি জলঢাকার একটা অংশ ছেড়ে চলে যাচ্ছ
যে বড় বড় টিপ পরতে তারা গাইছে, আমায় মুক্তি আলোয় আলোয় |

তুমি সুবর্ণরেখার একটা অংশ ছেড়ে চলে যাচ্ছ
তোমার লিপস্টিক বলছে, আমাদের নিয়ে চলো আয়না |

তুমি রোরো নামে একটা চাইবাসার নদী ছেড়ে চলে যাচ্ছ
সে বলছে, মা দাঁড়াও, স্কুল থেকে এক্ষিনি মার্কশিট তুলে আসছি |

তুমি ভল্ গা নামে একটা নদীর অংশ ছেড়ে চলে যাচ্ছ
পারস্যের রানি আতোসা তোমায় ডাকছে

পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর স্তন ছিল রানি আতোসার
কাটা হয়েছিল খড়গ দিয়ে, কেটেছিল এক গ্রিক ক্রিতদাস |

ইস্তানবুলের নদী বসফরাস ছেড়ে তুমি চলে যাচ্ছ
তোমার এক পা ইউরোপ, এক পা এশিয়া |

তুমি জিপসিদের হাটে তেজপাতা-মোড়ানো ওষুধ আনতে চলেছ
ইহুদি মেয়েরা তোমাকে নিয়ে গুহায় ঢুকে গেল  |

জিপসিরাই পৃথিবীতে প্রথম ব্যথার ওষুধ কুড়িয়ে পেয়েছে
তোমার বিশ্বাস ছিল শেষ ওষুধটাও ওরাই কুড়িয়ে আনবে |

শেষ একটা ওষুধের জন্য গোটা মানবজাতি দাঁড়িয়ে আছে
য়ে সেটা কুড়িয়ে আনবে,  সে বলবে, দাঁড়াও

আমি একটা আগুনের মধ্যে দিয়ে আসছি
বাবাকে বারণ করো হাসপাতালে বসে রাত জাগতে |

আমাকে য়দি কোনও ম্যাটাডোর বা মার্সিডিজ ধাক্কা না মারে
ভোর হওয়ার আগে আমি যে করে হোক শহরে ঢুকব |

এমন একটা অসুখ যার কোনও ‘আমরা ওরা’ নেই
ভিখিরি এবং প্রেসিডেন্টকে একই ড্রাগ নিতে হবে |

ডাক্তার, ভাল যদি নাই পারোষ এত সুঁচ ফোটালে কেন ?
সুঁচগুলো একবার নিজের পশ্চাতে ফুটিয়ে দেখলে হত না ?

তুমি গঙ্গার একটা অংশ ছেড়ে চলে যাচ্ছ, সত্যি চলে যাচ্ছ—–
রোরো তোমার আঁচল ধরে আছে, আমি তোমার রোদ্দুর |



অন্ধ কোকিলের ডাক

টাওয়ারের নিচে এসে দাঁড়িয়েছি; ঘন জ্যোৎস্নায় 
মথের মৃত্যুর দৃশ্য ছাড়া কোন অন্যান্য ঘটনা
এভাবে দেখিনি আর, পাতাবাহারের ঝোপ যেই
সরে গেল সূর্যাস্তের দিকে, ঠিক সেখান থেকেই

অপরাধবোধ শুরু। বেতারতরঙ্গে নিয়ে আসা 
মৃত্যু হৃদয়সংকেত, তার মধ্যে তৃতীয় শ্রুতির 
জন্মঃ কোকিলের ডাক ধরতে পারছি, তবে ঠিক
কে পাঠাচ্ছে, কোনদিক থেকে কোন দুর্গের সিপাহী 

জানতে পারিনিঃ আরো একটা বসন্ত লেগে যাবে
ল্যাবরেটরীর শূন্য ছাদ থেকে গোলাপের গন্ধ 
নেব বলে উঠে দেখি আরো কয়েক কিলোমিটার 
মরুভূমি এগিয়ে এসেছে— চালাঘর, মাইক্রোওয়েভ

জ্যোৎস্নায় তারকাঁটা, পপির বাগান ডুবে যাচ্ছে 
একটু একটু করে। এবার আমাকে ছেড়ে দাও
ক্যাপটেন, তোমার ছেলের সোয়াটার, আর 
মথের মৃত্যুর দৃশ্য—এই দুই খারাপ ঘটনা 
থেকে আবার আরম্ভ হবে অন্ধ কোকিলের ডাক




দাদা আজ আপনার জন্মদিন।  এই আনন্দ ঘন দিনে আপনার প্রতি আমার ও আমার পত্রিকার সকল কবি, লেখক এবং পাঠকের তরফ থেকে শ্রদ্ধা, প্রণাম, ভালোবাসা জানালাম। ভালো থাকবেন। 


C/O সুবোধ সরকার | শিবাশিস মুখোপাধ্যায়

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  


উদ্দাম রজনীর কাব্য  শিবাশিস মুখোপাধ্যায়

সবুজ রোদ্দুরের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সুবোধদা৷
হলুদ হয়ে রয়েছে তাঁর মাথার চুল,
গোলাপী দাড়ি,
রামধনুর সাতরং লেগে রয়েছে শার্টের কলারে৷
রঙিন এই মানুষটাকে খুব স্মার্ট লাগছে আজ
কারণ আজ তিনি সব রঙের অধীশ্বর৷
এখন তাঁর আঙুল থেকে নামছে রঙের ঝর্না,
পায়ের আলতো টোকায় তিনি পেরিয়ে যাচ্ছেন
নীল পাহাড়,
তাঁর চলার গতি থেকে লাল-নীল 
পাথরের টুকরো ছিটকে আসছে কবিতায়,
রঙিন সে সব অক্ষরে আবীর মাখানো থাকছে ভালবাসার৷

ভালবাসার সেই সবুজ রোদ্দুরে এখন 
স্নান করছেন কবি৷
তাঁর গা থেকে খসে পড়ছে বয়স,
কলমে নেচে উঠেছে আয়ু,
অক্ষরের পর অক্ষর তিনি ফুলঝুরির মতো জ্বালিয়ে
ছুঁড়ে দিচ্ছেন আকাশে ৷
কবির সম্মানে আকাশ ফুটিয়ে তুলছে কালো একটা ক্যানভাস,
কবিতার অক্ষর সেখানে তারাবাজি,
চরকির মতো ঘুরপাক খাচ্ছে চাঁদ,
আর এই উদ্দাম রজনীর কাব্য লিখে ফেলছেন কবি,
হোমার আর বাল্মীকি কয়েকটা তারা আকাশ থেকে 
ছুঁড়ে দিলেন কবির দিকে,
দু হাতে সেই নক্ষত্রআগুন লুফে নিলেন সুবোধদা৷

তাঁর আঙুল পুড়ে গেল ভালবাসায়,
তাঁর হৃদয় ঝলসে উঠল প্রেমে,
তিনি কবিতায় আহুতি দিলেন সর্বস্ব ৷

জিনস পরা, স্মার্ট, রঙিন একজন ঋষি
যজ্ঞের আগুনের দিকে দু হাত বাড়িয়ে 
শেষ পর্যন্ত উচ্চারণ করলেন,
ওঁ , স্বাহা!

সময় ঝুঁকে পড়ল সেই মুহুর্তটির ওপরে!




C/O সুবোধ সরকার | অরিজিৎ চক্রবর্তী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||



ভাবনাআলেখ্য ও চৈতন্যডোবা   অরিজিৎ চক্রবর্তী 


১৯৯৭ সাল। আমি বেশ কিছুদিন ধরে কবিতার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছি। মাঝেমধ্যে কবি মঞ্জুষ দাশগুপ্তের অফিসে যাই। রবিবার হলে কবি কৃষ্ণা বসুর বাড়িতে। সে এক অন্য সময়। কৃষ্ণাদি খুব স্নেহ করতেন। আর রবিবারের দুপুরের খাওয়াটা ওনার বাড়িতে প্রায় নির্ধারিত ছিল আমার। একদিন মঞ্জুষদার পোদ্দারকোর্টের অফিসে ঠিক হলো " শুভস্বর" নামে একটি নতুন পত্রিকা প্রকাশিত হবে। মঞ্জুষদা সেই পত্রিকার সম্পাদক। ফলে লেখা জোগাড়ের তোড়জোড়। এক শুক্রবার আমাকে দায়িত্ব দিলেন, সামনের রবিবার সিরিটিতে যেতে হবে। কবি সুবোধ সরকারের কাছ থেকে একটা কবিতা নিয়ে আসতে হবে পত্রিকাটির জন্য। আমি প্রায় লাফিয়ে উঠলাম। তখন সুবোধদার " ছিঃ" পড়ে ফেলেছি। কবিতা সম্পর্কে গভীর ধারণা না থাকলেও এই বইটি পড়ে আমার আত্মতৃপ্তি ঘটে ছিল। একদম অন্যরকম ভাষায় লেখা সেই কবিতার বই। যাইহোক রবিবার সকাল সকাল সোজা সিরিটি পৌঁছলাম। বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। মঞ্জুষদার কথা বললাম। উনি আমাকে বসতে বললেন। চা বিস্কুট খেলাম। হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন," ভেতরে কবিতা আছে।" আমি মাথা নাড়লাম। তারপর খানিকক্ষণ সময় কাটিয়ে প্রিয় কবিকে একটা প্রণাম ঠুকে বাইরে বেরিয়ে এলাম। সেদিন মল্লিকাদি বাড়িতে ছিলেন না।  রোরো ছিল। ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ভীষণ ভালোলাগা নিয়ে প্রবল কবিতাময় ঘোরের ভিতর রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম।

রাস্তায় লোকজন কম। সকাল দশটা সাড়ে দশটা হবে। গাছের পাতা হাওয়ায় দুলছে। আমার উল্টো দিক থেকে একজন উস্কোখুস্কো চুলের বয়স্ক ভদ্রলোক এগিয়ে আসছেন। সামনাসামনি হতে হাত নাড়লেন। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। উনি বললেন, " সুবোধের বাড়ি গিয়েছিলে?" উত্তরে বললাম, " হ্যাঁ "। উনি বললেন, " আমি প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত।" প্রণাম করলাম কবিকে। জিজ্ঞেস করলেন, " তুমি কবিতা লেখো?" বললাম, " হ্যাঁ"। তারপর এগিয়ে গেলাম। সামনে পার্ক। গাছের নিচে বেঞ্চে বসলাম। ব্যাগ থেকে খামটা বের করলাম। কবিতার নাম- বিসর্গ। কবি সুবোধ সরকার। স্মৃতি থেকে যেটুকু মনে পড়ে, " তোমার পিঠে পেন্সিল দিয়ে একটাই অক্ষর লিখে দেব, বিসর্গ..."  একবারে শেষ অংশে "কত জন কত কি লিখে দিলো! আমি একটা বিসর্গ লিখলে তার মানে বলতে হবে?" কবিতাটা এভাবে শেষ হলো, আমার ওই সময়ের খুবই সাধারণ কবিতা চেতনাকে এই লাইনটি ভাবিয়ে তুলল। শুরু হলো কবি সুবোধ সরকারের সঙ্গে আমার বাল্যকালের সখ্যতা।

পরবর্তী সময়ে তাঁর কবিতা পড়তে গিয়ে বারংবার মনে হয়েছে সুবোধ সরকার ধীরে ধীরে সমস্ত অলংকার ত্যাগ করে কবিতার ভাবনা ও প্রয়োগে বাস্তবের এ্যালিবাইকে তুলে ধরেছেন। যখন "ঋক্ষ মেষ কথা" পড়ছি তখন মনে হচ্ছে শব্দের বৈপরীত্য, সংঘর্ষ, এই দ্বন্দ্ববাদই তাঁর কবিতার মূল কথা। বিপ্লবী মায়াকভস্কি ব্যক্তিগত প্রেমের প্রচন্ড ব্যর্থতার সংকট মুহূর্তে বারংবার হৃদয়ের ক্ষত জুড়োতে নিজেকে মানুষের ভিড়ে লুকোতে চেয়েও পারেননি। তাই সেই ভয়াবহ স্বগতোক্তি--- "I jump, I jump / But I can't jump out of my existence" নিজের অস্তিত্বের, চেতনার, ক্ষমতার গণ্ডীকে ক্রমাগত অতিক্রম করার দুরন্ত প্রয়াস আবার অতিক্রম করতে না পারার সচেতন ব্যর্থতা বোধই শিল্পীমাত্রকে উন্নীত করে মহত্বের সিংহাসনে। সদ্য কবিতা লিখতে আসা তরুণ সুবোধ হয়তো এরকমই কোনো অচেনার দোলাচলে লিখে ফেলেছিলেন এই কবিতাটি।

"আমার মাথার রঙ ও আয়তন দেখে চমকে উঠেছিল মা।

আজ,আমার আর কষ্ট হয় না, 
প্রথম প্রথম অনেকেই ভয় পেত।

আয়নার সামনে এসে দেখি মানুষের না, আমার মাথা এক মেষের 
আয়নার সামনে এসে দেখি মানুষের না, আমার মাথা এক ঋক্ষের 

এই ঋক্ষ মেষ গল্পের ভেতর কোনো হাহাকার নেই, কৌতুক ঢোকেনি কোথাও

এক গন্ধর্বের ছেলেমেয়ে সূর্যাস্ত দেখতে এসেছে
আমি তাদের মাঝখানে পিঠ কুঁজ নিয়ে দাঁড়িয়েছি
কুঁজের অগণিত মুখ নিয়ে বেরিয়ে আসছে কীট।" 

( ঋক্ষ মেষ কথা )

আমি এই বইটির কবিতা গুলো বহুবার পড়েছি।  থেমেছি। বিস্মিত হয়েছি। প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আধ্যাত্মিক নয়, কিন্তু অন্তর্মুখ ও অনুভূতিপ্রধান হবার ফলে বাস্তব স্পর্শের অতীত। হয়তো মরমিতার অপরিচিত সান্দ্রতা--- রহস্য কুয়াশার স্তর; এবং সেই কুয়াশা অনুভব করার অনিবার্য মোহমুক্তি। এই অনুভব কিন্তু অগভীর প্রাণময় আবেগের প্রত্যক্ষতা নয়, আবার যে চিন্তাধর্মী মন আবেগকে জয় করে, যা পর্যবেক্ষণ করে এবং অন্তর্নিহিত চিন্তাগত অবকাশকে প্রকাশ করে, সেই মনের অনুভূতিবিহ্বল সত্যও নয়। আসলে এখানে দু-রকমের বিশুদ্ধ এবং ঐকান্তিক প্ররোচনা আছে।একটি হল, প্রাণ নিজের সম্পর্কে যে সহজাত বোধি লাভ করে, তার শক্তি। এই বোধির ফলে কবিতাটির অনুভূত বিষয় ও তার প্রকাশভঙ্গির মধ্যে একটা প্রত্যক্ষ এবং সুস্পষ্ট তাদাত্ম্যাশক্তি দেখি, সেইটা। অবশ্য এছাড়া চিন্তাগত আন্তরিকতারও একটি শক্তি আছে, কিন্তু সেটা প্রাণ ও আত্মার মধ্যবর্তী স্তরের জিনিস। তাই হয়তো কবি অচিরেই বলতে পারেন, " এই ঋক্ষ মেষ গল্পের ভেতর কোনো হাহাকার নেই, কৌতুক ঢোকেনি কোথাও" তারপর একদম শেষে " কুঁজের অগণিত মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে কীট" এই"কীট"-ই কি কীটদষ্ট অনন্তের গান? আসলে এই কবিতাটির ধ্বনিতরঙ্গ থেকে যে চিত্ররূপের আভাস--- অতীন্দ্রিয় ব্যঞ্জনাবহ হোক কিংবা ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্য , কবিতাটির নির্মাণে তা আবশ্যিক।

বৃহদারণ্যক উপনিষদে ধ্বনিকে আলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।যাজ্ঞবল্ক্যের কাছে বিদেহ রাজের প্রশ্ন ছিল-- পৃথিবীতে যখন সূর্য থাকবে না,চন্দ্র থাকবে না, সেই অন্ধকারে কিভাবে পথ চলবো? যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন-- ধ্বনি। ধ্বনিই তোমাকে পথের সন্ধান দেবে। তাই নির্দ্বিধায় বলতেই হয় " ঋক্ষ" শব্দটির অর্থ ভল্লুক,  আবার নক্ষত্র। আমি পাঠক হিসেবে দুটোকেই আঁকড়ে ধরতে পারি। আবার এই সব কিছুর থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে বলে দিতে পারি বড্ড দুর্বোধ্য। অথচ আমি যতটা পাঠক, তার থেকেও বেশি কবিতার ক্রীতদাস। মার্কসের সবচেয়ে প্রিয় কথাটা খুব মনে পড়ছে "Nothing human alien to me "এই কথাটাই যদি এই কবিতাটির বীজমন্ত্র হয়, তাতেই বা অপরাধ কোথায়? আসলে ঋক্ষ থেকে ঋক্ষের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে আজ কবি নিজেই নক্ষত্রের জামা পড়ে ফেলেছেন। তাঁর কবিতার সমগ্ৰতাকে ছুঁয়ে ফেলেছেন। ভবিষ্যতের কবিতার দিকে সুবোধ সরকারের এই স্বচ্ছন্দ চলন বাংলা কবিতার একটি উজ্জ্বল মাইলফলক।



C/O সুবোধ সরকার | দেবলীনা চক্রবর্তী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
সুবোধ সরকার-এর কবিতার হিন্দি ভাষান্তর করলেন  দেবলীনা চক্রবর্তী



প্রেমিক কখনও মারা যায় না
সুবোধ সরকার

যতদিন চন্দ্রদোষ থাকবে
                                   যতদিন চাল ডাল থাকবে 
                যতদিন জ্যোৎস্না থাকবে
যতদিন কালোজিরে থাকবে
           যতদিন শিউলি থাকবে

ততোদিন আমি বেঁচে থাকব। ততোদিন ততোদিন ততোদিন ততোদিন আমি ভালোবাসব।

যে ভালোবাসে সে কখনও মারা যায় না।


प्यार करनेव्याला कभी मरते नहीं 
कवि ~ सुबोध सरकार


जब तक चंद्रमा दोषदुष्ट रहेगी
      जब तक दाल चावल रहेगा
  जब तक ज्योत्सना उजली रहेगी
जब तक कलौंजी के दाने रहेगा
जब तक शिउली खिलेगा

तब तक मैं जिंदा रहूंगा।
 तब तक,तब तक, और तब भी  मैं प्यार में ही रहूंगा
 क्युकी कभी मरते नहीं प्यार करनेव्याला 


সে
সুবোধ সরকার 

এমনিতে সে ঘুমিয়ে থাকে
নিজের মধ্যে গোপন রাখে
বর্ষা আসে বসন্ত যায়
জাগে না কোনও আশকারায়।

কিন্তু যখন জাগে

এক আকাশ জ্যোৎস্না লাগে
এক আকাশ বৃষ্টি লাগে      
এক আকাশ আগুন লাগে
এক আকাশ ঝড়
ভূমন্ডলে কাঁপতে থাকে আমার বাড়ি ঘর।



वह
कवि ~ सुबोध सरकार


ऐसे भी वह नींद में रहता है 
अपने भीतर गुप्त रहता है 
बारिश आता है बसंत चला जाता है
 किसी भी चाहात से नहीं जाग उठता है।

पर जब जागता है,
 तब उसे चाहिए

एक आकाश चंद्र प्रभा 
एक आसमान बारिश
एक आकाश समान तेज
एक आसमान तूफान
और मेरा घर कांप उठता है जमीन पर।


দেখা না দেখায় মেশা
সুবোধ সরকার 

যখন আমি বুঝতে পারি আর পাঁচ মিনিট 
মাত্র পাঁচ মিনিট আছি আমরা।

তখন আমার বুকের বাঁদিকে
একটা গাঙচিল ঠোকরাতে থাকে।

যখন আমি বুঝতে পারি আর তিন মিনিট 
ঠিক তিন মিনিট আছি আমরা।

তখন একটা কালো জিরে
গলার কাছে চুপ করে থাকে।

যখন আমি বুঝতে পারি এক মিনিট আছে
আর এক মিনিট আছে।

আমার কান্না পায়। চোখ দিয়েতো সব দেখা যায় না
চোখের জল দিয়ে দেখা যায়।



देखा और अंदेखा का मिलाओ
कवि ~ सुबोध सरकार


जब हम महसूस करते है की और पांच मिनिट
सिर्फ पांच मिनिट तक हम हैं

तब हमारे धड़कन में
एक गुल पक्षी ठोकर मारते है।

जब हम एहसास करते है की और तीन मिनिट
सिर्फ तीन मिनिट तक हम हैं

तब एक कलौंजी के दाने गले में
शांत बैठ जाते है।

जब हम एहसास करते है की और एक मिनिट
सिर्फ एक मिनिट हैं

तब हमें रोना आता है। अंखोसे सब कुछ दिखाई नहीं देता
पर आंसू के स्वच्छ जल में सब प्रतीत होता है।


ঈগল 
সুবোধ সরকার 

একটি সাক্ষাৎকারের শেষে 
আমাকে জিজ্ঞেস করা হল 
আপনাকে যদি পাখি করে দেওয়া হয়
আপনি কোন পাখি হতে চাইবেন?

আমি বললাম
"ঈগল"।
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী বললেন
কেন ?

ঈগল একমাত্র পাখি
যে ঝড়বৃষ্টিতে
পৃথিবীর কোন বাড়িতে আশ্রয় নেয় না।

সে বৃষ্টির আগে
পৃথিবীকে চোখ মেরে 
মেঘের ওপরে উঠে যায়।

সে বৃষ্টির আগে 
চিরন্তন দুঃখের ওপরে উঠে যায় ।



बाज
कवि ~ सुबोध सरकार


एक साक्षात्कार के अंत में
मुझसे पूछा गया था
यदि आप को पक्षी बनने की मौका दिया जाता हैं
आप कौन सा पक्षी बनना चाहेंगे?

मैंने कहा.
"बाज"।
साक्षात्कारकर्ता ने कहा
क्यों?

कारण बाज एकमात्र पक्षी है
वह झंझा तूफान मे भी 
संसार के किसी घर में शरण नहीं लेता।

बारिश से पहले ही 
दुनिया को आंख मारके 
बादलों के ऊपर चला जाता है।

बारिश से पहले ही वह
शाश्वत दुःख से ऊपर उठ जाता है।