Showing posts with label এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা. Show all posts
Showing posts with label এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা. Show all posts

Tuesday, December 15, 2020

এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা :: গৌরাঙ্গ মিত্র

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা : এই পর্বের আজকের সংখ্যায় থাকছেন 
কবি গৌরাঙ্গ মিত্র-এর কথা 

নমস্কার গৌরাঙ্গ দা।
---আরে এসো এসো,ভাই অভিজিৎ। ভালো আছো?
---আমি ভালো আছি।

কেমন আছেন আপনি এবং আপনারা এই সংকটের কালে?

☞ করোনা নামক এক ভাইরস  পৃথিবীটাকে প্রবল ঝাকুনি দিয়েছে। তবু আমি বলব যে ' আমি ভালো আছি।'পৃথিবী নানা সময়ে, নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে । সম্প্রতি আমরা করোনা সমস্যায় ভুগছি। অতীত এবং বর্তমানের প্রেক্ষিত মাথায় রেখে এ কথা বলতে পারি ভবিষ্যতেও অজানা কোনো সমস্যা এসে আমাদের নাজেহাল করতেই পারে। তবু আমরা সব কিছু কাটিয়ে উঠব। আমরা জয়ী হব। শেষ পর্যন্ত মানুষের জয় হয়।

---ঠিক বলেছেন দাদা।

দাদা আপনিতো  জানেন, সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন-এর প্রতি মাসে ১টি সাক্ষাৎকার পর্ব প্রকাশ করি " এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা  "~ এই পর্বের আজকের সংখ্যায় আমি আপনার সাথে  কথা বলার জন্য এসেছি। আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের এবং আমাদের সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন-কে ও আপনার কবিতার পাঠকদের জন্য আপনার কথাগুলো  যদি বলেন,আপ্লুত হই...

---নিশ্চয়ই অভিজিৎ। বলো কী জানতে ইচ্ছে করছে?


১) আপনি কবে থেকে কবিতা লিখছেন বা সাহিত্যের সাথে যুক্ত আছেন দাদা?

➤আমার প্রথম কবিতা লেখা ক্লাস নাইন- টেন বয়েসে, অবশ্য যদি সেই লেখাকে আদৌ কবিতা বলে গ্রাহ্য করো।  তাল পাতার পাখা , কাল বৈশাখী ঝড় এমন কিছু নিয়ে হয়তো শিখেছিলাম। তার পর থেমে গিয়েছি।
দ্বিতীয় পর্বের লেখা শুরু হয় ইলেভেন - টুয়েলভ পড়ার সময়। চলেছিল কলেজ পৌছনো পর্যন্ত। তারপর থেমে যাই।
তৃতীয় পর্বের চর্চাই গ্রহনযোগ্য বলে আমি মনে করি। এই পর্বের চর্চা তিন দশক ধরে চলছে এবং আমৃত্যু চলতে থাকবে বলে বিশ্বাস করি।

---- নিশ্চয়ই চলবে দাদা।

২) আপনি ক্যানো কবিতা লেখেন? কখনো যদি কবিতায় না আসতেন অবসর সময় কিভাবে কাটাতেন?

➤আমি একটা কথা বলে থাকি যে আমার মাতৃভাষা দুটো - বাংলাভাষা ও কবিতা। একবার বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাস নিয়ে কবিতা লিখেছিলাম। ক্লাস সিরিজের সেই কবিতাগুলি যথেষ্ট আদৃত হয়েছে।কবিতা পাক্ষিক সম্পাদক মন্ডলী কবিতা পাক্ষিক পত্রিকার মাঝের পাতায় স্থান দিয়েছিলেন। একটু আগে যে বলেছি কবিতা আমার একটি মাতৃভাষা, বাস্তবিকই। কোনো নতুন বিষয় পড়লে , কোনো নতুন তথ্য জানার পর তা নিয়ে কবিতা লিখে ফেলি। আমার কবিতাগুলি খুঁটিয়ে পড়লে পাঠক বুঝতে পারবেন বিভিন্ন বিষয়ের সহাবস্থান ঘটেছে সেখানে।
কবিতা না লিখে অন্য কিছু --- ভাবতেই পারিনা। তবু যদি তর্কের খাতিরে মেনে নিই তাহলে বলব ' লাইব্রেরি পরিচালনা করতাম (করেওছি), রাজনীতি করতাম, ব্যাডমিন্টন খেলতাম। নিজেকে প্রকাশ করার জন্যই কবিতা লিখি।

৩) আপনিতো প্রচুর জনের লেখা, বিভিন্ন ধরনের লেখা পড়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া কোন কবিদের লেখা আপনার পছন্দের? বা এমনও বলতে পারেন এইসময়ে  আপনার কাছে কোন ধরনের কবিতা বেশি প্রাধান্য পায়?

➤রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও অনেক প্রবীন, নবীন কবিরা আমার পছন্দের তালিকায় আছেন। জীবনানন্দ দাস, সমর সেন, শঙ্খ ঘোষ এবং আরও অনেকের কবিতা আমাকে প্রাণিত করে। পোস্ট মডার্ন কালখন্ডে দাঁড়িয়ে প্রিয় প্রভাত চৌধুরীর নাম সর্বাগ্রে করতে হয়। নবীনদের মধ্যে তুমিও তো আমার পছন্দের কবি অভিজিৎ। মাথার মধ্যে কোন কুঠুরিতে যে চমকে দেওয়ার মতো কাব্য ভাবনা, শব্দ ভাবনা মজুদ করে রাখো তা ভেবে আমি কুল কিনারা পাই না।
প্রথা ভাঙার জন্য, ছাঁচ ভাঙার জন্য যাঁরা লেখেন তাঁরা  আমার বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন।

--- আমার সৌভাগ্য দাদা। আসলে আমিতো গতানুগতিক ধারা ভেঙে লিখি, এবং এটাও মনে করি এই ধরনের কবিতা লেখার ভঙ্গিতেও একটা আকার আছে,কারণ আকার সব জিনিসেরই হয়, তাই না! আচ্ছা দাদা...

৪) আপনি তো প্রিন্ট পত্রিকার সাথে সরাসরি যুক্ত এবং ওয়েবজিনেও লিখছেন। web.mag, print media আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

➤হ্যাঁ প্রিন্টেড ম্যাগ এবং ওয়েবজিন সর্বত্রই আমি লিখি। সত্যি বলতে কী, এক সময়  ওয়েব ম্যাগাজিনের প্রতি আমার অন্তরের সমর্থন ছিল না। তখন ভাবতাম ওয়েবজিন ক্ষণস্থায়ী। ধীরে ধীরে ভাবতে বাধ্য হলাম ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী কালের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান তা কি আমি জানি? অত ভাবনায় আমার কাজ কী। প্রজাপতি তার পাখায় ক্ষণ কালের ছন্দ পেয়ে খুশিতে ডগমগ হতে পেরেছে। প্রজাপতিদের কাছ থেকে আনন্দপাঠ নেওয়ার চেষ্টা করি। ওয়েব জিনের কণ্ঠস্বর চোখের পলক পড়ার আগে সারা পৃথিবীর কাছে পৌঁছে যায়। এর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।

৫)  চারিদিকে কবিতার জন্য বিভিন্ন ম্যাগাজিন, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কবিদের সম্মান জানানো হচ্ছে।  আপনিও অনেক সম্মানে ভূষিত। আপনার কী মনে হয় এই ভাবে কোনো কবিকে বা লেখাকে সম্মান দেয়া যায়?

➤যাঁরা সম্মান দেন তাঁরা তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির সঠিক বিশ্লেষণ করতে পারবেন। পুরস্কার প্রাপকদের, আমার মনে হয় দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। তাঁদের সম্মানের উপযুক্ত হয়ে ওঠার প্রয়াস জারি রাখতে হবে। প্রচন্ড শক্তিশালী লেখক যখন সম্মান পান তখন অনেক ক্ষেত্রে মনে হয় পুরস্কারই পুরস্কৃত হল। খোদ সম্মানই সম্মানিত হল।


ছবি ঋণ≈ শ্রীমহাদেব (বাঁকুড়া)

✪ সরাসরি কবিতা পাক্ষিক পত্রিকার সাথে যুক্ত। এই জার্নিটা একটু share করুন --- :

দীর্ঘদিন ধরে কবিতা পাক্ষিকে লিখছি। ২০০৩ সাল থেকে সংযুক্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছি। তখন থেকে আজও সম্পাদক মন্ডলীতে আছি। এত দীর্ঘদিন ধরে কবিতা পাক্ষিকের সম্পাদক মন্ডলীতে থাকা বিরল সৌভাগ্যের বলে আমি মনে করি।

✪ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ --আমার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হল:-

১) বুদ্ধদেব সমীপেসু।
২) পাখিদের এসপারান্ত
৩) পুতুলের সংসার
৪) গুরুদেবের পাঠশালা
৫) কোন ভাষায় বিদ্যাপতি
৬) আরও বেশি পৃথিবী
৭) সফেদ শব্দ কিছু
৮) সেমিকোলন
৯) নক্ষত্রের জন্মকথা
১০) একবচন বহুবচন
১১) দাদাগো
১২) স্মৃতিরাই সুন্দর
১৩) উড়ান
১৪) নির্বাচিত কবিতা
১৫)  ইষ্টিকুটুম বেড়াল ছানা (ছড়ার  বই) (যৌথ ভাবে নাসের হোসেন এর সাথে)
ইত্যাদি কবিতার  বই।

গল্পের বই :- 
১) ভদ্রলোকের গল্প

ভ্রমণ এর বই:-
১) কুমায়ুন জানা অজানা
২) রুপলাবণ্যের  কাশ্মীর
৩) সিকিম সিকোয়েন্স
৪) মধ্যপ্রদেশ পাঁচমাড়ি
৫) রাজভূমি রাজস্থান
৬) চোখের আলোয় লেহ লাদাখ।


✪✪ আপনার ২টি প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত কবিতা দিন।
--গৌরাঙ্গ মিত্র-এর কবিতা

বহুব্রীহি

হি হি হাসির ঝর্না তলায় একটি আকাট বহুব্রীহি হি হি করে হেসে উঠল।
বহুব্রীহি 'এক' হয় নাকি, সে তো একের মধ্যে বহু, বহুর মধ্যে এক।
বহুব্রীহি শুনে ঘাস চিবোতে ব্যস্ত গাধাটি হি হি করে ডেকে উঠল নাকি কেঁদে ফেলল।
গাধাদের হাসি ও কান্নার তফাৎ বুঝতে গেলে শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ চাই। অবশ্য গাধাটি ঠিক ঠিক  গাধা ছিল কিনা জানিনা।
ঘোড়াও হতে পারে। চিহি চিহি আওয়াজের সঙ্গে ঘোড়ার ডাকের
অনেকটাই মিল আছে।


যাহা গাধা তাহাই ঘোড়া

এ আবার হয় নাকি, মশাইরা ভুরু কোচকাচ্ছেন, তাই তো,
আমি বলব হয়, আলবাত হয়।
বাঘ ও বেড়াল একই পরিবার ভুক্ত।
এটা শুনে তো আপনাদের কিছু মনে হচ্ছে না।
গাধা ও ঘোড়া একই পরিবার ভুক্ত হলে কারো পাকা ধানে  মই  পড়ছে কি?
আরও এক ধাপ এগিয়ে বলব উটও গাধাদের পরিবার ভুক্ত।
গাধারা ছোটো ছোটো পায়ে মুটেগিরি করে ।
ঘোড়ারা পাহাড়ে- সমতলে তিড়িং বিড়িং লাফাতে লাফাতে পা গুলিকে একটু বেশি মজবুত ও ঢ্যাঙা করে ফেলেছে।
উটেরা বসবাসের জন্য মরুভূমির গরম বালি বেছে নিয়েছে।
মরুভূমির গরম বালি এড়িয়ে যাবার জন্য লম্বা- লম্বা পা ফেলেছে।
একদিন তারা লম্বা -লম্বা রণপা -র মতো, লম্বা- লম্বা পা পেয়ে গেছে।
গাধা, ঘোড়া ও উট সকলেই পরম শ্রদ্ধেয়, তাদের খুরে নমস্কার জানাই।

ধন্যবাদ কবি গৌরাঙ্গ মিত্র-কে। চির শান্তির দেশে আপনি ভালো থাকুন। 
ভালোবাসা,প্রণাম ও শ্রদ্ধা নেবেন দাদা। 


Thursday, September 10, 2020

|| এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা | উৎস রায়চৌধুরী ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা
আজ থাকছে কবি শূন্যদশকের কবি উৎস রায়চৌধুরী। 


নমস্কার উৎস দা

--- নমস্কার

আমি অভিজিৎ  দাসকর্মকার ।  সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনের নতুন বিষয় "এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা " প্রতি মাসের ১০ তারিখ বের করছি। সেই প্রসঙ্গে আপনার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি।
কেমন আছেন দাদা?

----- আছি একপ্রকার, আজকাল অগুনগ্রাহিতায় আছি।

দাদা আপনার কাছে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে।আপনি যদি আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের এবং এই ওয়েবজিন পত্রিকার ও আপনার কবিতার পাঠকদের জন্য আপনার কথাগুলো বলেন।

--- ঠিক আছে, বলুন


১) আপনি কবে থেকে কবিতা লিখছেন বা সাহিত্যের সাথে যুক্ত?

➤ দেখুন শুরুয়াৎ তো সেই নবম শ্রেণী স্কুল লাইফ, কিছু অস্থিরতা ও নিজেকে মুল্যায়নের তাগিদ, সেভাবে কাগজে ছাপা হয় ২০০০ সাল থেকে, সেক্ষেত্রে বলতে পারেন শূন্যদশক।আমার লেখালেখির জীবনে সেই ছাত্র জীবনে জীবনানন্দের জীবন ও অভীপ্সা আমাকে খুব টেনেছিল। সুনীলের স্টেটমেন্ট ভিত্তিক লেখা, জয়ের কথা বলাটাতেই উপমা ভিত্তিক কবিত্ব আমাকে তাড়িয়ে নিত।

২) যদি কবিতা বা সাহিত্যে না থাকতেন তবে আপনি কোন বিষয় নিয়ে থাকতেন?

➤ এ ব্যাপারে কি বলি!! তবে কবিতা বা সাহিত্যেই কতটা আছি জানি না। সারা জীবন টাই কবিতার কাছে আমি শিক্ষানবি।  যদি সাহিত্য আমাকে না টানত তবে মানুষ কে চেনার দক্ষতা তে পটু হবার জন্য আরো বিভিন্ন বই পড়তাম। জীবনে তবলাও শিখেছি খানিক। সেটাই না হয় আরো জোড় কদমে চালাতাম। 


৩) আপনার কবিতা জীবনে কার অবদানকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেন?

➤ দেখুন আমার কবিতা বোধ কে কর্ষন করেছে আমার ভেতরের নানান শূন্যতা। একটি চীনা নৌকো আছে জানেন, তার নাম সাম্পান। এই সাম্পানের ভেতর একটি কিংবদন্তী আছে যে মাঝির দুঃখ জমা থাকে, আমারও তাই, সেই সংবেদনাই আমার কবিতা। এখানে চিন্তার এবং অনুভবের দিক থেকে কবি ভাস্কর চক্রবর্তীর ল্যাকুনা আমারও    কবিতা জন্মের সোর্স। তবে মাননীয় কবি বিশ্বরূপ দে সরকার আমাকে শব্দ কারবারের ট্রিক্স টা ধরিয়েছেন। হয়তো সে জন্যই অন্তত কলম ধরলে উৎকর্ষ  কতখানি জানি না তবে ফেলে না দেওয়ার মতো অন্তত কিছু বেরিয়ে আসে।

৪) কোন কবিদের লেখা আপনার পছন্দের? বা এমনও বলতে পারেন আপনার কাছে কোন ধরনের কবিতা বেশি প্রাধান্য পায়?

➤ সেভাবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না কোনো কবি পছন্দের। কবি অনির্বাণ দাসের বই পড়েছিলাম "লোডশেডিংএর মাঠ" দারুন। অভিব্যক্তি, কয়েনেজ অসাধার। ইনি তো সে অর্থে তেমন পরিচিত নন কিন্তু ভালো লাগল। এছাড়া দেবদাস আচার্য, স্বদেশ সেন আমাকে টানেন। আর কবিতার প্রকার ধর্মীতা  বলতে তেমন কিছু কবিতা এখন আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে যার মধ্যে শব্দের পরীক্ষা নিরীক্ষা থাকবে, ধ্বনির ও ইমেজারির এক মেল বন্ধন থাকবে।ফ্রাসটেশনও আমার রন্ধ্রের দোষ হিসেবে টানে।

৫) আপনার প্রিয় কবিতার বই কোনটি, যা নিয়ে আপনার ভাল না লাগা সময়গুলো কাটিয়ে নিতে পারেন?

➤ ভালোলাগার বই বলতে স্পেসিফিক কোনো বই আমি সংগে নিয়ে ঘুরছি, নেই। একসময় বিজয় দে র যেকোনো কবিতার বই খুব পড়তাম। ওনার লেখার মধ্যে রিপিটেড ইউসেবল এসপেক্ট একটি  আলাদা মাত্রা এনে দিত।পড়তাম। বারীন ঘোষালের শ্রেষ্ঠকবিতা পড়েছি। খুব অল্প বয়েসী ছেলে জগন্নাথের " মাটির সেতার" বইটি ভালো লেগেছিল। কাজ আছে।

৬) আপনিতো অনেক বছর লিখছেন। আপনার কবিতা main stream এর বাইরে। আপনি ক্যানো এই ধরনের, মানে main streamএর বাইরে লিখছেন? আসলে এই আবহমান বা main stream এ লিখলে তো অনেক নাম ডাক সম্মাননা এমনকি পুরস্কারে বাড়ি ভর্তি হয়ে যেতো। এই বিষয়ে কিছু বলুন উৎস দা---

➤ দেখুন মেইন স্ট্রিম যদি বাদ দিয়েই বলি তাহলে পুরস্কার সম্মাননায় আমি বিশ্বাসী নই। আর মেইন স্ট্রিমে লিখলেই যদি চাকতি তে ঘর ভরে যেত তাহলে মেইন্সট্রিমেরও কোনো গুরুত্ব থাকত না। সুবীর মন্ডল মেইন স্ট্রীমেই অসাধারণ কিছু লেখা লিখেছেন, বিশেষ করে হাসপাতালের বেডে অসুস্থতায়, তাঁর জীবনে কতটা একাধিক পুরস্কার এসচে জানা নেই। তবে আমি বরাবরই কিছু ভিন্নধর্মী ফোটাতে চেয়েছি, আমার প্রয়োগ অনেক মানুষেরই অপছন্দের। হতেই পারে, আমি তো কবি নই। কাউকে পটানোর  এক্স ফ্যাক্টরও আমার নেই। তবে আমার মনে হয় সমস্ত কবিতা নিয়ে কলমে এক্সপেরিমেন্টাল ইমেজারি রাখতে হয়।যেখানে সব বলে দেয়া মাফিক রহস্য থাকলেও কবিতা হয়ে যায়, সেখানে হারাবার হ্যালুসিনেশনে নিজেকে হারাবার অস্পষ্ট মাধ্যাকর্ষণও এক ধরণের কবিতা। আমি চেষ্টা করি। পুরস্কার দিয়ে কি হবে বলুন, লিখতেই পারলাম না আর পুরস্কার????

৭) এখন কবিতায় অনেকেই সিম্বল, ইকুয়েশন এমনকি খিস্তিও ব্যবহার করছেন।এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

➤ দেখুন সিম্বল, ইক্যুয়েশন আরো যা যা বললেন সেটা লিখিয়ে মানুষ দের নিজস্ব নির্জীবত্ব এবং সজীবত্ব। যারা পারছেন না তারাই এসব করেন বলে আমি মনে করি। তবে এখন যেকোনো বিষয়েই ভ্যালুর পরিমাণ কমছে, তাই অটোমেটিক্যালি এগুলো বাড়ছে। অনেকে এই এটোমিক এজে কবিতাকেও এটোমিক করে তুলতে চাইছেন, তাই এগুলোর ব্যবহার বাড়ছে।

৮) আপনি কেনো কবিতা লেখেন?
➤ আমি কবিতা লিখি নিজের না প্রকাশের জড়ত্ব থেকে মুক্তি পেতে। আমার এই স্বল্প জীবনে একটি প্যাঁচালো অপরিস্ফুট ওঠা বসার রহস্য আছে যার থেকে পরিত্রাণ পেতে আমি লিখি, সেটা কবিতা বা অন্য কিছু কি না জানি না, তবে একটি কোনো মাত্রার লেখা আর কি, সে মানুষ হয়তো নেয় না, কিন্তু লিখলে আমার সন্ন্যাস আবর্তিত হয়।

৯)  আপনি কি কোন কবিতা গ্রুপের সাথে যুক্ত, হেয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক গ্রুপ? তার নাম?

➤ আমি কোনো গ্রুপের সাথে কোনোদিনই যুক্ত ছিলাম না, আজও নই, তবে আপনারা অনেকেই হয়তো  জানেন যে এখনো পর্যন্ত মধ্যবর্তী পত্রিকা মন্ডলীর সাথে আমি যুক্ত আছি।


১০) আপনি কি এইসময় রবীন্দ্রনাথ পড়বেন নাকি জীবনানন্দ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্খঘোষ এঁদের পড়বেন নাকি বারীন ঘোষাল বা দীপঙ্কর দত্ত এঁদের পড়বেন ?

➤  এ ধরণের একটি কথা আগেই বলেছিলাম। যাঁদের নাম বললেন তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের সময়ের পরিসরে খুব প্রাসংগিক তবে এখন ট্রেন্ড টাই যেহেতু অন্য এবং ভাবনাহীনতাই একটি অবস্থা, সেখানে দাঁড়িয়ে বারীন দীপংকর নিশ্চয় পড়ব। 

১১) যেহেতু  আপনার লেখা main streem থেকে আলাদা।ফলত আপনার পাঠককুলের পরিধি কেমন বলে আপনি মনে করেন?

➤ দেখুন আমার পাঠক নেই। আমি ঠিক সবক্ষেত্রেই কেমন যেন অসামাজিক। মানুষ আমাকে নিতে পারেন না, তা আমার কোনো বিষয়ে একমুখীনতা বা খুঁটিয়ে বিচারের প্রবণতা যাইই বলুন। লেখার ক্ষেত্রেও বন্ধু কম বলে, আমার লেখা অনেকেই এড়িয়ে যান।

১২) কবিতায় বহুরৈখিকতা  বিষয়ে আপনার তো ধারনা আছেই, এই  বিষয়টি আপনি কিভাবে ব্যাক্ষা করবেন?

➤ বহু রৈখিকতা মানে নিজের চিন্তার রৈখিক চিত্রকে ভেঙে দেওয়া। বিষয়হীনতা থাকলেই বহুরৈখিকতা আসবে। আবার শব্দের ব্যবহারের মধ্যে টিপিক্যাল অরগ্যাজম নিয়ে আসলে ব্যাকরণ কে ভেঙে দিলেও বহুরৈখিকতা আসে। যেমন একটি লাইন যদি এরম হয়ঃ " ছিল কে সাইকেল দিয়ে হাওয়া করে দিলাম" এখানে ব্যাকরণ নষ্ট হয়েছে কিন্তু অনন্য প্রয়োগের এন্টাগোনিস্টিক ক্যারেক্টার ধরা পড়েছে। এই আর কি।

১৩) আপনি কি বাংলা কবিতার বাইরে  অন্য ভাষায় লেখা কবিতা পড়েন? যদি পড়েন কোন ভাষায় কোন কবির কবিতা পড়েন? এতে কি মনে হয় আপনার লেখায় তার প্রভাব পড়বে বা সেই প্রভাবকে কি আপনি সচেতন ভাবে এঁড়িয়ে চলবেন?

➤ বাংলা কবিতাই বা কার কতটা গভীর ভাবে পড়লাম কে জানে?? কবিতা ঈশ্বরের নৃত্য, একে ধরা যায় না। কবিতায় মরশুম পাল্টায়, তাই কবির চেতনাও এমনি এমনি পাল্টে যায়। অন্য ভাষায় শার্ল বোদকেয়ারের কবিতা ভাবনা, কিছু কবিতা ও পড়েছি। র‍্যাঁবো পড়েছি। মরিস ক্লিকের শব্দ ভাবনার চাতুর্য পড়েছি। এগুলো পড়ার এবং নিজের লেখার প্রয়োগের মধ্যে যদি নিয়ন্ত্রণ থাকে তাহলে কোনো প্রভাবই কোথাও পড়বে না।

১৪) ক্যানো এঁড়িয়ে চলবেন দাদা?
➤ এঁড়িয়ে চলবো না বলেই ওপরের কথা গুলো পাড়লাম।

১৫) আপনিতো লেখা লিখি সুরু করেছিলেন শুধু প্রিন্ট মিডিয়ার হাত ধরে। এখন আমাদের ওয়েবম্যাগেও অল্প-বিস্তর  লিখছেন। এই ২টি ভিন্নি মাধ্যমকে কীভাবে ব্যাক্ষা করবেন?

➤ দেখুন প্রিন্ট মিডিয়া, ওয়েবজিন বলে সেপারেট ধর্মী কিছু নেই। প্ল্যাটফর্ম সবই এক। লিখতে পারাটাই বড় ব্যাপার। লেখার কৌশল টাও। কবিতা লেখাটা যৌতুক নিজেকে দিতে যাবার ক্ষেত্রে যদি নিজের কাছে নিজে অভিনয় না করি। তাই আমার কাছে সবই এক। 


১৬) আপনার কি মনে হয় web.mag, print media কে একসময়  অতিক্রম করতে সক্ষম হবে?

➤প্রিন্ট মিডিয়ার একটি অসম্ভব সংরক্ষণশীল গুন আছে তবে এটি অনেক স্তর অতিক্রম করে পাঠকের সামনে আসে। প্রিন্ট মিডিয়া কিনে পড়তে  হয়। তবে তা একপ্রকার দলিল। আর ওয়েব মিডিয়াতেও অসম্ভব প্রচার হয়, আজকাল প্রচুর ওয়েব জিন প্রস্তুতি লাভ করেছে।এর গুরুত্বও আছে। প্রচুর মানুষ ওয়েব জিন থেকে পরিচিতি পেয়েছে। তাই কোনো টাকেও ফেলতে পারি না।


১৭) এখন অজস্র কবিতা লেখা হচ্ছে।বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশও হচ্ছে। কিন্তু তারপর আর কবিতাগুলির হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না।আপনার মতে এর কারণ কী?

➤ এটা বলতে গেলে বলা যায় কবিতায় মেকানিজম এখন এতটাই বেশি যা মেকানিজমের পরিশীলিত ব্যবহারের মান কে অতিক্রম করে যাচ্ছে। কবিতা লিখতে গেলে একটি আত্ম অনুসন্ধিৎসার তদবির প্রয়োজন, যা কেউ করে না, আবার নিজের সাথে বাইরের অবস্থানের যে গভীর রিলেটিভ আপ্স এন্ড ডাউন্স নেচার তা অনেকে গুলিয়ে ফ্যালে। তবে নিজেকে আরো আরো রং থেরাপিউটিক এপ্লিকেশন কবিতাকে নষ্ট করে। তবে কবিতায় নানা ধরনের ইমেজারি, নর্মস, ট্যাকটিক্স এসেছে। তাই কি করবেন বলুন!!! তবে কবিতার হলি ইডিওলজি কখনোই কবিতা কে ভোলাবে না। সিন্ট্যাক্স ও সিমেন্টিকের যথার্থ প্রয়োগ কবিতা উন্নত করবেই। সিনট্যাক্স শব্দের ভাংচুর এবং সিম্যান্টিক শব্দের প্রয়োগাধীন অনুভব শীলতা যা দারুন মানসিক বিন্যাস গঠন করে।

১৮) চারিদিকে কবিতার জন্য বিভিন্ন ম্যাগাজিন, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কবিদের সম্মান জানানো হচ্ছে। এতে কি কবিতার উন্নতি হচ্ছে?  এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

➤ এ ব্যাপারে কিছু কথা আগেই বলেছি। এসব ব্যাপার নিতান্তই ফার্স। বেশি বাগাড়ম্বর উৎকর্ষ আনতে পারে না। তবে নতুন যাদের লেখা ছাপা হচ্ছে তাদের সামান্য পরিচিতিরও দরকার। তাই দেখে শুনে কিছু কাগজে তাদের লেখার অন্তর্ভুক্তি দরকার, তবে সম্মান টম্মান পতনের মূল।

১৯)  আপনার কতগুলো একক কাব্যগ্রন্থ আছে। প্রতিটি কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে বা আপনার কবিতার মাধ্যমে আপনি পাঠকদের কি বার্তা দিতে চান?

➤ কাব্য গ্রন্থ কবিতা জীবনের কারোরই কোনো ফ্যাক্টর নয়। কবিতাই বিচার, যদিও আমার ভুল বশত সাত টি কাব্যগ্রন্থ আছে, কিন্তু কবিতার মাধ্যমে আমি কি আর বলতে চাই, শুধু নিজের না হওয়ানো গুলোকে হওয়ানোর ভেতর আনবার চেষ্টা করি। আমার শেষ কাব্য গ্রন্থ " কোনো ম্যাজিক কোনো ফুৎকার" ২০১৬ সালে মধ্যবর্তী থেকে বেরিয়েছিল। আর পরে কোনো বই বেরোবে কি না জানি না, ইচ্ছেও বিশেষ নেই। দেখা যাক। পাঠক রা আমার কবিতায় কি আর বার্তা পাবেন। তারা শুধু ট্রেন্ড টা ফলো করতে পারেন। 


২০) আপনি কি বিশ্বাস করেন কবিতা লিখে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব?

➤কি আর বলব বলুন সমাজ এখন ভদ্রবেশী লম্পট, চাটুকার, বেশ্যা, মাতব্বরে ছেয়ে গ্যাছে। এদের শূর প্রবৃত্তি নষ্ট হয়েছে। কবিতার সূক্ষ আর্ট ও দর্শন এদের কোনো পরিবর্তনই আনতে পারবে না। কেবল সাময়িক একটু ভাব লোলুপতার ঝলক আনতে পারে। এখন কলির ধ্বংসই আমি মনে প্রাণে চাই।

২১) কবিতা লিখতে এসে আপনাকেও নিশ্চয়ই অনেক প্রতিকূলতার স্বীকার হতে হয়েছে? আমাদের পাঠকদের সতর্কতার জন্য কিছু বলবেন আপনার অভিজ্ঞতা ---

➤সে তো সবার মতো হয়তো আমারও এসেছে। অনেক সময় শব্দ হারিয়ে ফেলেছি, বিভিন্ন মানসিক প্রতিবন্ধকতা আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। মানুষের জটিলতার পরিসংখ্যান আমি খুঁজে পাই না। এসবের ভেতর নিজের মননের গুনীন কে স্থির রাখতে হয়, থেমে যেতে হয়, চেপে যেতে হয়, রক্তে দাগ পড়লেও মগজকে হাওয়া লাগিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করতে হয়। কেউ কাউকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না। নিজেকে ভেঙে নিজেকেই গড়তে হয়।

২২) আপনি আপনার পাঠকদের কাছে কী প্রত্যাশা করেন?

➤ সত্যি কথা বলতে আমার কোনো প্রত্যাশাই নেই। সারা জীবন লেখায় থাকতে চাই, পারব কি না জানা নেই। 

২) উৎস দা আপনার কি মনে হয় কবিতা শেখানো যায়? যদিও নতুন লিখতে আসা কবিরা যদি construction গোছাতে না পারে, তাদের বলা  হয় যে,এই জায়গাটা এরকম না হয়ে,এরকম হলে মনে হয় আরও কমপ্যাক্ট হোতো। এটাও তো একপ্রকার শেখানোই।এটা আমিও মনে করি। আপনার কি মনে হয়?

➤ দেখুন কবিতা হাতে ধরে শেখানো যায় না আবার যায়ও। শব্দের কালচার করার জন্য বিভিন্ন রিসেন্ট তরুন দের বই গুলি পড়া দরকার যারা কবিতাকে an extraordinary amount of scientism এ পরিণত করেছে। নিজেকেও নতুন শব্দ সন্ধান করতে হবে, ব্যবহারের এক ঘেয়েমি ছাড়তে হবে। শব্দের স্বাভাবিক ব্যবহার কে ওলট পালট করতে হবে। খারাপ কবিতা অর্থাৎ ডগলাস কুপল্যান্ডের তত্ত্ব অনুযায়ী অসম ভংগুর অমেরামতিকেই কবিতার আদর্শে ফেলতে হবে। সর্বপরি কবিতা লেখায় নিজের একটি আত্ম জৈবনিক আত্ম উদ্ভাবনী বোধ থাকতে হবে। " মাথার ভেতর একটি বোধ" কাজ করাতে হবে

২৩) আমাদের এবং সকল পাঠকদের কাছে আপনার বার্তা---
➤ আমার মতো একজনের আর কিই বা বার্তা থাকতে পারে, তবে কবিতাকে ভালোবাসলে নিজের জীবনের প্রয়োগ কে ভালোবাসতে হবে। অনেক প্রতিশ্রুতিবান কবিই নিজেকে নষ্ট করে দিয়েছেন চরিত্রহীনতায় ও অলসতায়। একটি অধ্যাবসায় কে বহাল রাখতে হবে। হেরে গেলে চলবে না। সংগ্রাম জারী রাখতে হবে।


উৎস রায়চৌধুরীর ৩টি কবিতা_______


১)            পাঁক


নজর লেখা মিশ কালো ব্যাগ 

নতুন কে ফ্লোরেন্স স্টাইল

আলো কে কিন্তু করেছো

আমি সোহাগের এল এম মাঠে

চর চর গোবিন্দ গুলি এখন হারমোনিয়াম


রা খুঁজে পেতে আসর ভাবছি

সে ভাবছে হাতে লেখা ইস্কাবনের বিবি

মর্মর প্রোলেতারিয়েতে কত হরিণ

তোমাকে নামিয়ে নিল ফুটপাতে

অসম লেডিস মিন্স স্ট্রুয়েশনের কামড়ায়।



২)         ইন্টারপ্লে


হারানো খরচের বাস্প উড়ছে গলা

পে করছে চোখ ছবি অথবা বাইকে

প্রসাদ একতরফা সে বলে মেঘ কালার

আরশি জমাচ্ছে ইউ এস ফেরৎ যুবকে

ম ম করছে মোরামের প্যান্টি স্মেল গ্রাউন্ড


শুয়ে থাকা বা রো ধরা ডিকশনারি

এলো মেলো তারের বাগান

আল হাবিব বললেই খাঁচায় কৃষ্ণ মন

আওতায় জমি খেলাপের রেঁস্তোরায়

সব স্যাডিস্টিক বললেও ইউক্যালিপটাসএর সিনেমা। 



৩)                 দু প্রকারের দিন



দিনে দিনে ফি একটাই না কেবল পালট

ফোনের ফসফরাস অফ কেবল সরিয়ে দেখছো

ছায়ায় শুয়ে আছে আমার মেয়ে

কলামে ঘোড়াদের খেলনা বাটি কত শত

কেবল আজ রোদ লিখতেই চাঁদ হয়ে গেল


দেখা উল্টে গেলে দিনও হয় আরেক

শ'য়ে শ'য়ে চোরা গলি ঝুলে আছে 

মা'য়ের আশীর্বাদ কাঁটায় কাঁটাতেও বাগান

গোলাপিরা ঘর ভরাবে এজলাশের পরে

তখন তার ও তার ছি বুড়ি যৌন উপাচার।


ধন্যবাদ উৎস দা, আপনার সারাদিনের ব্যস্ত সময় থেকেও আমাদের পত্রিকা এবং আপনার পাঠকদের জন্য সময় দেয়ার জন্য। ভালো থাকবেন দা,  সুস্থ থাকবেন। সাহিত্যে থাকবেন।  


Monday, August 10, 2020

|| এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||

|| এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা || 

আজ এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা" থাকছে কবি কার্তিক ঢক্। কার্তিক দা ১৯৯০ সাল থেকেই লেখালিখি শুরু করেন এবং এ বিষয়ে তার পাশে বিষ্ণুপুরের আরও একজন কবি, সুব্রত পণ্ডিত। কার্তিক দা পেশাগতভাবে বিষ্ণুপুর রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ঢোকার আগে ডানদিকে একটি সেলুন পরিচালনা করে তাঁর ১৫ বছর বয়স থেকেই। এর সাথে সাথে সাহিত্য চর্চাও সমানভাবে নিয়ে চলেছে। তাঁর দোকানেই আমরা অনেকজন কবি সান্ধ্যকালীন আড্ডায় বসি যেখানে সাহিত্য বিষয়ক আলোচনাই হয়ে থাকে।কার্তিক ঢক্-কে সেলুন কবি নামেই বিষ্ণুপুর সহ অনেকেই চেনে---




নমস্কার কার্তিক দা

---অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

আমি অভিজিৎ  দাসকর্মকার । তুমিতো জানোই, সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনের নতুন যে বিষয় প্রতি মাসে ২ বার বের করছি "এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা " --- থেকে তোমার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি।
কেমন আছো দাদা?

-----এসো অভিজিৎ। চলছেগো পরিস্থিতি অনুযায়ী। 

 ভালো আছি বললে মিথ্যে বলা হয় আবার
খারাপ আছি বললেও মিথ্যে বলা হবে-
কারণ বিশ্ব জুড়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি - এতো মানুষের মৃত্যু মানসিক বিষন্নতায় ঢেকে দিচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত, অথচ আমার কিচ্ছুটি করার নেই! 
আবার দীর্ঘ লক্-ডাউনের জেরে প্রচুর খেটেখাওয়া- দিন আনা দিন খাওয়া গরীব মানুষগুলির যে কষ্ট ( আমার থেকেও যাদের অবস্থা আরো শোচনীয় ) তাদের থেকে একটু হলেও ভালো আছি তো।অতএব ভালো নেই বলাটাও ভুল হবে তাই পরিস্থিতির বিচারে কেমন আছি সহজেই বোঝা যায়।

দাদা তোমার কাছে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। তুমি যদি তোমার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের এবং এই ওয়েবজিনকে ও তোমার কবিতার পাঠকদের জন্য তোমার কথাগুলো বলো।

---বেশতো বলো।
জানোই তো আমি কতোটা ব্যস্ত থাকি সারাদিন 
তার মধ্যেই তো সবসময় কবিতার সঙ্গে থাকি।


১) কিভাবে কবিতা লেখায় এলে?

➤স্কুলবেলা থেকে গল্প লিখতাম। টুকটাক ছড়া ও কবিতাও। 
স্কুলে পড়াকালিন হঠাৎ বাবা মারা যান ১৯৮৩তে।
পড়াশোনার পাশাপাশি হাতের কাজ শিখতে হয়, দোকানে থেকে গল্প লেখার সময় খুব একটা পাওয়া যেতো না তাই সময় পেলে কবিতা লিখতাম।
এভাবেই কখন যেন কবিতায় ডুবে গেলাম।
আর এখন তো প্রায় সকলে আমাকে সেলুনকবি বলেই জানে...

২) তুমি তো সারাটাদিন সেলুন নিয়ে ব্যাস্ত। যদি কবিতা বা সাহিত্যে না থাকতে তবে তোমার অবসর কিভাবে কাটতো কখনো ভেবেছো?

➤তা ভেবেছি বৈকি।
আসলে আমার অনেক গুলি নেশা ছিলো। 
তার কিছু কিছু এখনো আছে, সময় পেলে মাঝে মাঝে বসি। যেমন গান শোনা,গানটা আমার খুব প্রিয় এখনো প্রায় সময় গান শুনি।
আমার লেখা বেশ কিছু গানও আাছে।
তা ছাড়া এক সময় ছবি আঁকতাম খুব,স্লেটের
ওপর খোদায় করতাম বিভিন্ন মনীষীদের ছবি, মাটির নানারকম মূর্তি  বানাতাম।এইসব একসময় ভালোয় করতাম। 
কবিতায় না থাকলে হয়তো এগুলির কোনো একটি নিয়েই সময় কাটতো।


৩) তোমার কবিতা জীবনে কার অবদানকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দাও?

➤অবশ্যই সুব্রতদা। বিষ্ণুরের সুব্রত পন্ডিত আমার দাদা এবং বন্ধু অত্যন্তভালো মানুষ। সুব্রতদার হাত ধরেই আমার সিরিয়াস কবিতায় আসা সেটা নব্বই দশকে ।
তখন কাঁচা লিখতাম সুব্রতদাই লেখার খুঁটিনাটি বিষয় গুলো বুঝিয়ে দিতো। বিভিন্ন পত্রিকায় লেখাও পাঠিয়ে দিতো।পরবর্তী সময়ে পরিচিত হয়েছি চারণকবি বৈদ্যনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।কবি বিকাশ দাশ, কবি সুশীল হাটুই, কবি প্রভাত চৌধুরী কবি আফজল আলি।এনাদের প্রত্যেকের কাছে আমি বিভিন্ন ভাবে লেখার প্রেরণা পেয়েছি।
তারপর তো  বহু গুনি মানুষের সানিধ্যে এসেছি, তাদের কাছে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি ঋদ্ধ ও হয়েছি।

আমার না- লিখতে পারার দিন গুলিতে তোমার খোঁচা দেওয়া বা রাগ করা সেটাও তো এক রকম প্রেরণা। ঠিক কি-না। 

৪) তুমি কোন ধরনের কবিতাকে বেশি প্রাধান্য দাও ?

➤ আমি সময়োপযোগী লেখাকেই প্রাধান্য দিই
বেশি।  যে কবিতা শরীরে লাবণ্য আছে তেজ আছে। আছে শানিত কন্ঠ এধরনের
নতুন  লেখা,নতুন আঙ্গিকের লেখা,নতুন শব্দচয়নের লেখাকে।


৫) তোমার প্রিয় কবিতার বই কোনটি, যা নিয়ে তুমি তোমার ভাল না লাগা সময়গুলো কাটিয়ে নিতে পারো?

➤ জীবনানন্দ দাস সমগ্র। 
আজও আমার কাছে নতুন। ওনার একটা কবিতাই আমাকে সারাদিন ঘোরের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে যথেষ্ট। 

৬) তুমিতো ৯০ দশক থেকে লিখছো। তোমার কবিতা এখন main stream থেকে কিছুটা আলাদা । তুমি ক্যানো main stream থেকে বেরিয়ে লিখছো ? আসলে এই আবহমান বা main stream এ লিখলে তো অনেক নাম ডাক সম্মাননা এমনকি পুরস্কারে ছয়লাপ হয়ে যেতো । এই বিষয়ে কিছু বলো কার্তিক দা---

➤এটা প্রায় সকলেরই হয়। লিখতে লিখতে
সময়ের সাথে সাথে লেখার,  ভষার বা ভাবনার পরিবর্তন হয়ে যায়।
আমার লেখাতে আমি সময়কে প্রাধান্য দিতে চাই।সময়কে না ধরলে তো পিছিয়ে পড়তে হয়। 

আর দ্যাখো,সন্মাননা বা পুরস্কার পেতে কার না ভালো লাগে।
তবে আমি কখনোই এগুলির কথা ভেবে লিখতে আসিনি। বললাম যে আমি খুব ছোটো থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। সেই বয়সে তো পুরস্কারের ভাবনা মাথায় আসার কথাও নয়।
লেখাটাকে ভালোবেসেই লিখে যায়।না লিখে
থাকা যায় না তাই... 
যদিও কবিতা লিখতে গিয়ে আমি অনেক কিছু
হারিয়েছি তবুও কবিতার সঙ্গে থেকেই  অনেক মানুষের কাছ থেকে প্রচুর ভালোবাস ও সন্মান
পেয়েছি যা আমার কাছে খুবই মূল্যবান।


৭) এখন কবিতায় অনেকেই সিম্বল, ইকুয়েশন এমনকি খিস্তিও ব্যবহার করে কবিতাকে বিভিন্নতা দেয়ার চেষ্টা করছেন । এ বিষয়ে তোমার অভিমত কী?
➤কেনো যাবে না?
 তা তো করা যেতেই পারে। কবিতায় ভাঙা-গড়া ধারাবাহিব ভাবেই চলে আসছে।এগুলি তাদের চিন্তার স্ফুরণ ও রুচির পর্যায়ে থাকে।
সে ক্ষেত্রে তার  ব্যবহার বা প্রয়োগটি একটি মস্ত বড় ব্যাপার।
এইযে সিম্বল,ইক্যুয়েশন বা খিস্তির কথা বলছো
ধরো কেউ যদি তার কবিতাকে স্মার্ট বা সমসাময়িক রূপ দেবার কথা মাথায় রেখে এগুলি ব্যবহার করে তাতে কোনো বাধা নেই।লক্ষনীয় বিষয় হোলো তার সঠিক প্রয়োগ।
যদি ভাবনা বা বোধের সাথে মিশে গিয়ে স্বভাবিক ভাবে আসে আলাদা কথা আর যদি মনে হয় তা জোর করে ঢোকানো হয়েছে তবে
দেবীপ্রতিমাকে জিন্সের পেন্ট আর টি-শার্ট পরানোর সমান হবে।

৮) তুমি কেনো কবিতা লেখো ? তোমার কবিতায় তোমার কর্মস্থল এবং কর্মের বিষয় আসা যাওয়া করেছে?

➤মনের স্ফুলিঙ্গকে ছড়ানোর জন্য কবিতা লিখি।কবিতা আমার কাছে  সমস্ত রকমের অন্যায় ও অসামনঞ্জস্যের প্রতিবাদের ক্ষেত্র।অবশ্যই প্রেম বর্জিত নয়।প্রত্যেকেরই কিছু ভালো লাগার জায়গা থাকে তো। কবিতাকে ভালোবেসেই কবিতা লিখি।কবি হবো বলে নয়।না লিখে থাকতে পারি না। 

যার সঙ্গে দিন রাতের বেশিরভাগ  সময় কেটে যায়--
সে বিষয়ের ভাবনা তো স্বাভাবিক  ভাবে আসবেই।আমার কর্মস্থল নিয়ে, আমার কর্মজীবন,আমার কর্মের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কিছুই  আমার কবিতায় আসে। 
একটি কবিতার লাইন এরকম  " কাঁচি দিয়ে চুল ছাঁটতে ছাঁটতে / কখন যে ছেঁটে ফেলেছি  ইচ্ছের আয়ত ডানাগুলি... "

৯)  আচ্ছা কার্তিক দা তুমিতো নিশ্চয়ই বিভিন্ন ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সাথে যুক্ত?  তোমার কী মনে হয় কবিতা লেখায় এই মাধ্যমগুলো কতটা জরুরি? 

➤ভীষণই জরুরি। যে সময়ের ওপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি তার পরিপূরক হিসেবে এই গুলির প্রয়োজন আছে। এই অনলাইন মিডিয়া গুলির দৌলতে মূহুর্তের মধ্যে প্রচুর লেখা পড়তে পারছি আমরা,খুব সহজেই পৌছে যাচ্ছি কবির কাছে তার কবিতার কাছে। জানতে পারছি তাদের লেখার ধরণ।
কিন্তু প্রিন্টমিডিয়ায় সেই গতি নেই,
ধরো আজ আমার একটি কবিতা কোথাও প্রকাশিত হল, কিন্তু আমি জানতেই পারলাম না, জানছি হয়তো এক মাস, দু'মাস বা তিন মাস পরে।ততক্ষণে সেই কবিতাটির প্রতি ততেখানি মায়া থাকে না আর।
তাই সময়ের প্রেক্ষিতে এগুলি খুব জরুরি। 
আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রিন্ট মিডিয়ারও প্রয়োজন আছে। যেমন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে। 

১০) কার্তিক দা তুমি কাদের লেখা পড়বে এইসময়ে ? কেনো? 

➤সমসাময়িক লেখা অর্থাৎ এই সময়ের লেখা। গঁতের বাইরে বেরিয়ে লেখাকে প্রাধান্য দিইআমি। কেনো না আমরা সবাই নতুন কিছু পড়তে চাই নতুন কিছু শিখতে চাই।
আর নতুন ভাবে কিছু লিখতে চাই।
এভাবেই একটা নতুন থেকে হেঁটে যাওয়াতেই আর একটা নতুনের জন্ম হয়...

১১) যেহেতু তোমার লেখা কিছুটা main streem থেকে আলাদা। অতএব তোমার পাঠককুলের পরিধি কেমন বলে তুমি মনে করো?

➤সেভাবে যাচাই করিনি কোনোদিন। সোসাল-মিডিয়া ছাড়াও অনেকেই পার্সোনাল ইনবক্সে ভালো লাগার কথা জানায়। সেটা অবশ্যই ভালো লাগে।


১২) কবিতায় বহুরৈখিকতা রাখার বিষয়টি তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে?

➤কবিতায় বহুরৈখিকতার প্রয়োজন আছে।একই ধারার লেখা পড়তে  পড়তে যখন আমাদের মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন বহুরৈখিক লেখা সেই ক্লান্তি থেকে আমাদের মুক্তি দ্যায়।যেহেতু ব্যপারটা বহুরৈখিক  তাই পড়ার ক্লান্তিও সহজে আসে না।

১৩) আচ্ছা তোমার এই সেলুন দোকানের ব্যস্ততা, ঘাটকামানো। তার সাথে রীতিমতো একনিষ্ঠভাবে সাহিত্য যাপনে থাকা । তোমাকে নিয়ে কোনো কাজ কোনো পত্রিকা করেনি কখনো? 

➤হ্যাঁ,করেছে। আনন্দবাজার পত্রিকা আমাকে নিয়ে দুবার ২০০৫ ও ২০১৯ এ ফিচার করেছে।দিনকাল পত্রিকা করেছে। এইসময় সংবাদপত্র করেছে।


১৪) আচ্ছা কার্তিক দা কবিতা পাক্ষিক থেকেই তোমার লেখা প্রথম প্রকাশিত হয়? আর প্রভাত চৌধুরীর সাথে তোমার পরিচয়ের সময়কালটা একটু আমাদের বলো,শুনি____

➤আমার কবিতা প্রথম প্রকাশ নব্বইয়ের দশকে।তার অনেক পরে আমি কবিতাপাক্ষিক এ লিখতে আসি। প্রভাতদার সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের দিনক্ষণটি ঠিক মনে নেই।
বিষ্ণুপুর যদুভট্ট মঞ্চে  সমাকৃতির উদ্যোগে একটি কবিতার অনুষ্ঠান হয়  সেখানেই শ্রদ্ধেয় প্রভাত চৌধুরীর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ
যিনি আজকে আমার প্রভাতদা, আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। আমার বানান ভুল হলে ভীষণ বকেন...


১৫) তোমার কী মনে হয় web.mag, print media কে একসময়  অতিক্রম করতে সক্ষম হবে?

➤ সে তো করবেই।কালের প্রভাবকে তো অস্বীকার করা যায় না।আগে তো আমরা চিঠি পড়তাম।চিঠি আসতো।
কুশল বিনিময় হতো তার মাধ্যমে। সুখ-দুঃখের  আদান প্রদানেরও মাধ্যম ছিল চিঠি। কিছু অফিসিয়াল চিঠি পত্র ছাড়া সবই তো এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমাদের ধৈর্য কম জীবনযাত্রায় ব্যস্ততা বেড়েছে, সে জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি কোনো সহজ মাধ্যম পাই তবে আমিতো তাকে গ্রহন করবোই।তাই প্রিন্টমিডয়াকে গ্রাস করছে অনলাইন মিডিয়া। সময় তার নিজের জায়গা নিজেই তৈরি করে নেয়।

১৬) এখন তরুণ প্রজন্মের অনেক কবিরা অজস্র কবিতা লিখছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশও হচ্ছে। কিন্তু তারপর আর কবির হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না এমনকি কবিতাগুলোও না। তোমার মতে এর কারণ কী? 

➤এর অন্যতম একটি প্রধান কারণ হল প্রকৃত পৃষ্ঠপোষকতার অভাব তা সেটা সামাজিক ভাবেই হোক বা সরকারি ভাবে।
সোসাল মিডিয়ায় আমরা লক্ষ করি  সম্ভাবনার কলম নিয়ে অনেক নতুন মুখ এগিয়ে আসছে। কিন্তু,তাদের অধকাংশের মাথাকে সারাক্ষণই গ্রাস করে রাখে অর্থনৈতিক চিন্তা।এটা তাদের কাছে একটা প্রতিবন্ধকতা। 
তাদের কাছে সাহিত্যের থেকে ভাত রুটির তাগিদটাই বেশি। এইটি আমি অনুভব করি খুব। আবার কিছু শখের তাগিদে আসে দু-চারটা কাগজে লেখা বেরোনোর পর তাদের শখও কমে যায়...


১৭) চারিদিকে কবিতার জন্য বিভিন্ন ম্যাগাজিন, সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কবিদের সম্মান জানানো হচ্ছে। এতে কি কবিতার উন্নতি হচ্ছে? এ বিষয়টিকে তুমি কিভাবে দেখো?

➤দ্যাখো,পুরস্কার দিয়ে অনুপ্রাণিত করা এক অর্থে ভালো। তবে, সেভাবে কবিতার প্রকৃত উন্নতি হচ্ছে বলে আমার মনে হয়না। তার কারণ সব সময় যোগ্য মানুষটিই পুরস্কৃত হচ্ছে এমনটি নয় তার মধ্যে অনেক বেনোজল ঢুকে যায় এটা সর্বজন বিদিত, আমরাও আমাদের চার পাশে  তা প্রত্যক্ষকরি। 
কিছু মানুষ সত্যিই তার যোগ্যতার জন্য অবশ্যই সন্মানিত হচ্ছে,তাদের কাজের কাছে গেলে কবিতার কিছুটা উন্নতি আমরা বুঝতে পারি।
বাকিটা বেনোজলের নোনা ঢেউয়ে  ভিজে যায় আর আমরা হাওয়ায় তরোয়াল চালিয়ে যুদ্ধ জয়ের কথা ভাবি। আবার কোনো কবিকে পুরস্কার দিয়ে তার স্বকীয়তাকে শৃঙ্খলিত করা হয়। কিছু কিছু কবিতার বইয়ে  কবিতার শরীর নেই - শরীরে প্রাণ নেই তবু
সেগুলিও অনায়াসে পুরস্কৃত হচ্ছে। এগুলো ঠিক পাটকাঠি দিয়ে সাঁকো গড়লে যেমন হয়!


১৮)  তোমার একক কাব্যগ্রন্থ আছে ২টি । নামগুলো, প্রকাশকাল আর প্রকায়নার নামগুলো একটু বলো। এই  কাব্যগ্রন্থগুলির মাধ্যমে বা তোমার কবিতার মাধ্যমে তুমি পাঠকদের কি বার্তা দিতে চেয়েছো?

➤আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "নৈঃশব্দ্যের বাতায়ন" কোনো প্রকাশনা নয়। প্রকাশক ছিলেন কৃষ্ণকিশোর কবিরাজ ( বিষ্ণুপুর) আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় মানুষ। আমার লেখা পড়ে ওনার খুব ভালো লাগতো তাই ব্যাক্তিগত খরচায় এটি ছিলো তার  আমার প্রতি ভালোবাসার উপহার। প্রকাশ অনুষ্ঠানটি হয়েছিলো ২০০৫ সালে শ্রদ্ধেয় কবি বিকাশ দাশ এর হাতদিয়ে। বিষ্ণুপুর কর্মচারী ভবনের সভাগৃহে 
বহু গুনিজনের সমাগমে। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ "একটি নির্বাক শব্দবৃত্ত" এটি বইতরনী প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত 
আমার খুব প্রিয় মানুষ অরিজিৎ চক্রবর্তীর হার্দিক সহযোগিতায়। প্রকাশকাল ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ কলকাতা প্রেসক্লাবে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী পল্লব কীর্তনীয়ার হাতদিয়ে। 

 একজন সমাজসচেতন নাগরিক হিসেবে  মানবিক মূল্য বোধের জায়গা গুলিকে সংরক্ষণের বার্তা।
আমাদের মেরুদণ্ড হোক নমনীয় কিন্তু ঋজু... 

১৯) তুমি কী বিশ্বাস করো কবিতা লিখে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব? 

➤এটা আগে সম্ভব হতো বা ছিলো । নজরুলের কবিতায় " কারার ঐ লোহ কপাট..." প্রভাবিত হয়ে  জেল খানায় আন্দোলন হয়েছিলো। এখন ব্যাপারটা অন্যরকম,ধরো কারো একটি ভালো কবিতা শুনে হয়তো অনেকে হাততালি দেবে বাহবা দিতেপারে কিন্তু সেই ভাবনাকে তাদের কর্মজীবনে হয়তো কখনো প্রয়োগই করবে না। কেনো না বর্তমানে মানুষ যাই করুক সচেতন ভাবেই করে অবচেতনে করে না।
আবার এমনটাও তো দেখি, কেউ একটি কবিতায় দারুণ দারুণ লাইন ব্যবহার করছে অথচ তার ব্যবহারিক জীবনের সাথে তা মেলেই না। সেটিও তো পাঠক বা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়।

অর্থাৎ কবিতা লিখে বা কবিতায় নতুন করে বলে মানুষের জাগা ঘুমকে ভাঙানো ভার,এবং তা অত্যন্ত কঠিনও।

২০) কবিতায় জটিলতা বিষয়টি এবং ভালো কবিতা বলতে তোমার মতামত কী, আমাদের পাঠকদের কিছু বলো। 

➤আমার মত হল কবিতায় জটিলতা ও ভালো কবিতা, এই দুটিই আমার কাছে আপেক্ষিক। 
কেন না, আমি হয়তো সেই চিন্তা বা বোধের জায়গায় পৌঁছাতে পারছি না তাই আমার কাছে জটিল।
আর কবিতায় ভালো বা খারাপ সেভাবে বলা যায় না।  আমার কাছে যেটা ভালো সেটা অন্যের  ভালো না লাগতে পারে।প্রত্যেকেই তার নিজস্ব এঙ্গেল থেকে বিচার করে। 
কবিতার শরীরের  প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিক ভাবে স্থাপন করাটিই একজন কবির প্রকৃত কাজ। 

২১) কার্তিক দা, তুমি তোমার পাঠকদের কাছে কী প্রত্যাশা করো ?

➤কবিতা গুলি পড়ে তাদের মতামত দিয়ে আমাকে শুধরে দেওয়া -
আমার ভাষায় বোতামখোলা কমেন্ট... 

২২) কার্তিক দা আমাদের এবং সকল পাঠকদের কাছে তোমার বার্তা---

➤বর্তমান সময়ে অর্থাৎ আমাদের এই সিরিয়াস  লাইফস্টাইলে কবিতার খুব প্রয়োজন মনে হয়। কেননা কবিতা আমাদের যে মননটি উপহার দিতে পারে তা খুবই অমূল্য। এই সময়ে দাঁড়িয়ে  আমি তার প্রয়োজন অনুভব করি।আর এই কাজটি তুমি বা সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন যে ভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছো তার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোটো করবো না।আমি জানি তুমি তোমার কাজের জায়গায় কতোটা মনোযোগি। আশা রাখি আগামীতে আরো ভালো রূপ দেখতে পাবো এই ওয়েবজিনের।
তাই অনেক ভালোবাসা রাখলাম।

কবিতা পড়ুন, কবিতার সঙ্গে কিছুটা হলেও সময় অতিবাহিত করুন।
মুখোশ না খুলে রাখলে আমরা আমাদের স্বরূপ দেখতে পাবো না।


কার্তিক ঢক্-এর কবিতা দিলাম--

।  পেরেক । 
যে মাশরুমটির নীচে আমি ভাতঘুম দিই
তার চুড়িতে বেহাগ বাজে না! 
সমস্ত স্বরলিপি জুড়ে নোনা জলের বুদবুদ পাখনায় বিষাদ মেখে মাছ খেলা করে জলের শূন্যতায়...

বাইরে কোকিল গাইছে, সবুজ হারমোনিয়ামে ভ্রমরের মেন্ডোলিন ঝরনা
প্রজাপতিদের রঙিন হাততালি - দুপুরের নীল আকাশ জুড়ে...

আমার ঘুমে পেরেক পিঠছে অ-সফল স্বপ্নের বাদ্যযন্ত্রের হাতুড়ি ! 

। নদীর বর্গক্ষেত্র । 

নদীটির বর্গক্ষেত্র জুড়ে বিদ্যুৎ খেলা করে-
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে চায় যে যুবক হরিণ
মৃত্যুকে নিতে চায় বোতামবিহীন তৃষ্ণার সিক্সপকেটে।

চাঁদের অন্তঃসলিল স্রোত নিয়ে যায় বদ্বীপঘেরা অন্ধকার উপকূলীয় চোরাকুঠুরিতে--

আমাজনি ভালোবাসার গন্ধে রতি-বিষন্ন 
নাইটল্যাম্পের ব্লু-চোখে ঘন হয় ঘুমের কাজল।
রাতের শরীর থেকে বেরিয়ে আসে হলুদ বাঘ--
উজ্জ্বল চামড়ার শ্বেত ভল্লুক। 
চিড়িয়াখানার জাঁকজমক আলো নিয়ে ঝলমল করে চাঁদের বর্গক্ষেত্র --
খাঁজে খাঁজে মহাকর্ষীয় বিদ্যুৎশিখা...

। ধূসর ট্রাউজার। 

আলগা বাঁধন থেকে বিরহ-গান ভেসে এলে
অবয়বে দোলা খায় ধূসর ট্রাউজার। 
কুলুঙ্গির প্রদীপ কাঁপে ভুষাকালি মাখা
দুহাতের চাঁদ হেঁটে যায় অমাবস্যার বাতায়নে... 

কী দিয়ে গোপন করি অন্ধকার আসবাব! 
কালো বেড়াল চেটে খায় ফোটানো দুধের বাটি
ঘড়ির চৌকিদারিতে নির্মম কাঁটা।

সুতো থেকে খসে পড়ে সুচ-- রক্তাক্ত হয় বেকুব করবী...

                                                                 (প্রকাশিত  কবিতাপাক্ষিক  শারদ সংখ্যা ২০১৯)

কার্তিক ঢক্-কে সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনের তরফ থেকে অনেক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রইল। তুমি তোমার ব্যস্ততার ফাঁকেও আমাদের এবং তার পাঠকদের জন্য তার মনের কিছু কথা শেয়ার করলেন। এই পরিস্থিতিতে ভালো থেকো।সুস্থ থেকো।            




Friday, July 10, 2020

|| এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন ||
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||


|এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা || 

আজ "এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা"- থাকছেন কবি দেবযানী বসু।দেবযানী বসু শূন্য দশকের কবি। দিদির লেখা বরাবরই চলমান ধারার বাইরে। দেবযানী দি আমাদের সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনের দ্বিতীয় সংখ্যা থেকেই আমাদের সাথে রয়েছেন


                      
                                      

নমস্কার দেবযানী দি।

--- 
আরে এসো এসো অভিজিৎ।
আমি অভিজিৎ  দাসকর্মকার,আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনের নতুন যে বিষয় প্রতি মাসে ১০ তারিখ বের করছি "এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা ",সেই বিষয়েই আপনার সাথে কথা বলার জন্য এসেছি।
কেমন আছেন দিদি?

----- 
দেখছি তো।বেশ সুন্দর কাজ করছো
       হ্যাঁ গো।ভালো আছি।
দিদি আপনার কাছে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। আপনি যদি আপনার ব্যস্ত সময় থেকে আমাদের ওয়েবজিনকে  আপনার পাঠকদের জন্য আপনার কথাগুলো বলেন।

----- 
নিশ্চয়ই।বলো।  

আপনি কবে থেকে কবিতা লিখছেন বা সাহিত্যের সাথে যুক্ত আছেনকিভাবে কবিতা লেখায় এলেন?

আমি শূন্য দশকের। ২০০৫ সাল থেকে চর্চা শুরু করেছিলাম ঘরে বসে।২০০৬  কৃত্তিবাস প্রকাশন থেকে  'দেবযানীর স্বীকারোক্তিনামে একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়। এর আগে কখনো কোথাও কোনো পত্রিকায় লিখি নি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে সরাসরি তখনো দেখিনি। বই কবিতা পড়েছি। কবিতার পান্ডুলিপি দেখে ওনার পছন্দ হওয়ায় প্রকাশ করেছিলেন। ব্যস। এতে করে আমার আত্মপ্রত্যয় বেড়ে যায়। এবং ধীরে ধীরে কবিতা জগতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে।তখন আমি চল্লিশোর্ধ্বা সংসারী নারী। একটি একান্নবর্তী পরিবার থেকে বসবাস উঠিয়ে ফ্ল্যাটবাড়িতে উঠে আসার পর সামান্য সময় নিজের করে হল। কিশোরী বেলার  লেখা কবিতা  গল্প যা কিনা খাটের তলায় অবহেলায় জমানো ছিল কোথাও প্রকাশিত হয় নি সাহিত্যের দন্ত্য  টুকুও ভুলে গেছি সেগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে কবিতা লেখার ইচ্ছেটা চাগাড় দিয়ে ওঠে। আর বাংলা ভাষা  সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছি বলে ফ্লাটের অধিবাসীরা দুর্গাপূজার সময় সুভেনিয়ার বার করবে বলে কবিতা চাইত এবং আমাকে লিখতে হত। অতএব এই হল কিভাবে কবিতা লেখায় এলাম। 

যদি কবিতা বা সাহিত্যে না থাকতেন তবে কোন বিষয় নিয়ে থাকতেন ?
 এই প্রশ্নটি আমাকে করার উপযুক্ত প্রশ্ন নয়। আমি জীবনের এক তৃতীয়াংশ পার করে কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম। আমি অনেক কিছু নিয়ে থেকেছি। সাঁতারযোগব্যায়ামসাইকেল চালানোগান গাওয়াপরীক্ষামূলক রান্নাবান্না , সন্তানপালনভ্রমণ ইত্যাদি। এখন কবিতা থেকে চলে যেতে পারি। বা যেতে হবে। পড়াশোনা নিয়েই থাকব যেমন আছি। খুব সাধারণ একজন গৃহবধূ। মাই স্কাই ইজ লিমিটেড। শিয়রে বয়সজনিত নানা বাধাবিঘ্ন।
আপনার কবিতা জীবনে কার অবদানকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেন ?
 এইভাবে কেউ একজন শ্রেষ্ঠ অবদানকারী থাকে কীতাহলে তো প্রথমেই বলতে হয় পারিবারিক অবদানটাই শ্রেষ্ঠ। আবার কবিতার জগতে অনেক কবি সাহায্য করছেন।তবু সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেব আশির দশকের কবিদের। প্রভাত চৌধুরী কবিতায় হাতেখড়ি করিয়ে দিয়েছিলেন।আর কবিতা ক্যাম্পাসের অলোক বিশ্বাস বইপত্রপত্রিকা পড়তে দিয়ে প্রচুর সাহায্য করেছেন। কবিতা লেখাতেও সাহায্য করেছেন।এটাই কবিতার পথ চলায় উল্লেখযোগ্য একটা দিক।
)  কোন কবিদের লেখা আপনার পছন্দেরবা এমনও বলতে পারেন আপনার কাছে কোন ধরনের কবিতা বেশি প্রাধান্য পায়?
 ভাষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা মূলক কবিতা বেশি ভালো লাগে। তবে সেটাও শেষ কথা নয়। আবেগঘন কবিতা না হলেই হল। চিন্তায় মননে একটু বুদ্ধিদীপ্ত প্রকাশ  রসময়তা থাকলেই মনের কাছে গ্ৰহণযোগ্য হবে। খুব তরল অবস্থার কবিতা পছন্দ নয়। সে সব তো এতদিন লেখা হল। ক্যান্ডিড ছবির মত। অ্যাবস্ট্রাক্ট ছাড়াও ভাষার অন্তর্লীন সূক্ষ্ম কারুময়তা ভালো লাগে। গল্প বলে বলে কবিতা লেখার কোনো মানে হয় না। ভাষা থাকবে সাম্প্রতিক। ভাষা সম্পর্কে কোনো ছুঁৎমার্গিতা থাকবে না। আবার বেদম ইংরেজি শব্দের ব্যবহারও ভালো লাগে না। কবির আসল পরিচয় তার কল্পনাশক্তির প্রাখর্যে।  একেবারে মহাকাব্যের যুগ থেকেই চলে আসছে। শব্দের চমক থাকুক রান্নার ফোড়নের মত। পঞ্চাশের দশকের বারীন ঘোষাল একটি নতুন পথ দেখিয়েছেন শব্দ ব্যবহারের। এই সব করতে গিয়ে ব্যতিক্রমী কবিদের দল দূরতম নির্জন দ্বীপ হয়ে যাচ্ছেন জনগণ থেকে। দেরিদার বিপরীতে গিয়ে অ্যান্টি দেরিদা তত্ত্ব গড়ে উঠেছে। বৈদেশিক হাওয়া আমাদের কবিতায় মডিফায়েড হয়ে স্থানলাভ করেছে। কবিতার ভিতর অনবরত ভাষা  ভাবনার পারমুটেশন কম্বিনেশন চলতে থাকে। কেউ শব্দ ভাঙতে ভয় পান কেউ শব্দ ভাঙাভাঙিতেই আত্মস্থ হয়ে আছেন। কবিতায় ভাষা নিয়ে স্পোর্টসম্যানশিপ খারাপ চোখে না দেখাই ভালো। আমাদের হাতে যে সব অস্ত্র আছে তার সুকৌশলী ব্যবহারেই কবিতায় প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা যাবে।  

আপনার প্রিয় কবিতার বই কোনটিযা নিয়ে আপনি আপনার  ভাল না লাগা বা অবসর সময়গুলো কাটিয়ে নিতে পারেন?
 আসলে এভাবে একজনের কোনো কবিতা বইতে মন আটকে থাকে না। প্রিয় কবিতার বই একটা কি করে হবে।অবশ্যই গীতবিতানের কথা মনে পড়বে সর্বাগ্ৰে। জীবনানন্দ দাশবিনয় মজুমদার এবং অমিতাভ মৈত্র , প্রভাত চৌধুরীমলয় রায়চৌধুরীধীমান চক্রবর্তীঅলোক বিশ্বাস , প্রণব পালস্বপন রায়উমাপদ কর তথা আশির দশকের প্রথাবিরোধী সব কবি,  এবং প্রদীপ চক্রবর্তী,  রিমি দে , গোলাম রসুল,  রুদ্র কিংশুক এদের কবিতা আকর্ষণীয় মনে হয়। এমনকি শূন্য দশকের কবিরাও আমার প্রিয় কবি। তাদের থেকেও শিখি প্রচুর।
বিদ্রআমার অবসর সময় বলে কিছু নেই। সব সময় সংসারে নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে একের পর এক কাজ করে যেতে হয়।  ভাবে এর মধ্যেই দুদশক ধরে কবিতা নিয়ে সামান্য ব্যস্ত আছি। 

আপনিতো ৯০ দশক থেকে লিখছেন  আপনার কবিতা main stream থেকে অনেকটাই আলাদা  আপনি ক্যানো main stream থেকে বেরিয়ে লিখছেন দিদি ? যেখানে  আবহমান বা main stream  লিখলে তো অনেক নাম ডাক সম্মাননা এমনকি পুরস্কারে বাড়ি ভর্তি হয়ে যায়  এই বিষয়ে কিছু বলুন দেবযানী দি---
 আবার বলছি আমি শূন্য দশকের। আসলে মেইন স্ট্রিম ব্যাপারটা কি আমি জানতাম না। আমি অন্ধের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম কবিতা লিখতে। আমার পুঁজি ছিল  স্নাতকোত্তর বিদ্যা আর একটা কবিমন। পাথরচাপা ছিল লেখার আকাঙ্খা। আবহমানকালের কবিতার সংঙ্গে পরিচয় হল কবিতা প্রতিমাসে আর কবি সম্মেলন পত্রিকার মাধ্যমে। ঐভাবে লিখতাম। কিন্তু কোনো ইন্টারেস্ট পাই নি  সমান্তরাল প্রচলিত কবিতা পড়ে। পঞ্চাশের দশকের সৃষ্ট ধারাবাহিক কবিতা পড়ে। একা একা আচমকা বইমেলায় প্রভাত চৌধুরীর স্টলে ঢুকে পড়লাম।কবিতাপাক্ষিক টিমের সঙ্গে পরিচয় হল। জার্নিটা প্রভাত চৌধুরী শিখিয়ে দিলেন। বলতে পারেন মেনস্ট্রিমের বাইরেই কবিজন্মের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হল।
হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। মেইন স্ট্রিমে থাকলে এতদিনে হয়তো পুরষ্কার প্রাপ্তি  খ্যাতি হত। খ্যাতি পাব এই চিন্তাও মাথায় স্ট্রাইক করে নি তখন। প্রভাত চৌধুরীর পোস্ট মডার্নিজম আর  নতুন কবিতার কবিদল মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আমি  আমার কবিতার দিকচিহ্ন নিয়ে ঠিক আছি। কোনো আফশোস নেই। নিজস্ব আইডেন্টিটি তৈরিতে আমার খামতি যেন না থাকে।
পুরষ্কারের জন্য আমার কোনো লোভ নেই।  সব পেলেই বা কি না পেলেই বা কি কিচ্ছু আসে যায় না। আমি অল্পবয়স্ক নই যে ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভয় পাবো। কেউ কবি বলে গ্ৰাহ্য করবে না ভেবে নিজের পছন্দের লেখার পথ ত্যাগ করব  লেখার আনন্দে লিখি। আর খামখেয়ালি  মানুষ। যে দিন ইচ্ছে হবে লেখা বন্ধ করে দেব। আর তা ছাড়া কি এমন লিখলাম যে পুরষ্কার আশা করব সেটা সরকারি হোক কি বেসরকারি


আচ্ছা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইজম বা স্ট্রাকচার ভাঙার মতবাদ এসেছে। আপনার কী মনে হয়এই ইজমগুলোর উপর ভিত্তি করে কারো কবিতা চেঞ্জ হয়?  নাকি কবিতা ইজমগুলোর নিয়মের ভিত্তিতে বিবর্তিত হোতে থাকে?


 ইজমগুলো থেকে ইজমগুলোর নিয়মের ভিত্তি কি আলাদা বস্তুআসলে ভাবনার বিবর্তন নিয়ে প্রাবন্ধিকরা লেখেন আর লেখকরা তাঁকে অনুসরণ করেন। এখন বেশির ভাগ সময়ে লেখকরা নতুন যা আবিষ্কার করেন তাকে প্রতিষ্ঠা দিতে তত্ত্বমূলক প্রবন্ধ লিখতে বাধ্য হন। প্রবন্ধ  রচনা মিলে পরিচিতি গড়ে ওঠে। এভাবে ক্লাসিক , ধ্রুপদী , রোমান্টিক,  লোকসাহিত্য ডাডাইজম , আধুনিকতা , উত্তর আধুনিকতাবাখতিনের দ্বিবাচনিকতা,  অস্তিত্ববাদী কবিতা,  অবয়ববাদী , ধ্বনিবাদ , অলংকারবাদসাহিত্যে মারক্সিজম ইত্যাদি নানা মতবাদের উদ্ভব হয়।
কবিতা লিখতে এসে যার যেটুকু মনে ধরবে সে সেভাবে নিজেকে তৈরি করে নেবে। কেউ জনপ্রিয় কবিতা লিখবে কেউ অপরিচিত কবিতা লিখবে। হ্যাঁ কবিতা লিখনশৈলী অবশ্যই পরিবর্তিত হয়। আর একই নিয়মে কেউ চিরকাল লেখে না। পালে সামান্য অপরিচিত আগন্তুক হাওয়া লাগলে কবিতা নতুন করে সৌন্দর্যময়ী হয়ে উঠতে পারে।
আসলে যুদ্ধটা তো নিজের সঙ্গে নিজের। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে উত্তরিত করার। কবিরা একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হতে হতে নিজেদেরকে ক্রমাগত পরিবর্তিত করতে থাকেন। আর প্রতিনিয়ত নতুন মতবাদের জন্ম হয়। মূলত উপন্যাস ইত্যাদি লেখার ক্ষেত্রে বাখতিন দেরিদা ফুকো নামক যারা যে সব মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এখন লাতিন আমেরিকার যাদুবাস্তবতা তাকে জনপ্রিয়তায় পিছনে ফেলছে। বাংলা সাহিত্য পাশ্চাত্য সাহিত্য তত্ত্বের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ায় আমরা বিবর্তনগুলো অনেক দেরিতে গ্ৰহণ করি। গ্ৰহণ করতে না করতেই বর্জনের সময় এসে যায়। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা ভালো যে অন্যদের কবিতা পড়েই কবিতা লিখতে শিখেছি। সামান্য কিছু অনুবাদ গ্ৰন্থ প্রবন্ধের পড়েছি।আর পত্রপত্রিকা পড়ে সাহিত্য চিনেছি।সব ভাসা ভাসা জ্ঞান। গুগল সার্চ করে লাতিন আমেরিকার বইগুলোর দামের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। হায় ! সামর্থ্য এত কম!  দিকপাল কালজয়ী পাশ্চাত্য প্রাবন্ধিকদের আমার পড়া হয়ে ওঠে নি এই ছোট্ট জোনাকির আলোর মতন কবিতা চর্চার জীবনে।কোথায় ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল আর কোথায় আমাদের নতুন কবিতা অপরকবিতার ধারনা। ধারাবাহিক কবিতার ভাবাবেগে আঘাত লাগে পাছে তাই শূন্য দশকের কবিরা জম্পেশ প্রবন্ধ লিখে উঠতে পারল না। আমি তো হাত পা ছাড়া গোছের হয়ে আনন্দে আছি কারণ আশির দশকের কবিদের মোড় ঘোরানো কবিতায় হেলান দিয়ে যা লেখবার লিখে ফেলেছি।
এর মধ্যে আমার কোনো কবিবন্ধু জানিয়েছেন যে আমার কবিতা অ্যান্টিপোয়েট্রি।  

)  এখন কবিতায় অনেকেই সিম্বলইকুয়েশন  ব্যবহার করছেন।  বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
 কবিতার শরীরকে নানা জ্যামিতিক বিভঙ্গ দেওয়া একটা সুপ্রচল ঐতিহ্য। নিম  শ্রুতি সাহিত্য আন্দোলনের সময় থেকে তার চোখে পড়ে। এডওয়ার্ড ইস্টলিন কামিংসের 'সাউন্ড এন্ড স্পেসিংব্যাপারটাও গ্ৰহণযোগ্য হয়ে উঠল। পুষ্কর দাশগুপ্তরা  সম্পর্কে পাঠককে অবহিত করতে চেয়েছিলেন। এই জিনিসটা নতুন কবিতায় আছে। শূন্য দশকের কবিরাও এভাবে অনেকে লিখেছেন। তো এইসব টাইপোগ্ৰাফি পোয়েমস এর দিন শেষ হয়ে গেছে। মহাদিগন্তের কবি উত্তম দাশ  ধরনের কবিতা লিখেছেন। কবিতায় অংকের ব্যবহারগানিতিক সংখ্যার ব্যবহার অনেক কবি করেছেন। অনিন্দ্য রায় অংকের সূত্র  সংকেতগুলোকে কিভাবে মননশীল কবিতা লেখায় ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন।
সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে কবিতা লেখাও নতুন একটা দিক। তবে সংকেত চিহ্ন গুলো সম্পর্কে প্রভূত ওয়াকিবহাল থাকা দরকার। তাহলেই কবিতার মধ্যে প্রবেশ করা যাবে। রাহুল গঙ্গোপাধ্যায় এরকম কবিতা ইন্ট্রোডিউস করাতে চাইছেন বাংলা কবিতায়।  সম্পর্কে আশাবাদী থাকাই ভালো একেবারে নস্যাৎ করে দেবার চাইতে। তবে অতিরিক্ত সিম্বল  ইকুয়েশন ব্যবহার আবার সঠিক রস উপলব্ধিতে  ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। কে কোথায় কি বিষয়ে রসিক হয়ে উঠছে বোঝা মুস্কিল। মানুষ মারা বোমার রাসায়নিক সংকেত চিহ্নগুলো তো আমরা ভালোই মেনে নিয়েছি আর বহন করছি। একসময়ের মালার্মে বলেছিলেন কবিতা বলতে তিনি বোঝেন Ñ 




 
)  আচ্ছা দেবযানী দি এখনতো অনেক তরুণ কবিরা ফেসবুক এবং বিভিন্ন ওয়েবজিনপ্রিন্ট পত্রিকা সব জায়গায় লিখছে।এদের মধ্যে অনেকের লেখা বেশ পরিনত। এমনকি এগিয়ে থাকা।এদের এই কবিতাগুলো পড়ে আপনার কী মনে হয়?

 পশ্চিমবঙ্গের শূন্যদশক প্রথমদশকের কবিদের কবিতা ততটা সম্ভব পড়ি। বূদ্ধদেব হালদার জুবিন ঘোষ সৈকত ঘোষ  বিশ্বজিত অর্থিতা মন্ডল রাহুল গঙ্গোপাধ্যায় শীলা বিশ্বাস তানিয়া চক্রবর্তী এরকম অনেকেরই কবিতার সঙ্গে পরিচিত আমি। অলোক সরকার তাবিক পত্রিকা করেন। অনুপম মুখোপাধ্যায়ের বাক পত্রিকা পড়ি। এগিয়ে থাকাটা ভালো ব্যাপার। এদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ তো নিশ্চয় উৎসর্গকৃত প্রাণ হবে কবিতার জন্য। ক্রমশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলা কবিতাকে একটা সর্বগ্ৰাহ্য রূপ দেবেন। বাংলাদেশের অরবিন্দ চক্রবর্তী আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম। সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল পত্রিকাও বেশ শক্তিশালী পত্রিকা। শ্রেয়ন রায়চৌধুরীর নিবিড় পত্রিকা একটি এগিয়ে থাকা পত্রিকা। প্রতিশ্রুতিবান  প্রতিভাবান কবিরা কবিতায় দীর্ঘদিন ধৈর্য ধরে চর্চা করে গেলে সাহিত্য জগৎ  লাভবান হবে বৈকি। আসলে কবিতায় দুএকদিনে সাফল্য আসে না।বাঃ কৃতি কবি হওয়া যায় না। আবার জীবনের খেলায় অনেক কৃতি কবি অলক্ষে থেকে যান। আমি কোথাও হতাশার জায়গাগুলোকে পাত্তা দিতে চাই না। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে পিছলে যাওয়া নয় একাগ্ৰ হয়ে কবিতাযাত্রা এখনকার তরুণরাই করে দেখাবে। গল্পরসসমৃদ্ধ ঘনঘটনাময় কথা  কাহিনীমন্ডিত কবিতা না লিখলেই ভালো। কবিতার স্বাভাবিক চরিত্র থাকবে অবগুণ্ঠনময়। অনেকে আবার এটাকেই ফুলিং গ্ৰাউন্ড ধরে নেন। 

১০দেবযানী দি সাহিত্য করতে হোলে ছন্দঅলংকার এই ব্যাকরণগত দিকগুলো সকল প্রজন্মের জন্য কতোটা জরুরি বলে আপনি মনে করেন ?
 অলংকারের ব্যবহার অবশ্যই জানা দরকার।প্রয়োগ করতে হবে। ছন্দ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। প্রয়োগ দরকার হলে করবে। সংস্কৃত বাংলা  ইংরেজি ব্যাকরণ ইত্যাদিতে জ্ঞান থাকা ভালো। বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে আমার সামান্য পড়া ছিল। সে সব ধূসর হয়ে এসেছে। এখন কেঁচে গন্ডূষ করতে হবে সব। কখনো কখনো অলংকারের বই নিয়ে বসি। এমনি এমনি পড়তে ভালো লাগে। আর ভাবি ভামহ দন্ডী আনন্দবর্ধনের অভিনব গুপ্তের লেখা সবাই পড়ুক। সংস্কৃত সাহিত্য বাংলায় অনূদিত সবাই পড়ুক

১১এই সময় দাঁড়িয়ে আপনি নিজে কি ধরনের কবিতাকে প্রাধান্য দেবেন বা আগামী প্রজন্মকে পড়তে বলবেন ? আমার কিছু বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না। প্রত্যেক কবি তার নিজস্ব পিপাসা  চাহিদা অনুযায়ী বই পড়বে। অবশ্যই পিছনে ফেলে আসা দিনের কবিতা লেখার কোনো মানে হয় না। আবার খুব একটা বিতিকিচ্ছিরি রকমের ভাঙাগড়াও ভালো লাগে না। এর মাঝামাঝি সামঞ্জস্য রেখে লিখতে হবে। লিখতে লিখতে কবিরা নিজেরাই বুঝে নেবে এই রসায়ন।পাঠক তৈরি করে নেওয়াও কবির কাজ। এজন্য কবিরা ঘরে বসে থাকলে হবে না। জনসংযোগ তথা পাঠকসংযোগ গড়ে তুলতে হবে। আমি অন্যকে কি বলব। নিজেই তো অসম্পূর্ণ হয়ে আছি। জীবন এত ছোট কেনে এই ভুবনে। 

১২কবিতায় বহুরৈখিকতা  বিষয়ে আপনার তো ধারনা আছেইএই  বিষয়টি আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
 বহুরৈখিক মানে অনেক রেখা সমন্বিত। অনেকগুলি দৃষ্টিকোণ। মানুষের দার্শনিক  ধর্মীয় চিন্তায় অদ্বৈতবাদের প্রতিষ্ঠা থেকে সরে দ্বৈতবাদ তৈরি হয়েছে -- তাই তোমার আনন্দ আমার পর তুমি তাই এসেছ নিচে। আবার দেখছি দিনের বেলায় বাঁশি তোমার বাজিয়েছিলে অনেক সুরে। এই অনেক পুরোটাই আসল কথা।

বহুরৈখিক বলতে প্লুরালিজমকে বুঝি। একটি রেখার মধ্যে আরেকটি রেখার উদ্ভব। প্রতিটি পরিবর্তনশীলতার মধ্যে একটি আলাদা রেখা তৈরি হবে। আর দ্বৈতবাদ থেকে ক্রমশ নানাত্ববাদের দিকে সরে যেতে হবে। দার্শনিক লিবনিৎজ মোনাডোলজি মতবাদ এনেছিলেন। মোনাড মানে অসংখ্য। একটা বক্তব্যকে বহু দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে নেওয়া। এটা করতে গেলেই কেন্দ্রিয় ভাবনা থেকে সরে বহুরেখায় বা কোণে চিন্তাপ্রসূত বাক্য  শব্দগুলি আলাদা হয়ে পড়ে। একটা জাম্পকাট সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রাতিগ হয়ে পড়ে কবিতার লাইন। জ্যামিতি যারা বোঝে তারা এই কৌশলকে কাজে লাগাতে পারে ভালো। শিল্প সমালোচনার ক্ষেত্রে , সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রেউপন্যাস  কবিতা নির্মাণের ক্ষেত্রেও এই বহুরৈখিকতা আসে। বাংলায় বহুস্বরিকতা বহুমাত্রিকতা ইত্যাদি শব্দও এর সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু অতিভাষ্য এসে গেলে পাঠ অস্বচ্ছ হয়ে পড়বে। যদিও জানি লেখক তত্ব মেনে লেখেন না। লেখার সময়ে একটি তাড়না বা প্যাশন কাজ করে। পরে কবিতাটি গোছানোর সময়ে বিনির্মাণবাদ কাজ করে। ঘসামাজা করার সময়ে গ্ৰহণ বর্জনের পর্ব চলে। তখনি ঠিক করে নিতে হবে শব্দভরা বাক্য বা বাক্যাংশ গুলোকে ভাষ্যের বহুত্বে কি করে নিয়ে আসব যাতে  তার অতিভাষ্য না হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গ পাল্টাতে পাল্টাতে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যেতে যেতে তা বহুরৈখিক রচনা হয়ে পড়ে। কবিতায় গুরুশিষ্য পরম্পরা থাকে। এজন্য অগ্ৰজদের কবিতা পড়তে হয়।
আপাতত এটুকুই। আমার মোটা মাথায় এর বেশি আর কিছু ঢোকে নি। 

১৩আপনি কি বাংলা কবিতার বাইরে  অন্য ভাষায় লেখা কবিতা পড়েনযদি পড়েন কোন ভাষায় কোন কবির কবিতা পড়েন ? তাঁদের লেখার চিন্তাধারা বা স্মার্টনেশের সাথে আমাদের চিন্তাধারা এবং স্মার্টনেশের পার্থক্য কতটা?
একটু আধটু ইংরেজি কবিতা পড়ি এই নেটের মাধ্যমে। আমেরিকান পোয়েট্রি পোয়েটস অর্গানাইজেশন এইসব। ওরা সামাজিক সমস্যা  রাজনৈতিক নানা ঘটনা নিয়ে কবিতা লেখে। এবং শব্দ নিয়ে ভাঙাভাঙিটা একেবারে নেই বললেই চলে। এখন পোস্ট মডার্নিজম এর ব্যাপারটা আর নেই। আমাদের মতো মধ্যবিত্তসুলভ প্যানপ্যানানিটা নেই। পরকীয়া ছাড়াও আরো হাজার রকম বিষয় আছে লেখার।তবে গুগলপ্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটু অসুবিধা হয়ে গেছে। নেটের অনেক কবিবন্ধুদের হারিয়ে ফেলেছি।এটি আমার অসচেতনতার ফল। 

১৪আচ্ছা দিদি আপনি main streem থেকে অনেকটাই আলাদা করে লেখেন।এতে করে কী প্রথম প্রথম আপনার লেখা নিয়ে বিরোধিতা শুনতে হয়েছিলোযদি আমাদের পাঠকদের একটু জানান--- না আমাকে কোনো বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় নি। কারণ ২০০৬  এসে প্রথাবিরোধী কবিতা লেখার পত্রিকা প্রচুর বাজারে এসে গেছে। শব্দহরিণ এর মতো প্রচল পত্রিকাও আমার কবিতা নিয়েছে। যদি কেউ রিজেক্ট করে থাকে তা কবিতাটা ভালো লিখতে পারি নি বলেই করেছে। আমার চলতে কোনো অসুবিধা হয় নি। পৃথিবীগ্ৰাম ইন্টারাকশান পত্রিকা কবিতা নিয়েছে। সাহস জুগিয়েছে। জুবিনের খেপচুরিয়াস ভুলতে পারি না।  , কৌরবকবিতা ক্যাম্পাসভিন্নমুখ , ইন্টারাকশান , কবিতাপাক্ষিক , অস্ট্রিক , ক্যামেলিয়া , সোমকদাস , অরূপ আচার্যর পত্রিকায় লিখেছি। কবি সম্মেলন এরকম নানা পত্রিকায় গ্ৰাহ্য হয়েছে। আর আমি পার্ট টাইমার কবির চাইতেও অধম। কবিতার জন্য সময় সেভাবে দিতে পারিনি। গলা অব্দি সংসারে ডুবে আছি। এর মধ্যেই হাঁকুপাঁকু করে যতটা পারা যায়।

১৫আপনি তো লেখালিখি শুরু করেছিলেন প্রিন্ট মিডিয়ার হাত ধরে। এখন আমাদের মতো অনেক ওয়েবম্যাগেও বেশ লিখছেন  এই ২টি ভিন্নি মাধ্যমকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন দিদি ?আপনার কী মনে হয় web.mag, print media কে একসময়  অতিক্রম করতে সক্ষম হবে?
 ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। প্রযুক্তিগত কৌশলের সুযোগ সবাই নিতে চায়। ওয়েবম্যাগের লাইফ লঞ্জিভিটি  অমরত্ব রক্ষা করা কষ্টকর। একটা বই বা পত্রিকা লাইব্রেরিতে বা কারো বাড়িতে থেকে যাবেই। দুটো মাধ্যমের মধ্যে লড়াই
এর ব্যাপার আছে নাকি। সার্ভার ব্রেকডাউনের বিপত্তিতে লেখা পিছিয়ে যায়। কখনো ভুল বাটন টিপলে ডিলিট হয়ে যায়। তবে ওয়েবম্যাগের বাড়বৃদ্ধি হোক এখন। যতই হোক একটা পত্রিকা প্রিন্টে বার করে যা আনন্দ তা অসাধারণ। ওয়েবম্যাগ অতিক্রম করে গেলেও প্রিন্ট মিডিয়া থাকবেই লিটল ম্যাগাজিনের জন্য। হয়তো প্রিন্ট মিডিয়ার আয়তন ছোট হয়ে যাবে। তবে আমি জানি তরুণ প্রজন্ম গুগল ড্রাইভে কম্পুতে পেনড্রাইভে অগাধ বিশ্বাস রাখে। বুদ্ধিজীবীরা আপাদমস্তক নেটজীবী হয়ে যাবে একদিন। পীযূষ বিশ্বাস ওয়েবম্যাগ নিয়ে ভাবছে বেশি। ওর জ্ঞান আছে। আমি যা বললাম তা স্বাভাবিক চিন্তা থেকে বললাম। 

১৬এখন অজস্র কবিতা লেখা হচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশও হচ্ছে। কিন্তু তারপর আর কবিদের হদিশ পাওয়া যায় না এমনকি কবিতাগুলোও না। আপনার মতে এর কারণ কী?

 জানি না এটা কি ব্যাপার। অতটা অবহিত নই।

১৭চারিদিকে কবিতার জন্য বিভিন্ন ম্যাগাজিনসরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কবিদের সম্মান জানানো হচ্ছে। উত্তরিয়। ফুলের তোড়া। মানে এখন ১টা,কথা প্রায়ই শুনতে পাই আগে কবিতা যাপন করার পর নির্বাচিত কবিকে সম্মাননা দেয়া হোতো।এখন অনেক সংস্থা সম্মাননাবই প্রকাশ করে কবিতা লেখাচ্ছেন উঠতি কবিদের এই বিষয়টা আপনি কিভাবে  দেখেন দিদি?

জোর যার মুল্লুক তার সেটা অর্থনৈতিক  কি রাজনৈতিক কি সব ক্ষেত্রে একইরকম। সবই স্বজনপোষন আর টাকার খেলা। ভালো মানুষের পোয়েদের দিন গিয়াছে। ক্ষমতাবান কবিদের আচরণ চোখ রাঙানি এসব থাকবেই। তারা কাকে কখোন মাথায় তুলবেন কখোন পিঠ চাপড়াবেন আর কাকে এড়িয়ে যাবেন তা বোঝা দুঃসাধ্য।  কবিতাকে কেন্দ্র করে লোভ দ্বেষ হিংসা ক্যাওস ল্যাং মারামারি চামচাগিরি চিরকাল ছিল আর থাকবেও। তবু তো কবি খুন আর রাঁবোর মত গোলাগুলির ব্যাপারটা চলে না বাংলার কবিদের মধ্যে।প্রতিভা খুঁজতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের কাছাখোলা অবস্থা। তোমায় সামনে পেয়েও খুঁজে বেড়াই মনের কানাগলি। এই যে একদল পুরষ্কার দিচ্ছে মঞ্চে হুড়োহুড়ি করছে এটাকে সদর্থে নেওয়াই ভালো। প্রাণ আছে। আমরা সজীব আছি এটুকু অন্তত প্রমাণিত হয়। ভষ্মে ঘি ঢালতে ঢালতে আগুনেও ঘি ছিটকে পড়বে একদিন। তবে একেবারে আনকোরা কাঁচা তরুণ কবিদের পুরষ্কার দেবার ব্যাপারে সময় নিলে ভালো হয়।  সম্পর্কে দ্বিমতের অবকাশ নেই। 

১৮)  আপনার কতগুলো একক কাব্যগ্রন্থ আছে। এই  কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে বা আপনার কবিতার মাধ্যমে আপনি পাঠকদের কি বার্তা দিতে চেয়েছেন?
 দেবযানীর স্বীকারোক্তি , স্বপ্নিল বর্ণমালা , তৃতীয়া পৃথিবী , আইভরি খাতানোনামিঠে জলচিহ্ন , রেডিওঅ্যাক্টিভ মিনারেল বৃষ্টিচৌরেখাবতী পিরামিডের অরোরাস্ট্রবেরিগন্ধার যোজনপথ।
মনের আনন্দে লিখে যেতে হবে। আমি কিছুই মেসেজ দিতে চাই নি। কবিতা পড়ার আনন্দে কবিতা পড়ুক সবাই। জীবনকে ভালোবাসার অপর নাম কবিতা। অতএব পাঠক দরকার পড়লে মেসেজ খুঁজে নেবে

১৯আপনি কী বিশ্বাস করেন কবিতা লিখে সমাজের পরিবর্তন করা সম্ভব?
 সমাজে  দেশে ঘটতে থাকা বিষয় নিয়ে কবি কবিতা লিখবে। বাদ প্রতিবাদ করবে। বর্ণনা করবে। ব্যঙ্গ করবে। তাতে সমাজ পরিবর্তিত হলে ভালো। বিপ্লব হলে ভালো। একটা ক্রান্তিকাল হলে তার উপর কবিতার প্রভাব এক রকম আর সমাজের স্থিতাবস্থায় কবিতার প্রভাব আরেকরকম পড়ে। কবিতা লিখে সমাজের পরিবর্তন যদি হাতেনাতে বা গরমাগরম নাও পাওয়া যায় তাতেও কোনো দুঃখ নেই। কবি তার আপন স্বভাবে লিখে যাবেই। বিপ্লবের কবিতা
প্রতিবাদের কবিতা লেখা হবেই। তাদের কণ্ঠরোধ রাষ্ট্র করবে। তারা জেলে পচে মরবে। সমাজ কতোটা পরিবর্তিত হবে তা মাপার মাপকাঠি নেই। তবে  আলোগুলোর সংস্পর্শে এসে আরেকটি নতুন আলোর জন্ম হবে। এটুকুই লাভ

 
২০কবিতায় জটিলতা এবং দূরুহতা এই বিষয়ে আমাদের পাঠকদের কিছু বলুন দিদি_____

➤ কবিতা শিল্প হিসেবে সবসময়ই জটিল এবং কুটিল গতির। সব কবির এবং পাঠকের রসোপলব্ধির স্তরভেদ থাকে। আজ যা জটিল আছে কাল তা নাও থাকতে পারে। কখনো কখনো অভিধান ব্যবহার করতে হতে পারে। কারণ আমরা সবাই সব শব্দের সঙ্গে পরিচিত নই। আবার কোনো কবিতা সামগ্ৰিকভাবে বোধগম্য হল না। এতে অনেকের অসুবিধা হয়। ধরুন চর্যাপদ একসময় কি ভীষনভাবে দুরূহ ছিল। কবিতা গিলে খাবার জিনিস নয়। কোনো একটা কবিতার কিছুটা চেতনায় ঝিলিক মারলেই সেই কবিতা সফল কবিতা। আর কবিতা লেখার শৈলীতে মারপ্যাঁচের দরুন দুরূহ হলে সেই ধরনের কবিতা নিয়ে আলাপ আলোচনা চর্চা চলতে পারে। তাতে করে শক্ত গিঁট খুলে যাবে।  

২১দিদি গতানুগতিক ধারার বাইরে লিখলেই বা একটু শব্দের কারিগরি দেখলেই একটা প্রচলিত কমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে দারুণ এক্সপেরিমেন্টাল লেখা। এই এক্সপেরিমেন্ট শব্দটা কবিতার জন্য কতটা প্রাসঙ্গিক বলে আপনার মনে হয়?
কোনো কবির পক্ষে নিজস্ব উদ্ভাবিত জঁর এর সঙ্গে সারাজীবন নিমগ্ন থাকা খুব কষ্টকর  হাস্যকর। গত তিন দশক ধরে শব্দের কারিগরি দেখানো কবিতা ভুরি ভুরি লেখা হয়েছে। নিজের মস্তিষ্কে একটা ল্যাবরেটরি বানিয়ে রাখা ভালো আলুভাতে মার্কা কবিতা লেখার চাইতে। পরীক্ষা নিরীক্ষার কবি হিসেবে ছাপ তো আমার গায়ে লেগে আছে। এমনিতেই বাংলার জ্ঞান  বিদ্যার খুঁটিপোতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা বাংলা কবিতার অনেক ক্ষতি করে চলেছে। এখনো ঔপনিষদিক সাম্রাজ্যবাদ কায়েম আছে। সুতরাং এক্সপেরিমেন্ট শব্দটাকে চিঁড়েচ্যাপ্টা করে কোনো লাভ নেই। ভালো প্রাবন্ধিক না হলে ভালো কবি হওয়া কষ্টকর। তর্ক বিতর্ক চলুক প্রবন্ধে প্রবন্ধে। আর সবাইকে বাঁকাতেড়া কঠিন কবিতা লিখতে হবে এমন ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। নতুন কিছু করার তাগিদে যারা লিখছেন তাদের অনুৎসাহিত করা কোনোমতেই উচিত নয়। এমনিতেই আমরা জীবনকে বাস্তবভাবে কাছ থেকে দেখার চাইতে বইপত্র  বোতাম আঁটা সুশীল জীবনের মোড়কে থেকে দেখার চেষ্টা করি। মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা ভাষার নবাঞ্চল তৈরিতে সাহায্য করে। 

২২দেবযানী দি আমি জানি আপনার  কবিতার একটা ভালো পাঠককূল আছে। আপনি আপনার পাঠকদের কাছে কী প্রত্যাশা করেন ?

পাঠককূল আছেএই পত্রিকার সঙ্গে পরিচয় না হলে জানতাম না। অনেক মেইনস্ট্রিমের কবি আমাকে বলেছেন এভাবে লিখে জনগণের কাছে পৌঁছতে পারবে না। আমেরিকার এক কবি হালে পানি না পেয়ে সাহিত্য সম্পর্কে তেড়ে সমালোচনা করে এক প্রবন্ধ লিখলেনক্যান পোয়েট্রি ম্যাটার?) গানা জোইয়া।  প্রবন্ধটি তাকে কবি খ্যাতি এনে দিয়েছে। তিনি গ্ৰামে গঞ্জে তেলি মুদি কৃষক সবার কাছে পৌঁছে গিয়ে ঘুরে ঘুরে কবিতাপাঠ সেমিনার করছেন। আমি গৃহপালিত প্রাণী অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত জনপ্রিয় হবার রাস্তায় হাঁটতে পারলাম না। জনগণকে কিছু না দিয়ে তাদের কাছে প্রত্যাশা করা অপরাধ। মাসস্কেলে ইমেজ তৈরি করা হয়ে উঠেনি। এখন তো বিদায়ের সময় এসে গেছে। নতুন প্রজন্মের কবিরা অশেষ ধৈর্য নিয়ে কবিতায় থাকুন এটুকুই বলব। 

  
দেবযানী বসুর  কবিতা_____

নন্দনবন হাঁকছে

গতবছরের আকাশ আরো রঙিন ছিল
সূর্যাস্তের লাবডুব
ছাইদানে চলন্ত বুদ্বুদ
ভিক্ষে না করে চলত যাদের তারাও জানলায় টোকা দিচ্ছে
অসময় খুঁড়ে সামান্য পারিজাত তুলে আনছি
মহান সভ্যতার ইকড়ি মিকড়ি চাম চিকড়ি
একদানা ভাত চোখে সর্ষেফুল ফুটিয়েছে অনেকের
ঝিমধরা ভাতের হোটেল
এমনকি মাছিরাও বিদ্রোহ জানাল
আমার আঙুলে টান ধরছে
মাছির পদবী নিয়ে ভাবগম্ভীর থাকতে চাই।
শ্রামন্য

নিবিড় মাকড়সা পায়ে মাড়িয়ে চলেছে অপরাধ
সূক্ষ্মতম লালায় জানলা স্বস্তিবোধ করে
কত উপমার সাস্টাঙ্গ প্রণাম উপমেয়কে
ঝরাপাতা হতে ইচ্ছুক পাতাদের পেকে ওঠার আগেই ঝরানো হল কলমের খোঁচায়
চাওয়া মৃত্যুর চোখে চোখ রাখতে রাখতে চকরঙ হচ্ছে চারপাশ
তথ্যভরা মৌচাককে মঞ্চে উঠতে দেওয়া হয় না
বেগ চাপার ফুরসৎ কেউ চাইছে না
তার এক ভুঁড়ি কথা বুকে জমে আছে
লগে লগে পাথুরে জমি

পুকুরের ফর্সা খুঁড়ে যতটা মাছ আসত তার চেয়ে মানুষ এসেছে বেশি
ফলনের ধারে পেয়ারাগাছটি চুপচাপ
যাচঞার ফল ধরতে না ধরতেই বাতাস ওড়াল তোকে
সাদা সাপ গুটিয়ে হাতের তালুতে
একটা পরিপূর্ণ দেয়াল হওয়া কষ্টকর অসংখ্য চোখ ছিদ্র করেছে তাতে
দিগন্তের আবছাটুকু আত্মাকে আশ্রয় দিল
একটা মোটা ঘটনা তার মোটামুটি পেরিয়ে গেল
দুঃখের কিংবা সুখের কবিতা বিশ্রাম নেয় পথের ধারে
স্বর্গের কাকেরা এই নিয়ে চেঁচামেচি করে





দেবযানী বসুকে সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিনের তরফ থেকে অশেষ ভালবাসাশুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা রইল। দিদি আপনার ব্যাস্ত সময়  থেকে আমাদের সময় দেয়ার জন্য আমরা আপ্লুত।ভালো থাকবেন। সাহিত্যে থাকবেন