Showing posts with label সাধারণ সংখ্যা. Show all posts
Showing posts with label সাধারণ সংখ্যা. Show all posts

Monday, July 20, 2020

|| মুরারি সিংহ-এর কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||













মুরারি সিংহ


এক এক্কে এক____

এক এক্কে এক, ধারাপাতের সব চেয়ে সহজ নামতা
জীবনের পাঠে সব চেয়ে অসম্ভবও যেন 

এদিক থেকে একজন টানছে তো
ওদিক থেকে আরেকজন

অহরহ ছেঁড়া হচ্ছি, অহরহ খোঁড়া হচ্ছি

ফুটো পকেট থেকে গড়িয়ে পড়ছি কঠিন রাজপথে
              খুচরো পয়সার মতোঝনঝন

পিংপং-বলের মতো
একবার এর কোর্টে ,একবার ওর কোর্টে ,
পিটুনি খাচ্ছি, ছুটোছুটি  করছি

ফি-দিন
একই দৃশ্যের রিপিট টেলিকাস্ট

চা-দোকানে জমে ওঠা আড্ডার পাশ দিয়ে
বয়ে যাওয়া মিছিমিছি জীবনের স্রোত
মিছিমিছি অথবা হিজিবিজি

কত সব খুচরো দরকার
                তাই মেটাতে গিয়ে
খানিকটা এ-দলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছি
খানিকটা ও-দলের মিছিলে পা মেলাচ্ছি

নিজেকে কখনোই এক-এক্কে-এক রাখতে পারছি না

চারপাশে এত মারকাটারি কচু-ঘেঁচুর ভিড়ে
আমার রক্ত-মাংস, আমার রূপ-রস-গন্ধ
এক ঘুনধরাঅমীমাংসিত হয়েই মাইলের পর মাইল রাস্তা ঠ্যাঙাচ্ছে

হাতের বিমূর্তএকতারাটাও, বেজে চলেছে তুমুল বেসুরে

|| পিনাকীরঞ্জন সামন্ত-এর কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||













পিনাকীরঞ্জন সামন্ত


শূন্যতার রং____

যে ট্রেনটি শব্দ করে দ্রুত বেরিয়ে গেল তাকে ডাকতেই চন্দ্রপ্রভা দ্যুতির আড়ালে একমুঠো রোদ্দুর, মুহূর্তেই মনে হলো 
এই জিন্স সভ্যতার যুগে ছন্দহীন মার্কসীয় বাইবেল হাতে নিয়ে এ কেমন কবিতা লিখছি 
যার অবয়বে 
হেসে উঠছে আমার প্রিফিক্সড কৌতুহল ।

সামনেই দেখি পঁচিশ কেজি ওজনের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হেঁটে আসছে এক অবোধ শিশু 
আর একটি বৃক্ষ ক্রমাগত তাকে ইশারা করে বলছে - 
ও শিশু, 
ও মাই ডিয়ার লাভলি শিশু  
তুমি আরো আরো বড় হও । 

আর আমি 
তৎক্ষণাৎ ভাবতে শুরু করেছি - কেন যে এতোদিন ইংলিশটা ভালো করে শিখিনি । কেন যে এতোদিন ইয়োরোপিয়ান সভ্যতার চিমটিকাটা ভাব সমুদ্রে মেলাতে পারিনি নিজেকে - আর কেনই বা দৌড়ে যাইনি
ঐ শেক্সপিয়ার মিলটন ইয়েটসের ..….

আর এসব ভাবতেই
আমার ঐ ছন্দহীন মার্কসীয় বাইবেল এবং মনের যাবতীয় কৌতুহল - পাখিদের রঙ মেখে 
আমাকে টা টা বাই বাই করে 
আকাশ হয়ে ক্রমশ নীল থেকে নীল সমুদ্র

এবং অবশেষে - আমি একটি সিগারেটের 
জ্বলন্ত হারমোনিয়াম বাজালাম ।

|| নাসের হোসেন-এর কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||

|| আজকের সংখ্যা কবি নাসের হোসেন কে উৎসর্গ করা হোলো। আপনাকে শ্রদ্ধা জানালাম নাসের জ্যেঠু। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন ||













নাসের হোসেন


মাথা_____

এ যে এক অদ্ভুত মানুষ, মাথায় গণেশ পাইনের
আঁকা পাথরের মতো স্ফটিকাকার পাগড়ি,কণ্ঠ থেকে
পায়ের নীচ পর্যন্ত রঙিন ছোপ- দেওয়া ঢোলা
পোশাক,দু- হাত দু- দিকে মেলে যেন- বা দুলে-দুলে
নাচছে,বাতাসের হিল্লোল তার সমগ্র পোশাকে
খেলা করছে, তার পশ্চাদপট ধূসর এবং অনন্তজ্ঞাপক, 
পায়ের সাদারঙের আঢাকা জুতো এক্ষুনি কোথাও  
চলে যাবার কথা বলছে,কিন্তু নাচ থামতে পারছে না। 

|| সুশীল হাটুই-এর কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||













সুশীল হাটুই

পিংপং বলের তাতা থইথই____

পিংপং বলটি মাৎসর্যের দিকে ভেসে
চলেছে, এখন সে ব্যাকহ্যান্ড খেলবে না
ফোরহ্যান্ড তা নিয়ে ১টা রহস্য
উপন্যাস লেখা যেতে পারে,

পৃথিবীর গঠন পিংপং বলের
গঠনতন্ত্রের জেরক্স, কিন্তু আয়তন বিষয়ে কথা
বললে ৬৪ জি বি মেমোরি লাশ হয়ে যাবে,

পিংপং বলের স্বপ্ন মনখারাপ নিদ্রাহীনতা
অথবা নৃত্যকলা বিষয়ে দিগগজ শিমুলতুলো
কিছুই জানে না,

এর কারণ হতে পারে, কর্কটক্রান্তি রেখা
বিষুবরেখাকে ৭/৪, ৫/২, এবং ৬/৩ বিষয়ে
যে রিপোর্টাজ দেয় তা অন্তঃসারহীন
বুদবুদ,

এ-সবের বাইরে যখনই চৌকো টেবিলে
সাদা পিংপং বলটি নাচতে শুরু করে, তখনই
মগজের সুহানা কোষে,

ঘুমন্ত বরফে আগুন জ্বলে ওঠে...

|| সোনালি বেগম-এর ঝুরোগল্প ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||














সোনালি বেগম

জৈবিক 

সৃষ্টির আনন্দটাই আলাদা। বৃষ্টির জলে স্নানরত গাছপালা মানুষজন সকাল থেকেই মনটা ভালো নেই শোভার। এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবেকে জানত! মানুষই তো পারমাণবিক বোমা বানিয়েছিল। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট পৃথিবী দেখেছিল এক নতুন অস্ত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে জাপানের হিরোশিমাতে পারমাণবিক বোমা ফেলে আমেরিকা এর ঠিক তিনদিন পরেই আরও একটি বোমা ফেলে নাগাসাকিতে। ইতিহাস হয়ে আছে এই দুবার পারমাণবিক বোমা-হামলা। তবে  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মানবজাতি বেশ ভয়ে থাকেএই না বুঝি শুরু হল পারমাণবিক যুদ্ধ! শোভা এরকম ভাবছে। যেমন  তার নিজের শরীরের কথাটাই ভাবা যাক। চারলাখ টাকার বিনিময়ে সে গর্ভ ভাড়া দিল। সে হল সারোগেট মাদার। তার এই দরিদ্র সংসারে একটু আশার আলো দেখতে পেল। তার টোটোচালক স্বামী রঘু এতগুলো টাকার কথায় বেশ আনন্দ পেল এবং সম্মতি দিল। এই নটা মাস তিল তিল  করে সে অনুভব করতে থাকল তার গর্ভের ভাড়াটে সন্তানকে। যথাসময়ে কোল আলো করে কন্যাসন্তান এল। চোখ নাক সবটাই জাপানি তার জৈবিক মা-বাবা জাপানি তাই বাচ্চার জন্মের ঠিক আগেই মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায় জৈবিক  মা কন্যাকে অস্বীকার করছে আর বাবা কন্যাকে পেতে চাইছেকিন্তু এক্ষেত্রে কিছু কানুনী অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। শোভা ভারতীয়আহমেদাবাদে তার বসবাস একটি নিজের ছেলেও আছে। এখন ফুটফুটে সুন্দর কন্যাটির উপর বেশ মায়া পড়ে গেছে তার। সম্প্রতি সরকার এই ভাড়াটে গর্ভের ব্যবসার উপর কিছু নিয়ম কানুন পাল্টাচ্ছে যার জন্য দ্য সারোগেসি রেগুলেশন বিল ২০১৯’ আসছে এই বিল পাস হলে কানুন কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে নিশ্চয়

শোভা কন্যার নাম রেখেছে জ্যোৎস্না রঘুর রাগ বেড়েই  চলেছে শুধু টাকার অঙ্কটা বুঝে নিতে চাইছে। জ্যোৎস্নার হাতে কালো সুতো বেঁধে দিয়েছে শোভা। যাতে নজর না লাগে কপালের ডান দিকে কাজলের কালো টিপ শোভা লেখাপড়া জানে। তবে কানুন নিয়ে সে বিচলিত নয়। বাড়ির সকলের অমতে সেই কত বছর আগে সে রঘুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। এখন এই নতুন মাতৃত্বে সে বেশ খুশি। 

মানুষ তেজাস্ক্রিয়তা জানে। তেজাস্ক্রিয়তার প্রভাবে শরীরের ডি.এন এ পাল্টে যায়। ফলে ভয়াবহ সব রোগ দেখা দেয়। পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে যে তেজাস্ক্রিয়তাপ্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই ভয়াবহতা বয়ে বেড়াবেশোভা ভাবছে।  

মানুষ সব পারে। শোভা জ্যোৎস্নাকে কোলের কাছে নিবিড়ভাবে ঘুম পাড়াতে থাকে 

|| রঞ্জন মৈত্র-এর কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||













রঞ্জন মৈত্র


অনলাইন বিছানা 

         (১)
রাত হয়ে গেলে শব্দের ঘুম কেটে যায়
এই দরজা খোলার তো ওই জানলা
একটি ভূতকে মনে পড়ে
ছোটবেলায় ভালবাসত
বড়বেলায় কাছে আসত
ঘুমের ওষুধে কোন শব্দ নেই
সমস্ত হার্ট ফেসবুকে জব্দ হ'লে
বাকি চিহ্ন নিয়ে রাত জাগে অনলাইন বিছানা
শোনে আর শোনে
গোনে আর গুনতে থাকে ছায়ার নিঃশ্বাস

          (২)
নিঃশ্বাসের ছায়াদের জায়গা হয় না
জানলাও অকুলান
বেবাক পরীক্ষাগার যোনি আর স্তন
লাভলীন চেস্ট আর দ্রিদিম বাইসেপস
ফুটছে ঠান্ডা হচ্ছে প্রবল হাততালি করছে
তামাম ছক্কা সবই বান্টু সিং-এর কারনামা
হে কামাল হে অরুণ হে বরুণ
কিরণমালার ফাঁকে জিভ নড়ে
শব্দ বাক্য সিনট্যাক্স সেলসট্যাক্স ওঠে বসে
বেশ রাতে ডাকব ডাকব করে লালঝুঁটি রেপ
কফি ও দরজার শ্বাস হিম হয়ে লেগে থাকে 
ল্যাবের দেয়ালে      
             

টাইম কল

সময়ের জল নাকি সময়ই সলিল
উত্তর খুঁজতে আজ চানই বকেয়া হ'ল
রোকেয়া রোকেয়া আমি আরেকবার বর্ডার পেরোলে
নিশ্চই দুপুরে খাবো চান করব সনেট শাওয়ারে
সনেটই শাওয়ার নাকি শাওয়ারের চতুর্দশপদী
আমারই স্বপ্ন যদি ফোঁস করা ইন্টারোগেশন
থানা ও থানেদারের চিপায় পড়ে থাকি সরু গলি
এত ভিজে এতটাই ভিজে
সরহদ পেরিয়ে সব ঢেউ এসেছিল
শরৎ পেরিয়ে শস্য কাটা হবে দুমুখো বাসায়
এবং হেমন্ত বলবেন আগুন জ্বালো
তারপর শ্যামল আরতি কত ঝরোঝরো সোনা
সনেট ইনটারনেট উত্তেজিত রান্নার মাঠ
পেনাল্টি তুমিই মারবে বন্ধু রোকেয়া
দু' হাত ছড়িয়ে আছি
গ্যালারির মাথা থেকে ঘড়িগলা স্রোত নামছে
খাওয়া তো হবেই, আগে গোসল সেরে নিই। 
             

বসেরা

আজ করোনা কথা বলছে
কাল রোনা এবং রুমাল
বার বার ভিজে যাবে
একটা টানেলমুক্ত হাওয়া কতকিছু শুকিয়ে দেয়
যখন দূরে দূরে মিশে আছে ধপধপে বসেরা
চিনতে পারছি না
চাঁদে যাওয়ার পোষাকে লালারস অবদি পৌঁছনো যায়
তারপর ল্যাবে ল্যাবান্তরে মাত্র অসুখ নির্ণয়
তারপর টেবিলেই স্কাই ওয়াক
হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ছে গেলাস
মদ চলে যাচ্ছে ভাইরাস পেরিয়ে শুশুনিয়ার দিকে
সামনেই রকশিক্ষা জলশিক্ষা মাস্ক আর গ্লাভস
করোনা না জেনেই মেট্রো পেরিয়ে যাচ্ছে কুদঘাট স্টেশন
রুমাল না জেনেই হাওয়ার ড্রায়ার
সাদা চারতলা কোন প্রতীক নয়, সৌমিত্র থাকত।

|| স্বপন রায়-এর দীর্ঘ কবিতা ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||














স্বপন রায়

উপকবিতা-৫


আমি অনেকক্ষণ, তুমি কিন্তু নেই, তুমি পাল্লা খুলে ডেকেছিলে, তুমি কখন যেন  চ’লে গিয়েছ
পাল্লা খোলার শব্দে আর কিছু হোক বা না-হোক, কুকুরটা ডেকে উঠেছিল
এইচ.এম.ভি’র কুকুরটা
কুকুরের কাছেই ড্রপ খাচ্ছিল বৃষ্টি, আর আমি এসেছিলাম                              
আমার গায়ে ট্রেনের দাগ, তুমি মেঘে মেঘে চেরা রফি, কিশোর, মান্না দে’কে জানতাম, বিট্‌লস জানতাম না, সেই তখনকার কথা কুকুর যখন ডাকতো
তুমি বলেছিলে, আসলে কাঁদছে ও, ওর মালিকের শোকে কাঁদছে, আমি টিকিট’টা ছুঁড়ে ফেলতে ফেলতে ভাবি, শ্রমিকরা কেঁদেছিল?
এসে এসে বসন্ত এনেছিলাম। গিয়ে গিয়ে বর্ষা। তুমি পাল্লা খুলে ডেকেছিলে বর্ষার পাল্লা খুলে একদিন ডেকেছিলে তুমি
ট্রাকের নিচে একটা চিৎকার ফট্‌ করে লম্বা হয়ে গেল, খুব বৃষ্টি, ধুয়ে যাওয়া দাগের দিকে তাকিয়ে, খোলা ছেত্‌রে যাওয়া কোন কিছুর দিকে তাকিয়েআমি কেঁদে উঠিনি
কোনদিনও ডেকে উঠিনি...

উপকবিতা-৬

নদীর পাশে শহর, শহরের পাশে নদী হয়না। শহরে কেউ ডাকলে, নদীর জল থেকে সামান্য ছলাৎ সেই ডাকে, আর শীতসাজানো ঝরাপাতার পাতার তার

তারে ব’লে দিও, তার আর পর নেই, তারে আমি চোখে দেখিনি
ছাদে ছাদে মেলা
গান ভাবলে গান, বা চোখের কোণ দিয়ে দেখা ভাবলে বিদ্যুৎ চমকিয়া যায়
শহরের পাশে নদী তো
তো, জল জলছবি হয়ে বিকেল পেরোলে উলেন চাঁদ ওঠে
ছাদে ছাদে পামীর মালভূমি

ডাক খুলে, না প’ড়ে বিলিয়ে দিই, শুকনো হাওয়ায় কি যেন হয়
কি ভাবে যেন হয়
যেন হয়
হয়
পাতা, শাখা, প্রশাখা, ডাল, গুঁড়ি, শিকড়

তুমিরা

উপকবিতা-৭

কিছু হলে একটা কিছুই হয়, আর দুটো পাখি ওড়ার ফাঁকে
না-হওয়া ফাঁকটুকু
দরজার

আমি আসি, কিন্তু বলিনা
দেরী মাখা জিভে কথা আর বলা হয়না
আজান ভাসে
শাঁখের আহ্বান ওড়ে
‘তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার’
এইতো সময়
বলার
তুমি বা পাখি আর দরজার বাদামি রঙ
সন্ধ্যা হয় যখন
তখন সন্ধ্যাই তো হয়
দরজার ফাঁকে আটকে থাকে খুব ভয় পাওয়া চাউনি

ধর্মত...

উপকবিতা-

কিছু না বলার বাহানা এই দেয়াল। চরাচর গাঁথা, তাই পোস্টারে কাঁপছে নায়িকার ভেজা নাক, বৃষ্টি হয়েছিল, চুরুটের গন্ধ, কে যেন জ্বালাবার সময় ব’লেছিল, দেখা হবে। নায়িকার চোখও ভেজা।

আমি আজ যাবো। বা কাল মরে যাবো। তাহলে পরশু দাঁড়িও, দেয়ালে সামান্য হেলান দিয়ে, নায়িকাবিলোপ ক’রে তুমি, চোখের জল সেতো ওষুধে কাজ করছে, তোমার চোখের চেয়ে আর কি ওষুধ আছে যে সেই চুরুট ধরানো গম্ভীর লোকটাও অন্যমনস্ক হবেনা?

লোকটা কী বিপ্লবী, লোকটার কী হাঁপানি আছে?

দেয়ালে যেমন থাকে আকাশ, আঠা লাগানো, ফ্যাকাশে, আমি কিছু রোব্বারও রাখি সেখানে।মানে ছুটি। পালতোলা নৌকো, পাল্কি’র ইঙ্গিতথাকি বা না থাকি, রেখো আমায়, এক আঁজলা জল, এক পশলা বৃষ্টিতে

পরশু হয়ত চুরুটের গন্ধ মিশবে, দাঁড়িও কিন্তু। দুপাট্টা মেলে দিও কিন্তু, মেলামেশার জন্য...

উপকবিতা-

বৃষ্টিবদল হয়। রাস্তা যদি দূর, তো বদলে যাওয়া গায়ে আগুন লাগে। বৃষ্টি নেভায় না। আগুন আর তন্দুর খুব কাছাকাছি। তন্দুর থেকে কারখানার ভোঁ, আরো কাছে।যাতায়াতের পথগুলো এখন পুড়ছে, বৃষ্টি জড়িয়ে।

এর ভেতরেই কোথাও গ্যাসের বাতি ছিল, সন্ধ্যায় জ্বালানো হত। অনেকদূরে কোথাও গ্যাসচেম্বার, এরা ভাইবোন নয়, বাতি আর চেম্বার। এদের বাবা, মা এক। মানুষ।বানাতে বানাতে বৃষ্টিও গল্প হয়ে যায়

তার গায়ে আগুন লাগে। ফোন বাজছে হারিয়ে যাওয়া টেলিফোনের আতঙ্কে।বৃষ্টির মা মেঘ চিৎকার করছে

হাসছে রোদ, একফালি মেঘলা ছিঁড়ে



|| কাজল সেন-এর ঝুরোগল্প ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||













কাজল সেন


পরকীয়া___

সেদিন আচমকাই একটু দ্রুত হাঁটতে গিয়ে পা হড়কালেন গোবিন্দ মিত্র। স্বভাবে তিনি সবারই মিত্র, কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। আর নাম গোবিন্দ হলেও তিনি কখনই গোঁয়ার নন। তবুও তাঁর সঙ্গে রাস্তা শত্রুতা করল, পা শত্রুতা করল, তিনি পা হড়কালেন নিতান্তই আনাড়ির মতো। দুর্ঘটনাটা পথ চলতি সবারই চোখে পড়ল। স্বাভাবিক কারণেই তাঁরা একইসঙ্গে বিস্মিত ব্যথিত বাধাপ্রাপ্ত হলেন। এক মুহূর্তের জন্য সবাই নিজের নিজের অবস্থানে অনড় হয়ে থাকলেন। কিন্তু গোবিন্দ মিত্র তো আর অনড় হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে পারেন না! তাঁকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই হলো। দুতিনজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেও  তিনি তাঁদের নিরস্ত করে ব্যাজার মুখে উঠে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে খুঁজতে থাকলেন, আরে! মাধবিকা কোথায় গেল? এই তো এইমাত্র উল্টোদিকের  ফুটপাথে হাঁটছিল! গোবিন্দ মিত্র জানেন, মাধবিকা গুনগুন স্বরে গানও গাইছিল।  আসলে এটা মাধবিকার মুদ্রাদোষ। রাস্তায় বেরোলেই গান গাইতে গাইতে হাঁটে। খেয়ালও করে না, তার পাশের সহহাঁটিরা তার বেসুরো গান শুনে মজার হাসি হাসছে। গোবিন্দ মিত্র তাকে বারবার সতর্ক করেও অভ্যেসটা ছাড়াতে পারেননি।  মাধবিকা রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছে, কে বলেছে আমি ইচ্ছে করে গান গাই? গান আমি গাই না। গানই আমাকে গাওয়ায়। আমি কী করতে পারি!

এসব অনেকদিন আগের কথা। গোবিন্দ মিত্র তখন সবে মাধবিকার সঙ্গে পরকীয়ায় মজেছেন। ঘরে তাঁর একটা আস্ত বউ আছে, সেই বৌয়ের দুদুটো বাচ্চাও আছে। তবু গোবিন্দ মিত্র, আদৌ তিনি গোঁয়ার নন, তাঁর থেকে প্রায় বছর  দশেকের ছোট মাধবিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে লটকে গেলেন। মাধবিকা অনেকবার অনুযোগ করেছিল, আপনি তো মশাই বিবাহিত, ঘরে বৌ-বাচ্চা আছে, আপনি আমার পেছনে ঘুরে বেড়ান কেন বলুন তো? আর আমি অবিবাহিতা একটা মেয়ে, আপনার মতো একজন বিবাহিত পুরুষের পেছনেই বা  ঘুরে মরব কেন, বলতে পারেন? গোবিন্দ মিত্র বলেছিলেন, কেন, বিবাহিতর সঙ্গে অবিবাহিতার প্রেম হয় না? তুমি বাংলা গল্প উপন্যাস পড় না? ইংরেজি নভেল? পড়লে বুঝতে পারবে, বৈধ প্রেমের চেয়ে অবৈধ প্রেম কত মহৎ কত উদার! অবশ্য তুমি ইচ্ছে করলে অন্য কাউকে বিয়ে করতেই পারো। তখন বিবাহিতর সঙ্গে বিবাহিতার প্রেম আরও জমবে!  

গোবিন্দ মিত্রর কথায় বিদিশায় দিশা খুঁজে পেয়েছিল মাধবিকা। চট করে সে প্রস্তাব রেখেছিল, আপনার কথাই আমি মেনে নিলাম। বিবাহিতর সঙ্গে বিবাহিতার প্রেমটাই আমরা মনে হচ্ছে আদর্শ প্রেম। আপনি প্লিজ কিছুদিন অপেক্ষা করুন, আমি আগে একটা বিয়ে করে ফেলি। তারপর না হয় আপনার সঙ্গে...

গোবিন্দ মিত্র অপেক্ষায় আছেন, মাধবিকা কবে বিয়ে করে বিবাহিতা হবে। ইদানীং দেখা হয় না খুব একটা। তিনি রাস্তায় হাঁটেন চারিপাশে সতর্ক চোখ মেলে। দুএকবার আচমকা দেখা হয়ে গেছে। মাধবিকা দুঃখের সঙ্গে জানিয়েছে, না, এখনও হয়নি বিয়ে। আজও তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন  উল্টোদিকের ফুটপাথে মাধবিকা হেঁটে যাচ্ছে। আর তখনই শত্রুতা করল পা, তাড়াহুড়োয় তিনি পা হড়কালেন