বিকাশ দাস সংখ্যা
মৌসুমী চৌধুরী
অণুগল্প~বিপণন
"তেরে বিনা জিন্দগী সে কো-ই শিকওয়া নেহী"------- দুপুরের নিস্তব্ধতা খান খান করে সুরেলা রিংটোনটা ভাতঘুম ভাঙিয়ে দিল শ্রীতমার। একটা প্রবন্ধ পড়তে পড়তে সবে চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল। অচেনা নাম্বার!....
---- হ্যালো, কে বলছেন?
---- শ্রীতমা, আমি দেবুদা বলছি। দেবরাজ বটব্যাল, "দৃষ্টিপাত" পত্রিকার সম্পাদক। ওই যে সেদিন সাহিত্যসভায় পরিচয় হয়েছিল...
এত বিখ্যাত কবি তাকে ফোন করছে! একটু ঘাবড়ে যায় শ্রীতমা।
---- ওহ্, হ্যাঁ হ্যাঁ.... বলুন বলুন।
---- এই এমনি তোমার সাথে একটু কথা বলতে ইচ্ছে হল। সেদিন তোমার কবিতাটা কিন্তু খুব ভালোলেগেছিল আমার... নিপীড়িতা মেয়েটির কথা কী যে জোরালোভাবে তুলে ধরেছ তুমি! আমি তো মোহিত!
---- ধন্যবাদ। আপনার ভালোলেগেছে, এ তো আমার প্রাপ্তি ! তা মানে... আমার নাম্বরটা কার কাছে পেলেন, দাদা?
---- ওহ্...ওই বরুণের কাছে পেলাম। কেন তোমার কি আপত্তি আছে?
---- না না, ঠিক আছে...
---- শোন, আমি কিন্তু একটা টার্গেট নিয়েছি। তোমাকে আমি কবি হিসাবে পরিচিত করাব। এটা আমার একটা মিশান বুঝলে?
মনে মনে থমকে যায় শ্রীতমা তাকে কবি হিসেবে পরিচিত করাবে অন্য কেউ! তাহলে তার পড়াশোনা, শিক্ষা এসব কিছুই নয়? ভারী আজব লাগে কথাগুলো!
---- নাহ্... মানে আমি লেখালিখি করি শখে। তেমন সিরিয়াস কিছু নয়।
--- না না বিষয়টা এত হালকাভাবে নিও না। তোমার মধ্যে প্রবল সম্ভাবনা আছে। আমার মিশানে তোমাকে সচেতনভাবে আমার পাশে দাঁড়াতে হবে।
---- না... মানে....আমি ঠিক...
অস্বস্তিকর লাগতে থাকে শ্রীতমার। এ আবার কী আপদ রে বাবা!
--- শোন শ্রীতমা, আমি সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই পাড়াগাঁয়ে থেকেও একজন কবি একদম আধুনিক ভাবধারায় কবিতা লিখতে পারে! আমার পত্রিকায় তোমাকে আমি এক নম্বর কবি হিসেবে তুলে ধরতে চাই।
ভীষন রাগ হয়ে যায় শ্রীতমার। চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
--- কে বললো আমি পাড়াগাঁয়ে থাকি? আমি কলকাতার উপকণ্ঠে থাকি। আর...
--- ওহ্। সরি... সরি....শোন যেটা বলছিলাম, তোমাকে আপ-ডেটেড-কবিতা পড়তে হবে। তুমি কি সাম্প্রতিকতম প্রকাশিত আমার কবিতার বইটা সংগ্রহ করেছিলে সেদিন?
--- নাহ্....না তো।
--- ওহ্, আচ্ছা.. আমি লিঙ্ক দিয়ে দেব। অন-লাইনে অর্ডার করে দিও, পেয়ে যাবে বুঝলে?
এবারে মুখ খোলে শ্রীতমা,
--- কিন্তু আমি ঠিক আপনার কবিতার রসাস্বাদন করতে পারি না। মানে বুঝি না, বড্ড কঠিন লাগে!
--- আরে এজন্যই তো তোমাকে ফোন করা। আমার বইটা তুমি পড় । তোমার ভেতরে কবিতা সংক্রান্ত যে সেকেলে সংস্কারটা আছে তাকে আমি ভেঙে দিতে চাই।
--- তার মানে!... আপনি নিজের বই কেনানোর জন্যই এতক্ষণ ধরে....
---- আরে না না, বিষয়টা এভাবে ভেব না। শোন না, একদিন এসো আমার ফ্ল্যাটে। পাঁচ-ছ' ঘন্টা তোমাতে-আমাতে কবিতা নিয়ে গভীর আলোচনা হবে। কবিতা বিষয়ে তোমার ভেতরে যে একটা রাবীন্দ্রিক-সংস্কার আর সাবেকী-মনন আছে তাকে আমি একদম ভেঙেচুরে দিতে চাই। হাঃ হাঃ হাঃ...
কট্ করে ফোনটা কেটে দেয় শ্রীতমা।

No comments:
Post a Comment