চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা
অরণ্যা সরকার
গল্প~মাংস
পাগুলো এখনও টলমল করে। গাঢ় বাদামী রঙ। মায়াদৃষ্টিতে বিস্ময়। চারপাশে খোপের মধ্যে ওর মত আরওঅনেকে। চোখ, কানের কিছু অংশ, গায়ের রঙের খানিক ঝলক ছাড়া কেউ কাউকে সম্পূর্ণ দেখতে পায় না। সামনে এগোতে গেলেই পা আটকে যায়। ইদানীং ওর পায়ের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। আসলে গতি তাড়া করে ওর পেশীকে। একটা দৌড়, যা বয়সের খুব স্বাভাবিক ক্রিয়া, একটা স্পর্শ, যা সে চেনে না, অথচ চায় সেই অচেনা ক্রিয়া ও প্রবণতা তো শরীরে নিয়েই সে জন্মেছে। শরীর ওকে ধাক্কা দিচ্ছে। উল্টো ধাক্কা দিচ্ছে ওর আকারের চেয়ে সামান্য বড় বাক্সটা। পেটভর্তি খাবার খেয়ে, শুয়ে আর দাঁড়িয়ে সে খানিকটা বড় হয়েছে। বাক্সটা তাই ওকে প্রায় জাপটে ধরে থাকে। ওর স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক স্কিম চলে, তার ব্যাবহারিক প্রয়োগ চলে। তাই লাবণ্য ছলকায় ওর শরীর থেকে। এই চার মাস বয়সেই বেশ ভরন্ত শরীর। নরম, পেশীবিহীন। দ্রুত বৃদ্ধির এই প্রকৌশলকে কেন ফেরাবে সভ্যতা ? ‘সময় কোথা সময় নষ্ট করবার ?’
এই প্রথম সে তার খোপ থেকে বের হল। বাইরের আলো প্রথমেই তার চোখ ঝলসে দিল। তারপর বিস্ময় বইতে বইতে সে চললো ট্রাকে চড়ে। মাংস কারখানা থেকে পথ ঢুকে গেল কসাইখানায়। তুলতুলে, দামী মাংস হয়ে সে শেষ করলো তার প্রথম ও শেষ পর্যটন। লোহার বড় গেট দিয়ে ঢোকার আগে তার গলা থেকে আচমকা বেড়িয়ে এসেছিল মত ধপধপে শাদা এক শব্দ, ‘হাম্বা’। একেই কি মুক্তকণ্ঠ বলে ?

No comments:
Post a Comment