চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত সংখ্যা
মৌমিতা পাল
মুক্ত গদ্য~ মায়াবাদ ও লোকায়ত
সাধনে তর্ক আকাঙ্ক্ষিত নয়। প্রশ্ন কাম্য। প্রশ্ন এলে বোধ ও বুদ্ধি দুয়ের সম্ভাবনা থাকে। বুদ্ধি ও জানাটাকে বোধের সাথে মিলিয়ে যোগ ও কর্মকে সম্বল করে সে পথ চলা শুরু হয়। খুলতে থাকে অন্তরের গাইডলাইন। প্রখর হয় ইনটিউশন বা প্রজ্ঞা। আর আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষা না থাকলে বোধ সাথ দেয় না। বোধ বা চেতনা হল প্রথম গুরু , আর তখনি সে গুরু হয়ে ওঠে যখন আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর যেকোন সত্যই আপেক্ষিক। তাই 'maze' একটা ছায়াপ্রক্ষেপমাত্র। তবে পথ চলাটা শুরু করতেই হয়। জার্নিটাই আসল।
বিশ্বাস কর, যা বলা উচিত তা বলা হচ্ছে না কিছুতেই। মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে খাকপে দরিয়া।
স্বাগত জানাই সেই খুলা দাবিস্তাঁকে। সেখানে দেওয়ালের পায়ের ওপর ফোস্কা দেখেও নাচ থামাইনি । গোটা জীবন নজর রেখেছি ;কি দেওয়া হয়নি। কি পাইনি সেসবের হিসেব রাখবে বেসুরো গলাগুলো। আপাতত সমস্ত কোষে ভরে যাচ্ছে ওভারমাইণ্ড আর সুপারমাইণ্ডের খেলা। স্বয়ংপ্রকাশ অদ্বয়।গোপনে সাধনা করে গোপীরা। সকল তত্ত্ব গর্ভস্থ করে দেহ ছুঁয়ে দিচ্ছে উর্ব্বশী নামক কেউ। গোটা ঘরে আতর আতর আর রিনরিন শব্দ। শীতল বড়ো শীতল করেও ভৈরব আগুন জ্বালছে ভৈরবীর শরীরে। জীবে শিব বা শক্তি লীন হয় না,সবটুকু অদ্বয়ভাবে থাকে। নিজেরই মুদ্রায় ক্রমভাসক হচ্ছি আমি। চৌষট্টি কলার মত ভৈরবেরা জাগছে। ছত্রিশ তত্ত্বে মিশে যাচ্ছে কামকলার শ্বেতবিন্দু ও রক্তবিন্দু।আত্মাতে,মন্ত্রে,না ড়ীতে,শক্তিতে,ব্যপিনীতে,সমনাতে ,তত্ত্বে ছড়িয়ে পড়ছে সাম্যরস। মোহ আর আসে না বলেই মোহ নিয়ে খেলছি।
ভৈরবের কোলে চড়ে বসেছি। ওর শরীরের গমকেই খুলে যাচ্ছে মহাসপ্তক। দুজনেই দুজনের চোখে চোখ রেখে হাসছি।আসলে দেখছি না একে অপরকে। পদ্মপুস্পে ধারণার রূপান্তর ঘটছে ধ্যানে।তবে এখনই সমাধি নয়। মনকে বলছিলাম আগেই,অস্তিত্বের ফাঁদে পড়ো না,সবটুকু মায়াজাল। অস্তি নাস্তি ব্যাজস্তুতিতে আমি হাসতে হাসতে কাঁদছি। মায়া ছিঁড়তে ছিঁড়তে ক্ষুধার প্রয়োজন অনুভব করছি না আর। এমন বিলাসের মত্ততায় যদিবা আমার ঘর ভাঙে,ক্ষতি নেই।এতশত প্রেমের চেয়ে এমন মধুর বিলাস অধিক প্রিয়। খোদাকসম ,মিলনভাগ্য মন্দ আমার ভাগ্যে অন্য মিলন আছে বলে। উমার মতো লজ্জায় ভৈরবের বুকে লুকোবার পরই ওর নখরভাগ ধরেছি মুঠোয়। কানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে অসীমের সমীপবর্তী কিছু। ঘোরতর কোন কোন ধ্বনি প্রয়াসে জাগবার আগেই ছিন্ন হচ্ছে সবই।গোপীরা সাধনা করে গোপনে ,তবু কোন পরম্পরা মানছি না। সীতারামদাস ওঁকারনাথ কিংবা গোপীনাথ কবিরাজ সবার থেকেই লুসিড ড্রিমিং প্রসেসে স্পেস টাইমের পরিধিকে ভাঙার ও মানার আচরণ শিখছি। 'দহর পুণ্ডরীকম্'এ স্পেস আছে,টাইম নেই। আর আমি সময় স্থান সব শূন্য করেই যোগভূমি,ভোগভূমি,লীলাভূমি পেছনে ফেলে আতরগন্ধের ভেতর প্রবেশ করছি। এ বড় ঘোরতর ঘোর। ব্যাকুলতা,বোধ ছাড়া আমার কোন গুরু নেই,অথবা অনেকে আছে
অনন্ত অখণ্ড স্পেস,তবে কখনোই আমাদের চৈতন্য থেকে বিযুক্ত নয়। সেখানে অসুর,দেবগুরু,দুর্বাসা একে অপরকে চুমু খায়, আমি চাইলেই। সিলেবাসের বাইরে কোয়েশ্চন হলেই ওরা টোকাটুকি করে।তবু ওরা কোন পক্ষপাতে ভোগে না ,কোন ফর্ম বা নীতির কপচানি নিয়ে বিকারপ্রাচুর্যে ভোগে না। ন্যায় অন্যায়ের form আর advantageগুলোকে পার করলেই জীবন সেই অনন্ত স্পেসে পা দেবার প্রথম ধাপটুকু খুঁজে পেয়েই যায়। অখণ্ড মহাযোগে সিদ্ধ হতে গেলে ক্ষণকে আয়ত্ত করতে হয়,আমি বলি পল।পলে অধিকার জন্মালে কাল সরে যায়। আর তারও আগে বুঝতে হবে দহরবিদ্যা।শদহরবিদ্যায় কাল গতিহীন অন্তরে আমার। কিছু ঘটেনি এমন।আমি আজো যুক্ত হয়ে আছি পরমের সাথে। কাল আধা-সরল গতি পেলে আমার ভেতর বিযুক্তির যন্ত্রণা জাগে,অস্থিরতা মিলিত হবার আকাঙ্ক্ষা প্রকট হয়। কাল বক্র গতি পেলে আমার ভেতরে সমস্ত জন্মের আবেগের আবহে আমি পরমের জন্য লালায়িত হই। দ্রুত ধ্যানস্থ হই। শ্বাসের ব্যায়াম ,নিষ্ঠা কিছুই না মেনে পাগলের মতো অহোরাত্রি জপে যাই নানান মন্ত্র,অথচ আমি কোন মন্ত্র জানি না। তাই শেষমেষ ভৈরবের কোলে চড়ে বসেছি ভৈরবী হয়ে। মহাপ্রকাশের খেলাটা শুরু হয়ে গেছে। ধ্যানস্থ না হলেই যে ডিপ্রেশন আমাকে গ্রাস করে ক্রমশ বুঝতে পারছি , সমাধিতেই আমার পরিণতি।
ঈশ্বরকে গালি দিয়ে আলিঙ্গন করি। মহাপ্রকাশের খেলায় আমি ছল করছি কোন কোন। তবে সে সবই ছল নয় খেলা , অবশ্যই লীলা।
মোক্ষ নয়,মধুর রস কাঙ্ক্ষিত।'নাহং প্রকাশঃ সর্বস্য যোগমায়াসমাবৃতঃ'(৭ম অধ্যায়,শ্লোকসংখ্যা ২৫,গীতা)। নিজেকে গোপনে রেখে ডাইমেনশনগুলোর অধিক নানান স্তরে ছুঁড়ে দিচ্ছি আমার গোপন আংটি। আমি যা বলতে চাইছি,পারিনা এখনো। মধ্যরাতে কাঁদছি প্রদীপ জ্বেলে।প্রদীপের শিখা দুভাগ হয়ে আমার জ্ঞান হারাবার ফন্দি এঁটেছে। তবু আমার সেই সিনসিয়ার কান্নার পরেই আমি মুখোমুখি হতে চাইছি না ওসব আলোর।তবু নুপুর বাজছে,গতরাতে একনাগাড়ে হাতের বালার রিনরিন। আমি এড়াতে গিয়েও এড়াতে পারছি না। জ্ঞান যোগ ভক্তি কর্ম সব শূন্য হয়ে বড় আর্ত হয়ে রয়েছে ভৈরবী। লীলাবালি বড় দয়ালু। ওর দৃষ্টিতেই আমার অস্থিতির স্থিতি।
Immanent হয়েও transcendent ,সেটাই আসল।রিলেটিভিটিতেই লুকিয়ে রয়েছে অ্যাবসোলিউটলি। সত্যই মহাসত্য হল- ই ইজ ইকুয়াল টু এম সি স্কোয়ার।
ঘরে ভোরে ও রাতে ঘুমোবার আগে ভরে যাচ্ছে দূরাগত 'ওম' ধ্বনি। কে বলছে অমনভাবে ! কাছের কথা কম শুনছি , দূরাগত গরুর ডাক , কুকুরের ডাক , আরো আরো কত শব্দ ভেসে আসছি। যুগের পর যুগ এসব শব্দে বুঁদ হয়ে থাকা যায়। শব্দই ব্রহ্ম নাকি নিছক পথের হদিশ ! ধ্যানস্থ না হলেই যেমন ডিপ্রেশন গ্রাস করে , ঠিক তেমনি ডিপ্রেশন কাটলেই ধ্যানস্থ হয়ে যেতেই হয়।

No comments:
Post a Comment