চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা
বাপন চক্রবর্তী
অণুগল্প~রজনীগন্ধা
প্রতিদিন ভোরবেলায় দরজা খুলে বারান্দায় যাওয়ার সময় তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বারান্দার বাইরে একটুখানি উঠোন। তারপর উঁচু পাঁচিল। জীর্ণ ও পুরোনো ইঁটের তৈরি।
প্রায়ান্ধকার কুয়াশাঢাকা উঠোনের দিকে তাকাতেই গোপাল একটু হেসে উঠে বসল...
- মা। এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়লে যে ?
- রোজ এক কথা বলিস। বুঝিস না। বলদ কোথাকার!
শুনে গোপাল নি:শব্দে হাসল। যেমন ও হাসত। ছোট্টবেলায়। ছোট্ট ছোট্ট দাঁত বের ক’রে
।
- তোমার পুজোর ফুল ঠিকমতো পাচ্ছ তো মা ? বাবলু এনে দিচ্ছে ?
বাবলু গোপালের বড় ছেলে। কলেজে থার্ড ইয়ার অনার্স পড়ছে।
- হ্যাঁ রে বাবা ... এনে দিচ্ছে। তোর অত চিন্তা নেই।
আগে তো গোপালই এনে দিত মায়ের পূজার ফুল। রোজ সময়মতো। কোনোদিন ভুল হতো
না।
পাখির ডাক বাড়ে। রৌদ্র ওঠে।
কথা কমে আসে মা ও ছেলের।
একসময় গোপালের বউ চা নিয়ে আসে। রাগ ক’রে বলে:
- শীত পড়ছে। একটা চাদর নিয়ে বাইরে আসবে তো।
তিনি জানেন সবাই এসে গেলে আর গোপালকে উঠোনে দেখা যাবে না।
সেই বিষণ্ণ খাটের ওপরে ... কুয়াশা ঢাকা একটা শরীর ... ধূপ আর রজনীগন্ধার কী
তীব্র গন্ধ !
রজনীগন্ধার গন্ধ যে এত অসহ্য আগে কখনও তিনি জানতেন না...

No comments:
Post a Comment