Wednesday, October 14, 2020

≈ চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা ≈ সঞ্জয় চক্রবর্তী ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
চারণকবি বৈদ্যনাথ সংখ্যা
সঞ্জয় চক্রবর্তী

অণুগল্প~উত্তুরে হাওয়া 

আজ সকাল থেকে ভর সন্ধে হয়ে গেল । দেবারতি বসে আছে উঠোনের একধারে, ভাঙা রোয়াকের উপর । দিন পনেরো আগেই তো শিমূল এসেছিল তার জীবনে । আজ শুধু স্মৃতিটুকু পড়ে আছে । কুসুমের বিয়ের দিন প্রথম আলাপ হয়েছিল শিমূলের সাথে । কুসুমের স্বামী অলোকের বন্ধু শিমূল । বরযাত্রীর দলে ছিল সে । কুসুমের পাশে বসে গল্প করার সময় শিমূল নিজেই এসে আলাপ করল দেবারতির সাথে । প্রথম দ্যাখাতেই এক দূরন্ত ভালোলাগায় ঋদ্ধ হয়েছিল দেবারতি । অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত কাটানোর পর, গভীর রাতে বরযাত্রীর গাড়িটি চলে যাওয়ার সময় শিমূল দু-পা এগিয়ে এসে বলেছিল তাকে --- "অনেক রাত হলো । আপনি খেতে বসবেন কখন ? আমার তো খাওয়া হয়ে গিয়েছে । ভেবেছিলাম, আপনি আর আমি একসাথে খেতে বসব । কিন্তু তা আর হলো কই ? ফিরে যাওয়ার তাড়ায় আমাকে আগেভাগেই খেতে বসতে হলো ।"

দেবারতি শুধু একটা ঝলক তাকিয়েছিল শিমূলের দিকে । তারপর মুচকি হেসে বলেছিল --- দেখেশুনে যাবেন ।

এই তাঁতের শাড়ীটা পড়েছেন বলেই হয়তো আপনার সৌন্দর্য যেন বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে । --- অকপটে বলেই শিমূল তাকিয়ে রইল দেবারতির দিকে ।

কথাটা শুনে লজ্জায় যেন মাটিতে মিশে যাচ্ছিল দেবারতি --- কী যে বলেন আপনি !

আমি যেদিন বাড়ির লোককে সাথে নিয়ে আপনার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলতে আসব, তখন কিন্তু আপনি এই শাড়ীটাই পড়বেন, কেমন ?

--- সেই যে বলে গেল শিমূল ! তারপরের দিন সকালে একটা দুঃসংবাদ দেবারতির কানে এসে ধাক্কা দিয়েছিল --- "বরযাত্রীর গাড়িটা সংকীর্ণ রাস্তার ধারে চলতে চলতে অন্ধকার একটা খাদের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে ।" --- বাকিটা আর শুনতে চায়নি সে । কান দুটোতে হাতচাপা দিয়ে রেখেছিল । কারণ শোনার মতো মানসিক জোর তার ছিল না ।

এই সন্ধেবেলায় উত্তুরে হাওয়াটা বেশ জোরে বইছে । বাতাসের সোঁ-সোঁ আওয়াজ থেকে উঠে আসা একটা ভয়ের শিহরণ খেলে যাচ্ছে দেবরতির সারা শরীরটা জুড়ে । তার শরীরের প্রতিটি রোম কাঁটার মতো যেন খাড়া হয়ে আছে ।

"দেবারতি.....দেবারতি....? আমার সাথে এসো ।" --- কে বলছে ? তার কানের কাছে এসে কে ফিসফিস করে ডাকছে ? কার গলা এটা ? এত চেনা-চেনা লাগছেই-বা কেন তার ? শিমূল নয় তো ? --- ভাবতেই ভাবতেই কোনো এক অচেনা আকর্ষণে দেবারতি উঠে দাঁড়াল । তারপর সোজাসুজি হাঁটতে লাগল সামনে দিকে । ময়ূরাক্ষী নদীটার পাড় ধরে । বেশ কিছুক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে নৌকা বাঁধা এক ভাঙাঘাটের কাছে এসে থেমে গেল সে । হঠাৎই দেবারতি দেখতে পেল --- ঐ ঘাটের নীচেই কাদামাখা পাথরটার উপর একটা পদ্মপাতার মধ্যে ধান, দূর্বা, চন্দন, হলুদবাটা, তেল, সিঁদুর এবং শাখা-পলা সাজানো রয়েছে ।

No comments: