Sunday, October 11, 2020

| নভেলেট | ডারউইনের চিঠি |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
| নভেলেট |
অরিজিৎ চক্রবর্তী

ডারউইনের চিঠি  ( পর্ব- ৬ )

ইউটিউবে"পথে হলো দেরি" সিনেমাটা দেখছিল সম্মোহ। সারাটা সন্ধ্যে একঘেয়ে ভাবে কাটছে।লালুকাকা কদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছে। ফিরতে এখনো দিন তিনেক বাকি। লালুকাকা না থাকলে এমনটাই হয়। মনে মনে আজকের একাকিত্বকে তিন দিয়ে গুণ করলো সম্মোহ। আসলে সম্মোহের একটা অসুখ করেছে। একাকিত্বের অসুখ। অথচ এই জনহীন অরণ্যে একাকিত্ব ভালোবেসেই তার আসা। তবু লালুকাকা থাকলে হাতের কাছে সবটা পেয়ে যায়। এখন বাড়িতে যে কেউ নেই এমনটা নয়। বুলির মা আর পবন আছে। আগামী রবিবার ফেসবুকের একটা গ্ৰুপ "ধন্যিমেয়ে" থেকে ছয়জন এখানে বেড়াতে আসবে। ফোনপে- তে অ্যাডভান্স পাঠিয়ে দিয়েছে।

এখানকার ভাঙাচোরা ঘরগুলো কত স্মৃতি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১০ বছর আগে পর্যন্ত বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সুতান গেস্ট হাউসে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ত। পরে এই গেস্ট হাউসে পুলিশ শিবির করে। ২০১০ সালে শিলদা-কাণ্ডের পরে এখানকার শিবির গুঁটিয়ে নেয় পুলিশ।  মাওবাদীরা এসে পরিত্যক্ত শিবির ও লাগোয়া গেস্টহাউস ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়। এখন জায়গাটা শান্ত তবুও সেভাবে দেখা নেই পর্যটকদের। তাঁরা এলেই বা থাকবে কোথায়? শীতের দুপুরে খাঁ খাঁ করে এই অতিথি আবাস। দরজা জানলা সব উধাও। নেই ছাউনি। লাগোয়া খাল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে বোট। মরচে ধরেছে ওয়াচ টাওয়ারে।  এ জন্য পরিকাঠামোর সমস্যা, স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাটতি, নিরাপত্তার অভাবজনিত চাপা আতঙ্ককে দায়ী করছেন অনেকে।

বাঁকুড়া শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে রানিবাঁধ। সেখান থেকে ঝিলিমিলি যাওয়ার রাস্তা ধরে বারোমাইলের জঙ্গল পেরিয়ে ১৩ কিলোমিটার গেলেই সুতান। সেখান থেকে আরও ১০ কিলোমিটার দূরেই তালবেড়িয়া জলাধার। শাল-মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা এই দু’টি এলাকা ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির কাছে এক সময় বেড়ানোর আদর্শ জায়গা ছিল। সুতানের জঙ্গলে এখনও হরিণ, খরগোস, বনমোরগ-সহ বহু প্রাণী রয়েছে। কখনও চলে আসে হাতি।পর্যটকদের থাকার জন্য যে দু’টি ঘরের একটি গেস্ট হাউস ছিল এখন সেই বাড়ি হানাবাড়ির সমান। এমনকী একটা নলকূপও নেই। রাস্তাটি অবশ্য সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।

এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা জলধর সোরেন সম্মোহকে বাড়ি করার জন্য জায়গাটা খুঁজে দেয়। প্রায় এক একর জায়গা। সম্মোহের বাল্যবন্ধু অরিত্র জায়গাটার প্ল্যান বানিয়ে দিয়েছে। তিন কামড়ার দোতলা বাড়ি। উপরের তলায় সম্মোহ থাকে। নীচটা হোম স্টে-র জন্য ভাড়া দেয়। লোকজন মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসে। তার থেকে সম্মোহের কিছু রোজগার হয়। লোকজন এলে ভালোই লাগে। বহু মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়। তাদের দেখভাল করতে করতে সম্মোহের সময় কেটে যায়।এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে তাপসদার ফোন।

--- "হ্যালো কেমন আছো সাহেব?"

----" চলে যাচ্ছে গুরুদেব। তোমাদের কি খবর? বউদি কেমন আছে?"

---- " বউদির শরীর খুব একটা ভালো নেই। কেমো চলছে। মাঝে মাঝেই তোমার কথা বলছে। "

---" শোন না! বউদি কিছুটা সুস্থ হলে, তুমি বউদিকে নিয়ে আমার এখানে চলে এসো। কদিন কাটিয়ে যাও।"

---" ইচ্ছে তো করে ভায়া! দেখা যাক! কবে সেই সোনালি দিন ফিরে আসে।রিটার্মেন্টের পর ভেবেছিলাম ঘুরে ঘুরে বেড়াব। তা আর হলো কই! ভগবান চাইলো না। তোমার বৌদি বিছানায় পড়লো।"

--- " সব ঠিক হয়ে যাবে তাপসদা। মনখারাপ করো না। বৌদি ঠিক হয়ে যাবে।"

----" তাই যেন হয়! তুমি পারলে একবার ঘুরে যাও। আমরা এখন কলকাতাতেই তো আছি। আর তুমি মাঝে মধ্যে এদিকে কাজ নিয়ে আসো যখন..."

---" নিশ্চয়ই যাব। দেখা হবে। তোমাকে আগে থেকে জানিয়ে দেব ফোন করে।"

---" ঠিক আছে। জানিও। ভালো থেকো সাহেব।"

তাপসদার সঙ্গে কথার মাঝেই একটা ফোন আসছিল। দুটো মিসড্ কল। "ধন্যিমেয়ে" গ্ৰুপের নন্দিনী ফোন করেছে।

---" হ্যালো , বলুন ম্যাভাম।"

---" বলছি আমরা রবিবার দুপুরে গিয়ে লাঞ্চ করবো। দেশি মুরগির মাংস করবেন দাদা।আর রাতে আপনাদের তৈরি হোমমেড মহুয়া চাই।"

---" অবশ্যই ম্যাডাম। চিন্তা করবেন না। সব ব্যবস্থা থাকবে।" সম্মোহ বললো।

---" থ্যাঙ্কইউ দাদা। দেখা হচ্ছে।"

ফোন রেখে একটা সিগারেট ধরালো সম্মোহ। ফেসবুক খুলে নন্দিনী সেনের প্রোফাইলটার দিকে তাকিয়ে থাকলো খানিকক্ষণ। মাঝ বয়েসি। প্রোফাইল পিকচারটার দিকে তাকিয়ে মনে হয় বেশ সুন্দরী। গালে টোল পড়ে। তবে আজকাল ফোটো অ্যাপের কায়দায় সুর্পোণখাকে সহজেই সুতনুকা বানানো যায়। তাও ভদ্রমহিলাকে সম্মোহের সুন্দরী ভাবতেই ইচ্ছে করলো। বুলির মা এখন ডিনার করবো কিনা জানতে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।সম্মোহ মাথা নাড়িয়ে "হ্যাঁ" বললো।

যাইহোক এই ফোন গুলো আসার জন্য একঘেয়েমি খানিকটা কাটলো সম্মোহের। এখন রাতের খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে। বুলির মা খাবার নিয়ে এসেছে। পবন বাংলা খেয়ে প্রায় বেহুঁশ। বুলির মা'র বয়স বিয়াল্লিশ তেতাল্লিশ হবে। পাশের গ্ৰামেই বাড়ি। স্বামী নেই। মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। এখন বেশির ভাগ সময় এখানেই থাকে। মাঝে মধ্যে বাড়ি যায়। শরীরে এখনো যৌবনের ছাপ। ঠিক মতো শাড়ি আগলে রাখতে পারে না। তাই শরীরের অনেকটাই পড়ে ফেলা যায়। সম্মোহ সেই শরীরের গন্ধ দূর থেকে উপভোগ করে। অনেক সময় ইচ্ছে ডালপালা মেলতে চায়। নিজেকে সামলে নেয় সম্মোহ।ভাবে এসব চক্করে যাওয়া মানেই বিপদ। গ্ৰামের ব্যাপার! এই তো মাসখানেক আগেই ফরেস্টের বিটবাবু কেস খেল! চম্মার সঙ্গে ফস্টিনষ্টি ছিল। গ্ৰামের লোক ধরে বিয়ে দেয় আর কি! শোনা যায় টাকার বিনিময়ে ব্যাপারটা মিটেছে।খাওয়ারটা টেবিলে সাজিয়ে বুলির মা বসলো মেঝেতে। বললো," পবন মহুয়া এনেছে, খাবি?"

সম্মোহ জিজ্ঞেস করলো,"মালটা ঠিকঠাক!"

--" খারাপ হবে কেনে খেয়ে দ্যাখ!"

--" লিয়ে আয়। খাই।"

বুলির মা মহুয়া আর গ্লাস নিয়ে এলো। সম্মোহ মহুয়া বরফ দিয়ে খেতে পছন্দ করে। তাই ফ্রিজ খুলে বরফ নিয়ে এলো। বুলির মা ফ্রিজ খুলতে ভয় পায়। লালুকাকা থাকলে সেইই সব আয়োজন করে দেয়। সম্মোহকে কোনো ঝক্ক্যি নিতে হয় না।

একবার সম্মোহের ভীষণ জ্বর। আর অসহ্য মাথা ব্যাথা। লালুকাকা কিছূতেই কিছু করতে পারছে না। ওষুধ দিয়েছে। জলপট্টি দিয়েছে। জ্বর কমছে না কিছুতেই। শেষে বুলির মা'কে বললো, " তুই আজ বাবুর কাছে থাক। বাবুর দেখভাল কর।"

বুলির মা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। লালুকাকা বললো, " কাউকে বলবনিরে! বাবুর কাছে থাক। সেবা কর।"

বুলির মা সন্ধ্যে থেকে সারারাত ছিল। কোলের উপর সম্মোহের মাথাটা চেপে ধরে জলপট্টি থেকে মাথা-গা-হাত-পা টিপে দেওয়া সব করেছিল। মাঝরাতে সম্মোহ যখন অনেকটাই সুস্থ, দেখলো বুলির মা দুই বুকের মাঝখানে সম্মোহের মাথাটা চেপে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। সেই অর্ধ উন্মুক্ত স্তনের আড়ালে সম্মোহ একটি বালকের অবুঝ যৌনতার মতো উষ্ণতা অনুভব করছে। এখন কি করবে সম্মোহ! শরীরের অপার তীব্রতাকে অবদমন করবে! নাকি এই নাইট ল্যাম্পের আলোয় চেতনার অলিন্দ্যে ভাসতে ভাসতে ঘুমিয়ে পড়বে?

আজ আবার সেই দিনটা উস্কে দিল সম্মোহকে।সম্মোহ কি বুলির মা'কে বলবে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে! দু-গ্লাস মহুয়া খেয়ে একটা ফুরফুরে ভাব এসেছে! বুলির মা টেবিল পরিস্কার করে শুতে গেছে। সম্মোহ ভাবছে বুলির মা'কে ডাকবে কিনা! ডাকলেই ক্ষতি কি! পবন নেশায় অচেতন। আর তো কেউ নেই। কাউকে জবাব দিহি করার মতো কেউ নেই এখানে।



No comments: