স্বপন শর্মা
মেরুদন্ডী
রাস্তার ধারে জমায়েত। উদ্দেশ্য পথসভা। ফেস্টুন টানানো হয়েছে অনেকটা এলাকা জুড়ে। সুব্রতদের বাড়ির গেটে, এবং রাস্তার ধারের সবকটা সুপুরি গাছে লাগানো হয়েছে দলীয় পতাকা। যে কেউ দেখলে বুঝবে, সুব্রতরা ঐ দলের সমর্থক।
ঘরের ভেতরে সুতপা রাগে গর্জে ওঠে । কিন্তু বারণ করার সাহস নেই। কারণ গত বছর পঞ্চায়ত ইলেকশানের আগে ওদের বাড়িতে দলীয় পতাকা, কাট -আউট ফেস্টুন ইত্যাদি লাগাতে বারণ করেছিল। রাতে সদল বলে এসে সুব্রতকে ওরা মারধর করেছিল।সুব্রতর সামনে সুতপাকে রেপ করার হুমকি দিয়েছিল ।
সুতপার রাগের পরিপ্রেক্ষিতে সুব্রত বলে, আর বারণ করব না। তোমার আর অরিনের নিরাপত্তাই আমার কাছে আসল কথা ।
--কি অসভ্য দেখ । আমরা ওদের দল করি না। ওরা সব জানে। তবু বেশি করে আমাদের গেটে , রাস্তার ধারের সবকটা সুপুরিগাছে ওদের দলের পতাকা টানায়। মাইক এর চোং আমাদের বাড়ির দিকে তাক করে দেয়। ঘরে অসুস্থ শাশুড়ি জেনেও ওরা এটা করে।
--আসলে জোর যার মুল্লুক তার। আমাদের রায়পাড়ায় ওদের লোকই বেশি। আমাকেও ওদের দলে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি নিজের সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না। সুব্রতর পরিষ্কার কথা ।
--- ঠিক । একদম যাবে না। ওরা টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না । মনে আছে ছেলের রেশন কার্ড করার জন্য নীলুদা পাঁচ হাজার চেয়েছিল ? আমার প্রাইমারি স্কুলের চাকরিটা হল না তিন লাখ দিতে পারিনি বলে ।
-- আরে ওরা তো ওদের দলের লোকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছে। তবে টাকার পরিমাণ একটু কম । আমার টিউশন না থাকলে তো বিপদে পড়ে যেতাম। লক-ডাউন কবে উঠবে কে জানে ? গার্জিয়ানরা ছেলে-মেয়েদের পড়তে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। ফলে ইনকাম এখন অর্ধেক। ভাবছি একবেলা অন্য কাজ করব।
--দরকার নেই। রেশনটা তো ফ্রী পাচ্ছি। । ছেলের স্কুলও বন্ধ । ফলে কোনরকম চালিয়ে নেব।
-- তোমার এবং আমার দু'জনের যখন প্যানেলে নাম আছে, চাকরি আমাদের দিতেই হবে । আজ হোক বা কাল । তবে ঘুষ দেব না। চাকরি হলে হবে , নাহলে নয় ।
--আমারও একই কথা।


No comments:
Post a Comment