সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...
দ্বিতীয় বর্ষ।
চোরটাকে আমি চিনি। অনেকদিন থেকেই
চিনি। নাম মনে হয় শ্যাম। মানে আমি ঐ নামেই চিনি। শ্যামের অন্য আরও অনেক নাম থাকতেই
পারে। চুরি করতে গেলে মাঝে মাঝে ধরা পড়তেই হয়। ধরা পড়লেই বাধ্যতামূলকভাবে যেমন
পিটুনি খেতে হয়, তেমনি প্রশ্নের উত্তরে একটা নামও বলতে হয়। বারবার ধরা পড়লে একই
নাম বলতে কেমন যেন সম্মানে বাধে। তাই নাম পাল্টাতেই হয়। কখনও শ্যাম, কখনও রাম,
কখনও বলরাম। তা শ্যাম নামে আমি যে চোরটাকে চিনি, তাকে আমি শ্যাম নামেই চিনি। তার
আরও কী কী নাম আছে তা আমার আদৌ জানা নেই।
কাজল সেন
চোর
তো সেদিন কী হলো,
শ্যাম আমার বাড়িতেই চুরি করতে এলো। তখন মধ্যরাত্রি। শীতকাল। কৃষ্ণপক্ষ। চুরির সব
থেকে উপযুক্ত সময়। কিন্তু শুধু উপযুক্ত সময়ে এলেই হয় না, চোরকে আগে থেকে জেনে নিতে
হয়, বাড়িতে কে কে আছে! তারা যদি ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে তাহলে কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে
পারে! তাছাড়া তাদের মধ্যে কেউ স্পোর্টসম্যান বা উওম্যান আছে কিনা, মানে পালানোর
সময় ছুটে তাকে ধরতে পারবে কিনা! এসব বিচার বিবেচনা করেই হয়তো শ্যাম সেদিন রাতে
আমার বাড়িটাই বেছে নিয়েছিল।
বাড়িতে আমি একাই
ছিলাম। বৌ তার দাদার বাড়ি গেছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর একমাত্র ছেলে
পুনেতে পড়াশোনা করছে। সুতরাং নিশ্চিন্ত হয়েই শ্যাম পাঁচিল টপকে আমার বাড়িতে
ঢুকেছিল। একটু দম নিয়ে নিপুণ কায়দায় ভাঁড়ার ঘরের তালা খুলে মশলাপাতির কৌটোগুলো
নাড়াচাড়ার খুটখাট শব্দ শুনে আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি বুঝতে পেরে বিছানা ছেড়ে দরজা
খুলে ভেতরের বারান্দায় পাতা ডাইনিং স্পেসে এসে বসলাম। বারান্দার লাগোয়া ভাঁড়ারঘর।
শ্যাম টের পেয়ে শশব্যস্তভাবে বারান্দায় আমাকে লুঙ্গি পরে বসে থাকতে দেখে রীতিমতো
হকচকিয়ে গেল।
-স্যার আপনি! জেগে
আছেন এই মাঝরাতে?
-হ্যাঁ শ্যাম,
আজকাল রাতে ভালো ঘুম হয় না। জেগে জেগেই কেটে যায়।
-সে কী! রাতে আপনি
জেগেই থাকেন? তাহলে আমি কখন চুরি করতে আসব?
-না না, তুমি কিছু
ভুল করনি। এটাই তো চুরির সঠিক সময়!
-ধ্যাত! কী যে বলেন
স্যার! চুরির আবার সঠিক বেঠিক সময় হয় নাকি! সুযোগ পেলেই চুরি করা যায়। আমি তো সকাল
দুপুর কিছুই মানি না। তবে রাতটা হচ্ছে স্পেশাল ব্যাপার।
-তা তুমি আমার
বাড়িতে এসেছ মশলা চুরি করতে? দেখ, গিন্নি আমার কী কী মশলা গুছিয়ে রেখেছে। যতটা
দরকার নিয়ে যাও। শেষ হয়ে গেলে, আমার গিন্নি ফিরে আসার আগে আরও একরাতে না হয় কষ্ট
করে এসো।
-আসলে স্যার, অন্য
কোনো মশলা নয়, পোস্ত চুরি করতে এসেছিলাম। ছোটমেয়েটা পোস্ত খাবার জন্য কান্নাকাটি
শুরু করেছে, অথচ বাজারে যা দাম!
বিদায় নেবার আগে
শ্যাম কাছে এলো। বললাম, ক্লাস এইটে উঠে পড়াশোনা ছেড়ে দিলি। পকেটমারার ট্রেনিং
নিলি। এখন দেখছি তোর ডিমোশন হয়েছে। ছিঁচকে চোরের কাজ করছিস!
-সে কী স্যার, আপনি
চেনেন আমাকে?


4 comments:
খুব সুন্দর৷
দারুণ
দাদা আমি অভিভূত।
দাদা আমি অভিভূত।
Post a Comment