ডারউইনের চিঠি প্রথম পর্ব
কানাডার পূর্বাঞ্চলের মাউন্ট রয়ালের শীর্ষে পর্যটন আবাসে একটি দেওয়াল ছবি আছে। এক শ্মশ্রুমান পুরুষ, পশুচর্মের শীত পরিচ্ছদ পরিহিত,বনে ঘেরা একটি হ্রদের পারে দাঁড়িয়ে আছেন। ছবির নাম " মিসিসিপি নদী আবিষ্কার করতে উদ্যত অভিযাত্রী লাসাল"। অনেকে এটা পড়ে হাসেন-- লাসাল্ কি করে কী করে জানতেন তিনি ভবিষ্যতে মিসিসিপি আবিষ্কার করবেন? এই চিন্তাটি অতি প্রাচীন, স্বয়ং অ্যারিষ্টটলের আমল থেকে চলে আসছে।এটি অ্যারিস্টটলের "অভিসন্ধিবাদের"- এর চমৎকার উদাহরণ।
সম্মোহ ঠিক এরকমই একটা ভাবনার কাছে বারবার থমকে দাঁড়ায়। তার চলাফেরা হাসি-কান্না প্রেম যৌনতা কোন কিছুই যেন এর থেকে আলাদা নয়। এই ষাট বছরের যযাতি সুলভ জীবনে যেটুকু অর্জন আর যেটুকু বর্জন, তাতে তার মনে হয়েছে প্রত্যেক ঘটনার একটা কারণ থাকবে এবং কারণ ঘটবে কার্যের আগে।অথচ লাসালের অভিযানের কারণ ( ভবিষ্যতে ) মিসিসিপি আবিষ্কার।ছবিটির নাম দেখে আমাদের মজা লাগে এ-জন্য যে এতে কার্যকারণবাদ লঙ্ঘিত হয়েছে। সম্মোহের জীবন এরকম বহু লঙ্ঘনের কূটাভাসে বৈচিত্র্যে ভরা।
দুঃখ পেলে আমরা কাঁদি। আবার আনন্দেও চোখে জল আসে। চোখে ধুলোবালি ঢুকলেও জল আসে। পেঁয়াজ কাটার সময় জল আসে স্বাভাবিক ভাবেই! সম্মোহ ভাবে এরকম চোখের জল কি একই রকম? চিত্রগ্ৰাহক রোজ লায়ান ফিসার বিভিন্ন রকম চোখের জল অর্থাৎ অশ্রুর টোপোগ্ৰাফিক একটি সিরিজ তৈরি করেন, যেখানে আমরা চোখের জলের বিভিন্ন টোপোগ্ৰাফিক্যাল চিত্রের সন্ধান পাই।সম্মোহের এরকম অদ্ভুত অদ্ভুত সন্ধান কিংবা বলা ভালো অনুসন্ধানের দিকে বরাবরই আগ্ৰহ। যেন সবসময় নিজের খেয়ালে বে-খেয়াল হয়ে আছে। ফেসবুক থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সবার কাছেই সম্মোহ নিজেই একটা মাধ্যাকর্ষণচ্যুত চরিত্র। এখন আমরা তার তীব্রতা, স্থায়িত্ব ও বর্ণের ওপর নির্ভর করেই ট্যাকটিক চলনের অভিমুখগুলি খুঁজে বার করবো। তবে তার আগে লীমা এখন কেমন আছে খোঁজ নেওয়া যাক।
লীমা নামটার সঙ্গে সম্মোহের একটা অভিমান জড়িয়ে আছে। এই অভিমান মুছে যাওয়ার নয়। আর মুছে দিয়েই বা লাভ কি! এটুকু সম্বল করেই নিজস্ব যন্ত্রণার চোরা প্রকোষ্ঠে তার দিনযাপনের নির্জনতা। আসলে লীমাও ভালো নেই। ভালো থাকবেই বা কি নিয়ে? আত্মীয়তা বন্ধুতা কোন কিছুই মূল সত্যের তেমন গভীরে নেই।সত্যের একটা হালকা অগভীর পলেস্তারা আছে মাত্র। সামান্য আঘাতেই যখন তখন মিথ্যের দগদগে হাড়মাংস বেরিয়ে পড়ে।
প্রত্যুষে কোন পাখি প্রথম ডাকে? অন্যদের ঘুম ভাঙায়? পাখি যখন ডাকতে শুরু করে, তখনও কিন্তু আকাশ নিকষ অন্ধকার, সেখানে গ্ৰহ-নক্ষত্রের রাজত্ব, আলোর আভাসটুকুও মিলবে না। তা সত্ত্বেও পাখি ডাকে, একটি পাখি প্রথম ডেকে ওঠে, সেই ঘোষণায় ততখানি প্রত্যয়, তার থেকেও বহুগুণ থাকে দ্বিধা। ভুল হলে ভোগান্তির একশেষ। ভুল কি হয় না? জ্যোৎস্নালোকিত রাত্রিকে প্রভাত মনে করে ডেকে ওঠে না পাখি? ভুল ধরা পড়লে অন্যদের কাছে জবাবদিহি করতেই প্রাণান্ত তা সত্ত্বেও প্রভাতকে আহ্বান করতে কেউ না কেউ ডেকে ওঠে। অতঃপর আরও দু'একজন গলা মেলায়।
আবার থাকছি রবিবার____


1 comment:
খুব ভালো আরম্ভ।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
Post a Comment