Thursday, September 17, 2020

≈ মানিকলাল সিংহ সংখ্যা ≈ কাজল সেন ≈

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
মানিকলাল সিংহ সংখ্যা
কাজল সেন

ঝুরোগল্প~কাঠি

চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় বছর দশেক আগে। বয়স গড়িয়ে গড়িয়ে সত্তরেরকোঠায় পৌঁছেই গেল। আর বছর দু’য়েক গড়ালেই বাহাত্তুরে বুড়ো ছেঁকে ধরবে তাঁকে। ভেবেছিলেন, অবসর জীবনে কোনো ব্যস্ততা রাখবেন না। লোক লৌকিকতা সযত্নে পরিহার করে চলবেন। কোনো কিছুতে মাতামাতি তো মোটেই নয়। শুয়ে বসে গড়িমসি করে কাটাবেন জীবনের বাকি সময়। বিগত জীবনে অনেক কাঠি দিয়েছেন অনেকের পেছনে। আর নয়! প্রথম কাঠিটা তিনি দিয়েছিলেন তাঁর স্কুলজীবনের সহপাঠিনী ও প্রথম গার্লফ্রেন্ডকে। তখন দুজনেরই নিতান্তই কাঁচা বয়স। প্রতিদিন বদলে বদলে যাওয়া শরীর সম্পর্কে অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক কৌতূহল। সেই কৌতূহলের বশেই একদিন স্কুল ছুটির পর স্কুলেরই এক নির্জন কামরায় তিনি গার্লফ্রেন্ডকে বোঝাতে চেয়েছিলেন কাঠির কার্যকারিতা। গার্লফ্রেন্ড কিছু বোঝার আগেই ব্যথায় অতিষ্ট হয়ে চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু করেছিল। আর সেই চিৎকার শুনে স্কুলের দ্বারোয়ান দৌড়ে এসে ব্যাপারটা অনুমান করে তাঁকে বেধড়ক ঠেঙিয়েছিল। এরপর আরও বেশ কয়েকটি কাঠি দেবার সাফল্যে তিনি আনন্দিত হয়েছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় বিষণ্নও হয়েছেন। তবে জীবনে তিনি মোক্ষম কাঠি দিয়েছেন তাঁর শ্বশুরকে। বিয়ে উপলক্ষ্যে শ্বশুরের কাছে কোনো পণ দাবি করেননি ঠিকই। কিন্তু শ্বশুরের মেয়েকে সুখে রাখার জন্য একটা ফ্ল্যাট, ফ্ল্যাট গোছানোর যাবতীয় আসবাব, অলঙ্কার ও একটা গাড়ি দাবি করেছিলেন। জামাইয়ের এহেন কাঠিতে, বলা বাহুল্য, শ্বশুর পাছায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিলেন। অবশ্য তখনও বাকি ছিল শ্বশুরের মেয়েকে কাঠি দেবার। তাও আবার তাঁর একটি মেয়েকে নয়, দু’দুটি মেয়েকে। বড়মেয়ে তো জামাইয়ের বউ, তাকে কাঠি দেবার আইনত অধিকারী তিনি। কিন্তু শ্বশুরের ছোটমেয়েকেও তিনি রেহাই দেননি। ব্যাপারটা জেনে বৌ হতবাক, শ্বশুর রুদ্ধবাক, আর একমাত্র শ্যালিকা ইতিপূর্বে অনস্বাদিত সুখস্পর্শে স্মিতবাক।
কর্মজীবনে একই দিনে অফিসে যোগদান করেছিলেন তিনি, ব্যানার্জীবাবু, কৌশলপ্রসাদ ও আবদুল আনসারী। মাত্র বছর তিনেকের মধ্যে বাকি তিনজন সহকর্মীকে ডিঙিয়ে কী করে যে তিনি প্রোমোশন পেয়েছিলেন, তা এক রহস্য। নিন্দুকরা বলে, তিনি নাকি তাঁদের পেছনে কাঠি দিয়েছিলেন, মানে তাঁদের নামে মিথ্যে রিপোর্ট করে ফাঁসিয়েছিলেন! তবে তাঁর মাস্টারস্ট্রোকটা ছিল রীতিমতো মারকাট্টা। একটা বিশাল অঙ্কের টাকা তছরুপের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। রীতিমতো তদন্তকমিশন বসেছিল। কিন্তু তদন্তের শেষে সবাই জানতে পারল, তিনি পাঁকাল মাছের মতো পিছলে বেরিয়ে গেছেন এবং তাঁরই দুই ওপরওয়ালা ফেঁসে গেছেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি স্বীকারও করেছিলেন, এটাই ছিল তাঁর আসল মাস্টারস্ট্রোক।
বিগত দশ বছর ধরে তিনি অবশ্য নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন নিজের ভেতরে। বহির্জগতের কোনো কিছুতেই আর আকর্ষণ বোধ করেন না। কোনো কিছু আর প্রাপ্তিরও আশা করেন না। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোথাও আসা যাওয়া করেন না। কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা করেন না। স্বামী-স্ত্রী নিজেদের ঘরে নিজেদের নিয়েই থাকতে ভালোবাসেন।সেদিন স্বামী-স্ত্রী সন্ধ্যেবেলায় বসেছিলেন বাড়ির লনে। গেটের সামনে একটা ট্যাক্সি এসে থামল। ট্যাক্সি থেকে নামল ছোটজামাই। জানালো, তাঁর ছোটমেয়ে পাড়ার একটি কমবয়সী ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে।


1 comment:

Unknown said...

এই গল্পগুলোর মজা শেষ বাক্যে।
ভালো লাগল।