Saturday, August 15, 2020

| বিশেষ সংখ্যা | ছক্কা কবিতা | অনিন্দ্য রায় |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||

কবিতাকে এভাবেও ভাবা যায়____
আসুন পড়ে ফেলি। 

অনিন্দ্য রায়
ছক্কা

 লুডোর ছক্কা ৬টি তল প্রতিটি তলে থাকে ফুটকি: ১, ২, ৩, ৪, ৫ আর ৬ 
 যদি এভাবে কবিতা লেখা হয়? 
 ছক্কা কবিতা, ৬ লাইনের, লাইনগুলির শব্দসংখ্যা ছক্কার মতো: ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬
 ছক্কা তো একভাবে থাকে না। কখনও ওপরের তলে ৩, কখনও ২ বা ৫ বা ১ থেকে ৬-এর মধ্যে  যে-কোনও  একটি। তাই ছক্কা কবিতার প্রথম লাইনে ১টি শব্দ, দ্বিতীয়টিতে ২টি... এইরকমই যে হতে হবে সবসময়, তা নয়।
 প্রথম লাইনটি ১ থেকে ৬টি যে কোনও শব্দের হতে পারে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে প্রথম ও চতুর্থ লাইনের শব্দসংখ্যার যোগফল হবে ৭ 
 একইভাবে দ্বিতীয় আর পঞ্চম লাইনের এবং তৃতীয় আর যষ্ঠ তলের শব্দসংখ্যার যোগফল ৭ হবে। 
 (লুডোর ছক্কায় যেমন থাকে, বিপরীত তলগুলির ফুটকির সংখ্যার যোগফল হয় ৭)। 
 মোট শব্দ ২১টি


প্রতিটি লাইন হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, নিজেকে প্রকাশ করতে অন্য কোনও লাইনের ওপর তা নির্ভরশীল হবে নাপরস্পরের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক অবশ্যই থাকবেএকেকটি লাইন একেকটি স্তবক, তাদের মধ্যে স্পেস দেওয়া হবে।  


 কবিতাটি যে কোনও বিষয়ে লেখা হতে পারে। 
 প্রতিটি কবিতার শিরোনাম থাকবে।
 অন্ত্যমিল থাকতে পারে, না-ও থাকতে পারে। 


 এইভাবেই আমাদের কবিতা আঙ্গিক: ছক্কা 




মধ্যরাত 


শরীর তালের বাদ্য  


বাতাস ভেতরে


গোপনে ভিক্ষার জন্য ছুঁয়েছি অন্ধের সততায়


অনিচ্ছায় কঁকিয়ে উঠেছ বারবার 


অদক্ষকে ভুল করে লোলুপ ভেবেছে




প্রথমে গায়ের ছাল ছাড়িয়ে নিতে হয়  


একাটা কাঠি, গাঁথা  


রসের ফোঁটা 


কলসি


একটু গেঁজে উঠলেই সুখ 


নেশাই যৌনতাকে সম্পূর্ণ করে তোলে 




উত্তেজনায় দারুণ সক্রিয় অঙ্গ


তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি আমি 


ভালোবাসার সময় ঠিক করে কীভাবে দেখব


অন্ধকারে অনেকটা ফাঁক


আলোয় ছোটো


কনীনিকা 




হাততালি 


উড়ল সারসেরা  


কেঁপে উঠল নিঃসঙ্গতার ঝিল


তোমার হাসির কথা মনে পড়ল শুধু


নিসর্গকে এইভাবে ভাঙাচোরা করে মেয়েরা


আমরা ছবি তুলি


৫ 


স্বপ্নে মহিষ


লাল চাদরের ঘুম কখনও পাব না  


নেহাৎ দর্শক নেই বেডরুমে  


চিৎকারে ক্ষেপে তাড়া করত আমাকে


উৎকণ্ঠা  


আমি আর অ্যালপ্রাজোলাম 




‘একবার সূর্যাস্তে দাঁড়াও’


আচমাকা শুনে আমি ঘাড় ঘোরালাম 


নির্জনতা 


লিখে রাখবার কেউ নেই 


গুটোচ্ছে আলো  


এক, এক, দুই, তিন, পাঁচটি গোবক  


৭ 


আস্তাবলের চাঁদ


ঘাঘরা


সহিসের হারমোনিকা কিছুটা পথিক 


হ্রেষাদের জমাতে পারলে উপন্যাস হত


তুমি যে এখানে এসেছ প্রেমিকারা জানে?


যদি ঠিকানা ভুলেছ 




বাংলায় লিখতে গেলে ভুল হয়


ওই দরজা দিয়ে চতুরাশ্ব আনাগোনা করে  


প্রপিতামহ ছিলেন দ্বারী 


লেখেননি কিছু 


নৈর্ঋত  


পথে নিরক্ষর হয়ে পড়ি  


৯ 


শ্যাওলাদের বাড়ি 


কাগজের নৌকো হেলে আছে


চক্ষুহীন 


শামুকের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ঢুকি 


কবিতা লিখছে কেউ


নিজের বিবাহে কলাগাছ হয়ে দরজায় দাঁড়িয়েছে 


১০


স্পর্শের ওপিঠে স্পর্শই 


তোমাকে ভুলিয়ে এনে চোখে রিরংসা বাঁধলাম  


ভ্রুমধ্য চঞ্চল 


চুম্বনে বারংবার বাস্তুচ্যুত হই  


শিরোনাম 


করুণা পিহাড়ি খেলহুঁ নয় বল  


১১


ভোঁতা খঞ্জর 


সংক্রমণের দায়ে পুড়েছে পাথর 


ভেবেছি তোমায় কাছে আসতে দেব না  


চোখের জলের চেয়ে ভালোবাসা নোনা  


আরও বিস্বাদ স্নেহ


সন্দেহ 


১২


বাস্তবতার নীচে সমস্ত কুঞ্চন সেরে যায়


অল্প গরমও হয়ে ওঠে

ঘটনাবলির দুই প্রান্তে টানাই চালাকি 


সফলতা 


পারি না একাকী


ছিঁড়ি নিজে 


১৩


কাহিনির গাধাটিকে দেখি


অক্লান্ত চলেছে 


একাগ্র 


পিঠে মালিকের প্রতিহিংসার বস্তা 


পথে জিগ্যেস করে নদী কোনদিকে 


আমি তাকে নুন দিই তুলোর বদলে 

7 comments:

জয়ীতা ব্যানার্জী said...

অনিন্দ্যদা-র লেখা পড়েই কবিতার এই আঙ্গিকটি সম্পর্কে অবগত হই। এবং এটি আমার বিশেষ পছন্দেরও। কবিতাগুলি ভীষণ ভালো লাগলো।

ছায়ারোদ said...

আঙ্গিক ও কবিতা দুটোই চমৎকার

অনিন্দ্য রায় said...
This comment has been removed by the author.
অনিন্দ্য রায় said...
This comment has been removed by the author.
Jayashree Ghosh said...

আমার ভালোলাগা

উজ্জ্বল ঘোষ said...

খুব ভালো লাগল। এই ফর্মেও মজা পেলাম। অদ্ভুত!

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় said...

অসাধারণ