Wednesday, August 12, 2020

| অণুুগল্প | হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
দুই জানলার ধারাবাহিক গল্প


আজ নিয়ে পরপর পাঁচদিন আমি উত্তরদিকের জানলাটা খুললাম। দিনে বেশ কয়েকবার। সংখ্যাটা ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে আছে পঞ্চম দিনে আমি প্রথম দিনের সংখ্যাটা শুরুর মুখেই খুব দ্রুত পেরিয়ে এসেছি। 

জানলা খোলার কারণ একটাই ----- আমার জানলার ঠিক বিপরীতে খুলে যেত আরও একটি জানলা। আর দেখা যেত দুটো চোখ। কোনো কোনো দিন দেখতাম আমি খোলার আগেই সে খুলে রেখেছে। এটা দেখেই আমার আগ্রহটা আরও বেড়ে যায়। 

কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার আমি জানলা খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই জানলাটা বন্ধ হয়ে যেত। এই ঘটনা আমাকে খুব বেশি দূরে নিয়ে যেতে পারত না যদি না আমি দেখতাম আমার জানলা খোলার পরেই সেই জানলাটা খুলে যাচ্ছে এবং এর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। 

আমার মনে হতো মানুষটা কথা বলে কম। ভাবে অনেক বেশি। শুধু তাই নয় নিজের ভাবনার ওপর তার যথেষ্ট জোর আছে। তাই আগে থেকে জানলা খুলে সে নিজের মতো করে ঘুঁটি সাজাত। আমি জানলা খোলার পর তার সেই সজ্জায় হয়তো ব্যাঘাত ঘটতো। অথবা এমন ভাবনাও অমূলক নয় আমি তার কল্পনার এত দূর দিয়ে যেতাম যে, সে তার প্রথম জানলা খোলার সিদ্ধান্তে বিশ্বাস হারিয়ে নিজেকে অভিসম্পাত করত আর আওয়াজ করে জানলা বন্ধ করে দিতো। 

যখন সে আমার পরে জানলা খুলতো তখন জানলাটা একটু বেশি সময়ের জন্যে খোলা থাকতো। আর এটাই আমাকে বারবার জানলার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসতো। মনে হতো গত রাতের না মেলা অঙ্কগুলো জানলার বাইরে দু'হাত দিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে আর তারপর চালাচ্ছে তার ওপর কাটাছেঁড়া। কারণ চোখ দুটো জানলার গরাদের খুব কাছে সরে আসতো। কখনও চোখে খেলে যেত খুশির ঝিলিক। সেটা যত না আমাকে দেখে তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণে কাটাছেঁড়ার সাফল্য নিয়ে। 

আমার কখনও মনে হয় নি জানলা খোলা অর্থহীন অথবা রাস্তা পেরিয়ে চোখের কেন্দ্রে পৌঁছে যাওয়া খুব জরুরি। কারণ মানুষটার মতো ভাবুক আগামী পৃথিবীতে খুব জরুরী এটা ভেবে নিয়ে বারবার জানলার কাছে ফিরে ফিরে আসি। 

No comments: