Wednesday, August 12, 2020

| অণুুগল্প | সুধাংশুরঞ্জন সাহা |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












সুধাংশুরঞ্জন সাহা
টান


ঠিক চল্লিশ বছর পর অমৃতা তার জন্মভিটেয় পা রাখলো । কিন্তু গ্রামের সবকিছুই অচেনা লাগছে তার । গ্রামটার গায়ে শহরের হাওয়া লেগেছে । বড় বড় আবাসন, শপিংমল, ঝকঝকে চার লেনের পাকা রাস্তা, কী নেই ! হারিয়ে গেছে তার প্রিয় কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ার গাছ । আম, কাঁঠাল, চালতা, কামরাঙা, তেঁতুল গাছ । সবই  চার লেনের  রাস্তার পেটে ঢুকে গেছে । হারিয়ে গেছে মাটির ঘর, টিনের চাল । ইট-বালি-সিমেন্টের বাড়বাড়ন্ত নির্বিচারে গ্রাস করেছে গ্রামের সবুজ । 

একমাত্র প্রিয় বাওড়টা এখনও তিরতির করে বয়ে চলেছে একাকী । বুকে তার শ্যাওলা আর কচুরিপানা। অযত্নের ছাপ সারা শরীরে ।
বর্ষার সময় তার যৌবন ফিরে আসে। বাকি সময় এমনই দারিদ্রের ছাপ ।

একমাত্র বাজারের চেহারাটাও বদলে গেছে বেশ।  দু'একটি বাদে সবই প্রায় সিমেন্টের পাকা ঘর । শুধু প্রাচীন আমলকী গাছটা এখনও গ্রামের একমাত্র ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
অমৃতার বাবা বিরাশি বছরের কবিরাজ অতীন মজুমদার  আজ বিছানাবন্দী। দশ বছর আগে , ঘুমের মধ্যেই, স্ত্রী সুধা চলে গেছে । কোন সুযোগই  দেয়নি। চল্লিশ বছর আগে অমৃতার বিয়ে হয়ে চলে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া । স্বামী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত সেখানে । একবারও এদেশে আসার ফুরসৎ মেলেনি । একমাত্র দাদাও স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে নিউইয়র্কে ওদেশের মেয়ে বিয়ে করে ওখানেই সংসার পেতেছে । তার আর সময় কোথায়, বাবাকে দেখতে আসার ! বাবাকে অনেক বার বলেছে নিউইয়র্ক চলে আসতে । কিন্তু বাবা কিছুতেই রাজি হননি ,জন্মভিটে ছেড়ে যেতে । দেশ ভাগ হওয়ার পরও আত্মীয়স্বজনেরা বহুবার বলেছে পূর্বপাকিস্তানের এই অজগ্রাম মুকসেদপুর ছেড়ে কলকাতা পাড়ি দিতে । কবিরাজবাবু কারো কথায় কান দেননি, শুধু এই ভিটের টানে। জন্মভূমির টানেই । অন্য কোন কারণে নয় ।আজ তার বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতা নেই । আয়া, নার্স ছাড়া । এতোদিন পর মেয়েকে পেয়ে খু্বই আবেগপ্রবণ কবিরাজবাবু । তার শীর্ণ হাত রেখেছেন মেয়ের মাথায়, কপালে,গালে আর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে নামছে অকাতরে ।
চল্লিশ বছরের জমানো কান্না.....।

1 comment:

Robin Basu said...

খুব সুন্দর ভাবনা