Thursday, August 20, 2020

| বাংলাদেশ সংখ্যা | শিহাব শাহরিয়ার |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||












শিহাব শাহরিয়ার 
যখন ভাঙে নক্ষত্র

আরও কয়েকটি ঢেউ গুনতে আমি আবারও সমুদ্রে কাছে এসেছি
ঝাউবনের আড়ালে সূর্যকে আড়াল করে বসে আছি 
হাত রেখেছি স্তব্ধ বালিদের কাঁধে

এই মুহূর্তে আমার কেন তাহলে মনে পড়ল
জন্মগ্রাম সারি সারি ছনঘরটিনঘরবৃক্ষের বিদীর্ণ চোখ
পয়ঃপ্রণালিটাউট গ্রাম্য শাসকের কর্কশ কণ্ঠস্বরকিশোরীর মলিন ফ্রক
নাপিতের ভাঙা আয়নাগাছের খোড়লে জমে থাকা বৃষ্টির টলটলে জল
উড়ন্ত ধুলার ঝাপসা রং আর আমার প্রথম চাঁদ ও জ্যোৎস্না দেখার অনুভূতি

কেন ঢেউ দেখার কালে আমার বার বার মনে পড়ছে
সর্ষের পাকা দানালাল সুরকির দীর্ঘছায়া পথনদীর ঘোমটা
রোদে দেওয়া প্রথম বাসরের প্রথম বালিশকলতলার ঘন কাদা
আর কারো কারোর অব্যক্ত বুকের হারানো চিঠির শব্দগুচ্ছপ্রেমগুচ্ছ

আমি কি আজীবন সাইকেল কাঁধে নিবো ব্রহ্মপুত্রের উচুঁ তীরে এসে

সকল বিধি-নিষেধ অমান্য করে
আমি আবারও সমুদ্রের ঢেউ গুনতে এসেছি

তাহলে কেন আমার মনে পড়ছে নক্ষত্রের নাভিকে

আমি তো কখনো আর্তনাদ’ বিষয়ে যৌথবৈঠক করিনি কারুর সাথে
কিম্বা করিনি দুঃখ’ বিষয়ক কোনো জরুরি সেমিনারসিম্পোজিয়াম

যে রেল-স্টেশন এখনও প্রেমিক-প্রেমিকার শেষ বিদায়ের স্মৃতিচিহ্ন
কথামালাকে গেথে রেখেছে প্ল্যাটফরমের প্লেটে
আমি তারও গল্প করিনি কারুর সাথে

এমন ঢেউযুক্ত পূর্ণিমার খামার থেকে
আমি কি ফিরে যেতে পারি

বলেছিÑএভিন্যুর নিয়ন আলো আমাকে দেখিও না
আমার নিমগ্ন চোখ নক্ষত্রের অন্ধকারে ডুবে আছে

আমি শেষবারের মতো সমুদ্র-ঢেউ গুনে গুনে ভ্রমণ করতে চাই
আমার স্বপ্নের ভগোল অথবা আমার বিনির্মিত পৃথিবী

গভীর সমুদ্র-জেলেদের শঙ্কাময় দুঃখ কেউ বুঝে না
স্বপ্ন কিভাবে বদল হয় কেউ কেউ তাও বুঝে না
কেউ কেউ বুঝে না ঢেউয়ের সাথে চারাবালির কি সম্পর্ক
আর তুমি জাননাতোমার সঙ্গে আমার কতটা দূরত্ব

তোমাকে তো আমি আমার জন্মগ্রাম দিতে চেয়েছিলাম
দিতে চেয়েছিলাম এই সমুদ্রের সবগুলো ঢেউ
তুমি বেছে নিয়েছিলে শনিবারের সন্ধ্যাকে
আমার আয়োজনে তুমি আসোনি
বলোনি ভালোবাসি

অথচ বুকের পাথর নামাতে গিয়ে
তুমি পড়েছো ঝড়ো-হাওয়া বজ্র-বৃষ্টির স্ফূলিঙ্গে 

কিসের ভয়ে সেদিন তোমার কথারা ঘন মেঘের রূপ নিয়েছি
বলেছিলামকাঞ্চনজঙ্ঘায় যেও নাপা ডুবাও জাফলঙের জলে
শোনোনি। অথচ শালিকের ডাকে তোমার কানকে করেছো সতেজ
আমার পছন্দ ছিল পাখার রঙ

আমি জানিএই শ্রাবণে বৃষ্টির ফোঁটা কুড়ানোর চেয়ে
তুমি স্মৃতিরদানাগুলো নেড়ে-চেড়ে দেখছো
তোমার তোনন্দিত নদী-গ্রাম নেই
বৃক্ষ চেনার চোখ নেই

মৌমাছির কামড়ে ব্যথাযুক্ত শরীরে তাদেরই মধু ঘষতে হয়
তুমি তাও জাননাজানবেই বা কি করে

আমি তোমাকে নিয়ে এই শহরকে জাগাতে চেয়েছিলাম
কারণ হায়েনারা শহরের শরীরকে বহুবার দাবানলে পুড়িয়েছে
তাদের চোখে লজ্জা থাকে না
চিলেকোঠার রোদের মর্ম তারা বোঝেনা

শহরে কতগুলো চিলেকোঠা আছে
তা কি তোমার পক্ষে জানা সম্ভব?
সম্ভব নয় বলে তুমি আমাকেও জানতে পারোনি

খননকৃত ওয়ারিবটেশ্বরের লাল মাটি স্পর্শ করে বলেছিলাম
বেদনার নয় আমি তোমার স্বপ্নের-সৌধ নির্মাণ করে দিবো

আমি আর পিছনে ফিরে তাকাবো না
দেখবো না এখন তোমার অশ্রুমাখা চিরুনি

এখন আমি চলে যাচ্ছি
আমার স্বপ্নগ্রামে জন্মগ্রামে নদীগ্রামে
একজন প্রিয় কবির ছায়াদীর্ঘ সমুদ্রের গ্রাম’ আমাকেও টানে

আমি আজ বিভোর বিপন্ন বিস্ময় এবং বেদনার্ত মনে এবং চোখে
সমুদ্রের ঢেউ গুনে গুনে আমার জন্মগ্রামের দিকে যাচ্ছি

কীর্তিনাশাকে যেমন দেখার সাধ ছিল কবির
তেমনি এ আমার আজন্মের সাধ

অদৃশ্যগুচ্ছ

১.
খড়ের রঙ তাড়া করে বিকেল
বাজপাখির পাখায় জড়িয়ে থাকে
শিকারির হাত

২.
চর্যার বালিকার নাকফুল
ঝুলে থাকে মধ্যরাতের টেবিলে...
...এরপর ফুল্লরার ঘুম 

No comments: