|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||
অরণ্যা সরকার
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||
অরণ্যা সরকার
চাকা ও সিঁড়ির গল্প
এক যে ছিল’র দেশে ছিল এক পোস্ট
অফিস। বারান্দায় ঝুলে থাকতো একটা লাল ডাকবাক্স। একা। একদিন, ই-মেল আর হোয়াটসঅ্যাপের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল
এক রাজকন্যে। তার সারা গায়ে রঙিন ট্যাটুর
অলংকার। কেউ কেউ অবশ্য কালশিটে বলে ভুল করতো।
তারপর খুব আলো করে যখন জীবন নেমে
আসতো তখন তাদের বুকের ভেতর থেকে লম্বা
বাতাস বেরিয়ে এসে বলতো ,’না না এ বিভ্রম।’
রাজকন্যা ডাকবাক্সকে বলল, ‘কালের ঝুলি, আমি
অক্ষরমালা। আমাকে নেবে ? আমারও বুকের ভেতরে স্মৃতির খসখস।’
চারদিকে
তখন কুয়াশা রঙের স্তব্ধতা। লাল ডাকবাক্স তার মরচেপড়া
শরীরের জন্য বড় লজ্জা পেল। বলল ‘জখম গুনে গুনে শুধু সংখ্যায় ডুবে আছি। তুমি কি কথার আকাশ নিয়ে এলে ?’
‘আমার তো আর আকাশ নেই কালের ঝুলি। চর্যাপদের টিলা পেরিয়ে, পদাবলীর যমুনা সাঁতরে, শহীদদের
রক্তঋণ বুকে নিয়ে বেশ দানা বাঁধছিলাম। এই
বালি বালি সময় আমাকে খুলে ফেলছে আমার থেকে। আমার ভেতর বিঁধে আছে আমারই কাঁটা। ভানে ক্লান্ত, মিথ্যেয় নতমুখ আমি এবার খুলে ফেলতে চাই ভিনদেশি রত্নবসানো জামা।’
তারপর কালের ঝুলির বুকের ভেতর রাজকন্যা অক্ষরমালা খুলে ফেললোপোশাক। পরে নিলো নীল
খামের শিফন। কড়ারামধনুরঅনুশাসনথেকেপালিয়েআসাকিছুরঙেরইচ্ছেলুকিয়েপড়লোওদের ‘ দুখজাগানিয়া’ গানেরতরঙ্গে।অক্ষরমালাগাইতে
লাগলো ‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ...’ ।
চাকা ঘুরছিল বনবন। বলিষ্ঠ হচ্ছিল মেধা। একদিন পোস্টঅফিস নতুন বিল্ডিং পেল। মহলজোড়া মানুষ
পেল । বোতামটেপা আরাম পেলো । পেনশনের লাইন থেকে কত জীবনের
গল্প পাক খায় নতুন দেয়ালের ভেতর। দেয়ালের কানে শ্রুতির ঝুমকো ঝকমকিয়ে ওঠে।
নতুনের হৈ হৈ জমে বাতাসের
ড্রয়ারে। লালবাক্স পড়ে রইল এক যুবক
কদমগাছের তলায়। শুকনো পাতা আর বাতিল কাগজের মধ্যে শুয়ে শুয়ে ওরা দেখল ওদের চারপাশে ভিড় করে আসছে খাম, পোস্টকার্ডদের আত্মারা। মেঘ ঘনাল ভীষণ। ভেজা কদমের রেণু মেখে ঝুপ ঝুপ
পড়তে লাগলো ‘শ্রীচরণেষু’, ‘কল্যাণীয়েষু’ ‘ প্রিয়তম,’ প্রিয়তমা’রা...।

No comments:
Post a Comment