Wednesday, August 12, 2020

| ঝুরো গল্প | কাজল সেন |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












কাজল সেন 
গোপনকথা

ফুলশয্যার রাতে রক্তিমা তার সদ্য বিবাহিত বর চন্দ্রকান্তকে জানাল, দেখ, তুমি  গত পরশু রাত দশটা নাগাদ আমাকে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করছ। কিন্তু সিঁদুরদানের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তুমি আমার স্বামী ছিলে না এবং আমিও তোমার স্ত্রী ছিলাম না। কথাটা কি তুমি বুঝতে পারছ?
চন্দ্রকান্ত এর আগে বিয়ে করেনি, আর তাই ফুলশয্যাও হয়নি। ফুলশয্যার রাতে প্রথম মিলনে কী কথা বলতে হয়, তার জানা ছিল না। সে প্রথমে কোনো কথা বলেওনি। প্রথম কথা বলল রক্তিমাই। আর রক্তিমার কথা শুনে চন্দ্রকান্ত ভ্যাবলা বনে গেল। মাথা নেড়ে সে বলল, না, কিছুই বোঝেনি। রক্তিমা বিরক্ত হলো, কেন, কেন? আমি তো বাংলায় বললাম! খুব সহজ সরল বাংলায়! আমি কি  তাহলে ইংরেজিতে বলব?
চন্দ্রকান্ত তখনও বুঝে উঠতে পারছে না, রক্তিমা আসলে কী বলতে চায়! একটু ভেবে আলতো করে বলল, না তা ঠিক নয়। তুমি যা বললে তা শুনলাম, কিন্তু বলার উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারলাম না, এই আর কী!
রক্তিমা এবার একটু নরম গলায় বলল, আমি জানি তুমি অবুঝ নও, আর তাই আমি আশাকরি, বিয়ের আগে যেহেতু আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না, তাই আমাদের আগের জীবন সম্পর্কেও কেউ কিছু জানি না। আমি বলি কী, আজ রাতটা আমরা আমাদের জীবনের সব কথা শেয়ার করি। একদম খোলাখুলি। সততার সঙ্গে। কোনো কিছুই গোপন করা যাবে না।  
এবার ফাঁপরে পড়ল চন্দ্রকান্ত। জীবনের সব কথা শেয়ার করা যায় নাকি? গোপন   কথাও? তাহলে তো সমূহ বিপদ! না না, তা হয় না! মিলির কথা রক্তিমাকে বলা  যায় কখনও? কিছুতেই নয়! মিলি তো তবু ভালো। শুধু জড়াজড়ি, ধামসাধামসি,  চুমোচুমি। কিন্তু ইন্দ্রাণীর সঙ্গে! সে তো রীতিমতো শরীর দেওয়া নেওয়া!  রক্তিমাকে বললে কোনো সন্দেহ নেই, আগামীকালই বাই বাই করে পিতৃগৃহে যাত্রা করবে।
বিভ্রান্ত চন্দ্রকান্ত অত্যন্ত সততার সঙ্গে তাই মুখ খুলল, বুঝলে রক্তিমা, আমি মেয়েদের কাছে ঠিক সহজ হতে পারি না। কেমন সংকোচ লাগে। আর তাই বুঝলে না, আমার জীবনে তেমন গোপন কিছুই নেই। কোনো মেয়ের সঙ্গেই কখনও কোনো...
রক্তিমা চন্দ্রকান্তর কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেল। রক্তিমা বুঝতে পারছিল, চন্দ্রকান্ত  সত্যিকথা বলছে না। বলল, সে কী! তুমি এতটাই গোবেচারা, ক্যাবলা? এই  কথাটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
চন্দ্রকান্ত বলল, কেন, আমাকে দেখে মনে হচ্ছে, আমি মেয়েদের পেছনে লাইন মারতাম?
রক্তিমা বলল, আমি তো ছেলেদের পেছনে লাইন মারতাম।
চন্দ্রকান্ত অবাক হয়ে বলল, সে কী! তুমি বিয়ের আগে লাইন মেরেছ ছেলেদের পেছনে?
হ্যাঁ, তাতে কী হয়েছে? শুধু পেছনে কেন, সামনেও লাইন মেরেছি। আমি তোমার মতো আনস্মার্ট নাকি?  
এবার আর চন্দ্রকান্ত নিজেকে সামলে রাখতে পারল না। রক্তিমা তার আত্মসম্মানে হামলা করেছে। সে এটা মেনে নেয় কী করে? মরিয়া হয়ে শেষে  বলেই ফেলল, আমার সঙ্গেও অনেক মেয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মিলি, ইন্দ্রাণী...     

No comments: