Wednesday, August 12, 2020

| অণুুগল্প | রাখী সরদার |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||












রাখী সরদার
মহাজ্ঞানের খোঁজে

সদানন্দ ভোরভোর হেঁটে চলেছে সাধিকা আত্রেয়ীর আশ্রমে।এই কদিন আগে নানা জায়গা ঘুরেএই সমুদ্র তীরে এসেছে। এখানেই তাঁর কথা শুনেছে।
তিনি নাকি সিদ্ধা নারী,সব জানেন।তাঁর কাছেই সেই পরম সত্যের কথা সে জানবে।যার খোঁজে সে এতদিন ঘুরছে। আশ্রমে যেতে যেতে কত কী মনে পড়ছে তার।মিঠেখালির নদীর নির্জন পারে ভণ্ড সাধু সেজে সে একসময় অনেক মানুষ কে ঠকিয়েছিল, কিন্তু ছোট্ট চন্দরাকে ঠকাতে পারেনি।যে তার মৃত মায়ের সাথে দেখা করানোর কথা বলেছিল--

"ঠাকুর তুমি  সব পারো। আমার  মায়ের সাথে দেখা করিয়ে দাও।"

"চন্দরা কেউ পারেনা।সব মিথ্যে বলি রে।"

"তুমি মিছে কথা বলো!তবে যে সবাই বলে তুমি মহাজ্ঞানী।"চন্দরা কাঁদতে কাঁদতে  ছুটে চলে গিয়েছিল।

সেদিন‌ই ওখান থেকে চলে এসেছিলাম।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে আশ্রমে এসে গেছিলাম জানিনা।এমন সময় শুনতে পাই --

"কীরে মেয়েটির জন্য কষ্ট হচ্ছে?"

অবাক হয়ে দেখিএকজন শ্বেতবস্ত্র পরিহিতা রমণী তাকে দেখে মৃদু হাসছে।এই সেই আত্রেয়ী মা!কিন্তু ইনি কিভাবে জানল!

"সব জানিরে।যা  ওই সমুদ্রে ডুব দিয়ে আয় সব
বলব।"

সমুদ্রে আস্তে আস্তে নামি।এক বিরাট  ঢেউ  আমাকে টেনে নিয়ে চললো কোন অতলে। পিছনে কে ডাকছে না ...

"ঠাকুর ,ও ঠাকুর..."

পিছন ফিরে দেখি চন্দরা  ! একটা শুভ্র পাথরে এক আধা ঘোমটা নারী বসে,আর তার আঁচল আঙুলে জড়িয়ে  চন্দরা নীলাভ দেহে রঙিন মাছেদের সাথে জলে খেলা করছে।"

আমার দেহ ভারী হয়ে আসে এমন দৃশ্যে, বাতাসহীন
শরীর আর‌ও তলিয়ে যেতে থাকে।হঠাৎ চন্দরা তার কচি হাতে আমার আঙুল স্পর্শ করে বলে ওঠে --

"ঠাকুর কোথা যাও!দ্যাখো এই আমার মা। ঠিক
খুঁজে পেয়েছি।"

"এ আমি কী দেখছি!  ঈশ্বর এমন ও ঘটে !"

"তুই ঠিকই দেখছিস।"

"তুমিও এখানে আত্রেয়ী মা!"

"হ্যাঁ রে আমিও।সবাই কে এই অনন্ত নীলে আসতে হবে।"

আঃ,বেশ হাল্কা লাগছে।চোখ খুলে দেখি  বালির উপরে শুয়ে।সেই সাধিকা পরম স্নেহে মাথায় হাত
বুলাতে বুলাতে বলছেন --

"কীরে মহাজ্ঞানের সন্ধান পেলি!"

কথা বলার শক্তি নেই।মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই।

No comments: