|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||
হামিদুল ইসলাম
ঘর ওয়াপসি
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||
হামিদুল ইসলাম
ঘর ওয়াপসি
দিনটা খারাপ যাচ্ছিলো আমার । ঘরেই বসে ছিলাম। কেবল আমার বারবার মনে পড়ছিলো দীন মহম্মদের কথা। দীন মহম্মদকে আমি বিয়ে করেছিলাম প্রাণের টানে। মনে পড়ছিলো 1971 সালের কথা। তখন উত্তাল পূর্ব পাকিস্তান। সেখানে আর থাকা যাবে না বলে মা মেয়ে আমরা বেরিয়ে পড়েছিলাম রাস্তায়। আমরা পালিয়ে আসবো ইণ্ডিয়ায়। গভীর রাত। পর্ব পাকিস্তানের বর্ডার পার হতেই পাকিস্তান আর্ম ফোর্সের হাতে ধরা পড়ে গেলাম দুজনেই। দুজন ফৌজ টানতে টানতে আমাদের নিয়ে যাচ্ছিলো ক্যাম্পের দিকে। একজন ফৌজ বলছিলো, যা আছে দিয়ে দাও নইলে প্রাণে মেরে ফেলবো। মা'র কাছে ছিলো সোনার একটা পুঁটলি। মা কিছুতেই দিতে রাজি হলেন না। তারপর ওরা মাকে গুলি করে সব হাতিয়ে নিলো। অন্ধকার। সেই অন্ধকারে হাত ফসকে আমি পালিয়ে আসলাম অনেক দূর। ওরা আমাকে ধরতে পারলো না। আমি দৌড়চ্ছি। চলে আসলাম ইণ্ডিয়ায়। তখন ভোর। চারদিকে আলো ফুটছে।
মাঠে দেখা দীন মহম্মদের সঙ্গে। তাকে সব কথা খুলে বললাম। ও আমাকে বাড়ি নিয়ে গেলো। ওর মাকে আমার কথা সব বললো। ওর মা আমাকে ভর্তি করে দিলেন একটি হাই স্কুলে।
একদিন মা দীন মহম্মদকে আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখার ব্যবস্থা করতে বললেন। মা'র ইচ্ছে ছিলো আমি এ বাড়িতেই বউ হয়ে থাকি। দীন মহম্মদের স্ত্রী হই। দীন মহম্মদের অমত তেমন ছিলো না। তবু সে বললো, ওর কাছ থেকে পারমিশন নিতে হবে। রাত্রে মা আমাকে ডেকে সব কথা বললেন। বললেন, তুমি চাইলে আমরা একটা হিন্দু পরিবারের ছেলের সঙ্গে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করবো। আর যদি না চাও তবে এ বাড়িতেই বউ হয়ে থাকো। মা বললেন, দুদিন ভাবো। পরে উত্তর দিয়ো।
আমি ভেবেছি অনেক। তাছাড়া এ বাড়িটা একদম সংস্কারমুক্ত বাড়ি। দীন মহম্মদের মতো ছেলে লাখে একজন হয়। দুদিন বাদে আমি আমার ইতিবাচক মতামত জানালাম। আমার বিয়ে হয়ে গেলো দীন মহম্মদের সাথে।
যারা ঘর ওয়াপসির কথা বলছিলো তাদের হাতে একদিন খুন হয়ে গেলো দীন মহম্মদ। কান্নায় ভেঙে পড়লো গোটা বাড়ি। আমি নিজেকে সামলে নিতে পারছি না কোনোমতেই। দীন মহম্মদের জন্যে প্রাণটা হু হু করে উঠছে।

No comments:
Post a Comment