Wednesday, August 12, 2020

| অণুুগল্প | কেয়া চক্রবর্তী |

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || 
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| || দ্বিতীয় বর্ষ ||.












কেয়া চক্রবর্তী
আশ্রিতা


মেয়েটির নাম কৃষ্ণকলি। যেমন নাম, তেমনি তার রূপ। ঠিক যেন কালো কষ্টিপাথরে খোদাই করা কোনো নারী। চোখদুটি কালো, মাথায় এক ঢাল কালো কুচকুঁচে রেশমের মতো চুল। মেয়েটি জনমদুখিনী। মা জন্মের সময়েই মারা যায়, বাবা ও ঠাকুমা এমন কালো মেয়েকে ঘরে ঠাঁই দিতে নারাজ, তাই সে এখন আশ্রিতা তার নিঃসন্তান মামার বাড়িতে। মামা ও মামী তাকে সন্তান স্নেহে লালন পালন করেছে, মামার যতকিঞ্চিৎ আয়ে বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করে, যথাসময়ে সৎ পাত্রে পাত্রস্থ করা হলো। বেশ সুখেই দিন কাটছিল, কিন্ত বিধি বাম, এক দুর্ঘটনায় স্বামীহারা হয়, ঠাঁই জোটে না আর শ্বশুরবাড়িতে। একদা মামা মামীর আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা কৃষ্ণকলি আজ আবার নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে। এদিকে ততদিনে মামাও ইহলোকের মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন। মামীর কাছেই অগত্যা ঠাঁই হয় কৃষ্ণকলির। নতুনভাবে বাঁচার আশায় আজ সে কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু কাজ পাওয়া বোধহয় এত সোজা ছিল না। একটি বাড়িতে সারাদিনের কাজের লোকের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়। কৃষ্ণকলির পরিচর্যায় মাসীমা খুব তাড়াতাড়ি সুস্হ হয়ে যেতে থাকে এবং দুজনের মাঝে এক সখ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মনে মনে ভাবে এবার বুঝি সে সুখের মুখ দেখবে, কিন্তু সুখ বোধহয় কৃষ্ণকলির কপালেই নেই। বলে না সুখ এমন পাখি যা সবার কপালে সয় না। হঠাৎই ঘুমের মাঝেই মাসীমা ইহলোক ত্যাগ করেন। কৃষ্ণকলি ব্যথিত মনে বাড়ি ফিরে আসে ও নিজের লড়াই আবার নতুন করে শুরুর জন্য মনে মনে প্রস্তুতি নিতে লাগে। কয়েকদিন পরে একজন এসে কৃষ্ণকলির খোঁজ করতে থাকে। তিনি জানান বিভাবতী দেবী( কৃষ্ণকলি যার বাড়িতে আয়ার কাজ করত) তার নামে বাড়ি, কিছু টাকা ও একটি চিঠি দিয়ে গেছেন। মাসীমা কৃষ্ণকলিকে  নিরাশ্রয় মানুষের সেবার এক মহান দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। কৃষ্ণকলির আশ্রয়ে আজ অনেক নিরন্ন মানুষ নতুন আলোর দিশা খুঁজে পেয়েছে। যে জন্ম হতে আশ্রিতা ছিল আজ সে বহু মানুষের আশ্রয়দাত্রী। মাসীমার বাড়িতেই গড়ে তুলেছে একটি আবাসিক হোম যেখানে বহু মানুষ আজ আশ্রয় পেয়েছে। মাসিমার শেষ ইচ্ছা সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। আজ সে এই হোমের দিদিমণি, বহু মানুষের মুখে খুশির আলো জাগিয়ে তোলার এক মহান কাজে ব্রতী।

1 comment:

Soumendra Nath Mahata said...

খুব সুন্দর লেখা!