|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
|| ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...||
কামরুল বাহার আরিফ
কামরুল বাহার আরিফ
আমি কোনো শোকগাথা লিখিনা
আমি তোমাকে নিয়ে কোনো শোকগাথা লিখিনি
রক্তাক্ত বত্রিশ নাম্বারের সেই বাড়ির ভিতরের
সিঁড়ির প্রান্তে দাঁড়িয়ে রক্ত চিহ্ন দেখেছি।
আমি দেখেছি টুঙ্গিপাড়ায় নারকেল বৃক্ষের নিচে
তুমি অবহেলায় পড়েছিলে পিতার কবরের পাশে
তবুও তোমাকে নিয়ে কোনো শোকগাথা লিখিনি।
আমি অনেককে দেখেছি কাঁদতে কাঁদতে তোমার
কবরে বা শোকসভায় চোখের জল ফেলতে
শুনেছি, তোমার স্তুতিতে আবেগের নদী বানাতে,
তাদের হাতেই দেখেছি লুকানো লোভের তরবারি।
ভিতরে ভিতরে যারা তোমার জয় বাংলাকে
করেছে জিন্দাবাদের ভাগাড়, পাকি চিন্তার ভূমি,
দিনের চেনা মুখ রাতেই বদলে নিয়ে
কত সাবলীল সত্তায় নিজেকে মিলাচ্ছে তারা!
আমি কোনো শোকগাথা তোমাকে নিয়ে লিখিনি।
আমার চোখে কখনোই জল আসে না,
আমি তো বত্রিশের প্রতিটি ঘরে, সিঁড়িতে
তোমাকে হাস্যজ্জ্বল দেখি আমার মনো অনুভবে।
আমি তো টুঙ্গিপাড়ার সমাধির শ্রদ্ধাঞ্জলিতে দেখি,
বসে আছো ঋষিবেশে গভীর মগ্ন হয়ে।
মাঠের সবুজ আইলে হেঁটে যাচ্ছো দৃপ্তপায়ে
পাহাড় সমান উচ্চতায় কৃষককে বুকে নিয়ে
শ্রমিককে বুকে নিয়ে, সূর্যেকে ছুয়ে ছুঁয়ে
লোভের আঁধার পেরিয়ে তুমি হেঁটে যাচ্ছো
হিমালয় সম বুকে, ভালোবাসার অবাধ প্রান্তরে।
আমি তোমাকে কখনোই মৃত দেখি নাই
আমার হাতে কোনো লোভের তরবারি নাই
চোখে, বুকে কবেই এঁকে নিয়েছি তোমার
আজন্ম লালিত্য চেতনার পবিত্র অসাম্প্রদায়িক মুখটা
সে মুখ এক অমর অজেয় কবিতা
তাই শত দুঃখেও তোমার শোকগাথা লিখিনা
আমি তোমাকে নিয়ে কোনো শোকগাথা লিখিনি।
মরুভূমি জীবনেরও দায় আছে
মরুভূমির ক্যাকটাস ও তার জলের মোহনা
আমাকে বিস্মিত করে চিরকাল
এসব কথা ভাবতে ভাবতে আমার বয়স
যখন আড়াই কুড়ি পেরিয়ে তিন কুড়ি ছুঁই ছুঁই
তখন জীবনটাই একটা খাঁ-খাঁ মরুভূমি যেনো
সেখানে অসংখ্য ক্যাকটাস আর বৃশ্চিকের বাস
আমার বুকের আবাসী এসব জীবনের দায় নিয়ে
আমি নিরন্তর খুঁজে চলি-- দুষ্প্রাপ্য জলের মোহনা
রাতের গভীর অন্ধকারে ক্যাকটাসেরা
আমার কাছে জল চায়
বৃশ্চিকেরা আমার কাছে জীবন চায়
রাতের গর্ভে থাকে দিনের প্রসব যন্ত্রণা
আমি তাদের জল ও জীবনের জন্য
রাতের প্রসব যন্ত্রণার ঘাম নিংড়ে তাদের জীবনকে
আমার বুকে বাঁচিয়ে রাখি।
তারা আমার বিষকষ্ট জীবনের প্রতিরূপে
শুধু কাটা ও বিষের প্রজনন ছড়িয়ে দেয়।
রাতের ঘামের কাছে আমার যত ঋণ!

No comments:
Post a Comment