মাসুদুল হক
কাঁটাতার ও অনান্য কবিতা
কাঁটাতার
এক.
চশমা পরে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াই
জঙ্গল ভাগ হয়েছে সীমান্তে
সীমান্তের কাছে এসে হিন্দু পাড়ায় আটকে যাই
কাঁটাতার বুকে চেপে বসেছে এ পাড়ায়
সীমান্তের ওপারেও হিন্দু পাড়া
একই পাড়া এখন সীমান্ত ভাগে
বাংলা আর ভারত হয়ে বুক চিতিয়ে আকাশ দেখে
আর একটা ফিঙে উড়ে যাচ্ছে এপার থেকে ওপারে!
দুই.
জঙ্গলে হাটতে হাটতে
পথ হারিয়ে কাঁটাতারের কাছে দাঁড়াই
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ সন্ধ্যা নামিয়ে আনে
সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের আজান
অবলীলায় বাংলায় ভেসে আসে!
লালন
ধুলো-বালি ওড়ানো রাস্তা দিয়ে চলছে গরুর গাড়ি বাতাসে আলখল্লা উড়িয়ে লোকটা চলে যাচ্ছেন
পাখি ও পাতার মধ্যে গুঞ্জন
সূর্য আর চন্দ্র চেনে তাকে;আসমানের তারা দেয় সাক্ষী
লোকটা খাঁচার ভিতর অচিন পাখি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
মুখোসের বিনিময়ে আয়না দিয়ে
সহজ মানুষ খোঁজেন
জাতের পরিবর্তে মন;
ধর্মের বাইরে মানুষ!
লোকটা হেঁটে বেড়ায় মন থেকে মনে;হৃদয়ের রাস্তায়
অথচ তার দেখা পেলাম না আজও
শহরের পাখি
শহরের পাখি, বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে ডানার শব্দ
রোদের রংয়ে এঁকে নিচ্ছে শরীর
ওর কণ্ঠে কয়েদীর চিৎকার। কয়লাপোড়া দিনের গন্ধে
শ্রমিকেররা দুপুর রোদে ভিজতে থাকে
চিলচিৎকারের প্রতিভায়
জেলার তাকিয়ে দেখে আকাশে
তারপর অজানা শঙ্কা নিয়ে পরিদর্শনে ছোটেন
কয়েদী থাকে ঠিক ঠাক
শুধু কয়েকটি বিড়াল নিশ্চিতে হেঁটে বেড়ায়
দুপুরের জেলখানায়
আয়না
আয়না, চলমান মুহূর্তের বিন্দুগুলো মিলিয়ে
আমাকে অবিকল দেখায় পারদে
আলোভরা ভোরে আমি আয়নায় জেগে উঠি
অথচ আকাশ কালো হলে শুধু আমাতে আমি থাকি
আয়নায় কোনো মুখ থাকে না
আয়নায় দেখা আমাকেই আমি
মিলিয়ে মিলিয়ে স্মৃতি ও ছবি দিয়ে নিজেকে চিনি
বোবা মেয়ে
রঙ্গীন বিকেল গায়ে নিয়ে অন্ধকারে ঘুমাতে যাচ্ছে পিপুল গাছটি
প্রতিদিন ও ঘুমায়;আজ দেখা হলো আমার সঙ্গে
ওর দিনের নিঃশ্বাসে আমি স্বস্তি পাই
তাই রাতে খুব নিবিড় হলাম গাছটির কাছে
পিপুল গাছ এক বোবা মেয়ে
ওর সব কথা গুবরে পোকার কাছে আছে
রাত হলেই বোবা এই মেয়ে শরীর রক্ষায় বিষ ছড়ায়
আর গুবরে পোকাগুলো ওর কানে কানে কথা বলে
আমি রাতেই নিবিড় হলাম মেয়েটির কাছে
কানে কানে গুবরে পোকার কথা বুঝে নিতে
শিকার
সন্ধ্যা তোমাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসে
তোমার ঠোঁটে আমি এক রেশম পোকা
অন্ধকারের আগে ধরা পড়েছি
আলোর দিকে ছুটতে ছুটতে
আমার ঠোঁটে তোমার ঠোঁট
চরকার সুতো দিয়ে
আমি তোমাকে বেঁধে ফেলতে চাই
আমার লালায় ভয় নেমে আসে
তোমার শরীর থেকে এক অদৃশ্য বুনন;
একটা মাদকের ঘ্রাণ
আমাকে ঘ্রাস করে নেয়
তুমি সন্ধ্যার গভীরে আরো অন্ধকারে
পরিপাকতন্ত্রের প্রতিভায়
আমাকে ধীরে ধীরে হজম করে নাও
আরেক রেশমের ছোঁয়া অনুভব করে
আমি আলোর দিকে ফিরতে চেয়েছিলাম
তুমি এক শিকারী ফিঙে
লোভ ও লালায় আমাকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিলে!
স্যাটায়ার
ধর্ষণলিপির মধ্যে মেয়েটি আটকে গেছে
মেয়েটি আমাদের বোন অথবা গতজন্মের প্রেমিকা
রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি ডানার নাম গণতন্ত্র
সে ডানায় ধর্মান্ধ পোকাগুলো বসে আছে
মেয়েটি কিছু বলতে চেয়েছিল...
পূজিতন্ত্রের সমাজবিজ্ঞান কিন্তু সন্ত্রাসের ব্যাকরণ
শেখায়;
মেয়েটির কথা তাই হাজার বছরের দূরের
কথা হয়ে ওঠে
ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মিছিলের মধ্যে মিছিল
নেকাবে নারীর মুখ ঢেকে
বোরকার নিচে পুরুষের পা ধরা পড়ে যায়
কুৎসিত সে পা রাজপথে ধর্ষণের বিচার চায়!

1 comment:
খুব ভালো লাগল
Post a Comment