Friday, November 13, 2020

✪ দীপান্বিতা সংখ্যা ≈ সংগ্রামী লাহিড়ী

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||  
দীপান্বিতা সংখ্যা














সম্পাদক~ সংগ্রামী লাহিড়ী- অণুগল্প

আড্ডা নিউ জার্সি থেকে প্রকাশিত ই-ম্যাগাজিন অভিব্যক্তি-র সম্পাদক

ক্যাবলা যখন সম্পাদক

ক্যাবলার সাধ পুজোয় একটি শারদীয়া ম্যাগাজিন বার করবে।  
টেনিদার টিমের উজ্জ্বল রত্ন ক্যাবলা। ক্লাসে ফার্স্ট হয়। সাহিত্যচর্চা করে।
একবার বাংলা-খাতায় কবিতা লিখেছিল।  সেটা পড়ে বাংলা-স্যার বলেছিলেন, "এসব কী লিখেছো কাবুল? ‘সর্পিল প্যারাবোলার ছন্দ’, 'নেবুলার সিন্ধুশকুন', 'কশেরু-মজ্জারা' - এর মানে কী?"
সে ঘটনা তো বরেণ্য স্রষ্টা নারায়ণ গাঙ্গুলী-মশাইয়ের কলমে সবারই পড়া।
কাবুলের কবি হওয়ার বাসনার সেখানেই ইতি।
কিন্তু সম্পাদক হতে তো বাধা নেই?  
ঠাকমা সাহস দিয়েছেন, খরচাপাতি তিনি দেবেন।
অতএব চাটুজ্যেদের রোয়াকে বসে ক্যাবলা জানালো তার মনোবাসনা।
হাবুল উৎসাহিত, "জান লড়াইয়া দিমু এক্কেরে।"
প্যালারাম সন্দিগ্ধ, "লেখা জোগাড় হবে কোত্থেকে?"
টেনিদা অভয় দেয়, "কিচ্ছু ভাবিসনি। এই শর্মার শুধু একবার বলে দেওয়ার অপেক্ষা। এত লেখা আসবে যে পড়েই উঠতে পারবি না।”
টেনিদার যেমন কথা, তেমন কাজ।
অতঃপর পরবর্তী কালে পাঁচশো কবিতা, সোয়াশো ছোটগল্প আর দু'হাজার অণুকবিতায় ক্যাবলা হারিয়ে যায়।
তবে তার এলেম আছে। বিধ্বস্ত হয়েও ঝেড়েঝুড়ে উঠে দাঁড়ায়। সব লেখা পড়ে, বেছেবুছে, সাজিয়ে-গুছিয়ে প্রেসে পাঠায় তার সাধের শারদীয়াকে। এবং এই পরিশ্রমের ফলে আধুনিক বাংলাসাহিত্য সম্মন্ধে সে সম্যকরূপে জ্ঞানলাভ করে।
বাড়ির ছেলে একলাফে সম্পাদক হয়ে বসলো, আনন্দে ক্যাবলার মা পোলাও-মাংস খাইয়ে দিলেন। হাবুল আর টেনিদা কব্জি ডুবিয়ে খেল। প্যালার জন্যে অবিশ্যি আলাদা ঝোল রান্না করতে হয়েছিল।      
গন্ডগোলটা বাধলো ইশকুলে।    
ক্যাবলার নবলব্ধ সাহিত্যজ্ঞানের সাক্ষ্য ছড়িয়ে গেল পরীক্ষার খাতায়।  
খাতা হাতে নিয়ে বাংলা-স্যার বললেন, "ডেঁপো ছোকরা, সম্পাদক হয়েছ বলে লঘু-গুরু জ্ঞান বিসর্জন দিয়েছো একেবারে? বাপ-মা জানে যে তুমি এত পেকেছো?”
ক্যাবলা তোতলায়, “ক্কি করেছি স্যার?"
"'তারপর দ্রৌপদী একাই দুঃশাসনের মহড়া নিলেন। এক প্যাঁচে তাকে কাত করে সবে কর্ণের দিকে এগোচ্ছেন। কর্ণ ভয়ে কম্পমান, পরনের কাপড় হলুদবর্ণ'.. এসব কী?"
ক্যাবলা এবার আত্মবিশ্বাসী, “ওহ, এই কথা? ওটাই এখনকার লেখায় খুব চলছে স্যার। মহাকাব্যের নতুন দিগন্ত। অন্য-মহাভারত। অন্য-রামায়ণ শুনবেন নাকি স্যার এট্টুসখানি?"
বাংলা-স্যার চোখ বুজলেন, "শোনাও।”
ক্যাবলা শুরু করলো, "সীতা রামকে বললেন, ‘অকম্মার ধাড়ি, অ্যাদ্দিনে একটা সোনার হরিণ কিনে দেবার মুরোদ হোলো না, বলে কিনা অগ্নিপরীক্ষা! তুমি থাকো তোমার আগুন নিয়ে, আমি চললুম ফিরে লংকায়। অনেকগুলো সোনার-বরণ হরিণ চরে বেড়াতে দেখেছি। একটাকে ধরে সোজা বাল্মিকী-কাকুর আশ্রমে চলে যাব। আর ফিরছি না।'  
ও কী স্যার? কী হল আপনার? পড়ে যাচ্ছেন কেন? ওরে জল আন, কী সব্বোনাশ, স্যার গরমে ভিরমি গেছেন যে! হায় হায়, এ কী হলো....."

No comments: