Wednesday, November 11, 2020

||বিশেষ সংখ্যা ≈ বিশ্বজিৎ দাস ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
বিশ্বজিৎ দাস

পৃথার মৃত্যুরহস্য


১.
জন্মদিনে বেরিয়েছিল মেয়েটি আর
                                         ফেরেনি
বন্ধুর এই জন্মদিন নিয়ে
বাড়িতে কখনো বলেনি সে। পরাভব
পৃথাকে বলেছে, তুমি না এলে ব্যর্থ জীবন

সেইমতো সে গিয়েছে তার বাড়ী
বন্ধু আর প্রেমিকের দূরত্ব বোঝেনি

আদতে দুয়ের মাঝে পড়ে থাকে এক
আসন্ন মাংসের লোভ, উপভোগ ছক...

২.
এদিকে থানায় এসে পৃথার বাবা-মা
মিসিং ডায়েরি করে, জানায় আসেনি বাড়ী
মেয়ে তাদের; খোঁজ নিয়ে জেনেছে

রকির সাথেই শেষবার দেখা গেছে
রকিও ওদের বন্ধু। পুলিশকে সে কথা
জানিয়েছে, এখন দেখার যে; কি হয়
এই তদন্তের? এই কেস হাতে নিয়ে
সন্দেহজনক বন্ধুদের ডাকে এক
     পুলিশের আইও। জেরায় কিছুই পায়নি


৩.
অথচ মেয়েটি খুন হল, দেহ পেল
পুলিশ জুতোর সূত্র ধরে। পুকুরের
পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে সেই জুতো

তখনি সন্দেহ হয় পুলিশের। তারা
ডুবুরি এনেছে খুব গোপনে এবং

লাশ তুলে ময়নাতদন্তে পাঠায় আর
সাদা পোশাকের ফাঁকে রাখে চোখমুখ

            পরিবারের চালচলনও র‌্যাডারে...

৪.
তাহলে কে করল খুনটা?
              আর কি হয়েছিল সেদিন?
পরাভব জানিয়েছে তার জন্মদিনে
পৃথাকে ডেকেছে এটা সত্যি। তবে সেও

বাড়ি যাবে বলে, নিজেই বেরিয়ে যায়
বন্ধুদের পার্টি থেকে পরাও পারেনি

প্রেমিকার শেষ স্পর্শটুকু নিতে, তবু
তারই যে বাড়ির পাশের পুকুরে কাদামাখা লাশ

ঘুমিয়ে রয়েছে দেখো পচাগলা দেহে...

৫.
এবার গোয়েন্দা অমিয়র পালা। সে যে
জানে কি করে এসব বের করতে হয়!

তদন্ত নিয়েই হাতে পুকুরের পাড়
যেখানে পেয়েছে জুতো আর আশেপাশে
ঘোরাঘুরি করতে করতে
                   পেল একটা জামার বোতাম

ব্যস! এইবার এগোতে হবেই। রকি আর
পরাভব আবারও পেয়েছে ডাক। সঙ্গে
আরও কিছুজন যারা; আসে যায় পথে...

৬.
৩০৭, ৩০০ ধারায় কেস করেছে
পৃথা মণ্ডলের বাবা। উকিল বাবুর
পরামর্শে রকি ও পরাভবের ধারা,
জামিন অযোগ্য হল! পুলিশের পেটে
কিছু জমা হয়। তবু গোয়েন্দা অমিয়

           পৃথার বাবাকে ডাকে অপরাধীদের
ধরার জন্যেই! আসে। বলে খুব ভালো
মেয়ে যে আমার। ওরাই করেছে খুন

অমিয় হেসেই বলে দাঁতের গোড়াটি
ভাঙা কেন আপনার? চমকে ওঠে হাত...

৭.
'না না কই তেমন কিছু না'!
'ওটা মাংস খেতে গিয়ে ভেঙেছে তো, খুব
কষ্ট হয় এখন। ওরা শাস্তি না পেলে যে
আমার মেয়ের আত্মার শান্তি হবে না'

    'আপনি একটু দেখুন না মিস্টার অমিয়?'
এবার খুলেছে মুখ ওই ভাঙা দাঁত
দেখিয়ে বলেছে কি ভাবছেন অলীক?

হঠাৎ তর্কের মাত্রা যায় বেড়ে তার
অলীক নিজেকে বাঁচানোর জন্য হাঁকে

তারপর ভেঙে পড়ে, আমিই করেছি
খুন, বলে চিৎকার করে ওঠে অলীক...

৮.
আর বোতামের সূত্র? অদ্ভুত হেসেই
প্যান্টের পকেট থেকে লোকটি আরও দুটি
বোতাম করেছে বের। 'এই নিন ওর
জামার বোতাম'। 'আমার অমতে প্রেম?

মিটিয়ে দিয়েছি সাধ। ধরুন আমাকে
ফাঁসি দিন। কিচ্ছু যায় আসে না আমার'

প্রায় মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়েই
এইসব আত্মসম্মানের খুন হয়

তখন থাকে না মনে সন্তানের চাঁদ...

৯.
জেরায় বলেছে আরও ওৎ পেতে ছিল
পৃথার আসার পথে ধরে ওর বাবা
পুকুরের ওপারে দেখেছে এক বুড়ো
তাতেও কমেনি রাগ, মেরেই ফেলবে সে

গলা টিপে ধরে একটু এগিয়ে এসেই
বুড়োটি তখনো দেখছে বাবা কীভাবে যে
মেয়ের মৃত্যুর জন্য উৎসাহী হয়!

সেও বাঁচতে চেয়ে আঁকড়ে ধরেছে বোতাম
ঘুষি মেরে ছাড়াতে চেয়েছে। দাঁত ভেঙে
পড়েছে বাবার, সেই মুহূর্তে কে বাবা

কে মৃত্যুর শরীরের কাছে শ্বাস নেওয়া
এক মুখ, ভেবেই অবাক জলঘাস...

১০.
অনেক হয়েছে ভেবে অলীকের কান্না
অমিয় ধরেছে রোগ আইনের বলে

আসলে অলীক জানে খুনের চেহারা
এগারো বছর আগে ঠিক এইভাবে
বোনকেও মেরেছিল, সেদিন পড়েনি ধরা

আজ সেসবের স্বীকারোক্তি দিল
কি ভয়ঙ্কর রাগের শেষে মানুষ পিশাচ হয়

রক্তের আড়ালে মেঘ বহুদিন হাসে..


No comments: