সম্পাদক~ সৌর শাইন-এর অণুগল্প
গল্পপথিক অনলাইন-পত্রিকা
নোনা স্মৃতির কোলেজ
ঝাঁঝালো দুপুর ও উষ্ণ নিশ্বাসের তীব্র আবেদন।
এই বারান্দা ঘেরা পৃথিবীতে গল্পের জোয়ার নেমে এলে সৌরাভ্র কিংবা শাপলা কেউই এড়িয়ে যেতে পারে না। বেগতিক হাওয়া শাড়ির আঁচলটুকু ছিনিয়ে নেবার আবদার ধরে। তীব্র ইচ্ছের পূর্ণিমা ঝলসে উঠে তিথির পর তিথি। চুঁইয়ে পড়া প্রতিটি ফোঁটা কর্ষণহীনতার অভিযোগ এনে, লিখে রাখে অভিমানকাব্য! এখানে দোষ কার?
না, কাউকে দোষ দেওয়া উচিত হবে না। বিচ্ছেদ তো নিয়তিরই খেলা।
একুশের গণ্ডি পেরোতে পারেনি সৌরাভ্র। ওর আকাশ কাঁচা রঙের নবান্নে মশগুল হতে চায়। আর ভাবনার সীমা পূর্বতীর! মধ্য আকাশ কিংবা গোধূলি লগ্ন সে চিনতে পারে নি। কিন্তু সময়ের নেশা কখনো কখনো গ্রাস করতে চায়। সাড়া দিতেও মন টানে। লাজুক স্বভাব ও একচিলতে হাসির কারিশমাতে বন্দি ছত্রিশে থাকা ডা. শাপলা মল্লিক।
নোনতা বিস্কুটে কামড় দেয় সৌরাভ্র। ধড় বেয়ে নেমে আসা বিন্দু বিন্দু ঘাম শুষে নেয় শার্টের কলার। শুকনো কাপড়ের ক্ষুধা এমনই তুখোড়! সন্ধ্যায় উড়ে যাওয়া বাদুরের মতো মিলিয়ে যায় শরীরের নোনাজল। যদিও, ইচ্ছার নোনা সমুদ্র সব ভিজিয়ে একাকার করে দিতে চায়।
দেয়ালঘড়িতে ঘূর্ণি মুহূর্ত। দু’জোড়া চোখ পরস্পরের জিজ্ঞাসা ও বহুনির্বাচনী সংলাপ ঝেড়ে নিস্তব্ধ দুপুরকে গ্রাস করতে থাকে।
‘কি চা নিবে না?’
হেসে চায়ে চুমুক দেয় সৌরাভ্র। ঠোঁটে আঁচ লাগতেই বুঝতে পারে, সে কোথায় দণ্ডায়মান। আচমকা অজানা শিহরণ ঘুরে ফিরে জাগে। কাঁপন ও রহস্যমিশ্রিত হিশেব কষতে কষতে চা ফুরায়।
সৌরাভ্র ফিরে যায়।
ডাক্তার শাপলা মল্লিক সন্ধ্যার ফ্লাইটে জার্মানি পাড়ি দেয়।
একদিন রোগিদের ভিড় ঠেলে চেম্বারে প্রবেশ করেছিল সৌরাভ্র। হাতে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও কিছু ডিজাইন পেপার। বিরক্তি ভরা চোখে সৌরাভ্রের দিকে তাকিয়েছিল ডা. শাপলা মল্লিক। মনে মনে বলেছিল, ছেলেটার কাণ্ডজ্ঞান বলে কিছু নেই! কিন্তু টেকনিক্যাল কাজের সার্বক্ষণিক সঙ্গী সেই ছেলেটাকে একসময় এতোটা কাছে টানবে তা হয়তো ভাবেনি শাপলা।
শাপলার মুখে গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রশংসা সৌরাভ্রকে কখনো কখনো ক্লান্ত তুলতো। লাজুক তরুণ চুপটি করে থাকতো, মুচকি হাসতো।
সন্ধ্যের পর থেকে সৌরাভ্র শাপলাময় ভাবনার পৃষ্ঠাগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো। এই তো কিছু বিকেল জমে আছে ছাদ-বাগানে, চা আড্ডায়। শাপলা প্রায়ই চাইতো সৌরাভ্র ওর কাছে আসুক, একাকিত্ব ঘুচে দিক ঝড়ো ইচ্ছায়। কী এমন ক্ষতি হতো যদি সৌরাভ্র নিশ্চলতাকে ছুটি দিয়ে একদিন ঝাপটে ধরার সুখে পৃথিবীর সব জড়তাকে বিলীন করে দিতো?
যদি সত্যিই লাজুকতার দুয়ার চুরমার করে সৌরাভ্র একাকিত্বের পথিক শাপলাকে কাছে টানতো, ও কি আনন্দিত হতো? তখন অভিমানি পাখির মতো দূর বিদেশে ছুটতো না?
সৌরাভ্র আর ভাবতে পারে না। হঠাৎ দেখতে পায় শাপলার মেসেজ এসেছে, ‘ভালো থেকো, হয়তো আর ফিরবো না’।


No comments:
Post a Comment