Friday, November 20, 2020

||বিশেষ সংখ্যা ≈ সায়ন রায় ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ||
সায়ন রায়









জন্ম:১৯শে আগস্ট,১৯৭৭ ,পেশা:শিক্ষকতা। বিষয়:ইংরেজি।

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ :

১.মহামানবের পোশাক (কবিতাপাক্ষিক,২০০০)  

২.মুহূর্তের পাশে সমগ্র (অভিযান,২০০৯)  

৩.তরঙ্গ ও ইশারা (আদম,২০১২) 

 ৪.রভস (ছোঁয়া,২০১৭)  

৫.লুকোনো জলের দাগ (শুধু বিঘে দুই,২০১৭) 

 ৬.সকল ধূসর চিহ্ন (ভাষালিপি,২০১৯)

ননসেন্স ভার্স-এর সংকলন: সুবাসিত গোলাপ,সুভাষিত প্রলাপ(ভাষালিপি,২০২০) 

গদ্যগ্রন্থ : An Endless Journey: Revisiting Goutam Ghose Cinema (OFFBEAT,2008) ,

প্রাপ্ত পুরস্কার :শব্দসিঁড়ি পত্রিকা প্রদত্ত  সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্মারক সম্মান।

মেরুযাত্রীর ডায়েরি

প্রবল জ্বরের ভিতর দুর্গ।সেখানেই কয়েদ আছে মন।আমি তাকে উদ্ধারের নিষ্ফল

চেষ্টা চালাই। এবারের সপ্তম ক্রুসেড।

 

লড়াইটা বাইরে এবং ভেতরেও।বহুমুখী এ লড়াইয়ে ধুলো হয়ে ঝরে পড়ে আত্মার ছাই।

অনলুকারের হাসিটুকু ঝুলে থাকে দু-ঠোঁটের ফাঁকে। প্রি-ডেস্টিনড্।

 

অভিশপ্ত বাগানের পথগুলি সোনা দিয়ে মোড়া।কী তার ঝলক! কী তার বাহার!

অদৃশ্য দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লেই ল্যাবাইরিন্থ।ঘুরে ফিরে একই জায়গা।বারবার।

কেটে যাবে একটা জীবন।

 

অশ্রু কি শরীরের বর্জ্য নির্গম করে? শরীরকে করে তোলে স্বাস্থ্যবান। ভালো।

নাহলে চোখের কোটরে ধিকিধিকি জ্বলুক আগুন। একাকী তরুণ তীব্র শীতে

সেঁকে নেবে তার হাত ও কলম যুগপৎ।

 

২.

একটা বরফ কলের ভিতর সংসার পেতেছ। হাড় কাঁপানো শীত। তুমি তবু

আদুড় গায়ে ঘোরো ফেরো। বদ্ধ উন্মাদ!

 

ফ্রোজেন ফিলিংস্ বলে কিছু আছে পৃথিবীতে? তবে তাকে উষ্ণতার পারদে

চড়াতে হবে গোটা একটা বছর।ঘন হয়ে বেঁধে আছে শ্বাস। তাকে ফুরফুরে

করে বাঁশির ভিতর ঢেলে দিলেই সুর।

 

মমির অন্ধকারে ঝাঁঝালো গন্ধের সহবাস।প্রাচীন পাথরের ফাটলে ফাটলে জমে

জল।এভাবেই জেগে থাকো সহস্র বছর।

 

ঘুম নেই রাত।ঘুম নেই দিন।নিঝুমপুরীর হাহাকার।আর অতৃপ্ত কারুবাসনা।

জ্যোৎস্নার ভিতর ক্ষণে ক্ষণে বেজে উঠছে স্তব্ধতার সংগীত।

 

৩.

সকালের রোদে নাড়কেল গাছের মাথায় কাক দম্পতির ভালবাসা। আমি তাদের

দাম্পত্য ঠেলে ঢুকে পড়ি পরাণের গহীন ভিতর। জমিন আশমান এক হয়া আসে।

ঢেউ উঠে গাঙুরের জলে।

 

বিদ্বান প্রেম জানে নি। অথবা সরস লিপির ভেতর খুঁজেছিল প্রেম।হায় বিদ্যা!

হায় জ্ঞান!এক বিপুল ঘূর্ণির ভেতর ঝাঁকে ঝাঁকে চাঁদ সূর্য তারা, রাশিরাশি

ক্ষোভ অভিমান চক্রাকারে ঘুরেই চলেছে।মুক্ত কে ? মুক্তি কি ? জানে ওই

কাক দম্পতি। সকালের নরম আলোয়।

 

প্রেমিকের প্রেম মিছে হয়ে যায়।কি তার সত্য? কি তার গোপন? এক

অজানা ঝড়ের দিকে কেবলই সে ধায়।

 

সকালের রোদে কিছু প্রশ্নমালা।উত্তরহীন আলুথালু। দূরন্ত ঘূর্ণির থেকে ছিটকে

আসা কিছু বিভা,স্বর্ণকুচি,মনের অতল হতে উঠে আসা ওম্ ক্ষণিক প্রশ্রয়ে

 

তাকে সাধ দিয়ে গেল।

 

৪.

ভিতরে ভিতরে বিষ। ভিতরে ভিতরে উষ্ণ প্রস্রবণের অবিরাম ধারাপাত।

একটু একটু করে ছিঁড়ে যাচ্ছে জলের শিকড়।ঘুমে জাগরণে কানফাটা গান।

কান্নার অশ্লীল উদযাপন।থম মেরে বসে আছে ভোরবেলা ।

 

দূর দেশের প্রাচীন ভাবুক তার পুথি খুলে দেখে নেয় ক্ষণ, কাল। একটি

উল্কার নিঃশব্দ পতনের সাথেই শুরু হয়ে যায় আমাদের সকল উৎসব।

বেজে ওঠে কাড়া-নাকাড়ার স্বঘোষিত গর্জন।

 

রাশিরাশি ফুল বেল শষ্প ও রক্তচন্দনের মাঝে একফালি হীরা। ঢাকা

পড়ে আছে তার সব দ্যুতি। শঙখ ও প্রদীপ হাতে পূজারিণী ফিরে

গেছে ঘর।

 

অতিমারির শেষে বৃষ্টি নামে। শ্বেত শুভ্র স্ফটিকের প্রায় সেইসব দানা।

সোহাগ ও শীতলতা পেয়ে রণক্লান্ত দীর্ঘশ্বাস বহুদিন পর সহজ ও নরম

মাটি হয়।

 

৫.

একটা সঠিক ঝড়ের জ্ঞান পেতে চেয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় জনপদ। মাইল

মাইল পথ পাড়ি দেয় বানজারা ধুলো।

 

নীচে বৃক্ষ উপরে আশমান।পরিযায়ী পাখিদের ঢল। চমৎকার আস্তানার

খোঁজে লাগাতার দিগন্ত ভ্রমণ।অশ্রু ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিভে গেল সকল জীবন।

 

মেরুর কাছাকাছি গন্তব্যহীন ওই দিশা।লুপ্ত স্মৃতির পটচিত্রে লিখে রাখো

পথনির্দেশিকা। স্তব্ধ হয়ে আসে সব চলাচল।

 

শেষ থেকে শুরু বা শুরু থেকে শেষ।একটি রেখা সহজেই বৃত্ত হয়ে ওঠে।

সেই বৃত্তের পাড় ধরে ক্ষীণ এক পথ।সহজে কঠিনে এই যাত্রা অমলিন।













No comments: