Wednesday, October 6, 2021

শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় সুদীপ চট্টোপাধ্যায়

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || কবিতায় সুদীপ চট্টোপাধ্যায় 


অবিনশ্বর

বিরুদ্ধ আঁধারচক্র ধারাপাতে আরক্ত সৃজন
একক ঘনত্ব ফেটে বহুভাগে ছড়াল অসীমে
ক্রমশ প্রসারক্ষম ধুলাঝড় আগুন প্রবাহ
নাই শুরু নাই শেষ দিকে দিকে তরঙ্গ উতরোল
অনন্তে প্রবল ঘূর্ণি শক্তি থেকে বস্তু রূপান্তর
সময় অস্তিত্বহীন চাপ চাপ গ্যাসীয় বলয়

ছিটকে পড়ে দিগ্‌বিদিক যাকে বলে উত্তপ্ত বলয়
আলোয়-কালোয় মিশে ঘূর্ণিধাঁধা অপূর্ব সৃজন
অদম্য গতির সঙ্গে অত্যধিক তাপ রূপান্তর
ধ্বংস-সৃষ্টি একই সঙ্গে পরস্পর মিলেছে অসীমে
শূন্য ব্যপ্ত মহানাদে, মুহুর্মুহু ধ্বনির উতরোল
চরাচরে প্রলম্বিত রহস্যের আদিম প্রবাহ

বস্তু আর প্রতিবস্তু জন্ম নেয় ভাসন্ত প্রবাহ
মাঝে যেন উদ্‌গিরণ ধীরে ধীরে আগুন বলয়
জন্ম নেয় নীহারিকা—অগণন তারকা উতরোল
আলোর সাগর যেন দীপ্ত ঢেউয়ে অদ্ভুত সৃজন
সুনিপুণ কারিগর দক্ষ হাতে রচেছে অসীমে
মহাবিস্ফোরণ থেকে অগ্নিময় আলো রূপান্তর

মহাবিশ্ব যাকে বলে সেও এক ক্ষুদ্র রূপান্তর
তারও পরে শূন্য আছে, আছে শুধু অনন্ত প্রবাহ
পূর্বাপর জানা নাই কতদূর ধায়িছে অসীমে
তারই মাঝে বিন্দুবৎ আমাদের জ্যোতিষ্কবলয়
পড়ে আছে এক কোণে সৌরপরিবার, সে সৃজন
যখনই কল্পনা করি হই চমকিত, কী উতরোল

প্রণোদনা নিয়ে এল প্রাণচিহ্ন জীবন উতরোল
অসীম জলের রাশি, জড় থেকে জীবে রূপান্তর
তরল শরীরে ধ’রে জন্মবীজ সস্নেহ সৃজন
রূপ নাই কায়া নাই সংগোপনে প্রাণের প্রবাহ
ধীরে ধীরে ঘনীভূত ধীরে ধীরে সজীব বলয়
এ-খেলা কল্পনাতীত, ঘটে চলে একান্তে অসীমে

ক্ষুদ্র আমি, ক্ষুদ্র রেণু, ভেসে আছি বিস্ময়ে অসীমে
কোনও এক দুর্ঘটনা আমাকেও দিয়েছে উতরোল
এসেছি জগৎগৃহে ভেদ করে গর্ভের বলয়
দৃশ্য থেকে দৃশ্য আসে দেহ থেকে দেহ রূপান্তর
জানা নাই কোন লগ্নে আবির্ভূত চেতন-প্রবাহ
জানা নাই পরমার্থ, কোন হেতু এমন সৃজন

জীবন বলয় দেখি পাক খায় অনন্ত অসীমে
এ-হেন সৃজন আর জন্মদাগ, প্রাণের উতরোল
ছেড়ে যাব, রূপান্তর, বস্তু থেকে শক্তির প্রবাহে

(সেসটিনা কবিতা-গঠন অনুসারে)


অলাতচক্র

আলোবিন্দু, জটিলতা, নাইবিন্দু তাতে করি বাস
সহসা প্রমোদদোষে যে স্খলন অতি মনোহর
দেখেছি কলাপ তার, বিকশিত, বিভঙ্গ বাহার
আমি হেতু লব্ধ কাম, আমি হেতু চৌদিক আঁধার
বৈভব, চিরক্লান্তির অন্যথায় হৃদিপদ্মলাজ

ঠিক আছে, যে গ্রহণ এভাবে হরণ করে শ্বাস
আমি সেই অবসাদ শরীরে নিয়েছি, যেন তোর
ফিরে-আসা হয় খুব প্রথাগত, শ্রীঅঙ্গ আহার
সেরে দূরে দেখি শান্ত সরীসৃপ চলেছে বাদার
জঙ্গলে, সেখানে দেহ আবরণ খুলে ছদ্মসাজ

বিনে সে দেখাবে নিজ বৈভব কীভাবে অবিশ্বাস
ভুলে কুলকুণ্ডলিনী জাগায়, জাগায় ধ্যানঘোর
পঞ্চতপা—সে আগুন যা দেখায়, কী রঙ্গ কাহার
কে বোঝে সহজে, শুধু তাকিয়ে বুঝেছি যে কাঁদার
অবসর পেল, তাকে করপুটে নিয়ে সদ্য আজ

আমিও আবাস ছেড়ে পিছু পিছু নিই সঙ্গ তার
ঊর্ধ্বে অগ্নি আর নিম্নে খরস্রোতা মাঝে শবাধার
বাজাও আনন্দশোক—প্রতিপদে, বাজাও সমাজ

(Rimas Dissolutas কবিতা-গঠন অনুসারে)


No comments: