Wednesday, October 6, 2021

শারদীয় সংখ্যা~কবিতায় উমাপদ কর

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন || কবিতায় উমাপদ কর 



শিরোনাম রাখতে হবে এমন কোনও কথা নেই

 

১৯

বেলাশেষ। বেলাশেষে। বেলার শেষ। এসব কিছুই নেই আমার। বেলাবেলি থেকে যাই। থেকে যাব সূর্যকণায় দেহকোষ মিশিয়ে। দুপুরের ঘাড়ে বিকেল আরোহী; বেশিক্ষণ হাঁটতে পারে না দুপুরের শব। বিকেল সরীসৃপ, বুকে হাঁটে, শ্লথ, চায়ের গা-গরমে ব্যায়াম সারে। দুপুর জামা-প্যান্ট বদলে বিকেলের প্রথম ভাগ। গ্রীষ্মে, বর্ষায়, শীতে— যখন যেরকম। চপ্পলও।

বিকেলরও বেলা থাকে। বেলা বেলা এবং বেলা। থাকে নামতার গুণনে। কখনও হেলাফেলা হয় হয়তো মুঠি আলগা থাকায়। জিয়লমাছ হাতের তেলো থেকে পিছলেই যায়, যতই কম জল আর পাঁক হোক। ঘোলায় ঘোলা মিশে আরও ঘোলা। দুপুরের ঘামজল বাষ্প হতে হতে, হতে হতে চশমার কাচে মধু মধু। পাতনের শেষে মহুয়ায় মহুয়া, ম’ম’, ঘুমাঘুম, ঘুমোঘুমো। তাল-খেজুরের রস গেঁজিয়ে ওঠায় সূর্যের কণা কণা ইস্ট। বেলায় বেলায় বেলাতুতো খিদে, টান-টান।

ওয়াশরুমে অডিকোলনে বেলার স্নান, আমি ধুঁধুলের ছোবা দিয়ে শরীর ঘষে দিই। স্বচ্ছ জল ঢেলে সাফসুতরো করে সিংহাসনে বসাই। হৃদয়টা হাট করে খোলা। আমি ওরফে বিকেল বাদী আমিই বিবাদী, আমি সওয়ালকারী আমিই উত্তরদাতা। আমি পান, চুন, কয়েককুচি শুপুরি। বেলার দরবারে খেরোর খাতার সবগুলো পৃষ্ঠা উড়িয়ে আমি বেলাবেলি ঘুমোতে যাই, হতে পারে নিশ্চিন্তে, হতে পারে আশংকা মাথার বালিশ, আর পাশবালিশের তুলোগুলো ওড়ে একটা মশারি নির্মাণপ্রকল্পে।

 



২০


ঘরের আসবাব হয়েই রইলাম বছরভর। একই আসবাবে কতভাবে যে ঘর সাজানো যায়, তার সম্ভাব্যতার কথা তুমি হয়তো জানতে। কিন্তু সুন্দর লাগার ব্যাপারটা তোমাকে ভাবাতো, তোমাকে কিছুটা মৌনী। আমার এসবে প্যায়ারি কোনোদিনই ছিল না, আজও নেই। আজ শুধু চেয়ারে চেয়ার হয়ে বসে থাকি, খাটে শুই খাটের প্রেম-ফাঁদ জড়িয়ে। আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে ভুলে যাই কী করতে হবে! হেসে, আলমারিই আমাকে সমকক্ষ করে সিক্রেট লকার থেকে বার করে দ্যায় জীর্ণ পকেটবুক। কার কাছ থেকে যে লুকোতে চাই! টেবিলটাকে হৃদয় মনে হয়, তাকে বুকে কিংবা মাথায় কিংবা শরীরেই নয়, অন্য কোথাও এক করে নিই।

 

আসবাবের মতো আমারও ঘরেই ঘুরঘুর। মাঝেমাঝে ছেলে ব্লাডপ্রেসার চেক করতে চায়। আমি চেয়ারের হাতলে প্যাড-টা জড়াতে বলি। অক্সিমিটারে আঙুল দিতে বললে, বলি আলমারির হ্যান্ডেলে লাগাতে, একই তো কথা। ফুলদানির ফুল প্লাস্টিকের, জল দিতে হয় না, আমারও স্নান হয় না কতদিন!

 

একসময় বাড়িতে রংদার আসে। সমস্ত কাঠের আসবাব রং হবে। পুরোনোকে নতুনপ্রায়। প্রথমে সাফা, পরে পালিশ। শিরিষকাগজে ঘষলে জ্বলে যাই, বিন্দু বিন্দু রক্তকণা। স্পিরিটে গলানো গালায় পোঁছ মারলে ঠাণ্ডা লাগে আমার, খুব ঠাণ্ডা। রোদে রাখে, আবার পোঁছ, দ্বিতীয়-তৃতীয় দফা। সবশেষে টেবিলটা নিয়ে পড়ে। কী ঘষা, কী ঘষা! শরীরে কিছুই টের পাইনে। পালিশের পর পালিশ, আশ্চর্য, ঠাণ্ডার কোনো গপ্পোই নেই। হৃদয় যে কোথায় থাকে? আমার হৃদয় থাকে কোথায়!

 

শরীরে নয়া দেখনদারি, হৃদয়টা কি পুরোনোই রয়ে যায়!

 



No comments: