রণজিৎ অধিকারী-র কবিতা
আমরা কী করছি এখানে!
সাঁকোর মতো নড়বড়ে একটা জগৎ
আমরা হঠাৎ একদিন টের পাব।
এখানে চাই শুধু একটা আস্ত দিনের জন্য প্রস্তুতি
আর দিনের শেষে সবশুদ্ধ খুলে রাখা।
এই তো আমাদের জন্য একটা জগৎ।
আমরা যখন সবচেয়ে নড়বড়ে জায়গাটায় দাঁড়াই
তখন অনেকখানি শূন্য দেখা যায় আর
বহুদূর থেকে আসা জিজ্ঞাসু আলোগুলো।
কিন্তু সমস্তটাই উপরিতল ছাড়া কিছু নয় ;
যা-কিছু সনাক্তকরণ — তা সব উপর থেকেই।
এমনকি যখন আমরা পরস্পরের আত্মাকে
স্পর্শ করতে চাই — তখনও জগৎটা নড়ে ওঠে।
তবু এতকাল ধরে কী করছি আমরা এখানে!
কীভাবে একটা জগৎ!
ফেলে দেওয়া কোণা ভাঙা ত্রিভুজ, তোবড়ানো বহুভুজ
জোড়াতাড়া দিয়েই আমরা একটা পরিত্যক্ত সময়ে
বানিয়ে নিতে পারি আর একটা জগৎ।
যেমন পেয়েছি জঞ্জালের স্তূপ থেকে কেন্দ্র সরে যাওয়া
একটা ঢাউস বৃত্ত, যার পরিধি ভিজে ল্যাতপেতে ;
আর জীর্ণ শিরা ওঠা কিছু লিঙ্গ এবং
স্যাঁতসেঁতে জায়গাগুলোয় পচা পাতা সরিয়ে সরিয়ে
খুঁজে আনা কালচে জং ধরা দু-একটি যোনি...
আমি প্রশ্ন করি —একটা জগৎ বানাতে কী লাগে আর?
হয়তো কতগুলি বিন্দু, আমি তখন
একটা ছেঁড়া ন্যাতা দিয়ে বিন্দুগুলির ওপর জমে থাকা মাটি
ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে টেবিলে রাখি আর
কুড়িয়ে বাড়িয়ে আনা ভাঙা তোরঙ্গ, তার কোণগুলো,
দিক তৈরির জন্য কিছু পুরোনো বাঁকা রেখা( প্রাণপণে যাদের সোজা করে নেওয়া গেছে),
টেবিলে ইতিমধ্যেই চূড়া করে রাখা দু-একটা
বিষম সম্পর্ক আর কোনোকালে কূপের মতো
গভীরতা ছিল যেই যোনিদের ও পেকে হলুদ হয়ে আসা
দীর্ঘ লিঙ্গরা...
আমি প্রশ্ন করি — কীভাবে একটা জগৎ বানানো যায়!
কোণ
দুই বিপ্রতীপ কোণ —তারা পরস্পরের মুখাপেক্ষী হয়েও
স্বাধীনতা ভোগ করে অনন্তকাল,
একটা বিন্দুতে ঠেস দিয়েও তারা নির্বিকার!
সংলগ্ন বাহুগুলি একে অপরকে অস্বীকার করেই ক্রমে
ইহজাগতিকতা পেরিয়ে বহুদূর চলে যেতে থাকে...
যেন সে-যাত্রার কোনো শেষ নেই!
জলে রোদে ক্ষয়ে যায় প্রান্ত,
একদিন শ্যাওলা জমে কোণে...
অনেকগুলো প্রলয় কম্প বা আগুনের উৎপাত
হয়তো কেউ তিরিশ হাজার বছর আগের, তেরো লক্ষ
হয়তো তার ছাই পুরু হয়ে জমে আছে আজও
গভীরে গোপনে
কিন্তু কোনো কিছুই টলাতে পারে না কোণ দুটিকে।
গোঁ ধরে থাকা তাদের ভালোবাসা, জাগতিক রৌদ্র ও
ছায়া, উচ্ছ্বাস ও ঠান্ডা ছাই — সমূহ সম্ভাবনার নিচে
তারা আজও পরস্পরের মুখাপেক্ষী ও স্বাধীন।
ছড়িয়ে দেওয়া পায়ের মতো বাহু দুটি
ইহজাগতিকতা পেরিয়ে চলে গেছে।

No comments:
Post a Comment