ডারউইনের চিঠি ( পর্ব- ১৮ )
তাহলে প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে যৌথ চেতনা কি উন্নয়নের পথে এক বাধা? যে সমস্ত সমাজে যৌথ চেতনা প্রবল সেখানে কি উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে অসুবিধা হয়? "গাছেরও খাবো আবার তলারও কুড়োব"---এই দুই দিক একসঙ্গে সামলানো যায় না বলে, মফস্বল আগের মতোই থাকবে আবার, আধুনিক নগোরোন্নয়ন প্রক্রিয়া গড়ে উঠবে--- তা একাধারে চাওয়া যেন ভাবের ঘরে চুরি করার মতোই।
ট্রেনে এরকম বিজ্ঞ মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে কম নয়। উল্টোদিকের ভদ্রলোক তার সামনের সিটে বসা মানুষটিকে এই কথাগুলো বলছিলেন। সম্মোহ পাশের সিটে বসে সেটা মন দিয়ে শুনছিল। এমন সময় ট্রেন ছাড়লো। ১৮নং প্লাটফর্ম থেকে হাওড়া-পুরুলিয়া এক্সপ্রেস।
পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সম্মোহের সম্পর্ক বহুদিনের। আজ গন্তব্য বাঁকুড়া। ওখান থেকে প্রাইভেট কারে সুতান। গাড়িতে ঘন্টা দেড়েক সময় লাগে। সত্যজিৎ স্টেশনে থাকবে ফলে রাত হলেও চিন্তার কিছু নেই।
---" চা গরম চা। ঝালমুড়ি।"একে একে হকাররা আসছে। বিকাশ চায়ের ইচ্ছা প্রকাশ করতে সম্মোহ কানে কানে বলল," এখন নয়, একটু বাদেই ভালো চা আসবে। তখন খাবো"।
সম্মোহ পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের সমস্তটাই জানে। কে ভালো চা বানায়। কার ঝালমুড়ি ভালো। খড়্গপুর স্টেশনের সমস্ত চা জঘন্য! মেদিনীপুরে গাড়ি পৌঁছলে ট্রেনের দরজার বাইরে একজন চা নিয়ে আসে, যেটা খেলেই এনার্জি আসে।
সাঁতরাগাছি স্টেশন ছাড়িয়ে ট্রেন এগিয়ে চললো ঝড়ের গতিতে। সম্মোহ বিকাশকে জলের বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল," জল খা। চা আসবে।"
---" কি করে বুঝলি?"
---" সাঁতরাগাছি পেরোলেই চা নিয়ে উনি আসেন তাই!"
---"ইন্টারেস্টিং!"
---"বড়দা কেমন আছো? দুটো চা দাও?"
---" চলে যাচ্ছে গো। অনেকদিন পর!"
---" হ্যাঁ তা প্রায় মাসতিনেক পর। আগের মতো আর কলকাতায় আসা হয় না। বিকাশ চা- টা খেয়ে দেখ! চার্জ হয়ে যাবি।"
সম্মোহের কথা শুনে চা দাদা হাসল। পাশের সিটে বসা সহযাত্রী দুজন পরস্পরের মধ্যে হাসি বিনিময় করলো। জানলা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। আর সেই হাওয়ায় যেন ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। ডেলিপ্যাসেন্জারের চেনা মুখ হাত নেড়ে চলে যাচ্ছে পাশের বগিতে। কেউ দাঁড়িয়ে খানিক কুশল বিনিময় করছে সম্মোহের সঙ্গে।
---" তুই তো একেবারে ট্রেনের পরিচিত মুখ। অনেকেই তোকে চেনে দেখছি।"
---" আরে না না, তেমন কিছু নয়। আগে মাঝে মধ্যেই যেতে হতো কলকাতায়। সেই যাওয়া আসার কারণে আলাপ পরিচয়। আর তুই তো জানিস আমি একটু টকেটিভ! বন্ধুত্ব হয়ে যায়।"
----"এটা তোর বরাবরের গুণ ! সেবার পুরী বেড়াতে যাওয়ার ঘটনাটা ভোলার নয় ! মোদের পন্ডা ওছি! অমরপন্ডা। পন্ডা বলে অমরপন্ডা ওছি। পন্ডাগুলো বিদায় হওয়ার পর সেকি হাসি আমাদের। সারা পুরী জুড়ে অমরপন্ডা চালু হয়ে গেল!"
কোলাঘাট ব্রিজের উপর ট্রেনটা আরো গমগম করে উঠলো। সঙ্গে এলোমেলো বাতাস। বিকাশের বাকি কথাগুলো শোনা যাচ্ছিল না। থার্মাল প্ল্যান্টের নীল ধোঁয়া তখন সম্মোহকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। কি অদ্ভূত মায়াময়! প্রতিবারই এখান দিয়ে ট্রেনটা গেলে সম্মোহ একটা ট্রেম্পারার মোটিফ খুঁজে পায়। ভাবে বাড়ি পৌঁছে আবার ক্যানভাসের সঙ্গে একাত্ম হবে। কিন্তু হয়ে ওঠে না। ভাবনা গুলো কিভাবে যেন হারিয়ে যায়।
--- " কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি! কিছু মাথায় এলো! ছবি আঁকাটা আবার শুরু কর।"
---" নারে আর ভালো লাগে না। নিপুণ ধান্দাবাজ না হলে আজকাল ক্রিয়েটিভিটি করে কোন লাভ নেই।"
---"তোর নিজের জন্য তুই কাজ কর। ওসব ধান্দা ঝান্ডার দরকার নেই।"
--" দরকার নেই তো বুঝলাম। কিন্তু এই না দরকারটাও যে শত্রুতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বুদ্ধিবিচিরা রেগে যায়। কারণ তারা চিরকালই তাঁবেদার হয়ে কোন না কোন পার্টির ছত্রছায়ায় থাকে। অর্থাৎ দাদা দাদা করো। মাঝে মধ্যে সেই দাদার বাড়িতে পৌঁছে যাও। মুখ দেখিয়ে আসো। তরুণ ছেলেমেয়েদের নিয়ে গ্ৰুপ তৈরি করো। ফেসবুক পোস্টে লাইক কমেন্ট দাও! দূর বাল এই মামেগাদের থেকে দূরে আছি ভালো আছি। বুঝলি।"
---" অবশ্যই তুই আমার থেকে এই বিষয়টা ভালো জানবি। বাইরে থেকে এতকিছু বোঝা যায় না।"
---" একারণেই এরা বুদ্ধিবিচি! তোর আমার কালো বিচি!"
---" হা হা হা হা! বললি বটে।"
বিকাশ সম্মোহের কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিস করে বলল, " আস্তে বল, খিস্তি করছিস! পাশের লোকজন শুনছে।"
ট্রেনের দরজার পাশে দাঁড়ানো অল্প বয়েসী একটি ছেলে প্রায় চেঁচিয়ে বলল, " সম্মোহদা ফড়িং আসছে ! ফড়িং!"
----" ডাক ডাক শালাকে! ছোট্ট করে পোঁদে লাগি!"
এমন সময় পাশের কামড়া থেকে কাটাবগি দিয়ে ফড়িং এলো।
---" ফলিং, তি এনেছিস আজ!"
----" লয়নগরের লোয়া! "
---" উলে বাবা, এতটা খাওয়া দেখি। কেমন লোয়া তোর!"
---"খেলে তিতে হবে তুলো প্যাকেট!"
সম্মোহ ফড়িংয়ের কাছ থেকে একটা মোয়া নিল। একটা কামড় দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো," মাগো বাবাগো কি ঝাল!"
ব্যস, ফড়িং গেল ক্ষেপে।
---" থাল নেই। তিথ্যা কথা বলছে। তোয়া কখনো থাল হয়! হালামি এ্যাতটা!"
---" ঝালকে মিষ্টি বলছিস! বিকাশ খেয়ে দেখ!"
----" না না আমি খাবো না। ঝাল লাগবে!"
বিকাশের কথা শুনে ফড়িং আরো ক্ষেপে গেল।
---" তোয়া কখনো থাল হয়! এটাও হালামি!"
সম্মোহ হো হো করে হাসছে। সঙ্গে অন্যরাও। সম্মোহ এবার ফড়িংকে আরেকটা মোয়া দিতে বলল।
---" তেব দা!"
---" শোন না দে দুটো মোয়া দে! "
----" থাল বললে মেলে মুখ থাতিয়ে দেব!"
সম্মোহ ফড়িংয়ের কাছ থেকে মোয়াটা নিয়ে মুখে পুরলো!
--- ওরে বাবারে রে! মরে গেলাম গো! মাথা ঘুরছে। বিকাশ জল দে!"
---" ফড়িং তোর মোয়া খেয়ে যদি দাদা মরে যায় তোকে পুলিশে দেব!"
---" তাতক করচে ছব! আমাল পয়সা দে। ত্যাপসা নত্ত করছে আমাল!"
পাশ থেকে অন্যজন বলল, " না না ফড়িংয়ের জেল হবে না। মোয়াগুলো তো আর ও বানায়নি!"
--- "কে বানিয়েছে?" একজন জিঞ্জেস করল।
---- " ওল শছুল বানিয়েছে!" পাশ থেকে একজন বলল।
----" থ্যামলা পয়সা দে, আমি তাই!
সম্মোহ হাসতে হাসতে পকেট থেকে দুশো টাকা বের করে ফড়িংয়ের হাতে দিল। তারপর বললো," দে চার প্যাকেট ঝাল মোয়া দে।"
---" থাল নয় মিষ্টি!"
ফড়িং চারপ্যাকেট মোয়া সম্মোহের হাতে ধরিয়ে পাশের বগিতে চলে গেল।
----" পারিসও বটে! বুড়ো হয়ে গেলি তাও শিং ভেঙে বাছুরের দলে!"


1 comment:
Onek din por aber porchi.bhalo lagche , kintu relate korte osubidha hoche
Post a Comment