তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা
জীবদ্দশা সিরিজ়ের তিনটি কবিতা
৪
আলপনা ধুলো-ধুলো কেন?
কুসুমের ভেতরে কে যে মাছের গতর এঁকে গেছে!
ওহো কী অশ্লীল! এয়োস্ত্রীরা চোখ টেপাটিপি করছে।
মাছটি ফুলে উঠছে কামে। কুসুমও ফুলল।
টোপ নিয়ে আয়! টোপ নিয়ে আয়! কতগুলো বাবা যে জড়ো হয়েছে উৎসাহে!
ধুলো-ধুলো। হাওয়া দিলেই মাছ, কুসুম সব উড়ে যাবে—
এই ভয় কি সহজে কাটে?
ছিপ নিয়ে ছুটে আসছে কিন্নর-কিন্নর বাচ্চামানুষ।
ওদের হাসি শুনে স্ত্রীদের তলপেট শরমে কুঁকড়ে যাচ্ছে।
এতসবের ভেতর মাছ উগড়ে দিল আঠা।
কুসুম কমে এল সুখে...
ছিপ পড়ল। এয়োস্ত্রীরা হাঁ করে দেখছে এই খেলা।
লালা ঝরছে মৃদু-মৃদু পথে।
যার ছিপে উঠবে মাছ, তার গৃহে সুখ-শান্তি হোক!
১০
এই অবধি পথ। তারপর মন্দিরের শুরু।
এঁটো ভোগের মতো আমাদের মাথাগুলি সিঁড়িতে নামানো।
বিগ্রহে রোদ পড়ছে। শোলমাছের চোখ যেন। মৃদু।
এই অবধি পথ। মন্দিরের শুরু ও শেষ একই বিন্দুতে।
সরণশূন্য বৃত্তের মাঝে ব’সে, প্রিয় পুরুষ, আশীর্বাদে কী দিচ্ছ এখন?
“পেট হোক” বলেছিলে। পেটে পশুর আনাগোনা নিয়ে ঘুরে মরছে কিশোরী।
“মাথা হোক” বলেছিলে। দ্যাখো, সিঁড়িতে কত নৃমুণ্ড শিরশিরে হাওয়ায় দুলছে...
কার মাথা কে যে চুরি করে পালিয়ে যাবে!
কবন্ধ কমেনি। আরও কত ধড় মন্দিরে যে মানত বাঁধতে আসবে!
এভাবেই, পুরুষ আমার, আয়ু টানো। বায়ু টানো। স্নায়ু...
পথ এতটাই। এরপর হেঁটে গেলে পাগুলি মিথ্যে... সন্ন্যাস...
১২
প্রাচীন শীতের ভিতর থেকে নেমে আসছে আমাদের ধাত্রী মা।
এবার নাড়ি কাটার শব্দে গ্রামপতন চাপা পড়ে যাবে।
এই আয়ুষ্কালে বাকল খসার চিত্র ছাড়া আর কিছু মনে থাকবে না।
ফল কাটার দৃশ্য, ধান থেকে ইঁদুর ছাড়ানোর পদ্ধতি,
পুতুল প্রসব করার লোভে মৃৎলিঙ্গে দুধ ঢালতে আসা মেয়ে,
মন্দিরের চারপাশে হঠাৎ আগুন, বটুক ভৈরবের ফাটা-ফাটা গা...
আমাদের স্মৃতিগুলি সাদা।
যাদের আদেশে পথগুলি মরা সাপের মতো বাঁকা,
তাদের পায়ের দিকে চোখ যায়। ভেবেছিলাম শিকড়ের বিস্তার দেখে
শেষমেশ গাছ মনে হবে। মনে হবে পায়ের ভিতর কিছু পাতালের কয়লা আছে।
কিছুই হল না। শুধু ফিরে গিয়ে দোর দেওয়ার ইচ্ছা প্রবল...
গুহা ছেড়ে এসে আমরা রোগ পেলাম, ক্ষয় কিছু কিছু।
পথ এত একমুখী, ফেরার উপায় নিভে গেছে।
প্রাচীন জলের কুম্ভ ভেঙে বেরিয়ে আসছে আমাদের ধাত্রী মা।
এবার গ্রামপতনের শব্দে নাড়িকাটা চাপা পড়ে যাবে।

No comments:
Post a Comment