সৌমাল্য গরাই
আবহমান
নদী তুমি পার করে দিও দেহজ নৌকার ভার। বইঠা হারিয়েছে মন, তাকে মাঝি করে দিও
চর্যাপদে গুঞ্জাফুল গাঁথা শবরীটির মতো। ভুলে যাই কীভাবে বাঁধব স্রোতচূর্ণিমালা ।
উদ্দেশ্য বিহীনভাবে পালিয়ে গিয়েছি বৃক্ষ ও ব্যাধের ধ্যান থেকে। দুজনের ধ্যানসত্য থেকে জেনেছি এসব লক্ষ্যভেদী। এর চেয়ে ভালো সমুদ্র মুখর হাওয়াদের কাছে যাওয়া। সমুদ্রের লবণাক্ত ডাকে সাড়া দেয় লক্ষ্যহীন। নীল ফেনায়িত রাতে প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে ঘুমোয় সবুজ শ্যাওলারা, তার আঁশগন্ধ পেয়ে জল জাগে আর ছুটে ছুটে যায় তীর থেকে তীরে।
যে ছেড়েছে ঘর— ক্রীতদাস হতে ইচ্ছে করে তার, যেন জীবনকে ঘোরাতে পারি আমার পিছু পিছু...
প্রতিফলন
বারবার ফিরে আসছে পুরানো লেখারা
একঘেয়ে জীবনের চেয়ে
তারা খুঁঁজছে উৎসমুখ
বস্তুত পালাতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে
ভাঙাচোরা আয়নার পারায়
এভাবে অপেক্ষা করছে হয়তো সেই
অপূর্ব দৃশ্যের—
যেখানে জন্মান্ধ এক লোক
ভাঙা আয়নায়
কিংবা অন্ধ একটা আয়না লোকটির চোখে
নিজমুখ দেখছে
তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে...
তোমার সারাৎসার নিয়ে ফুটে ওঠে আধশোয়া রাত্রি, নৌকা ও চাঁদের চক্ষু। নির্নিমেষ পলকের ছোঁওয়ায় কাঁপে শয্যাবৃক্ষ। অন্ধকার হতেই তোমার ঘুমের মধ্যে অন্তরাত্মা ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দেখে অতল জলের নীচে ভাসতে ভাসতে চলে যাচ্ছ প্রান্তসীমানায়, কখনো যুদ্ধক্ষেত্রে, হত্যার শিবিরে, কখনো বা সন্তানের শিয়রে। অন্ধ লিপি গ্রন্থের শরীরে দাঁত বসিয়ে খুঁটে নিচ্ছ খুদ। যেমন পোকারা খেয়ে নেয় সমস্ত অক্ষর যেন বিলুপ্ত করতে চায় ভাষাবহনের দায়, যাতে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারি নির্বিচারে। এমনি মুহূর্তে দেখো
লক্ষ বছরের মায়া, লক্ষ বছরের আলো এসে তোমাকে একলা করে দিচ্ছে, এভাবে হারিয়ে ফেলছ দৃষ্টি , আয়ু, প্রাচীন বয়স।
অসম্পূর্ণ এই যাত্রাপথে
অসময়ে যে জেগে উঠল সে কী তুমি!

No comments:
Post a Comment