Saturday, January 25, 2020

রাখী সরদার

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। দ্বিতীয় প্রয়াস












পরজন্মের উত্তরীয়     রাখী সরদার

একরৈখিক  অন্ধকারে ভেসে যাচ্ছি দিনরাত।অতীত
স্মৃতির  টানাপোড়েনে শরীর  ক্রমশ পরদেশী  মেঘের মতো অস্পষ্ট  হয়ে উঠছে।দেহের  তন্ত্রে তন্ত্রে
বিষাদের  নীল ছায়া। ঘুম আসেনা।ঘুমের  দেবতা
শক্ত চোয়ালে বালির কুঠার হাতে পাহারা দেয়।এমন ধূ ধূ শূন্যতার  কালে নির্ঘুম  দেওয়াল বেয়ে কখন
যে ঘুম এসেছিল জানিনা।হেমন্তের  সুপক্ক কুয়াশার
ঘ্রাণে চোখ খুলে দেখি শুয়ে আছি কোন এক শীতার্ত  নদীর পাশে।কী নিস্তব্ধ নিঃশ্চুপ  চারদিক!
যেন কোন হিমযুগে এসে গেছি।বিদ্যুতের মতো এক ঝলক ভয় এসে থাবা মারে চোখে মুখে।বুকের  কাছে প্যাঁচার  নিঃশ্বাস,অন্ধকারের  শিস শুনতে পাই।কিছু লোকজনের  ফিসফাস।আধখোলা মোম চোখে দেখি অদূরে  থরে থরে চিতাকাঠ সাজানোর
কারুকাজ চলছে।ডোমশিল্পী জগতের  শ্রেষ্ঠ শিল্প
নির্দশনে বড় ব্যস্ত যেন।

কৌতূহল  জাগে।কার জন্য এত আয়োজন! জিজ্ঞেস  করতে যাই। জিহ্বা যেন ছায়াময় স্তূপের
আড়ালে  জড়বৎ পড়ে আছে।নড়াচাড়া  করতে
পারছেনা নিজের শরীর। আর্তনাদ  করে উঠি।
আমার  কথা আমার বধির পরমায়ু ছাড়া কেউ  শুনতে পায়না। এমন পাণ্ডুর পরিস্থিতিতে কোথা থেকে এক কৃষ্ণ বর্ণের  ঘোড়া আমার  নিরুপায়  শূন্যতাবোধের কাছে এসে দাঁড়ায়।তার গায়ের মৃত্যু গন্ধ আমার মাটির কাঠামোয় ঘষে ঘষে আরোপিত  করতে থাকে।বুঝতে পারি এই  গতিময় চরাচরে আমার  আর ঠাঁই  নেই। মুহূর্তে  এক অন্যমনস্ক  বিষাদের  ছায়া  আমাকে জড়িয়ে  ধরে।এমতাবস্থায় কারা যেন আমার ফ্যাকাশে  শরীরটা স্তব্ধতায় মুড়ে চিতার দাহপাত্রে শুইয়ে দিয়ে একে একে দাহপাত্রে নামিয়ে  দিচ্ছে  আমার প্রতিশ্রুতি... 
বিশ্বাস...ভালোবাসা... স্নেহ...শাসন...প্রহরণ সব সব কিছু।পাথুরে  আগুন একে একে সমস্ত  কিছু গ্রাস করছে।কোন যন্ত্রণা নেই।তবে কি আমার শরীরী চামড়া অশরীরী হয়ে গেছে!হয়তো! আমার  নরম কাঁথার মতো ঠোঁট  দুটো যখনই  আাগুনের আস্বাদ গ্রহণ  করতে শুরু করেছে সেই  মুহূর্তে  একটা গাঢ় আকাঙ্ক্ষা  নিরুপায়  পাখির  মতো ছটফট করতে থাকে।মনে হয় ওঈ হারানো সভ্যতার
 হারানো সভ্যতার  দিকে যাত্রার আগে এই ঠোঁটের
 খোলে জমে থাকা যাবতীয়  চুম্বনের  স্ফুলিঙ্গ  কারো আতপ্ত  ওষ্ঠে ঢেলে দিয়ে যাই।কিন্তু কে নেবে
 কিন্তু  কে নেবে এই  পোড়া চুম্বনের  দায়?কে নেবে এই  বিষণ্ণ বোবা ওম?

কেউ  কী আছো?কেউ  নেই... কিছু নেই... শুধুমাত্র 
আমার পোড়া বিষণ্ণতাটুকু কৃষ্ণময় নাভির মধ্যে
তখনো জমে আছে।কে যেন তা কেড়ে নেওয়ার জন্য ছুটে  আসছে।লুকিয়ে  রাখার চেষ্টা করি।আর তখনই ব্রম্ভাণ্ডের সকল আড়াল উপেক্ষা  করে এক
অনুপুরুষ এগিয়ে  আসে।গায়ের রং  তীব্র অন্ধকারের  মতো,সর্ব শরীর থেকে প্রখর রতিগন্ধ
বের হচ্ছে।কপালে মৃত্যুতিলক আঁকা,পরণে শ্বেতরঙের বস্ত্র।পুরুষ্ঠ ঠোঁটের কোল  বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে শীতল মদের ফেনা।দু চোখে লোগে হিম চূর্ণ। অপ্রস্তুত  নখের আড়ালে রমণ চিহ্ন।অনবরত মোহমুদগরের শ্লোক আওড়ে চলেছে।সব থেকে আশ্চর্য লাগে এমন পুরুষের  হাতে গোলাপের  মালা,কাঁধে উড়ছে পরজন্মের উত্তরীয়।

এমন অদ্ভুত  দর্শন পুরুষ কে দেখে মনে হয় এ কি কোন বিভ্রম! নাকি অলৌকিক  সত্য!এমন ক্রান্তিকাল অন্ধকার ডিঙিয়ে  পালাব কোথা!তবুও  পালাতে গিয়ে দেখি আমার অলক্ত পা দুখানিই তো নেই। দু পায়ের জায়গায় জমাট বেঁধেছে সাদা ফিনফিনে কুয়াশার পাহাড়।সেই  পাহাড় ডিঙিয়ে  যায় কার সাধ্য।অগ্যতা সেই  পুরুষের কাছে মহা সমর্পণ। পরম যত্নে আমার গলায় পরিয়ে  দিচ্ছে গোলাপের  মালা,কাঁধে তুলে দিচ্ছে পরজন্মের উত্তরীয়। আমি সম্মোহিত।কুয়াশাময় দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে  আছি,দাঁড়িয়েই আছি ভূত...ভবিষ্যত...
 অতীতের  কণায় কণায়...

No comments: