সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...
দ্বিতীয় বর্ষ। দ্বিতীয় প্রয়াস
বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কবি নকিব মুকশির কবিতা প্রসঙ্গে
অলোক বিশ্বাস
জীবন সর্বদা একরৈখিক পথ ভালোবাসে না।প্রতিদিনের নিয়মকরা শৃঙ্গারবিছানা, পাওডারসেন্ট, ভুনাখিচুড়ি, লাগা-না-লাগার সত্য মিথ্যা অভিনয়, ধর্মীয়কলা মিশ্রণে বিপ্লবীকলার সহাবস্থান আর ৮-১০ ঘন্টা কবওয়েবের বাইরে মানুষের এলোমেলো যেমন খুশি জীবন উপভোগের মুক্তিটাই সকল অক্ষরেখায় চিহ্ন রেখে যায়। মুক্তির পরিবেশে বিশেষ সংস্কার মান্যতা পায় না। কোনো প্রজ্ঞার নির্দেশ থাকে না। থাকে শুধু বিভিন্ন পথে, অজানার খোঁজে, অনিঃশেষ তৃপ্তিবোধ। আনন্দের পরম্পরাগত সুরের অন্তরে পরম্পরার উজানে দীর্ঘশ্বাসের হাইব্রিড বলনশৈলি পাওয়া যায় বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কবি নকিব মুকশির কবিতায়। আবার পরম্পরার চিরকালীন ঘূর্ণিকে কলা দেখিয়ে হাইপার কবিতার মন্ত্রসাংস্কৃতিক স্তরায়ন নির্মাণ, সেও আছে। চলায়মানতার অচিরায়ত পাগলামিপূর্ণ কাব্যভাষায় হতে চেয়েছে নকিব মুকশির আপাত কাটাকাটা ছাড়াছাড়া এক জীবন্ত উন্মোচনপর্ব। বাংলা কবিতার যে ধারাটি angry বা hungry, যে ধারাটি প্রতিকবিতায় মর্মরিত, কল্পনার মূর্তি-বিমূর্তির উভয় অবস্থানে চঞ্চল, যে ধারাটি আবহমান পদ্যময় রূপালংকারিতা থেকে সরে অপর ভাষার কারু-বীভৎসতা রচনা করে, রপ্ত মেরুরেখা থেকে অন্য অরবিটে পর্যটন করতে ভালোবাসে, বিনির্মাণ শৈলিকে আহ্বান করে--- নকিব মুকশির 'বাগিচার শাখাবলি' কাব্যের তিনটি ভিন দৃশ্যায়িত পর্বে ওইসব অবস্থান লক্ষ্য করবেন পাঠক। তথাকথিত সামাজিক আদলে গেলে নকিবের কবিতা মনে হতে পারে হতচ্ছাড়া, ফ্রাগমেন্টেড, বেগতিক, কবিতাকৃতির ইতিহাস বিরোধী এবং উৎশৃঙ্খল। নতুন প্রজন্মের কবি নকিব মুকশি আপাত সাম্যকলার ধার ধারেন না তাঁর কবিতায়। কবিতায় মগ্ন নামতা লেখেন না। একটি কবিতায় বলছেন, 'এই বাগান--- আনকোরা দেশ।' অসীম বিশ্বের যে খণ্ডিত স্পেসকে নকিব ধরছেন, তাকে পুনরায় অণু-পরমাণুতে বিভক্ত করে নিলে হয়তো সেই প্রাচীন গুহামানবের ক্যাম্প থেকে শুরু করে আজকের ডিজিটাল বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন আচরণ পাঠকের সংবেদনশীল বৌদ্ধিক এলাকায় চলে আসবে। কবিতার ফর্ম নিয়ে তুমুল গদ্যময় হৈচৈ-এর মধ্যেও নকিব বাংলা ভাষার লিরিকালিটি বর্জন করেন না।। বর্জন করেন না দেশমাতৃকার জীবনশাহী, বাগানের কুহু-কেকা রবের ভিতরে থাকা অগ্নিময় যন্ত্রণার বিস্তার। কিন্তু তিনি, নকিব মুকশি, বাংলা কবিতার যে মধ্যবিত্ত ভদ্রস্ত নকশা বা আপেক্ষিক ডিসিপ্লিন বা ওই আমুদে হাসিকান্নার জনপ্রিয়তা, তা থেকে নিজেরই মুদ্রাদোষে হতে চাইছেন আলাদা। সেই মুদ্রাদোষের একটি হলো ড্যাশ চিহ্নের পৌনঃপৌনিক ব্যবহার, যেগুলোর প্রত্যেকটি মুক্ত এলাকার চিহ্নায়ন। পাঠক সেখানে নিজের মতো কল্পব্যঞ্জনাকে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারেন। ভরে নিতে পারেন কোনো অর্থময় চিহ্ন বা ডিকোড করার মতো নির্বাণকে। তাঁর সাম্প্রতিক লেখায় কবি নকিব যেমন বাংলা ভাষার বৈভাসিক কম্পাউন্ড শব্দভান্ডারকে ব্যবহার করেছেন তেমনি নতুন কম্পাউন্ড শব্দের নির্মিতি এনেছেন তাঁর চেতনাবিধৌত পর্যবেক্ষণের এলাকায়।

2 comments:
নকিব মুকশির জন্য শুভকামনা। অলোক বিশ্বাসের দায়িত্ববোধ নতুন কবিদের প্রেরণা জাগাবে।
আলোচনা ভালো হয়েছে। ড্যাশ চিহ্নের ব্যবহার জীবনানন্দ দাশও করেছেন। এখানে এ ব্যাপারে একটু তুলনামূলক আলোচনা করলে ভালো হতো।
Post a Comment