Tuesday, February 25, 2020

তাপসী লাহা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









গোপনে তর্পণ      তাপসী লাহা


মোটামোটি ১২০০অবধি টানা হয়ে গেছে।আর শ পাঁচেক গ্যাটিস পেলেই কাম তমাম।থ্রিলার ছাড়া  আর কেউ পাতেই তুলছে না। তায় আবার প্রেম,সেক্স, আনেক্সপেক্টেড টুইস্ট দাও,সম্পাদকের বায়না ফিরিক্কির শেষ নেই,না হলে বাপু পাব্লিক মুখ হা অবধি করেনা,গেলাবে কার দুঃসাধ্য।ইস একটা সিগারেট খেলে ভালো হত।
লেখার চক্করে আজ টানা চারদিন বাজারমুখো হওয়া হলোনা।

পাশের ঘরে কাতরানির আওয়াজ। বেশ জোরালো হচ্ছে ক্রমশ।হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসা ক্ষয়াটে হাত দুটো দরজা সরালো,

মায়ের ইনহেলারটা শেষ,এনে দাও।

একটু তেল মালিশ করে দে না,

বাঁচবে না,টাকা দাও আমি আনি।

শালি কোথায় পাবো বে,তুই আন ইয়ারের কাছ থেকে।
মুন্নি শুনতে পাচ্ছে,চুপ করো।

ভাগ হারামজাদি,জোরালো ধাক্কা সহযোগে  ঘরে তখন তুমুল বাকযুদ্ধ,সস্তার স্যামসাং চেঁচায়,
ক্লি কি কি
হ্যালো,হ্যা দাদা ভালো তো সব।আমিও তো মা কে নিয়ে চিন্তায়।লেখা শেষ হবে হবে করছে,
এস্থ্যমা।হ্যা নিশ্চই যাবো।টিকিট কাটতে বেরোচ্ছি,মায়ের চেক আপ করিয়ে পরশু সন্ধ্যায় ট্রেন ধরে পরের সকাল।
পাশের ঘর চ্যাঁচ্যায়,মিথ্যুক,ভণ্ড কোথাকার!

 কাতরানিরা এক দমকে থমকে যায়, ঘড়ির কাঁটার জোর আওয়াজ,

তালগোল পাকিয়ে গেলো,কাঁথা সরিয়ে তড়াক করে লেখার টেবিলে এগোতেই  চশমাটায় চোখ  গলাতেই,চারপাশটা ঝাপসা। আলো অন্ধকারের দপদপানিতে ছায়ার মত কিছু ঘিরে ধরে আছে,

লেখাটা হয়েছে?
না।
কেন?
পারছিনা।

এসব শখ হওয়ার সময় মনে ছিলনা,

ঘাড়ের চুলগুলো তখন জোরালো মুঠিতে চেপে ধরা,কালো আলখাল্লাগুলো আরো বড় হচ্ছে,গলা চিপে ধরেছে,চিৎকার করা যাচ্ছে না,চেয়ার থেকে পড়ে কাতরাচ্ছে একটা ছেচল্লিশ।

চোখেমুখে জলের ঝাপটা

পাড়ার কিছু চেনা মুখ নিজের হাত দিয়ে গলা চেপে ধরা ছেচল্লিশকে  স্বাভাবিক করানোর চেষ্টায় উদ্যত।

সস্তা স্যামস্যাং বেজে ওঠলো,ক্লি কি কি

হ্যালো, না লেখেনি
আর লিখবেনা,ফোন করবেননা আর,

ওপাশের উত্তরের আগেই ফোন কেটে দেয় ক্ষয়াটে হাত।

স্কুলফেরতা মুন্নির ড্রেস পালটে আলমারি থেকে প্রেসক্রিপশনটা বের করে সোজা রোগীসহ ডাক্তারের চেম্বার।

আপনি এইখানে,আপনার গোপনে তর্পণ  নভেলটার শেষটা তাহলে....
ক্ষয়াটে হাত অধৈর্য হয়ে যায়, ডাক্তারবাবু উনি লিখবেন না,তারপর একনাগাড় বাড়ন্ত রোগের ফিরিস্তি শোনায়।

ঘুমের ওষুধ টা কাজ করছেনা,পাওয়ার বাড়াতে হবে,সাথে আরো দুটো মেডিসিন দিচ্ছি।
ডাক্তারবাবু আমি ফিজ দিতে পারবোনা,এখনো মাইনা পাইনি।

উদ্দাম হাসিতে ছেচল্লিশ গল্পের শেষটা শোনায়,কিন্তু পেন না থাকায় স্বল্পস্থায়ী স্মৃতির ঘুমঘরে নিভে যায় কান্নারা।


No comments: