সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...
দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।
কাগজ নাসির ওয়াদেন
রাগে গজগজ করতে করতে ফিরে যাচ্ছে আনিস ।রাতের গন্ধ গায়ে লাগিয়ে ভোরের কুয়াশা মেখে পাঁচ কিলোমিটার পথ ধাওয়া করে সাইকেল বেয়ে এসে লাইন দিতে হয়েছিল । বেলা গড়িয়ে দুপুর পার, মাথার সূর্য তখন বাইশ দিনের ওম দেওয়া ঘোলাটে, পোক্ত ছানার রূপ পায়নি যেন । একরোখা রোদ বারবার মুখ লুকোচ্ছে, মেঘকে হিংসে করে । উত্তুরে শীতল হাওয়া ভাসিয়ে নিয়ে যায় ইলশেগুঁড়ির ছানাদের। বৃষ্টির হালকা মেজাজ, দোতলার মেয়েটির মুখে রবীন্দ্র সংগীতের সুর, জানালার শিক ভেদ করে ভেসে আসে পিচরাস্তার বুকে ।
' যদি নাই হবে, খামোখা হয়রানি কেন ভাই ?
দীর্ঘ লাইন মাথা যখন ছুঁল পোস্টাপিসের বাবুর কাছে, বাবু বলে দিল,' তিনমাসের পর এসো। মগের মুলুক পেয়েছে । আমরা সব ভেড়ারদল! '
বাড়িতে ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যা এসে যাবে তাদের। 'ভুল! ভুল করবে ওরা, আর তাপ সইব আমরা, কী আজব দেশ রে ভাই ।'
রাগে ততক্ষণে তার রক্তচাপ বেড়ে গেছে । তার পাশে সাইকেল চড়ে যাচ্ছে আবির । দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, পাশাপাশি বসবাস , আনিসের দাদু আর আবির দাদু দেশ ছেড়েছে সেই সাতচল্লিশ সালে । আজ ওরা দুজনেই গত। ওপারের জল, হাওয়া তাদের ভাল লাগেনি, তাই পাড়ি দেওয়া । কোথায় যেন বেসুরো আওয়াজ ভেসে আসছে আজ , কালিমালিপ্ত হচ্ছে ভোরের ভালবাসার বাতাস, নিশ্বাস প্রশ্বাসে বিষের গন্ধ । কে ছড়ায় ---
আবার ভুল । আধার কার্ড । ভোটার কার্ড । ঠিকঠাক না হলে নাকি সমূহ বিপদ, অসম পরিণতি । আঁতকে ওঠে আনিস, বলে, ' আর বাঁচা যায়? আমার বাবা জন্মাল এ দেশে, আমি জন্মালুম, আমার ছেলে, তার ছেলে গত মাসে,এখন নাকি আমাদের সবাইকে প্রমাণ দিতে হবে।
'ঠিক বলেছিস আনিস, বলল আবির, আমাদেরও তো ভয় করে ভাই! আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, স্কুল সার্টিফিকেটের কোন দামই নাই। নতুন জন্ম সার্টিফিকেটের প্রয়োজন ।এই পঞ্চাশ পেরোনো মানুষ কোথায় পাবে বলতো ?'
-- সেটাই তো মোদ্দা কথা ভাই।
-- তাকিয়ে দেখ আসাম।গোটা রাজ্য পুড়ছে, আগুন জ্বলছে, কারো কোন হুশ আছে?
এখানেও কি আগুন জ্বলবে ? পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে আমার বাড়ি কি সুরক্ষিত থাকবে ?
--তুই ঠিকই বলছিস আবির। জন্মালাম এখানে , আর এখন বলছে, প্রমাণ না দিলে কাম্পে পচে মরতে হবে ।
ওরা চলছে পিচরাস্তার উপর দিয়ে সাইকেল চড়ে । দুপাশের সারি সারি গাছ, পাখির কলকাকলি,ছন্দস্বর, মাঝেমাঝে রোদের লুকোচুরি । দূরে সবুজ প্রান্তর, রবিফসলের ঢেউ, শরীরের অঙ্গে সোনার গহনা ।
পিচরাস্তার শেষ, এখন কংক্রিটের রাস্তা । রাস্তার চেহারা পাল্টে গেছে, জীর্ণশীর্ণ রাস্তা হাড়মাস পেয়ে উল্লসিত ।সৌহার্দ্য আর ভালবাসা মুড়ে আছে সোনার বাংলা । সেই সকালবেলায় সূর্য ওঠা, রাখালিয়া সুরে সুরে সূর্যের অস্তাচল গমণ, পাখিদের ঘরে ফেরা, কোন বাধা নেই, কোন বেড়া নেই, আছে শুধু সুন্দরের ঘ্রাণ, অনন্ত ভালবাসা দিগন্তের ভাঁজে ভাঁজে হরিৎ বাতাসের সুগন্ধি।
মোবাইল বেজে উঠলো আনিসের। ওপার থেকে কন্ঠস্বর শোনা গেল, 'চাচা নেই! আক্রাম চাচা গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে ।
আনিস বিহ্বল হয়ে পড়ে । গত কয়েকদিন ধরে আক্রাম চাচা অস্থির ছিল । দাদুর আমলের বাড়ির দলিল, জমির কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছিল না । দু’হাজারের বন্যায় সব ভেসে গেছে, ভেঙে গেছে আশ্রয়টুকুও। সরকারি সাহায্যে ছোট একটা আস্তানা গড়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আনিস, আবিরও , দুজনেই ।এর শেষ কোথায় !
কাগজ নাসির ওয়াদেন
রাগে গজগজ করতে করতে ফিরে যাচ্ছে আনিস ।রাতের গন্ধ গায়ে লাগিয়ে ভোরের কুয়াশা মেখে পাঁচ কিলোমিটার পথ ধাওয়া করে সাইকেল বেয়ে এসে লাইন দিতে হয়েছিল । বেলা গড়িয়ে দুপুর পার, মাথার সূর্য তখন বাইশ দিনের ওম দেওয়া ঘোলাটে, পোক্ত ছানার রূপ পায়নি যেন । একরোখা রোদ বারবার মুখ লুকোচ্ছে, মেঘকে হিংসে করে । উত্তুরে শীতল হাওয়া ভাসিয়ে নিয়ে যায় ইলশেগুঁড়ির ছানাদের। বৃষ্টির হালকা মেজাজ, দোতলার মেয়েটির মুখে রবীন্দ্র সংগীতের সুর, জানালার শিক ভেদ করে ভেসে আসে পিচরাস্তার বুকে ।
' যদি নাই হবে, খামোখা হয়রানি কেন ভাই ?
দীর্ঘ লাইন মাথা যখন ছুঁল পোস্টাপিসের বাবুর কাছে, বাবু বলে দিল,' তিনমাসের পর এসো। মগের মুলুক পেয়েছে । আমরা সব ভেড়ারদল! '
বাড়িতে ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যা এসে যাবে তাদের। 'ভুল! ভুল করবে ওরা, আর তাপ সইব আমরা, কী আজব দেশ রে ভাই ।'
রাগে ততক্ষণে তার রক্তচাপ বেড়ে গেছে । তার পাশে সাইকেল চড়ে যাচ্ছে আবির । দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, পাশাপাশি বসবাস , আনিসের দাদু আর আবির দাদু দেশ ছেড়েছে সেই সাতচল্লিশ সালে । আজ ওরা দুজনেই গত। ওপারের জল, হাওয়া তাদের ভাল লাগেনি, তাই পাড়ি দেওয়া । কোথায় যেন বেসুরো আওয়াজ ভেসে আসছে আজ , কালিমালিপ্ত হচ্ছে ভোরের ভালবাসার বাতাস, নিশ্বাস প্রশ্বাসে বিষের গন্ধ । কে ছড়ায় ---
আবার ভুল । আধার কার্ড । ভোটার কার্ড । ঠিকঠাক না হলে নাকি সমূহ বিপদ, অসম পরিণতি । আঁতকে ওঠে আনিস, বলে, ' আর বাঁচা যায়? আমার বাবা জন্মাল এ দেশে, আমি জন্মালুম, আমার ছেলে, তার ছেলে গত মাসে,এখন নাকি আমাদের সবাইকে প্রমাণ দিতে হবে।
'ঠিক বলেছিস আনিস, বলল আবির, আমাদেরও তো ভয় করে ভাই! আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, স্কুল সার্টিফিকেটের কোন দামই নাই। নতুন জন্ম সার্টিফিকেটের প্রয়োজন ।এই পঞ্চাশ পেরোনো মানুষ কোথায় পাবে বলতো ?'
-- সেটাই তো মোদ্দা কথা ভাই।
-- তাকিয়ে দেখ আসাম।গোটা রাজ্য পুড়ছে, আগুন জ্বলছে, কারো কোন হুশ আছে?
এখানেও কি আগুন জ্বলবে ? পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে আমার বাড়ি কি সুরক্ষিত থাকবে ?
--তুই ঠিকই বলছিস আবির। জন্মালাম এখানে , আর এখন বলছে, প্রমাণ না দিলে কাম্পে পচে মরতে হবে ।
ওরা চলছে পিচরাস্তার উপর দিয়ে সাইকেল চড়ে । দুপাশের সারি সারি গাছ, পাখির কলকাকলি,ছন্দস্বর, মাঝেমাঝে রোদের লুকোচুরি । দূরে সবুজ প্রান্তর, রবিফসলের ঢেউ, শরীরের অঙ্গে সোনার গহনা ।
পিচরাস্তার শেষ, এখন কংক্রিটের রাস্তা । রাস্তার চেহারা পাল্টে গেছে, জীর্ণশীর্ণ রাস্তা হাড়মাস পেয়ে উল্লসিত ।সৌহার্দ্য আর ভালবাসা মুড়ে আছে সোনার বাংলা । সেই সকালবেলায় সূর্য ওঠা, রাখালিয়া সুরে সুরে সূর্যের অস্তাচল গমণ, পাখিদের ঘরে ফেরা, কোন বাধা নেই, কোন বেড়া নেই, আছে শুধু সুন্দরের ঘ্রাণ, অনন্ত ভালবাসা দিগন্তের ভাঁজে ভাঁজে হরিৎ বাতাসের সুগন্ধি।
মোবাইল বেজে উঠলো আনিসের। ওপার থেকে কন্ঠস্বর শোনা গেল, 'চাচা নেই! আক্রাম চাচা গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে ।
আনিস বিহ্বল হয়ে পড়ে । গত কয়েকদিন ধরে আক্রাম চাচা অস্থির ছিল । দাদুর আমলের বাড়ির দলিল, জমির কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছিল না । দু’হাজারের বন্যায় সব ভেসে গেছে, ভেঙে গেছে আশ্রয়টুকুও। সরকারি সাহায্যে ছোট একটা আস্তানা গড়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আনিস, আবিরও , দুজনেই ।এর শেষ কোথায় !

No comments:
Post a Comment