Tuesday, February 25, 2020

আলোক মণ্ডল

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










টোলট্যাক্স কালেকটর শ্রীকৃষ্ণ    আলোক মণ্ডল

এখন টোলট্যাক্স আদায়-চিত্র চোখ সয়ে গেছে,জাতীয় সড়কে,রাজপথে।পথ সারাই,আর দেখভালের জন্যেই এ আদায়। যুক্তি সম্মত,বিশেষত যে দেশে সরকার স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিবহনের দায় ঝেড়ে ফেলে ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায় সেখানে ট্যাক্স সেস কত কি নিতে হয় তার ইয়ত্তা নেই । কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ কেন টোল ট্যাক্স সংগ্রহ করতেন বুঝে উঠতে পারি না, তিনি তো সব কিছুরই দেখভাল করতেন,স্বয়ংভূ  বিশ্ব সম্রাট। ট্যাক্স সংগ্রহ করা তো তাঁর কাজ নয় ! তবু তিনি করেছেন,বেশ উৎসাহের সাথেই!  এ বিষয়ে জেলার কবি চণ্ডিদাস কী বলেন? তিনি তাঁর একটিমাত্র কাব্যগ্রন্থ " শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন কাব্যে" (এখন অর্ধ শতাধিক কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ করেও অনেক কবি তাঁর ধারেকাছেও যেতে পারেন নি।) দেখাচ্ছেন, শ্রীকৃষ্ণ রাধার কাছে টোলট্যাক্স  দাবী করছেন এক্কেবারে দু'কোটি টাকা! ভাবতে পারেন,দু'কোটি টাকা ! আর দিতে না পারলে, যমুনা পেরিয়ে মথুরার হাটে দুধদই বেচতে যেতে দেবেন না! সে যে লেবেল থেকেই সুপারিশ আসুক না কেন তিনি টাকা না পেলে ছাড়বেনই না! এমনই কঠিন তাঁর ফরমান! 
বিকল্প পথ একটা অবশ্য আছে ,সেটা শ্রীকৃষ্ণই বাতলে দিয়েছেন। এখন কোন্ পথ শ্রীরাধা নেবেন সেটা নির্ভর করছে তিনি কী ভাবে পরিস্থতি ট্যাকেল করছেন তার ওপর। তবে আশ্চর্য হই এই ভেবে, এতো মোটা অঙ্কের টোল এযুগেও কি এককভাবে কারো ওপর চাপানো হয়েছে!তাও আবার নিছক এক জন সামান্য গোয়ালিনীর ওপর!যে যমুনা পেরিয়ে দুধ বেচে খায়! যাক সে কথা , কবি চন্ডিদাস বলছেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুু নেই। দাবীটিও নাকি যুক্তি সংগত এবং বিকল্প পথটি ন্যায়সঙ্গত।
আসুন দেখি, কী করে এ্যাতো টাকার দাবী নাহ্য হোল! কবি বলছেন, শ্রীকৃষ্ণ অনেক হিসেব করেই ট্যাক্স ক্যালকুলেশন করেছেন, কোথাও ভুল বা অবাঞ্ছিত কিংবা গোপন হিসেব নেই। তাঁর হিসেব মতো শ্রীরাধার মাথায় যে কুসুম মালা তার দামই ১ লক্ষ টাকা,কেননা তা স্বর্গের পারিজাত ফুলের মালা। তাঁর চুলের দাম ২লক্ষ যে চুলে শম্পা বনের ঢেউ,এখন হলে হয়তো ঐ চুলে বিদিশার রাত্রির অন্ধকার খুঁজে পেতেন।সতী সাবিত্রীর মতো তাঁর মাথার সিঁথির সিন্দুরের দাম ৩ লক্ষটাকা,পূর্ণশশির মতো শ্রীরাধার মুখের দাম ৪ লক্ষটাকা,কেননা ঐ মুখশ্রী অনন্ত সৌন্দর্যের আয়না,নীলোৎপল নয়নযুগলের দাম ৫ লক্ষটাকা,কেননা ঐ চোখের ইশারায় কত যুবকের বুকে ওঠে তোলপাড় ঢেউ, গড়ুঢ়ের মতো নাকের দাম ৬ লক্ষ টাকা,দু'টি কান যেখানে সারাক্ষণ দুলে হাসি কান্নার মতো রত্ন মানিক্য তার দাম ৭ লক্ষটাকা, মানিক্যজয়ী রাধার দাঁতের দাম ৮ লক্ষটাকা কারন ক্লোজআপের ঝকঝকে দাঁতে হাসির চেয়েও উজ্জ্বল! বিম্বফলের মতো তাঁর অধরের দাম ৯ লক্ষটাকা,কেননা সেই অধরে লেখা আছে চিরন্তন চুম্বনের স্মৃতিকথা, কুম্বসম কণ্ঠের দাম ১০ লক্ষ,পদ্মের সরু নালের মতো অর্থাৎ মৃণালের মতো নির্মেদ শ্রীরাধার দু'বাহুর দাম ১১ লক্ষ টাকা,চাঁদের মতো শ্বেতশুভ্র নখের দাম ১২ লক্ষ, শ্রীফলের মতো সুঢৌল তাঁর স্তনযুগলের দাম,১৩ লক্ষ টাকা কেননা তা চিরন্তন প্রেমের লীলাভূমি! ক্ষীণতম( জিরো ফিগার) শ্রীরাধার কটিতট(কোমর)-র দাম ১৪ লক্ষটাকা, কদলীসম ঊরুদ্বয়ের দাম ১৫ লক্ষ, চরণযুগল ১৬ লক্ষ,  যে চরণে ভুল করে ফুল ভেবে প্রজাপতি উড়ে এসে বসে এবং হেমপাট নিন্দিত শ্রীরাধার জঘন-এর দাম ৬৪ লক্ষটাকা।  তাহলে,যোগ করে দেখুন,কোথাও ভুল আছে কি?  সর্বমোট ২ কোটি টাকা টোলট্যাক্স হচ্ছে তো? 
শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধার কাছে এই দাবীটুকুই করেছেন এবং তৎকালে এটা বাস্তবসম্মতও ছিল। নগদে ঐ টাকা দিতে না পারলে অবশ্যই বিকল্প পথও ছিল এখনও যেমন আছে। তবে সংগ্রাহকের উপর নির্ভর করছে, তিনি কোন ধরনের বিকল্প দেবেন। আমাদের রাধাই বা কোন পথ বেছেছিলেন,সে বিষয়ে আমি আর কিছু বলছি না,  খোঁজ পেতে "শ্রীকৃষ্ণকীর্তন"কাব্যের' দানখণ্ড' পাঠ করুন, বিকল্প পথের সন্ধান পেয়ে যাবেন।

No comments: