সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...
দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।


জাল নিশীথভাস্কর পাল
বিকাল চারটে . ব্যান্ডেল স্টেশনে বসে আছি ইন্টারসিটি ধরবো বলে . খুব একটা ভিড় নেই আজ . হয়তো ছুটির দিন
বলেই . সামনের রেলের ইলেকট্রিক তারে সার দিয়ে অনেকগুলো কাক বসে আছে . দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে যেন
রবিবারের রেশনের লাইন .3 তারা কালো প্যাকেট হাতে দুটাকা দরের চাল নিতে ব্যস্ত . বিকালের রোদ হলেও বেশ
স্যাঁকা দিচ্ছিলো গাঁয়ে তাই একটা পিলারের আড়ালে গিয়ে বসলাম .
হঠাৎ একজন ভিক্ষুক সামনে এসে হাত পাতলো . মুখে বললো , পাঁচটা টাকা দে ভাত খাবো . পাটকাঠির মতো একটা
হাত সহ তার গোটা শরীর জড়িয়ে রেখেছে একটা ময়লা সাদা থান . বয়স সত্তরের কাছাকাছি মনে হল . বুড়িকে দেখে
খুব মায়া হল . মানি ব্যাগ বের করে দেখলাম কয়েকটা ছোট এক টাকার কয়েন রয়েছে . আজকাল এই ছোট টাকা
ভিখারীরা নেয় না . একবার এক ভিখারী ছোট টাকা দেখে নিল তো নাই উপরন্তু মুখের উপর বেশ কয়েকটা কথা
শুনিয়ে দিল . সেই থেকে আমি বেশ সাবধান হয়ে গেছি . পকেটে দুটো পাঁচশো টাকার নোট ছিল . তারই একটা বের
করলাম . বুড়ির হাতে দিয়ে বললাম দশ টাকা নাও বাকিটা ফেরৎ দাও . বুড়ি ফ্যালফ্যাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে
থাকলো . আমি বললাম , ঠিক আছে একশো টাকা নাও বাকিটা ফেরৎ দাও .কাপা কাপা গলায় বললো খুচরো নেই .
আমি বললাম ঠিক আছে তোমার কাছে যা আছে তাই ই দাও . এবার সে নোটটাকে উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলো .
নোটটার উপর তার যেন ঠিক ভরসা হচ্ছে না . বুড়ির অবস্থা দেখে শেষ পর্যন্ত ভাবলাম পুরো টাকাটাই দিয়ে দি . আমি
তাকে বললাম , ঠিক আছে পুরোটাই রাখো ফেরৎ দিতে হবে না . বুড়িটা আবার টাকাটা এপাশ ওপাশ উল্টে দেখতে
লাগলো . তারপর টাকাটা আমার হাতে ফেরৎ দিয়ে বললো , জাল টাকা দিয়ে আমাকে ঠকানোর চেষ্টা করছো , এই নাও
তোমার টাকা . আমি জীবনে অনেক ঠকেছি আর ঠকবো না . আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই হন হন করে
এগিয়ে গেল সামনের দিকে . পাঁচশো টাকার নোটটা হাতে নিয়ে দেখলাম গান্ধীজির মুখের জায়গায় বুড়িটার মুখ আমার
দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে আর বলছে তোরা জাল সব জাল ...
|
|
No comments:
Post a Comment