সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...
দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।
রুরু মৌমিতা পাল
যা বলার এখনি বলে নিই।আনন্দে ডুবে গেলে চুপ করে যেতে হয়।বোধ আর বিষণ্ণতার আড়ালে আমাকে বরাবর গ্রাস করেছে আনন্দই।নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু করি , আর যেসব অসার ঢক্কানিনাদ তারপর আরো বেশী করে মনে হয় মুছে ফেলি যাসব লিখেছি এতদিন।স্তাবকদের ভীড়ের মাঝেও সেদিন প্রাসঙ্গিকভাবে চিনে নিয়েছিলাম কোন কোন স্নেহ।মানুষের মালিন্য আমাকে বিমর্ষ করে।ঔদ্ধত্য , উচ্চৃঙ্খলতাকে আমি ঘৃণা করি।ইচ্ছা করে প্রতিটা আঘাতের কিংবা অনুশীলিত ছলের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিই আলেপ্পোর মিউজিয়ামে রাখা ফিশারম্যানের ছবিটা।ছবিটা হামুরাবির সময়কালের, রাজা জিমরিলিমের মারীর প্রাসাদের অখণ্ড দেওয়ালচিত্র।ব্রাউন পশ্চাৎপটের ঠিক বৈপরীত্যে কালো বর্ডারের মাঝে সেই জেলের শারীরিক বিভঙ্গ আঁকার যে শক্তিশালী শৈলী তা আমাকে নীরবে চিনিয়েছিল শৈলীর অতিরিক্ত প্রগাঢ় জীবনকে। আমাকে মোটামুটি অনুমান করতে পারে সেও জানে না , সময়কে আমি বিস্তর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছি অসময়ের মতলব বানচাল করে।সাফল্য আর যাই হোক আমাকে কখনো যেন উন্নাসিক না করে তোলে।উন্নাসিকদের মগজ কোন এককালে প্রখর হলেও , শেষমেষ ভোঁতাই হয়ে যায়।ধারটা যেন নাকে নয় , মগজেই থাকে।
আপন মনে বকে যাচ্ছিলাম এসব বাগবাজার ঘাটে দাঁড়িয়ে রুরু।ঘরে ফিরছিলাম।আমার চারপাশে প্রীতির ঠিক পাশে পাশেই জড়ো হচ্ছিল শত্রুও।এখন ঠিক চিনে নিতে পারি , ইনটিউশনটা ক্রমশ আরো প্রবল হয়ে উঠছে বলেই।এই সময়গুলোতেই ঘরে ফেরার তাগিদ প্রবল হয়ে ওঠে।মা মাছ ভাতের গরাস মেখে মুখে তুলে দেবে ঘরে এলেই।বাগবাজার ঘাটে তখন কোন কোন জন শ্রাদ্ধ করছিল ।যেখানে মানুষ শাখা ভাঙ্গে সেখানেই নতুন শাখা পরে কোন জন।এক ঘাটেই সারি সারি পসরা সাজিয়ে বসেছিল ব্যবসায়ীরা।ভীড় হয়েছিল অনেকেরই।কেউ পুজো দেবে , কেউ শ্রাদ্ধ , কেউ শুধুই স্নান।ঘাট লাগোয়া চক্ররেলের স্টেশনে মিলেনিয়াম পার্ক থেকে ফিরছিল প্রেমিক যুগল।আমি তোর সঙ্গে দেখা না করে তোর শহর থেকে একলাই ফিরছিলাম।নৌকা থেকে ছোট ছোট মাছ নামাচ্ছিল কোন জন।অন্য দিন হলে কিনতাম।আজ না কিনেই ঘরে ফিরব ঠিক করলাম।কতদিন তোর সঙ্গে মাছ নিয়ে ঝগড়া করিনি।অন্যমনস্কভাবে পথে দেরী করে ফেলছিলাম।হঠাৎ খেয়াল হল আজ নীলমের আমার ঘরে আসার কথা। জানি না , ও কেন আসতে চেয়েছিল ! তবে মুর্শিদকে জানাইনি এসব।প্রতিটা ব্যক্তি মানুষের আলাদা অস্তিত্ব থাকে জীবনে।একটার সঙ্গে আর একটাকে না গুলিয়ে ফেললেই হল।
জীবনের ক্লেদ ক্লান্তিতে যখন বেঁচে থাকাকে বড়ো ভুঁইফোঁড় প্রবণতা মনে হয় যখন , তখন সন্দেহ আর চারপাশের ব্যভিচারকে অতিক্রম করে রুরু তোর ভালোবাসায় ফের অর্কেস্ট্রা শুনছি।বর্ষা নয় , হেমন্ত প্রিয় ঋতু আজকাল।রুরু , তোর আমার বাইরের যোগাযোগটা কোনদিন নিভে গেলেও একরোখা কবির মতো প্রেম লিখেই যাব আমৃত্যু।উপনিষদে বলা আছে -
" অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যে অবিদ্যামুপাসতে
ততো ভূয়ো ইব তে তমো য উ বিদ্যায়াং রতা।"
দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'গীতাপাঠ' গন্থে এর টীকাভাষ্যে বলেন -'যাহারা অবিদ্যার উপাসনা করে তাহারা অন্ধ তিমিরে প্রবেশ করে।তাহা অপেক্ষা আরো ঘোরতর অন্ধ তিমিরে প্রবেশ করে যাহারা বিদ্যায় রত।' আমি তাই বিদ্যা কিংবা অবিদ্যার দ্বন্দ্ব নয় ভালোবাসাকে সম্বল করেছি , জ্ঞানকে পাথেয় করেছি , কর্মকে সঙ্গী আর যোগকে অভ্যাস। বোধ আর অভিজ্ঞতা আমার গুরু।পথই ঘর , ঘরই পথ।তাই রুরু তোকে ভালোবাসতে আমার তোকেই লাগবে না। গোটা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তোকে পেয়ে বর্তে যাক , আমি একটা পাহাড় জাপ্টে দ্বীপান্তরে যাবই।ঈশ্বরের প্রেমিকা বলেই রুরু, তোর প্রতি আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষা কোনটাই এ জীবনে যাওয়ার নয়।
ইতি
অপ্রেমিকা

No comments:
Post a Comment