Tuesday, February 25, 2020

চন্দ্রাণী সাধুখাঁ

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









ভাগ্যবতী     চন্দ্রাণী সাধুখাঁ  


ভরা এজলাসে জজসাহেব যাবজ্জীবন আর দশবছরের কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করার পর, 
 পাঁচজনের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী ছেলেটাই চিৎকার করে ডুকরে কেঁদে উঠলো। সমস্ত মানুষের সাথে জয়াও নিজেকে আড়াল করে দেখতে লাগলো ছেলেটাকে।
 সেদিন জয়ার কান্না  দেখে এই ছেলেটাই কিন্তু  হো হো করে হেসেছিল। তখন ছেলেটা ছিল ষোল কি সতেরো। 
তারপর হাতে ধরা লোহার রডটা নিখিলেশের  মাথায় বসিয়ে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জয়ার উপর। 
ওদের  বাধা দিতে দিতে জয়া দেখেছিল, নিখিলেশের মাথা থেকে গড়ানো রক্তে ভেসে যাওয়া মুখ আর মাটিতে  পড়া শরীরটাকে। চিৎকার করে উঠেছিল সে। 
সঙ্গে সঙ্গে কেউ একজন তার মুখ টিপে ধরেছিল আর বাকিরা তার হাত পা চেপে ধরে ছেলেটার পাশবিকতাকে মদত দিচ্ছিল। অসহায় চোখে দাদাদের খুঁজেছিল জয়া। কিন্তু দাদারা কোথাও ছিল না।  
কামনা চরিতার্থ হওয়ার পরও যে ছেলেটা পাশবিক উল্লাসে জয়ার যোনিপথে রড ঢুকিয়ে সবচেয়ে নিষ্ঠুরভাবে ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়েছিল তাকে,  নাবালক হওয়ার কারনে সবচেয়ে কম শাস্তি হল তারই।  
কিন্তু নাবালকত্ব আর সাবালকত্ব তো শুধুই সময়ের হেরফের।তাই বয়সানুযায়ী অপরাধের শাস্তি বিধান কি ঠিক  ? সেদিনের সতেরো আজ সাতাশ। 

হঠাৎ  নিখিলেশকে দেখতে পেল জয়া। রোগা হয়ে যাওয়া শরীরটা যেন একটু সামনেও ঝুঁকেছে। ঝুলপির দুপাশে রূপোলী ঝিলিক।চির শৌখিন মানুষটার পরনের আধময়লা কোঁচকানো শার্ট বলে দিচ্ছে, ঘরে যত্ন করার কেউ নেই। 
 দশ দশটা বছর ধরে কিন্তু  নিখিলেশ নামের মানুষটার প্রতিদিনের লড়াই দেখেছে জয়া। মানুষটা দাঁতে দাঁত টিপে প্রতিটি শুনানীতে হাজির থেকেছে,  মন দিয়ে সওয়াল জবাব শুনেছে,  প্রবল চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে মেরুদন্ড সোজা রেখে সনাক্ত করেছে জয়ার পাঁচ পাঁচজন ধর্ষককে। শেষ পর্যন্ত নিখিলেশের চেষ্টাতেই শাস্তি হল ওদের। 

জয়া আজ বড় অহংকারী। মায়ের কথাই  ঠিক,   এমন স্বামী যে বহুভাগ্যে পাওয়া যায়।  নিজেকে আজ সত্যিই বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে জয়ার।  
অথচ সেদিন ভাইফোঁটা আর রাখির বন্ধনে জড়ানো দাদাদের সাথে বিয়েবাড়ি থেকে ফেরার পথেই ছেলেগুলো পথ আটকে দাঁড়াতেই শুরু হয়েছিল বচসা।কিন্তু  ওদের হাতের রিভলবার দেখে  বাইক ঘুরিয়ে উল্টোপথে উধাও হয়েছিল দাদারা। তারপর একদিন  থানা পুলিশ খবরের কাগজের গল্প থেমে গিয়েছিল! 
দাদাদের চাকরির দামে বিকিয়েছিল বোনের সম্ভ্রম।  
আজ বহুদিন পর নিখিলেশকে একটিবার ছুৃঁতে ইচ্ছে করলো জয়া। বলতে ইচ্ছে করছিল,আজও এত ভালোবাসো আমায়? 
 কিন্তু চেষ্টা করেও নিখিলেশকে ছুঁতে পারলো না জয়া। 
হঠাৎ  নিখিলেশ যেন চমকে উঠলো।  জয়ার উপস্থিতি টের পেয়েই কি দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে কান্নায় ভেঙে পড়লো আদালত চত্বরেই? 
কিন্তু তাই বা কি করে হয়? 
 দশবছর আগের এই ঘটনায় জয়া যে এখন শুধুই ছবি।

No comments: