সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...
দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।
অলক্ষ্য রঙ লাগল লিপি সেনগুপ্ত
অলক্ষ্য রঙ লাগল লিপি সেনগুপ্ত
সম্পূর্ণ অপরিচয়ের বাষ্প একটু সরে যেতেই ঝলমলে রোদ এসে পড়ল চোখেমুখে!
—কোথায় যাবেন?
—এই সামনেই
কোথাও লাগেনি তো?
—না। আজকাল ছেলেরা যা অন্ধের মত গাড়ি চালায়!
—ঠিক ঐ মুহূর্তে ভাগ্যিস আপনি....
অনেক ধন্যবাদ
—ওটি বাদ দিলে ধন্য হই ম্যাডাম।আপনার লেগেছে?
—একটু।সেরে যাবে
—যদি না সারে?
—তখন আপনাকে ডাকব
—সত্যিই?বাঁচালেন ...
—এত আনন্দের কারণ?
—কিছুনা।
পরিচয় না দিলে তো অপরিচয়ের বাঁধ ভাঙে না!আমি আর্য। কয়েকমাস ধরে হাসপাতালের ডক্টরস্ কোয়ার্টারে একার রাজত্ব গড়েছি। হাড়গোড় ভাঙলে জুড়ে দিই।
—আমি তৃণা।একটা স্কুলে পড়াই।
এই তো, বাড়ি এসে গেছে।আসুন ,একটু চা খেয়ে যাবেন।বাড়িতে বাবা আছেন।মা দু'বছর হল.....
বাবা ....
শৌভিকবাবু দূর থেকেই ওদের লক্ষ্য করছিলেন।ছেলেটি বেশ লম্বা, মেদহীন ঝকঝকে চেহারা, চোখেমুখে একটা আলাদা মায়া আছে! তৃণা ডাকতে এগিয়ে এসে বললেন, তোমরা ভিতরে এসো।
—আজ থাক্, অন্যদিন আসব।
—তবে,বাড়িতে বসন্ত উৎসব, ঐ দিন আসতেই হবে কিন্তু....
—আচ্ছা, পারলে আসব।
—আসলে খুশি হব।
কথাটা বলেই তৃণা লজ্জায় মরমে মরে গেল!
বিকেলে চা খেতে খেতে তৃণা বাবাকে সব বলল।তাকে নিয়েই যত চিন্তা বাবার! তারপর নিজের ঘরে গিয়ে সুন্দর বাটিকের একটা কাফ্তান পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একঢাল চুল আঁচড়াতে লাগল!আজ বাইকটা ঠিক গায়ের ওপর উঠে এসেছিল! আর্য হাত ধরে এক ঝটকায় সরিয়ে না নিলে! একটা দমকা হাওয়া জানলার পর্দা উড়িয়ে তৃণার শরীর আর মনকে যেন দুলিয়ে দিল!এই বসন্ত কালটা তার কি যে ভালো লাগে!একটা মাদকতা আছে,প্রকৃতিতে!
সকাল থেকেই বাড়িতে হৈ হৈ! পাড়ার সকলকে নিয়ে ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খাওয়া, আড্ডা, আনন্দ,আবীর .....শুধু আনমনা তৃণা!একটা হলুদ ঢাকাই পরে আলগোছে একটা হাত খোপা আর কানের পিছনে হলুদ চন্দ্রমল্লিকা লাগিয়ে সব তদারকি করছে!
—কি সুন্দর লাগছে মা তোকে!
শৌভিকবাবুর নজর পড়তেই তৃণা লজ্জা সামলে বলল,
বাবা তুমি যে কি বলো!
"শুভ বসন্ত উৎসব ".... কিছু বোঝার আগেই একমুঠো লাল আবীর মাথা কপাল গাল বেয়ে তখন বুকের ওপর!
কানে কানে চন্দ্রমল্লিকা বলে উঠল,
"এবার খুশি তো?"

No comments:
Post a Comment