সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...
দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।
আত্মহত্যা
বিষয়ক বিপাশা ভট্টাচার্য
১.
শেষ ঘুমে যাবার অাগে
কার মুখ মনে পড়ে?
প্রিয়জন, সন্ততি, গেরোস্থালি... নিভু নিভু ঘুমঘোরে
আচ্ছন্ন হতে
হতে ভাবি, কতকালের চেনা
ঘরদালান, প্রিয় মুখ, পুকুরের
জলে ভেসে থাকা কচুরিপানাগুলি,
লাল শালুক আর
পদ্মের
ফুটে থাকা, উঠোনজুড়ে কুমিরডাঙা,
আমসত্ত্ব, তেঁতুলমাখা, আর যা কিছু
বালিঘড়ির ছিদ্র গলে পড়ে
গিয়েছে
চুঁইয়ে, আমার অস্তিত্বের অপর
প্রান্তে। মুঠোভরা
রোদ্দুর কপালে মেখে নিই,
জ্বরে পোড়া শরীরের তাপে
বিছানাবালিশ
তেতে ওঠে ক্রমশ... যেটুকু
চেতনা ছিল অবশেষ, সেটুকুও
ফুরিয়ে আসতে থাকে।
বিদায় রাগিণীর সুর
বাজে কানে। বন্ধুদের
আরোগ্যকামনাকে বাহুল্য মনে হয়।
অযত্নে, অবহেলায় যে গাছ বেড়ে
উঠেছে আপন খেয়ালে,
হঠাৎ সার জলে সে
নিজেকে বড় অপ্রস্তুত বোধ
করে। হেমন্তের
শেষ রোদ পশ্চিমমুখী, আমার
সত্ত্বাকে সে
বারবার
হাতছানি দেয় সঙ্গী হতে...
এমন সুখের অস্তাচল... রোদ
পড়লে ঘুম জড়িয়ে আসে
চোখে। একটা
ঘোরের
মধ্যে
কেবলই মনে হয় এই
ঘুম যেন আর না
ভাঙে... আত্মহত্যার ১০৮ টি উপায়
নামক কোনো বই লিখে
ফেলব
ভাবি...
শূন্য কলস বেজে যায়। পশ্চিমী
সূর্য ঠায় বসে অস্তের
প্রতীক্ষায়।
২.
আমার ঘরের কোণে থাবা
গেড়ে বসে থাকে মৃত্যু। জুলজুল
চোখে চেয়ে থাকে আমার
রুগ্ন শরীরখানির দিকে। তার
সাথে আমার রোজকার খেলাধুলো। চোর-পুলিশ। জীবনজুড়ে
সমস্ত বাজি হেরে এসে
আজ মৃত্যুর সঙ্গে মহাকালের
খেলায়
নেমেছি। পাহাড়ের
খাদ থেকে পুঞ্জিভূত অন্ধকার
পাকিয়ে পাকিয়ে ওঠে।
হেমন্তের হাওয়ায় ভেসে এসে
ওরা
বসত গড়ে আমার চোখের
পাতায়। জীবনবিমুখ
অন্ধ চোখের কোলে জমে
ওঠে বিষাদের কালিমা। অবাঞ্ছিত
প্রাণ
নালিশ
জানায়, অহেতুক দীর্ঘতর হয়
বেঁচে থাকা। চোখের
থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া
প্রিয়জন জানে, এ অসুখ
আর
সারবে
না কোনোদিন।

No comments:
Post a Comment