Tuesday, February 25, 2020

সম্পাদকীয় নয় কিন্তু...

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।








সম্পাদকীয় নয় কিন্তু...
অভিজিৎ দাসকর্মকার
   
আমার নয় আমাদের সকলের  প্রয়াস। প্রতি মাসের ২৫ তারিখ সাধারন সংখ্যা।আর  মাসের ১৫ এবং ৩০ তারিখ "এবার আমরা শুনবো আপনার কথা আপনার কবিতা " প্রকাশিত হবে। 
    
আমরা সবসময় উন্নত মানের লেখাকেই প্রাধান্য দেবো।টিকে থাকার লেখা। ভাঙার লেখা। ভেঙে নতুন ডিকশন তেরির লেখা।
যে লেখা পড়ে বাঙালির ভাত ঘুম উড়ে যাবে। উঠতে বসতে ভাতে বাধ্য হবে এই লেখাটিতে এমন কেনো শব্দ,দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনা সব পাঠক হিসাবে আমাকে ধ্বণিত করছে।হ্যালুসিনাজড হয়ে পড়ছি।মনের অজান্তেই চাহিদা বাড়িয়ে তুলছে।  

পুরনো পোশাকে আমরা কি এই সময় সাজতে চাইবো রোজদিন?
পুরনো কি-প্যাড দেয়া ফোনে আমাদের চাহিদাগুলো মিটবে এই ডিজিটালে? 
তাহলে সাহিত্যেই বা কেনো আম পাতা জাম পতা, চাঁদ ফুল নক্ষত্র থাকবে? থাকুক তবে তাদের নবনাইজড করে রাখবো... 

এগুলো আমার বিশ্বাস।চাপালাম না। কারণ বিশ্বাস  আর মানা নিজের উপর... 

অলোক বিশ্বাস

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









আবু হাসান শাহরিয়ার-এর কবিতা প্রসঙ্গে কিছু প্রতিক্রিয়া    অলোক বিশ্বাস
বহু কবিতা গ্রন্থের রচয়িতা বাংলাদেশের কবি আবু হাসান শাহরিয়ার। তিনি আমার সমসাময়িক লেখক। আমাদের জন্ম একই বছরে, ১৯৫৯। কবিতা ছাড়াও তিনি প্রকাশ করেছেন অনেকগুলো কবিতা বিষয়ক আলোচনা গ্রন্থ, কয়েকটি সম্পাদনা। তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে জীবনানন্দ দাশের গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত কবিতা সমগ্র। প্রামাণ্য শামসুর রাহমান ইত্যাদি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতার বইয়ের মধ্যে আছে অন্তহীন মায়াবী ভ্রমণ, এবছর 
পাখিবন্যা হবে, হাটে গেছে জড়বস্তুবাদ, তোমাদের কাচের শহরে, ইত্যাদি। তাঁর সাম্প্রতিক কবিতার বই 'অসময়ে নদী ডাকে' প্রান্তিক মানুষের সহজ জীবন যাপনের আবহমান ধারার মতো আন্তরিক এবং অকপট। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত এই কবিতার বইতে পাঠক পেয়ে যাবেন কথোপকথনের প্রাঞ্জল ভাষা--- 'কত কী খোয়া তো যায়; ট্রেনও গেলে যাবে/ ছটা বেজে পনেরোয় পৃথিবীতে কত কিছু ঘটে'(ছ'টা বেজে অনন্ত পনেরো)। আবু হাসান শাহরিয়ার বিষয়কে যথেষ্ট প্রাধান্য দিয়েছেন বলেই, বিষয়ান্তর বা বিষয়হীনতার প্রসঙ্গ ভাবার অবকাশ খুঁজিনি তাঁর কবিতা পাঠের সময়। পাগলাভোলা রোমান্টিক ভিশনভরা চাঞ্চল্যের পরিচয় পেয়েছি তাঁর কবিতায়। নৈসর্গিক বিস্ময়গুলোর প্রতি তাঁর সানন্দ আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায় 'অসময়ে নদী ডাকে'র কবিতাগুলোতে। সেই আকর্ষণে নিসর্গের অন্তর্নিহিত আত্মাটিকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি মগ্নচৈতন্যে। ভালবাসেন স্যাটায়ার লিখতে। কবিসত্তা বিষয়ে গরিমাও কাজ করে কখনো যা অভিব্যক্ত হয়েছে কোনো কবিতার পঙক্তিতে। তাঁর 'শাদাছড়ি' নামক কবিতায় এগিয়ে থাকা আত্মঅহংকারী কবিমনের তীব্রতা প্রকাশিত এরকম পংক্তিতে--- 'আবার হাওড়ে গেলে লঘুচিত্ত কবিদের নাওয়ে ওঠাব না/ ছেঁদো কবি এঁদোজলা খোঁজে।' উল্লিখিত কবিতাগ্রন্থে একটি কবিতায় তিনি 'চাক্ষিক' শব্দটা ব্যবহার করেছেন। যদিও অনাভিধানিক এই শব্দটির ব্যবহার বা প্রয়োগের কৌশলমাত্রা আমার পছন্দের বাইরে থেকে গেলো। পর্যবেক্ষণের মেধাও তাঁর কবিতার উপাদানশক্তি হয়ে ওঠে, তিনি সেই উপাদানের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে লিখছেন--- 'ভাষার আদিতে ধ্বনি; আমার বসতি ধ্বনিমূলে।' আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতায় খুঁজে পাই বাক্যের ধ্বনিগুণ এবং তা জারিত অন্যান্য কাব্যগুণের স্পার্ক নিয়ে। পৃথিবীর যাবতীয় রূপ, যাবতীয় সুর কবির চেতনাকে রাঙায়, সন্নিবিষ্ট হয় কবিতায় এবং তার বহিঃপ্রকাশ দেখি 'অসময়ে নদী ডাকে' কবিতার বইয়ে। চা বা কফিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জীবনের নিজস্ব বহুরৈখিক বিস্তার অভিব্যক্ত হয়েছে 'চা না কফি' কবিতায়। অপর কবিতা ভাবনা থেকে উঠে আসা হৃদয়নিষ্ঠ উচ্চারণের সক্রিয়তা স্পষ্ট হয়েছে 'ঢেউভাষা' নামক কবিতায়--- 'অভ্যাসবশত আমি নদীর রচনাবলি পড়ি/ পাঠে পাঠে আসমুদ্র ঢেউভাষা শিখি/ শব্দে দিই ধার।' তাঁর এক পংক্তির কবিতা--- 'আমি নই; অন্য কেউ বেঁচেছিল আমার শরীরে' (আত্মা)। এক পংক্তির কবিতার পরিসর পাঠকের ভাবনায় সম্প্রসারিত হতে থাকে মাত্র লেখাটির প্রতি তাকিয়ে থাকলেই।  স্থানিকতাকে কবি গুরুত্ব সহকারে দেখেছেন। তাঁর স্বপ্নাদেশ, পাঠকের প্রতি, ছায়ালিপি ইত্যাদি কবিতার পাঠ অপর অভিজ্ঞতার স্মারক। কী অসাধারণ পংক্তি দেখেছি 'পাঠকের প্রতি' কবিতায়---'কবি কি সমাস নাকি, পা দোলাবে ব্যাকরণ গাছে ?' কিছু কবিতা টানা গদ্যে। টানাগদ্য কবিতার গতিরূপ স্বাভাবিকভাবেই অন্য কবিতার থেকে আলাদা হবেই।।  'শহীদ কাদরী' নামাঙ্কিত কবিতায় তিনি লিখছেন--- 'কবিরা রাখাল ছিল এই দেশে, এখন ভিখিরি'--- বেশ স্ট্রাইকিং। অগ্রজ কবি শামসুর রাহমানের প্রতি হার্দিক নিবেদনের প্রকাশ ঘটেছে এভাবে---'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা/ তার নামে আজও মাঠে ভাঁটফুল ফোটে/ ঘাটের হিজলও মিছিলে শামিল হয়।' 'অসময়ে নদী ডাকে' কবিতাটির ভেতরে চাপা বেদনাজনিত দীর্ঘশ্বাস মরমিয়া ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে হৃদয়ের বেদনা-পরবর্তী উল্লাস--- 'আমার সাঁতারু-মন নদীর শৃঙ্গাররসে ভাসে।' পশ্চিমা ধরণের  বিনির্মাণ ও বহুরৈখিকতা খোঁজার দরকার পড়ে না তাঁর কবিতায়। বরং বাংলার চিরকালীন পুনঃনির্মিত অন্তর্লীন বহুত্ববিন্যাসি ধারা অনুভব করেছি আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতায়। পেয়েছি বাংলার স্বপ্রকৃতিজাত গীতিকবিতার স্পর্শবিন্যাস। 'শুভরাত্রি' কবিতার শেষ দুই পংক্তিতে লিখছেন---' সারাদেশই  বধ্যভূমি; সারাদেশই রায়ের বাজার/ পরশু অনেক দূর; কালই গুলিবিদ্ধ হতে পারি'। কবিতাটি পড়ে মনে ঝলকে গেলো হুমায়ুন আজাদ লিখিত সেই ঐতিহাসিক গ্রন্থটির কথা 'আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম'?


পিনাকীরঞ্জন সামন্ত

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










হাইপারটেনশন     পিনাকীরঞ্জন সামন্ত  


ভাবছি কবিতাই এমন কিছু শব্দ প্রয়োগ করবো যা আমিষ বা নিরামিষ নয় এবং যথারীতি সেই মেহেদী বা মেহেরপুরের রঙ মাখানো উড়ন্ত চাকতির থেকে একমুঠো রোদ এবং বাতাসের গন্ধ ছড়াবে । পাখিরা আসবে 
গাছে - ধ্বনি এবং ধ্বনিতে কলরব মাখানো সঙ্গীতের মুর্ছনায় ভুলে যাব আমার পাপবিদ্ধ ইতিহাস -  
আর ক্ষণকালের আবর্তনের ভিতরে নদীর উচ্ছাসে জেগে উঠবে আমার অন্ধকারের প্রশ্ন -গান্ধারী তুমি কি একটিবার
চোখ খুলবে এবার ! হয়তো ইচ্ছেটা জাগবে পুনর্বার আমার না জানা সকল পূর্বপুরুষের যৌন বিস্তারের আসল পাণ্ডুলিপি । 

হঠাৎই এই সময় চমকালো মেঘ, বৃষ্টি এলো, 
আর আমার ভাবছি ভাবছি মনের দোলনাটি 
ক্রমশ দুলতে দুলতে কোথায় যেন হারিয়ে গেল 
এক ঝলক বিদ্যুতের মতো

মনে হলো --
আমি যথার্থই একজন হাইপারটেনশন 
রুগী-কাম একটি শুকনো নদী এবং প্রশ্ন আসে 
এমত অবস্থায় - শব্দের কল্লোলিত স্রোত 
আসবে কী করে ?

নাসির ওয়াদেন

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









কাগজ      নাসির ওয়াদেন


           রাগে গজগজ করতে করতে ফিরে যাচ্ছে আনিস ।রাতের গন্ধ গায়ে লাগিয়ে ভোরের কুয়াশা মেখে পাঁচ কিলোমিটার পথ ধাওয়া করে সাইকেল বেয়ে এসে লাইন দিতে হয়েছিল । বেলা গড়িয়ে দুপুর পার, মাথার সূর্য তখন বাইশ দিনের ওম দেওয়া ঘোলাটে, পোক্ত ছানার রূপ পায়নি যেন । একরোখা রোদ বারবার মুখ লুকোচ্ছে, মেঘকে হিংসে করে । উত্তুরে শীতল হাওয়া ভাসিয়ে নিয়ে যায় ইলশেগুঁড়ির ছানাদের। বৃষ্টির হালকা মেজাজ, দোতলার মেয়েটির মুখে রবীন্দ্র সংগীতের সুর, জানালার শিক ভেদ করে ভেসে আসে পিচরাস্তার বুকে ।
   ' যদি নাই হবে, খামোখা হয়রানি কেন ভাই ?
দীর্ঘ লাইন মাথা যখন ছুঁল পোস্টাপিসের বাবুর কাছে, বাবু বলে দিল,' তিনমাসের পর এসো। মগের মুলুক পেয়েছে । আমরা সব ভেড়ারদল! '
      বাড়িতে ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যা এসে যাবে তাদের।  'ভুল!  ভুল করবে ওরা, আর তাপ সইব আমরা, কী আজব দেশ রে ভাই ।'
রাগে ততক্ষণে তার রক্তচাপ বেড়ে গেছে । তার পাশে সাইকেল চড়ে যাচ্ছে আবির । দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, পাশাপাশি বসবাস ,  আনিসের দাদু আর আবির দাদু দেশ ছেড়েছে সেই  সাতচল্লিশ সালে । আজ ওরা দুজনেই গত। ওপারের জল, হাওয়া তাদের ভাল লাগেনি, তাই পাড়ি দেওয়া । কোথায় যেন বেসুরো আওয়াজ ভেসে আসছে আজ , কালিমালিপ্ত হচ্ছে ভোরের ভালবাসার বাতাস, নিশ্বাস প্রশ্বাসে বিষের গন্ধ । কে ছড়ায় ---
   আবার ভুল । আধার কার্ড । ভোটার কার্ড । ঠিকঠাক না হলে নাকি সমূহ বিপদ, অসম পরিণতি । আঁতকে ওঠে আনিস,  বলে, ' আর বাঁচা যায়?  আমার বাবা জন্মাল এ দেশে, আমি জন্মালুম, আমার ছেলে, তার ছেলে গত মাসে,এখন নাকি  আমাদের সবাইকে প্রমাণ দিতে হবে।
  'ঠিক বলেছিস আনিস,  বলল আবির, আমাদেরও তো ভয় করে ভাই!  আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, স্কুল সার্টিফিকেটের কোন দামই নাই। নতুন জন্ম সার্টিফিকেটের প্রয়োজন ।এই পঞ্চাশ পেরোনো মানুষ কোথায় পাবে বলতো ?'
  -- সেটাই তো মোদ্দা কথা ভাই।
  -- তাকিয়ে দেখ আসাম।গোটা রাজ্য পুড়ছে, আগুন জ্বলছে, কারো কোন হুশ আছে?
এখানেও কি আগুন জ্বলবে ?  পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে আমার বাড়ি কি সুরক্ষিত থাকবে ?
--তুই ঠিকই বলছিস আবির। জন্মালাম এখানে , আর এখন বলছে, প্রমাণ না দিলে কাম্পে পচে মরতে হবে ।
      ওরা  চলছে পিচরাস্তার উপর দিয়ে সাইকেল চড়ে । দুপাশের সারি সারি গাছ, পাখির কলকাকলি,ছন্দস্বর, মাঝেমাঝে রোদের লুকোচুরি । দূরে সবুজ প্রান্তর, রবিফসলের ঢেউ, শরীরের অঙ্গে সোনার গহনা ।
    পিচরাস্তার শেষ, এখন কংক্রিটের রাস্তা । রাস্তার চেহারা পাল্টে গেছে, জীর্ণশীর্ণ রাস্তা হাড়মাস পেয়ে উল্লসিত ।সৌহার্দ্য আর ভালবাসা মুড়ে আছে সোনার বাংলা । সেই সকালবেলায় সূর্য ওঠা, রাখালিয়া সুরে সুরে সূর্যের অস্তাচল গমণ, পাখিদের ঘরে ফেরা, কোন বাধা নেই, কোন বেড়া নেই, আছে শুধু সুন্দরের ঘ্রাণ, অনন্ত ভালবাসা দিগন্তের ভাঁজে ভাঁজে হরিৎ বাতাসের সুগন্ধি।
       মোবাইল বেজে উঠলো আনিসের। ওপার থেকে কন্ঠস্বর শোনা গেল, 'চাচা নেই! আক্রাম চাচা গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে ।
    আনিস বিহ্বল হয়ে পড়ে । গত কয়েকদিন ধরে আক্রাম চাচা অস্থির ছিল । দাদুর আমলের বাড়ির দলিল, জমির কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছিল না । দু’হাজারের বন্যায় সব ভেসে গেছে, ভেঙে গেছে আশ্রয়টুকুও। সরকারি সাহায্যে ছোট একটা আস্তানা গড়েছে।
    দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আনিস, আবিরও , দুজনেই ।এর শেষ কোথায় !

আলোক মণ্ডল

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










টোলট্যাক্স কালেকটর শ্রীকৃষ্ণ    আলোক মণ্ডল

এখন টোলট্যাক্স আদায়-চিত্র চোখ সয়ে গেছে,জাতীয় সড়কে,রাজপথে।পথ সারাই,আর দেখভালের জন্যেই এ আদায়। যুক্তি সম্মত,বিশেষত যে দেশে সরকার স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিবহনের দায় ঝেড়ে ফেলে ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায় সেখানে ট্যাক্স সেস কত কি নিতে হয় তার ইয়ত্তা নেই । কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ কেন টোল ট্যাক্স সংগ্রহ করতেন বুঝে উঠতে পারি না, তিনি তো সব কিছুরই দেখভাল করতেন,স্বয়ংভূ  বিশ্ব সম্রাট। ট্যাক্স সংগ্রহ করা তো তাঁর কাজ নয় ! তবু তিনি করেছেন,বেশ উৎসাহের সাথেই!  এ বিষয়ে জেলার কবি চণ্ডিদাস কী বলেন? তিনি তাঁর একটিমাত্র কাব্যগ্রন্থ " শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তন কাব্যে" (এখন অর্ধ শতাধিক কাব্যগ্রন্হ প্রকাশ করেও অনেক কবি তাঁর ধারেকাছেও যেতে পারেন নি।) দেখাচ্ছেন, শ্রীকৃষ্ণ রাধার কাছে টোলট্যাক্স  দাবী করছেন এক্কেবারে দু'কোটি টাকা! ভাবতে পারেন,দু'কোটি টাকা ! আর দিতে না পারলে, যমুনা পেরিয়ে মথুরার হাটে দুধদই বেচতে যেতে দেবেন না! সে যে লেবেল থেকেই সুপারিশ আসুক না কেন তিনি টাকা না পেলে ছাড়বেনই না! এমনই কঠিন তাঁর ফরমান! 
বিকল্প পথ একটা অবশ্য আছে ,সেটা শ্রীকৃষ্ণই বাতলে দিয়েছেন। এখন কোন্ পথ শ্রীরাধা নেবেন সেটা নির্ভর করছে তিনি কী ভাবে পরিস্থতি ট্যাকেল করছেন তার ওপর। তবে আশ্চর্য হই এই ভেবে, এতো মোটা অঙ্কের টোল এযুগেও কি এককভাবে কারো ওপর চাপানো হয়েছে!তাও আবার নিছক এক জন সামান্য গোয়ালিনীর ওপর!যে যমুনা পেরিয়ে দুধ বেচে খায়! যাক সে কথা , কবি চন্ডিদাস বলছেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুু নেই। দাবীটিও নাকি যুক্তি সংগত এবং বিকল্প পথটি ন্যায়সঙ্গত।
আসুন দেখি, কী করে এ্যাতো টাকার দাবী নাহ্য হোল! কবি বলছেন, শ্রীকৃষ্ণ অনেক হিসেব করেই ট্যাক্স ক্যালকুলেশন করেছেন, কোথাও ভুল বা অবাঞ্ছিত কিংবা গোপন হিসেব নেই। তাঁর হিসেব মতো শ্রীরাধার মাথায় যে কুসুম মালা তার দামই ১ লক্ষ টাকা,কেননা তা স্বর্গের পারিজাত ফুলের মালা। তাঁর চুলের দাম ২লক্ষ যে চুলে শম্পা বনের ঢেউ,এখন হলে হয়তো ঐ চুলে বিদিশার রাত্রির অন্ধকার খুঁজে পেতেন।সতী সাবিত্রীর মতো তাঁর মাথার সিঁথির সিন্দুরের দাম ৩ লক্ষটাকা,পূর্ণশশির মতো শ্রীরাধার মুখের দাম ৪ লক্ষটাকা,কেননা ঐ মুখশ্রী অনন্ত সৌন্দর্যের আয়না,নীলোৎপল নয়নযুগলের দাম ৫ লক্ষটাকা,কেননা ঐ চোখের ইশারায় কত যুবকের বুকে ওঠে তোলপাড় ঢেউ, গড়ুঢ়ের মতো নাকের দাম ৬ লক্ষ টাকা,দু'টি কান যেখানে সারাক্ষণ দুলে হাসি কান্নার মতো রত্ন মানিক্য তার দাম ৭ লক্ষটাকা, মানিক্যজয়ী রাধার দাঁতের দাম ৮ লক্ষটাকা কারন ক্লোজআপের ঝকঝকে দাঁতে হাসির চেয়েও উজ্জ্বল! বিম্বফলের মতো তাঁর অধরের দাম ৯ লক্ষটাকা,কেননা সেই অধরে লেখা আছে চিরন্তন চুম্বনের স্মৃতিকথা, কুম্বসম কণ্ঠের দাম ১০ লক্ষ,পদ্মের সরু নালের মতো অর্থাৎ মৃণালের মতো নির্মেদ শ্রীরাধার দু'বাহুর দাম ১১ লক্ষ টাকা,চাঁদের মতো শ্বেতশুভ্র নখের দাম ১২ লক্ষ, শ্রীফলের মতো সুঢৌল তাঁর স্তনযুগলের দাম,১৩ লক্ষ টাকা কেননা তা চিরন্তন প্রেমের লীলাভূমি! ক্ষীণতম( জিরো ফিগার) শ্রীরাধার কটিতট(কোমর)-র দাম ১৪ লক্ষটাকা, কদলীসম ঊরুদ্বয়ের দাম ১৫ লক্ষ, চরণযুগল ১৬ লক্ষ,  যে চরণে ভুল করে ফুল ভেবে প্রজাপতি উড়ে এসে বসে এবং হেমপাট নিন্দিত শ্রীরাধার জঘন-এর দাম ৬৪ লক্ষটাকা।  তাহলে,যোগ করে দেখুন,কোথাও ভুল আছে কি?  সর্বমোট ২ কোটি টাকা টোলট্যাক্স হচ্ছে তো? 
শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধার কাছে এই দাবীটুকুই করেছেন এবং তৎকালে এটা বাস্তবসম্মতও ছিল। নগদে ঐ টাকা দিতে না পারলে অবশ্যই বিকল্প পথও ছিল এখনও যেমন আছে। তবে সংগ্রাহকের উপর নির্ভর করছে, তিনি কোন ধরনের বিকল্প দেবেন। আমাদের রাধাই বা কোন পথ বেছেছিলেন,সে বিষয়ে আমি আর কিছু বলছি না,  খোঁজ পেতে "শ্রীকৃষ্ণকীর্তন"কাব্যের' দানখণ্ড' পাঠ করুন, বিকল্প পথের সন্ধান পেয়ে যাবেন।

বেবী সাউ

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










উড়োচিঠি    বেবী সাউ  

৫৭. 
আমরা লিখতে এসেছি! আমরা কিছু লিখতে চেয়েছি! কেন? খ্যাতির জন্য? পুরস্কারের জন্য? নাকি প্রচুর বিজ্ঞ বলে? নাকি আমাদের মধ্যে এত জ্ঞানের ছড়াছড়ি যে না লিখে ছড়ালে পৃথিবী মূর্খ থেকে যাবে? উঁহু! এর কোনটাই কারণ নয়। কোনটাই আমাদের লেখাকে,  লেখাটি লেখার সময় এসব কারণ প্রভাবিত করে না,  মনেই থাকে না। তারচেয়ে, আমার মনেহয়, লেখা যেন এক সাধনা--- নিভৃত,নিবিড়, নিবিষ্ট সাধনা। চুপচাপ ধ্যানের মতো।  ব্যক্তিগত জীবনের প্রান্তে এসে যখন সেই সাধনার কাছে হাত পেতে দাঁড়াই, একা একা মুখস্থ করি নিজের পাওয়া না পাওয়ার হিসেব, দেখি নিজের ভালো লাগা মন্দ লাগা, অনুভূতি, অনুভব আর ভীড়, ভীষণ ভীড়ের পৃথিবীতে প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়ার মতো 'একলা আমি' খড়কুটো ভেবে আঁকড়ে ধরি অক্ষরকে। তখন অক্ষর আমার বন্ধু, ভগবান, মা-বাবা--- অক্সিজেনও। সেই অক্ষরদের নিয়ে আমি আবার বেঁচে উঠি, স্রোতে ভাসতে ভাসতে কুল পেয়ে যাই... ঘর বসত গুছাই। জন্ম জন্মান্তরের সখ্য, নির্ভরতা আমাকে দেয় এই ৫২টি অক্ষর!  বাংলা ভাষা! সাদা একটা পৃষ্ঠা আমাকে মুক্তির আকাশ দেখায়, শান্ত নিবিড় ছন্দ শেখায়--- শেখায় এই মুখোশের পৃথিবীতে একমাত্র অক্ষরই বন্ধু, সখা এবং ঈশ্বর! 

আর তখনই বাংলা ভাষাটি আমার কাছে হয়ে ওঠে বেদমন্ত্র!  

  এই ভাষাটিকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। জানিনা এর কারণ! সে হিসেবে দেখতে গেলে বাংলায়, আমাদের দেশের বাড়িতে আমি থেকেছি মাত্র পনেরোটা বছর। মাধ্যমিক দেওয়ার পরেই ঝাড়খণ্ডে চলে আসি। এখানেই বাদবাকি পড়াশোনা। আর এখানে পেপারওয়ালা থেকে ঝাড়ুদার... সব্জী মার্কেট থেকে কলেজ ক্যাম্পাস... গেট কিপার থেকে আমার বন্ধুমহল সবাই হিন্দি কিংবা ইংরেজিতে কথা বলে। আমারও ওদের সঙ্গে হিন্দি,  ইংরেজিতেই যা কিছু আলাপ, আয়োজন।  এইযে আমি কবিতা লিখি, এইযে, যাইহোক না কেন, সামান্য লেখালিখি করি আমার বন্ধুরা এসব জানেই না! জানলে হয়ত বলতো--- " ব্যা...ঙ্গো...লী পোয়েম!!!" আমাদের বাড়িতেও কখনও বাংলা সাহিত্যের কোনও জায়গা নেই। বাবা, পিসি, কাকা, দাদু সাহিত্য নিয়ে কখনও দু'লাইনও লেখেননি। বাংলা কবিতা লিখছি বলে, পড়ছি বলে আমার ভাই সবসময়ই আমাকে টিটকিরি মারে...
সুতরাং আমার লেখা সম্পর্কে কিছু জানার জন্য, লেখাগুলো কিছু হচ্ছে কি না জানার জন্য আমাকে ফেসবুকে আসতেই হয়। ফেসবুকেও যে কোনও স্বচ্ছ মতামত পাই, তা নয়... কিন্তু ফেসবুকটাই আমার 'বাংলা জানলা'...বাংলার ওয়েব ম্যাগগুলো আমার সাহিত্য চর্চার উঠোন...লিটল ম্যাগাজিনগুলো না থাকলে আমার এই ছাইপাঁশ লেখা আদৌ কী প্রকাশিত হতো! 

কবি গৌতম বসু একবার আমাকে বলেছিলেন,  'তুমি দূরে থাকো বলেই এত ভালো ভালো কাজ করতে পারছ!' আমি তখন তাঁকে বলেছিলাম, "এখান থেকে বাংলায়  কাজ করাটা একটা বিপ্লব। হাতের কাছে বই নেই, আলোচনা করার লোক নেই, কেউ গাইড নেই, বন্ধু নেই। এমনকি কোনও মাধ্যমও নেই..." কলকাতার সঙ্গেও আমি পরিচিত নই...হয়ত কলকাতায়ও আমি উপেক্ষিত... তাই যখন কাঁদনাগীত নিয়ে কাজ করি তখন কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমাকে দাঁড়াতে হয়েছিল...আমি যখন কবিতা লিখি, কবিতার বই বেরোয় তখন হুমকি দেওয়া হয়... আজেবাজে কথা ছড়ানো হয়... যেহেতু আমি দূরে থাকি, আমার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়মিত এই জগতের ওঠাপড়া থাকে না, এমনকী তাঁরা এটিও জানেন না যে আমি কোন বিষয়ে কতটা অ্যাকাডেমিক পড়াশুনো করে চলেছি ( জানলে হয়ত একটু ভেবে বিরক্ত করতেন) কী যে লাভ এতে! কী হয় এতে! আমরা এত অধৈর্য কেন? আমরা এত ঈর্ষাকাতর কেন সামান্য এই ক'টি অক্ষরের কাছে? পংক্তির কাছে? আমরা কী সুষ্ঠু, নিবিড় সাধনার পরিবেশ তৈরি করতে পারি না? যাতে সকলে মিলে হাঁটতে পারি! একে অপরের অক্ষর শেয়ার করতে পারি! ব্যক্তিগত কেচ্ছা ছাড়িয়ে অক্ষরের আলোয় বন্ধু হয়ে উঠতেও তো পারি!

 আমরা, আমি লিখতে চাই। লেখায় থাকতে চাই। কেননা, লিখতে না পারলে মাথা ধরে, বমি পায়... কষ্ট... কষ্ট...

কিন্তু একটা কথা বলি, এত প্যান্ডেল থাকবে না। এত সানাই থাকবে না, এত গেট টুগেদারও থাকবে না। শত শত সাম্রাজ্য ধুলোয় হারিয়ে যাবে। 
যদি কিছু লিখতে পারি, সেটাই থাকবে, যদি একটিও কবিতা লিখতে পারি, যদি একটিও কখনো....

চিরকাল লেখাই থাকে,  রক্তাক্ত অক্ষরগুলি থাকে, তার জন্য হাঁটুমুড়ে ভিক্ষা করতে হয় সময়ের কাছে, এত জেনে গেলে হয় না। 

কারণ ক্ষমতা এক অশ্লীল ও পঞ্চম শ্রেণির গর্ত মাত্র।

চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










সরধুনী    চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

বইমেলার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ধুনী নিজের ভিতরে টুকরো হতে থাকে। মনে মনে সামনে এগিয়ে যায়। সামনে মানে গন্তব্যহীন অদৃশ্য সেতু।সেতুর নীচে খরস্রোতার তীব্র টান। ধুনী যেমন দাঁড়িয়েছিল সেভাবেই মুখ তুলে আকাশে তাকায়। মেটে রঙের গালিচার মতো ভারী মেঘ বায়ুকোণে।বায়ুকোণে কি না কে জানে! মনে হয়। মনে কতো কী হয়, পাটভাঙা স্মৃতি নড়েচড়ে বসে।ধুনী এবার শহরের পথ দেখে। সেখানে তার অপেক্ষায় পনেরোশো স্কোয়ারফুট নিখুঁত সাজানো।কাছাকাছি মলে যাওয়া আছে।কিছু কেনাকাটা আছে। মাঘীপূর্ণিমার গায়ে বইমেলার রকমারি ফেস্টুন উড়তে থাকে। তার 'মাঘ সংক্রান্তির রাতে' কবিতা পাঠের ইচ্ছে হয়।

     মৃত্যুগন্ধ মেখে রাত দাঁড়িয়ে আছে। কত জটিল অসুখ চারিপাশে।ধুনী অপারেশন টেবিলে এসব জটিলতা পার হয়ে এসেছে।চারবার। আজকাল জটিলতা ভালো লাগে না।সহজ কথা শুনতে চায়, সহজ পথে যেতে যায়। সামনের দিকে অভবি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অদৃশ্য সেতু পেরোলেই বাণপ্রস্থ পথ,হয়তো।পূর্ণিমার আলোর গায়ে ছলাৎ শব্দে স্রোতস্বিনী ধাক্কা মারে।টুকরো হয়ে যায় চাঁদ। পূর্বাভাস, জমাট মেঘ আগামীকাল বৃষ্টি নিয়ে আসবে।ধুনীর স্মৃতিপথে পুরনো বৃষ্টিপাত, ঘন সন্নিবিষ্ট। সে রাতে মেহগনি আলো চোখে নিয়ে কেউ এসেছিল।অনেক মানুষের আড্ডায় ধুনীর চোখ সে আলো খুঁজে নিয়েছিল। স্পর্শ কি শরীরের? না ছুঁয়েও ছোঁয়াচে জ্বর এসেছিল।

    মেঘের জমায়েতে বইমেলার ফেস্টুনগুলো দেখা যাচ্ছে না। পূর্ণিমা এখন অনেকটাই নিষ্প্রভ। ফেস্টুনগুলো কাটাঘুড়ির মতো মুখথুবড়ে পড়েনি তো? ধুনীর প্রত্যাশা কি উড়তে উড়তে কাটাঘুড়ির মতো মাটি ছুঁয়েছো? কোন সীমানায়? ব্যস্ত সড়ক চল্লিশ পঞ্চাশ গতি ছুঁয়ে ছিটছে।

মৌমিতা পাল

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










রুরু    মৌমিতা পাল

যা বলার এখনি বলে নিই।আনন্দে ডুবে গেলে চুপ করে যেতে হয়।বোধ আর বিষণ্ণতার আড়ালে আমাকে বরাবর গ্রাস করেছে আনন্দই।নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু করি , আর যেসব অসার ঢক্কানিনাদ তারপর আরো বেশী করে মনে হয় মুছে ফেলি যাসব লিখেছি এতদিন।স্তাবকদের ভীড়ের মাঝেও সেদিন প্রাসঙ্গিকভাবে চিনে নিয়েছিলাম কোন কোন স্নেহ।মানুষের মালিন্য আমাকে বিমর্ষ করে।ঔদ্ধত্য , উচ্চৃঙ্খলতাকে আমি ঘৃণা করি।ইচ্ছা করে প্রতিটা আঘাতের কিংবা অনুশীলিত ছলের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিই আলেপ্পোর মিউজিয়ামে রাখা ফিশারম্যানের ছবিটা।ছবিটা হামুরাবির সময়কালের, রাজা জিমরিলিমের মারীর প্রাসাদের অখণ্ড দেওয়ালচিত্র।ব্রাউন পশ্চাৎপটের ঠিক বৈপরীত্যে কালো বর্ডারের মাঝে সেই জেলের শারীরিক বিভঙ্গ আঁকার যে শক্তিশালী শৈলী তা আমাকে নীরবে চিনিয়েছিল শৈলীর অতিরিক্ত প্রগাঢ় জীবনকে। আমাকে মোটামুটি অনুমান করতে পারে সেও জানে না , সময়কে আমি বিস্তর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছি অসময়ের মতলব বানচাল করে।সাফল্য আর যাই হোক আমাকে কখনো যেন উন্নাসিক না করে তোলে।উন্নাসিকদের মগজ কোন এককালে প্রখর হলেও , শেষমেষ ভোঁতাই হয়ে যায়।ধারটা যেন নাকে নয় , মগজেই থাকে।

আপন মনে বকে যাচ্ছিলাম এসব বাগবাজার ঘাটে দাঁড়িয়ে রুরু।ঘরে ফিরছিলাম।আমার চারপাশে প্রীতির ঠিক পাশে পাশেই জড়ো হচ্ছিল শত্রুও।এখন ঠিক চিনে নিতে পারি , ইনটিউশনটা ক্রমশ আরো প্রবল হয়ে উঠছে বলেই।এই সময়গুলোতেই ঘরে ফেরার তাগিদ প্রবল হয়ে ওঠে।মা মাছ ভাতের গরাস মেখে মুখে তুলে দেবে ঘরে এলেই।বাগবাজার ঘাটে তখন কোন কোন জন শ্রাদ্ধ করছিল ।যেখানে মানুষ শাখা ভাঙ্গে সেখানেই নতুন শাখা পরে কোন জন।এক ঘাটেই সারি সারি পসরা সাজিয়ে বসেছিল ব্যবসায়ীরা।ভীড় হয়েছিল অনেকেরই।কেউ পুজো দেবে , কেউ শ্রাদ্ধ , কেউ শুধুই স্নান।ঘাট লাগোয়া চক্ররেলের স্টেশনে মিলেনিয়াম পার্ক থেকে ফিরছিল প্রেমিক যুগল।আমি তোর সঙ্গে দেখা না করে তোর শহর থেকে একলাই ফিরছিলাম।নৌকা থেকে ছোট ছোট মাছ নামাচ্ছিল কোন জন।অন্য দিন হলে কিনতাম।আজ না কিনেই ঘরে ফিরব ঠিক করলাম।কতদিন তোর সঙ্গে মাছ নিয়ে ঝগড়া করিনি।অন্যমনস্কভাবে পথে দেরী করে ফেলছিলাম।হঠাৎ খেয়াল হল আজ নীলমের আমার ঘরে আসার কথা। জানি না , ও কেন আসতে চেয়েছিল ! তবে মুর্শিদকে জানাইনি এসব।প্রতিটা ব্যক্তি মানুষের আলাদা অস্তিত্ব থাকে জীবনে।একটার সঙ্গে আর একটাকে না গুলিয়ে ফেললেই হল।

জীবনের ক্লেদ ক্লান্তিতে যখন বেঁচে থাকাকে বড়ো ভুঁইফোঁড় প্রবণতা মনে হয় যখন , তখন সন্দেহ আর চারপাশের ব্যভিচারকে অতিক্রম করে রুরু তোর ভালোবাসায় ফের অর্কেস্ট্রা শুনছি।বর্ষা নয় , হেমন্ত প্রিয় ঋতু আজকাল।রুরু , তোর আমার বাইরের যোগাযোগটা কোনদিন নিভে গেলেও একরোখা কবির মতো প্রেম লিখেই যাব আমৃত্যু।উপনিষদে বলা আছে - 
" অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যে অবিদ্যামুপাসতে
ততো ভূয়ো ইব তে তমো য উ বিদ্যায়াং রতা।"
দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'গীতাপাঠ' গন্থে এর টীকাভাষ্যে বলেন -'যাহারা অবিদ্যার উপাসনা করে তাহারা অন্ধ তিমিরে প্রবেশ করে।তাহা অপেক্ষা আরো ঘোরতর অন্ধ তিমিরে প্রবেশ করে যাহারা বিদ্যায় রত।' আমি তাই বিদ্যা কিংবা অবিদ্যার দ্বন্দ্ব নয় ভালোবাসাকে সম্বল করেছি , জ্ঞানকে পাথেয় করেছি , কর্মকে সঙ্গী আর যোগকে অভ্যাস।  বোধ আর অভিজ্ঞতা আমার গুরু।পথই ঘর , ঘরই পথ।তাই রুরু তোকে ভালোবাসতে আমার তোকেই লাগবে না। গোটা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তোকে পেয়ে বর্তে যাক , আমি একটা পাহাড় জাপ্টে দ্বীপান্তরে যাবই।ঈশ্বরের প্রেমিকা বলেই রুরু, তোর প্রতি আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষা কোনটাই এ জীবনে যাওয়ার নয়।
                                                            ইতি
                                                        অপ্রেমিকা

তাপসী লাহা

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









গোপনে তর্পণ      তাপসী লাহা


মোটামোটি ১২০০অবধি টানা হয়ে গেছে।আর শ পাঁচেক গ্যাটিস পেলেই কাম তমাম।থ্রিলার ছাড়া  আর কেউ পাতেই তুলছে না। তায় আবার প্রেম,সেক্স, আনেক্সপেক্টেড টুইস্ট দাও,সম্পাদকের বায়না ফিরিক্কির শেষ নেই,না হলে বাপু পাব্লিক মুখ হা অবধি করেনা,গেলাবে কার দুঃসাধ্য।ইস একটা সিগারেট খেলে ভালো হত।
লেখার চক্করে আজ টানা চারদিন বাজারমুখো হওয়া হলোনা।

পাশের ঘরে কাতরানির আওয়াজ। বেশ জোরালো হচ্ছে ক্রমশ।হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসা ক্ষয়াটে হাত দুটো দরজা সরালো,

মায়ের ইনহেলারটা শেষ,এনে দাও।

একটু তেল মালিশ করে দে না,

বাঁচবে না,টাকা দাও আমি আনি।

শালি কোথায় পাবো বে,তুই আন ইয়ারের কাছ থেকে।
মুন্নি শুনতে পাচ্ছে,চুপ করো।

ভাগ হারামজাদি,জোরালো ধাক্কা সহযোগে  ঘরে তখন তুমুল বাকযুদ্ধ,সস্তার স্যামসাং চেঁচায়,
ক্লি কি কি
হ্যালো,হ্যা দাদা ভালো তো সব।আমিও তো মা কে নিয়ে চিন্তায়।লেখা শেষ হবে হবে করছে,
এস্থ্যমা।হ্যা নিশ্চই যাবো।টিকিট কাটতে বেরোচ্ছি,মায়ের চেক আপ করিয়ে পরশু সন্ধ্যায় ট্রেন ধরে পরের সকাল।
পাশের ঘর চ্যাঁচ্যায়,মিথ্যুক,ভণ্ড কোথাকার!

 কাতরানিরা এক দমকে থমকে যায়, ঘড়ির কাঁটার জোর আওয়াজ,

তালগোল পাকিয়ে গেলো,কাঁথা সরিয়ে তড়াক করে লেখার টেবিলে এগোতেই  চশমাটায় চোখ  গলাতেই,চারপাশটা ঝাপসা। আলো অন্ধকারের দপদপানিতে ছায়ার মত কিছু ঘিরে ধরে আছে,

লেখাটা হয়েছে?
না।
কেন?
পারছিনা।

এসব শখ হওয়ার সময় মনে ছিলনা,

ঘাড়ের চুলগুলো তখন জোরালো মুঠিতে চেপে ধরা,কালো আলখাল্লাগুলো আরো বড় হচ্ছে,গলা চিপে ধরেছে,চিৎকার করা যাচ্ছে না,চেয়ার থেকে পড়ে কাতরাচ্ছে একটা ছেচল্লিশ।

চোখেমুখে জলের ঝাপটা

পাড়ার কিছু চেনা মুখ নিজের হাত দিয়ে গলা চেপে ধরা ছেচল্লিশকে  স্বাভাবিক করানোর চেষ্টায় উদ্যত।

সস্তা স্যামস্যাং বেজে ওঠলো,ক্লি কি কি

হ্যালো, না লেখেনি
আর লিখবেনা,ফোন করবেননা আর,

ওপাশের উত্তরের আগেই ফোন কেটে দেয় ক্ষয়াটে হাত।

স্কুলফেরতা মুন্নির ড্রেস পালটে আলমারি থেকে প্রেসক্রিপশনটা বের করে সোজা রোগীসহ ডাক্তারের চেম্বার।

আপনি এইখানে,আপনার গোপনে তর্পণ  নভেলটার শেষটা তাহলে....
ক্ষয়াটে হাত অধৈর্য হয়ে যায়, ডাক্তারবাবু উনি লিখবেন না,তারপর একনাগাড় বাড়ন্ত রোগের ফিরিস্তি শোনায়।

ঘুমের ওষুধ টা কাজ করছেনা,পাওয়ার বাড়াতে হবে,সাথে আরো দুটো মেডিসিন দিচ্ছি।
ডাক্তারবাবু আমি ফিজ দিতে পারবোনা,এখনো মাইনা পাইনি।

উদ্দাম হাসিতে ছেচল্লিশ গল্পের শেষটা শোনায়,কিন্তু পেন না থাকায় স্বল্পস্থায়ী স্মৃতির ঘুমঘরে নিভে যায় কান্নারা।


উৎস রায় চৌধুরী

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









দরবেশী      উৎস রায় চৌধুরী


দুল বুনছো দোলানো এসিডিটি
হাঁ এ শুঁয়োপোকা শোরগোল
বিনম্র বাদলে
ছল খসানো কলসীর ফাঁক
জোঁকের স্কয়ার কেবিন
তুমি আমি ঘুমাই কেমন
আদেখলা পিরামিডে---------

বেশি টা রাখার আলনা মডেল 
সিপি খোলো যেমন
তার পোয়াতি গন্ধ আদর করি, সমাদর করি
ঝিল কল্পের দৌড় পুরে এই
সাহারা সাহারা হয়ে যাওয়া
সিনেম্যাটিক
র বলছো বলে আমার সিন্ধু আমি নিয়ে
ওয়াসিম আদব কায়দা
মিশকালো নিয়ে সুখ আছি বেমতলবে--------


নিশীথভাস্কর পাল

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।

নির্মলেন্দু কুণ্ডু

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









আগুনপাখি    নির্মলেন্দু কুণ্ডু


দাঁতে দাঁত চেপে বইমেলা থেকে বেরিয়ে আসছে অরিন্দম৷একটা দীর্ঘ-লালিত স্বপ্ন হঠাৎ ভেঙে গেলে যে ঝড়টা বয়ে যায় মনের ওপর দিয়ে,তার স্পষ্ট আভাস ওর চোখে-মুখে৷
মফস্বলের ছেলে অরিন্দমের লেখালেখির শখ স্কুল জীবন থেকেই৷তারপর বড় হতে হতে সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আস্তে আস্তে সেই চারাগাছের বনস্পতি হওয়ার চেষ্টা৷সেসময়ই ওর সাথে পরিচয় প্রবীরদার৷নতুনদের লেখায় উৎসাহ দিতে ওর জুড়ি মেলা ভার৷নিজস্ব একটা প্রকাশনা সংস্থাও আছে৷ও-ই প্রস্তাবটা দেয় অরিন্দমকে৷
—"তোর এই লেখাগুলোকে দু' মলাটের মধ্যে আন৷দেখবি আরও কত লোক তোর লেখার পাঠক হবে৷"
—"কিন্তু সে যে অনেক টাকার ধাক্কা দাদা৷চাকরি-বাকরি নেই৷
—আরে বাবা,এ তো ওয়ান টাইম ইনভেস্টমেন্ট৷তারপর ভাব,তোর লেখা চেনা-অচেনা মহলে ছড়িয়ে পড়বে৷আর তোর যা লেখার হাত,বাণিজ্যিক পত্রিকাগুলো তোর লেখা নিজে থেকে নেবে৷প্রাথমিক পরিচয়টা বড় কথা রে৷

বাবাকে বলেছিল অরিন্দম৷বাবা ওর স্বপ্নের পথে বাধা হননি৷প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকেই টাকা তুলে দিয়েছিলেন ওর হাতে৷আজ সেই কাঙ্খিত দিন৷প্রবীরদা নিজেই সব দায়িত্ব নিয়েছে,প্রুফ চেকটুকুও অরিন্দমকে করতে দেয়নি৷বলেছে, সোজা সন্তানকে কোলে নিবি৷সেই আনন্দেই সকাল-সকাল বইমেলায় প্রবেশ করেছে ও,ওর "আগুনপাখি"-কে হাতে নেবার ব্যাকুলতায়৷বার কয়েক ফোন করেও "এই আসছি" ছাড়া উত্তর পায়নি৷শেষ বেলায় যখন ও ফিরে যাবার তোড়জোড় করছে,হঠাৎ প্রবীরদা হাজির৷ওর হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়েই হাওয়া৷প্যাকেট খুলে অরিন্দম হতবাক—ফিনফিনে মলাট,পাতলা কাগজ,অজস্র ভুলে ভরা,এমনকি সব লেখাও ছাপেনি৷প্রবীরদার ফোনও সুইচড্ অফ৷
চোখের জল চাপতে চাপতেই বেরিয়ে আসছে অরিন্দম৷মনে একটাই জেদ,আগুনপাখি ওকে হতেই হবে৷

সংঘমিত্রা রায়চৌধুরী

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










জন্মদাগ      সংঘমিত্রা রায়চৌধুরী

দাদুর বড়ো আদুরে গিনি। সারাটা দিন দাদুর আশেপাশে ঘুরঘুর করে বেড়ায়। বয়সজনিত কারণে আজকাল গিনির দাদু কেবলমাত্র সন্ধ্যাবেলাতেই রুগীপত্র দেখেন। সকাল থেকে সারাদিনই নাতি-নাতনিদের সাথে কাটান।
শ্রাবণীবেলায় গিনিরা তুতো ভাইবোনেরা দাদুর চারপাশে ঘুরেঘুরে ধরাধরি খেলছে। হঠাৎ গিনি চোখ উল্টে মুখ বেঁকিয়ে গোঁগোঁ করে অজ্ঞান, নাক, মুখের কষ বেয়ে রক্ত। দাদু হতবাক, গিনির নাড়ী বন্ধ।
পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু। ছ'বছরের গিনির সুস্বাস্থ্য, পুঙ্খানুপুঙ্খ নীরিক্ষণও দাদুরই, কোনোরকম শারীরিক সমস্যা জন্মাবধি ছিলো না।
পরদিন গিনির বড়জ্যাঠা গয়ায় অকালমৃতা স্ত্রীর পিণ্ডদান করে ফিরলো। একইসাথে পূর্বপুরুষদের পিণ্ডও দান করে এসেছে। শুনে গিনির দাদুর নিজের মায়ের ছবির সামনে বসে বিলাপ, "তোমায় ধরে রাখতে পারলাম না, মা।"
আচম্বিতে সবার নজর ছবির বৃদ্ধার বাঁগালের ক্ষতচিহ্নতে, গিনিও তো অবিকল এই জন্মদাগসমেতই ভূমিষ্ঠ হয়েছিলো!

ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









বাসে     ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য


কোনরকমে বাসে উঠলাম । দৌড়ে উঠলাম; অফিসের তাড়া ।
বাস দেখি দাঁড়িয়ে পড়লো । ঠুং করে আওয়াজ হলো; এক ভদ্রলোক বাসে উঠবেন । হাতল ধরে আগে ভালো করে ' ফু ফু' করে ঠোঁটস্থ সিগারেটটি শেষ করে  তবে উঠলেন । বাস তার পরেই নড়লো একটুখানি  ।..
 ততক্ষণে সিগনাল ডাউন এবং রক্তচক্ষু .. ! বাস স্থানুবৎ ; চালক নীচে চা খেতে চলে গেল । কন্ডাক্টর খৈনী ডলতে শুরু করেছে । এক বয়স্ক ভদ্রলোক উঠেই ' বরিষ্ঠ নাগরিক ' সীটে বসতে গিয়ে দেখলেন, আগে থেকেই একজন বৃদ্ধ সেথায় বিরাজমান ।..
  এক বাদামওয়ালা বাসে উঠে হাঁকতে থাকে-" বাদাম ! বাদাম ! কলকাত্তার ভালো বাদাম ।..খেলেই ছুটবেন ঘোড়ার মতো !!"

বিপাশা ভট্টাচার্য

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










আত্মহত্যা বিষয়ক  বিপাশা ভট্টাচার্য

.
শেষ ঘুমে যাবার অাগে কার মুখ মনে পড়ে? প্রিয়জন, সন্ততি, গেরোস্থালি... নিভু নিভু ঘুমঘোরে আচ্ছন্ন হতে
হতে ভাবি, কতকালের চেনা ঘরদালান, প্রিয় মুখ, পুকুরের জলে ভেসে থাকা কচুরিপানাগুলি, লাল শালুক আর
পদ্মের ফুটে থাকা, উঠোনজুড়ে কুমিরডাঙা, আমসত্ত্ব, তেঁতুলমাখা, আর যা কিছু বালিঘড়ির ছিদ্র গলে পড়ে
গিয়েছে চুঁইয়ে, আমার অস্তিত্বের অপর প্রান্তে মুঠোভরা রোদ্দুর কপালে মেখে নিই, জ্বরে পোড়া শরীরের তাপে
বিছানাবালিশ তেতে ওঠে ক্রমশ... যেটুকু চেতনা ছিল অবশেষ, সেটুকুও ফুরিয়ে আসতে থাকে বিদায় রাগিণীর সুর
বাজে কানে বন্ধুদের আরোগ্যকামনাকে বাহুল্য মনে হয় অযত্নে, অবহেলায় যে গাছ বেড়ে উঠেছে আপন খেয়ালে,
হঠাৎ সার জলে সে নিজেকে বড় অপ্রস্তুত বোধ করে হেমন্তের শেষ রোদ পশ্চিমমুখী, আমার সত্ত্বাকে সে
বারবার হাতছানি দেয় সঙ্গী হতে... এমন সুখের অস্তাচল... রোদ পড়লে ঘুম জড়িয়ে আসে চোখে একটা ঘোরের
মধ্যে কেবলই মনে হয় এই ঘুম যেন আর না ভাঙে... আত্মহত্যার ১০৮ টি উপায় নামক কোনো বই লিখে ফেলব
ভাবি... শূন্য কলস বেজে যায় পশ্চিমী সূর্য ঠায় বসে অস্তের প্রতীক্ষায়

.
আমার ঘরের কোণে থাবা গেড়ে বসে থাকে মৃত্যু জুলজুল চোখে চেয়ে থাকে আমার রুগ্ন শরীরখানির দিকে তার
সাথে আমার রোজকার খেলাধুলো চোর-পুলিশ জীবনজুড়ে সমস্ত বাজি হেরে এসে আজ মৃত্যুর সঙ্গে মহাকালের
খেলায় নেমেছি পাহাড়ের খাদ থেকে পুঞ্জিভূত অন্ধকার পাকিয়ে পাকিয়ে ওঠে হেমন্তের হাওয়ায় ভেসে এসে ওরা
বসত গড়ে আমার চোখের পাতায় জীবনবিমুখ অন্ধ চোখের কোলে জমে ওঠে বিষাদের কালিমা অবাঞ্ছিত প্রাণ
নালিশ জানায়, অহেতুক দীর্ঘতর হয় বেঁচে থাকা চোখের থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া প্রিয়জন জানে, অসুখ আর
সারবে না কোনোদিন

মহ. ওলিউল ইসলাম

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।










স্মৃতির আয়না      মহ. ওলিউল ইসলাম


হয়তো তোমার মনে আছ,
কিংবা নেই;
--- মটর বাবুর বাগান বাড়ির বিকেল সময় গুলো।
এখনো হৃদয়ের সোনার খাঁচায় তালাবন্দি|
--স্মৃতি গুলো পুষে রেখেছি সোহাগ-আদরে|
তোমার সেই দো'ফলা চুলের লাল ফিতার ফুল।
শুভ্রকোমল আলতা রাঙা পা,
এক পায়ের কেতা দেখিয়ে শরীর নাচিয়ে----
ছল্ কিত্ কিত্-তা খেলা|
আমি টায়ার দৌড়ের খেলা ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতাম।
--সে যে কি সুখ!!
এখনো খুঁজি |
মনে আছে,কষ্টও হয়।
--সেভনি একবার হক্কে করে তোমাকে তেদ্দা করে দিয়েছিলো।
বুঝতে পেরেছিলাম তুমি দুঃখ পেয়েছিলে|
তোমার পাকমাটির বাঁধ দেওয়া খেলা ঘর থেকে মাটির পুতুল চুরি করেছিলাম।
যাদের তুমি শখ করে আলতা ও সাফিনা বলে ডাকতে।
তোমার খেলার ঘর 'মুনতোর' দিয়ে
বন্ধ করে রাখতে|
---"অলম্ কাঠি,বলম্ কাঠি ---যে যাবি তার বুক্কে কাঠি"|
এই ছিলো  'মুনতোর'|
বলতে--"যে এই ঘরে ঢুকবে,  ভূতে তার বুকের হাড় ভাংগবে রাতে"।
তবুও আমি তোমার আলতা -সাফিনা কে নিয়ে পালিয়ে ছিলাম।
জান?আমি তাদের কত আদরে রেখেছিলাম !
তাদের খাওয়াতাম,গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতাম।
বলতাম "সাফিনা ঘুমাও,তোমার মা আসবে এখুনি|আব্বুকে বকা খাওয়াবে তোমরা?
আমি তোমার পুতুল ছেলে-মেয়ের আব্বাও হয়েছি।কি আনন্দ!!
--দুই দিন কেঁদেছিলে আলতা সাফিনার জন্য|
ঐ হারামজাদা লালকা না বল্লে আমি ধরা পড়তাম না,আলতা সাফিনা কেও ফেরত দিতাম না।
তারাতো আমার কাছে ভালই ছিলো।
তোমার পিসিকে দিয়ে মার খাইয়ে কেড়ে নিয়ে ছিলে আলতা সাফিনা কে।
মনে আছে, যাওয়ার সময় তোমার পিসির সেই ডর জাগানো বাণী।
--"জাস অই পাড়া দিয়্যা,তোকে উল্ট্যা কোর‍্যা টাংভো"।
আমি ছ'দিন যাইনি।তোমাকে দেখার জন্য মন ছট্ ফট্ করেছে।
আর তখনি পিসির কথা মনে পড়েছে।
হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলে।তখন বোধ হয় ক্লাস ফাইভ।শুনেছিলাম লালকার মুখে,তুমি নাকি শহরে চলে গেছো।
তোমার খালাজানের কাছে। ওখানেই নাকি থাকবে।
দাদির মুখে শুনেছি, তোমার মায়ের  ক্যান্সারে মৃত্যুর পর তোমার আব্বু তোমাকে আর আগের মতো ভালোবাসতো না।
--কিছু দিন পরে গাঁয়ের রজিনা বেওয়া কে বিয়ে করেছিলো।
তার পরে তো ওরা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে|
ছোট্ট নিহা কে কতদিন খুজেছি|
পাই নি।
কবে কবে তুমি নিহারীকা বেগম হয়ে গেছো। ফিরেছো গাঁয়ে।
সতেরো ক্লাস পাশ হয়েছো।আমি ফাইভ থেকে আর যেতে পারিনি আগে।বাপজান পড়ালো না।খুব কেঁদেছি।
ওই চায়ের দোকানে হাতলুড়কা বানালো।
কিন্তু অপেক্ষায় ছিলাম তুমি একদিন আসবে।
--কিছু কথা বুকের ভেতর জমে আছে সে গুলো বলে একটু হালকা হবো।
আমিও বড় হয়েছি,আর তুমিও-----।
এখন আর বুঝতে-বোঝাতে অসুবিধা হবে না।
কিন্তু পোড়া কপালে কয়লার গুড়ো। শুনলাম এক নাম করা আইনজীবীর এক মাত্র ছেলের বৌ হতে চলেছো।
আমার জমানো কথা গুলো তালা বন্ধই থাকলো।
আমি জানি নসিব খারাপের কোনা চিকিৎসা  নেই, ঔষধ নেই।
তবে আমার হৃদয়ে ভালোবাসা যেটুকু আছে সব তোমারি নামে।
মন বলছে আর একটু অপেক্ষায় থাকতে।জানিনা সামনে কি অপেক্ষা করছে।
অন্য মেয়ে কে বিয়ে করা বড় বেইমানী হবে হয়তো।
--তুমি সুখে থাকো, তাহলেই আমি শান্তি পাবো।
একদিন গল্পের ছলে আমার এই মনের কথা তোমাকে  শোনাবোই।
সেই মুহুর্ত কবে আসবে জানিনা।
অপেক্ষায় আছি।

রাম সরেন

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









অন্ধকূপ হত্যা          রাম সরেন


"ভাই সত্যি কী সিরাজ উদ দৌলা অন্ধকূপ হত্যা করেছিল" রাহুল সুমিতকে জিঞ্জাসা করল। সুমিত বলল-- "আমার তো মনে হয় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, নবাবের সন্মান খর্ব করার জন্য হলওয়ে একটা কাল্পনিক গল্প ফেঁদে ছিল মাত্র, না হলে তার বর্ণিত ঘরের মাপ অনুযায়ী কখনই ওরকম ছোট ঘরে ১৪৬ জন থাকতে পারে না সেটা আমাদের ভারতীয় ঐতিহাসিকরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, তবে এ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে।"
এই ঘটনা নিয়ে রাহুল বেশ আগ্রহ প্রকাশ করল, সে তার শিক্ষকের কাছে ব্যাপারটা বিস্তারিত জানতে চাইল কিন্তু শিক্ষকের জবাবেও তার মন ভরল না। রাতে দু-চারটে বই ঘেঁটেও তার মনের মতো জবাব সে পেল না।তাই সেটার কথা আর না ভেবে সে ঘুমিয়ে পড়ল, বিঞ্জান বলে " যে বিষয়টি আমাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে সেটি সম্পর্কিত স্বপ্নই রাতে আমারা দেখতে পাই।" রাহুলের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটল।সে ঘুমোনোর পর সেই স্বপ্নই দেখতে লাগল। সে দেখল যে -  ইংরেজরা দুর্গ তৈরি করতে ব্যস্ত তারা নবাবের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। খবরটি নবাবের কাছে যেতেই তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন এবং তিনি ইংরেজদের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন তবে ইংরেজরা তা অমান্য করে দুর্গ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল, এদিকে মুর্শিদাবাদে সিরাজ তার আত্মীয়দের সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্ব লিপ্ত হয়, আত্মীয়দের এক অংশ সিরাজকে নবাব হিসাবে মেনেনিতে পারছিল না, এর মূলে ছিলেন ঘাসেটি বেগম। বেগতিক দেখে সিরাজ ঘাসেটি বেগমকে ঢাকায় নজর বন্দি করে রাখেন। এদিকে আরেক চক্রী রাজবল্লভ তার পুত্র কৃষ্ণদাসকে নওরাজেস মহম্মদের ধনসম্পত্তি নিয়ে কোলকাতায় পাঠিয়ে দেন এবং তিনি ইংরেজদের কাছে আশ্রয় নেন। সিরাজ কোলকাতার গর্ভনর ড্রেককে আদেশ দেন সে যেন কৃষ্ণ দাসকে ফিরিয়ে দেয়, কিন্তু ড্রেক সেই আদেশ অমান্য করলে সিরাজ অসন্তুষ্ট হন এবং ক্ষুদ্ধ হন । শেষে সিরাজ কোলকাতা আক্রমণ করেন, নবাবের আক্রমণ প্রতিহত করতে না পেরে গর্ভনর ড্রেক সহ ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গে আশ্রয় নেন।  সেখানেও নবাবের সৈন্যরা আক্রমণ করে, ড্রেক সেখান থেকেও পালিয়ে যান, তবে হলওয়ে কিছু সৈনিক নিয়ে সেখানে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল তবে শেষে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। নবাবের সেনা বন্দিদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছিল কিন্তু হলওয়ে অভিযোগ করেন যে তার সেনাবাহিনীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু সময় পর ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ পুনরায় উদ্ধার করলে হলওয়ে প্রচার করলেন যে একটি ছোট ঘরে নবাবের সৈন্যরা ইংরেজদের বন্দি করে যার ফলে বহু ইংরেজ মারা যায় এবং এটিকে তিনি নাম দিলেন "The black hole tragedy." বা " অন্ধকূপ হত্যা।"  নবাব যখন এই মিথ্যা শুনলেন তখন খুব কষ্ট পেলেন কারণ যে কাজ তিনি করেননি তারা নিয়ে তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
রাহুল স্বপ্নের মধ্যেই গর্জে উঠল " এটা মিথ্যা, হলওয়ে মিথ্যা বলছে।" পাশের ঘর থেকে রাহুলের মা ছুটে এসে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করল--" কি হল ওমন চেঁচিয়ে উঠলি কেন ?"
--"না ও কিছু না তুমি শুয়ে পড়।"

পাপিয়া মহাপাত্র

সাপ্তাহিক ব্ল্যাকহোল ওয়েবজিন ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস... দ্বিতীয় বর্ষ। পঞ্চম প্রয়াস ।









নিরুত্তর      পাপিয়া মহাপাত্র     


ছোট্ট একটা টেলিফোন। নিস্তব্ধতা । সিগারেটের ধোঁয়া। ঘন অন্ধকারে হাতছানিতে একটা চেনা গলার আওয়াজ ।
"হ্যালো, তুমি বলছো । "
স্তব্ধ সময় । থমকে গেলাম আমি । সিগারেটের প্যাঁচানো ধোঁয়ার আস্তরণ পেরিয়ে এল আমার ফেলে আসা  
সেই অতীত ।
 ফের এলো " আমি বলছি"।
 নিরুত্তর আমি টেলিফোন হাতে ।
জানালার ফাঁক দিয়ে এক মুঠো হলুদ আলো সারা শরীরে লেপটে নিয়ে বসে রইলাম । 
দূরে ঘন কুয়াশার গম্ভীর আস্তরণের ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসছে একটা প্রান।
হেঁটে চলেছে , নেচে চলেছে ,গেয়ে যাচ্ছে নিজের খেয়ালে ,
তখনও টেলিফোন হাতে আমি চুপ করে জানালার এপাশে।
"পেয়েছি পেয়েছি " 
চিৎকার করে বলি "পেয়েছি আমি পেয়েছি।"
এখন আমি বাঁচব নীলাঞ্জন ---- তোমায় ছাড়া