Monday, July 20, 2020

|| কাজল সেন-এর ঝুরোগল্প ||

|| সাপ্তাহিক ব্ল্যালহোল ওয়েবজিন || || ১টি মাসিক স্বতন্ত্র সাহিত্য প্রয়াস...|| 
|| দ্বিতীয় বর্ষ ||













কাজল সেন


পরকীয়া___

সেদিন আচমকাই একটু দ্রুত হাঁটতে গিয়ে পা হড়কালেন গোবিন্দ মিত্র। স্বভাবে তিনি সবারই মিত্র, কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। আর নাম গোবিন্দ হলেও তিনি কখনই গোঁয়ার নন। তবুও তাঁর সঙ্গে রাস্তা শত্রুতা করল, পা শত্রুতা করল, তিনি পা হড়কালেন নিতান্তই আনাড়ির মতো। দুর্ঘটনাটা পথ চলতি সবারই চোখে পড়ল। স্বাভাবিক কারণেই তাঁরা একইসঙ্গে বিস্মিত ব্যথিত বাধাপ্রাপ্ত হলেন। এক মুহূর্তের জন্য সবাই নিজের নিজের অবস্থানে অনড় হয়ে থাকলেন। কিন্তু গোবিন্দ মিত্র তো আর অনড় হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে পারেন না! তাঁকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই হলো। দুতিনজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেও  তিনি তাঁদের নিরস্ত করে ব্যাজার মুখে উঠে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে খুঁজতে থাকলেন, আরে! মাধবিকা কোথায় গেল? এই তো এইমাত্র উল্টোদিকের  ফুটপাথে হাঁটছিল! গোবিন্দ মিত্র জানেন, মাধবিকা গুনগুন স্বরে গানও গাইছিল।  আসলে এটা মাধবিকার মুদ্রাদোষ। রাস্তায় বেরোলেই গান গাইতে গাইতে হাঁটে। খেয়ালও করে না, তার পাশের সহহাঁটিরা তার বেসুরো গান শুনে মজার হাসি হাসছে। গোবিন্দ মিত্র তাকে বারবার সতর্ক করেও অভ্যেসটা ছাড়াতে পারেননি।  মাধবিকা রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছে, কে বলেছে আমি ইচ্ছে করে গান গাই? গান আমি গাই না। গানই আমাকে গাওয়ায়। আমি কী করতে পারি!

এসব অনেকদিন আগের কথা। গোবিন্দ মিত্র তখন সবে মাধবিকার সঙ্গে পরকীয়ায় মজেছেন। ঘরে তাঁর একটা আস্ত বউ আছে, সেই বৌয়ের দুদুটো বাচ্চাও আছে। তবু গোবিন্দ মিত্র, আদৌ তিনি গোঁয়ার নন, তাঁর থেকে প্রায় বছর  দশেকের ছোট মাধবিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে লটকে গেলেন। মাধবিকা অনেকবার অনুযোগ করেছিল, আপনি তো মশাই বিবাহিত, ঘরে বৌ-বাচ্চা আছে, আপনি আমার পেছনে ঘুরে বেড়ান কেন বলুন তো? আর আমি অবিবাহিতা একটা মেয়ে, আপনার মতো একজন বিবাহিত পুরুষের পেছনেই বা  ঘুরে মরব কেন, বলতে পারেন? গোবিন্দ মিত্র বলেছিলেন, কেন, বিবাহিতর সঙ্গে অবিবাহিতার প্রেম হয় না? তুমি বাংলা গল্প উপন্যাস পড় না? ইংরেজি নভেল? পড়লে বুঝতে পারবে, বৈধ প্রেমের চেয়ে অবৈধ প্রেম কত মহৎ কত উদার! অবশ্য তুমি ইচ্ছে করলে অন্য কাউকে বিয়ে করতেই পারো। তখন বিবাহিতর সঙ্গে বিবাহিতার প্রেম আরও জমবে!  

গোবিন্দ মিত্রর কথায় বিদিশায় দিশা খুঁজে পেয়েছিল মাধবিকা। চট করে সে প্রস্তাব রেখেছিল, আপনার কথাই আমি মেনে নিলাম। বিবাহিতর সঙ্গে বিবাহিতার প্রেমটাই আমরা মনে হচ্ছে আদর্শ প্রেম। আপনি প্লিজ কিছুদিন অপেক্ষা করুন, আমি আগে একটা বিয়ে করে ফেলি। তারপর না হয় আপনার সঙ্গে...

গোবিন্দ মিত্র অপেক্ষায় আছেন, মাধবিকা কবে বিয়ে করে বিবাহিতা হবে। ইদানীং দেখা হয় না খুব একটা। তিনি রাস্তায় হাঁটেন চারিপাশে সতর্ক চোখ মেলে। দুএকবার আচমকা দেখা হয়ে গেছে। মাধবিকা দুঃখের সঙ্গে জানিয়েছে, না, এখনও হয়নি বিয়ে। আজও তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন  উল্টোদিকের ফুটপাথে মাধবিকা হেঁটে যাচ্ছে। আর তখনই শত্রুতা করল পা, তাড়াহুড়োয় তিনি পা হড়কালেন    

4 comments:

Anonymous said...

আমার খুবই ভাল লাগল। আমার কাছে কমেডি লেখা সবচেয়ে শক্ত কাজ। তারওপর কেউ যদি এত সহজ সরলভাবে জীবনটাকে ফানি বা নট সো ফানি দেখিয়ে ফেলতে পারে, আমার মনে হয়, তার চেয়ে জটিল কাজ কিছু নেই - সাঁঝবাতি

Unknown said...

বেশ মজা পেলাম। চমৎকার বয়ন। অভিনন্দন।

Debalina Chakravarty said...

ভীষন ভালো লাগলো 👌👌

Payel said...

Khubb sundor