সম্পর্কখেলা কাজল সেন
বিহঙ্গম ভাবতে
পারেনি, বিতান ফিরে আসবে। যাওয়া মানে তো চলে যাওয়া, ফেরার কোনো প্রতিশ্রুতি থাকে
না! তাছাড়া বিতানের
প্রস্থানপর্বে বিহঙ্গম বিতানকে কখনও ফিরে আসার
জন্য অনুরোধও করেনি। বলেনি – যদি ইচ্ছে হয়, ফিরে আসিস! বিতানও বিদায় মুহূর্তে
বলেনি – আসি! বরং বলেছিল – যাই! এসব কারও জানার কথা নয়। কেউ জানেও না। শুধু সাবিনা জানে। কেননা সেদিন সাবিনা উপস্থিত ছিল সেই বিদায়লগ্নে।
সাবিনা মনে করতে
পারে না, ঠিক কবে থেকে বিতান থাকতে শুরু করেছিল বিহঙ্গমের সঙ্গে। অনেকদিন থেকেই বিহঙ্গমের কাছে
বিতানের আসা যাওয়া। সাবিনা এত হিসেব নিকেষ করেও দেখেনি। বিহঙ্গমের কাছে বিতানের আসা যাওয়াটা নিতান্তই
সাধারণ ব্যাপার ছিল। যেমন বিহঙ্গমের কাছে বিতানের থেকে যাওয়াটাও ছিল তাই। আর তাই বিতান যেদিন ‘যাই’
বলে চলে গেল, সেদিনও সাবিনা ঘটনাটা একান্তই সাদামাটা বলেই মেনে নিয়েছিল।
তবে বিহঙ্গম অনেক
ভেবেও ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারেনি, বিতানের চলে যাওয়ায় সে কতটা কষ্ট পেয়েছিল! বিতান
তার কাছে ছিল, বড় বেশি জড়িয়েই ছিল, ভীষণ রকম শারীরিক ও মানসিক নিবিড়তায় নিমগ্ন
ছিল। তাই বিতানের চলে যাওয়াটা বিহঙ্গমের কাছে খুব সহজ কিছু ছিল না। অথচ বিতানকে
ধরে রাখারও কোনো শর্ত ছিল না, কোনো অজুহাত ছিল না। আবার বিহঙ্গম এটাও ঠিক বুঝে
উঠতে পারে না যে, বিতান চলে যাওয়ার পরে যখন সাবিনা ঠিক একইভাবে, কোনো শর্ত বা
অজুহাত ছাড়াই তার কাছে থেকে গেল, সেই থেকে যাওয়াটা বিহঙ্গমকে কতটা আশ্বস্ত করেছিল!
বিহঙ্গম ভাবতে
পারেনি, বিতান ফিরে আসবে। সাবিনাও ভাবতে পারেনি। হয়তো বিতানও ফেরার আগে ভাবতে
পারেনি তার ফেরার কথা! কিন্তু এটাই তো এই সম্পর্কখেলার নিয়ম! খেলতে গেলে সেই খেলার
নিয়ম মেনেই
খেলতে হয়। যদিও চলে যাওয়ার সময় বিতান আনাড়ি খেলোয়াড়ের মতো ‘যাই’ বলেছিল। বলেনি ‘আসি’। আসলে সবাই তো ঠেকেই শেখে! আর তাই খেলার নিয়মেই বিতানও ফিরে এসেছে বিহঙ্গমের কাছে। আবার সেদিনও সাবিনা ঘটনাচক্রে উপস্থিত
বিতানের
পুনঃপ্রবেশপর্বে! সাবিনা ভাবে, ভুল করে বিতান ‘যাই’ বলেছিল। কিন্তু ফিরে আসাটা
সম্পর্কখেলার নিয়ম মেনেই। যেমন এখন সাবিনার প্রস্থানপর্বে ‘আসি’ বলে চলে যাওয়াটাও
তো সেই খেলার নিয়ম মেনেই!

No comments:
Post a Comment